সারাক্ষণ রিপোর্ট
১৯৩৩ সালে, ন্যুরেমবার্গে অনুষ্ঠিত এক নাজি পার্টি সমাবেশে জার্মান রাজনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য মোড় আসে। প্রধান সংসদ ভবন এক মাস আগে রহস্যজনক আগুনে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর, রেইখস্টাগ অস্থায়ীভাবে অন্য এক স্থানে সমাবেশ করেছিল।
রাজনৈতিক উত্তেজনা ও পরিস্থিতি
সেই দিনে, জার্মান সংসদের সভায় একটি বিল প্রস্তাবিত হয়েছিল যা নতুন চ্যান্সেলর অ্যাডলফ হিটলারকে ব্যাপক ক্ষমতা প্রদান করার উদ্দেশ্যে ছিল। রাজনৈতিক উত্তেজনা তীব্র থাকায় সমাজতান্ত্রিক উপদেষ্টা উইলহেল্ম হোগনার উল্লেখ করেন, যে সভাকক্ষের চারপাশে নিরাপত্তাবাহিনী ও এসএস সদস্যদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। হিটলার নিজের বক্তব্যে স্পষ্ট করে হুমকি দেন যে, এই বিল পুনর্বাছাই সফল হলে জাতীয় বিদ্রোহ মোকাবিলায় দেশ যে কোনও ধরনের ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত থাকবে।
এনেবলিং আইনের প্রণয়ন
আনুষ্ঠানিকভাবে “জনতার ও রেইখের দুর্ভোগ উপশম আইন” নামে পরিচিত এই বিলটি, যা এনেবলিং আইন নামে খ্যাতি অর্জন করে, হিটলারকে চার বছরের জন্য আদেশ অনুযায়ী শাসনের ক্ষমতা প্রদান করে। এতে রেইখস্টাগ ও রাষ্ট্রপতি হিন্ডেনবার্গের অনুমোদন বাইপাস করে হিটলারকে একনায়ক শাসনে প্রবেশ করানো হয়। এই আইনসহ শীতকালে গৃহীত অন্যান্য জরুরি ব্যবস্থাগুলি জার্মান গণতন্ত্রের ভঙ্গ ও সর্বনায়কীয় শাসনের সূচনা করে।
আইনি পথ ও ক্ষমতা সংস্থান
১৯২৩ সালের বিফল বীয়ার হল পুটশের পর হিটলার জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল করার আশা বাদ দেয়, বরং আইনসম্মত ও সংবিধানিক পথে ক্ষমতা অর্জনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। জানুয়ারিতে হিন্ডেনবার্গ কর্তৃক চ্যান্সেলর নিযুক্তির পর, নাজি দলের উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মার্চের জাতীয় নির্বাচনে এই নির্বাচনের শেষ নির্বাচন হিসেবে ঘোষণা করা হয়, যা শাসনের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।
অব্যবস্থার সৃষ্টি ও শাসনের প্রক্রিয়া
নির্বাচনের পূর্ব সপ্তাহে, নাজি দলের পারামিলিটারি স্টুর্মাবটাইলং-এর কার্যকলাপে জার্মানির বিভিন্ন অঞ্চলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই পরিকল্পিত বিশৃঙ্খলা অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী উইলহেল্ম ফ্রিককে রাজ্য ও পৌর প্রশাসন ভেঙে, বিশ্বস্ত নাজি কর্মকর্তাদের স্থাপন করার সুযোগ প্রদান করে। একদিকে ব্যবসায়িক নেতারা নাজি দলের প্রতি আর্থিক সহায়তা প্রদান শুরু করে, অপরদিকে সংসদের ডানপন্থী সহযোগীরা গণতন্ত্রকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন।
রেইখস্টাগ আগুন ও এর প্রভাব
ফেব্রুয়ারিতে, একজন ডাচ কমিউনিস্ট মারিনাস ভ্যান ডার লুব্বে অভিযোগে রেইখস্টাগ ভবন আগুন লাগানোর অভিযোগ উঠলে, হিটলার তা কাজে লাগিয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। রেইখস্টাগ ফায়ার ডিক্রী গ্রহণের মাধ্যমে নাগরিক স্বাধীনতা স্থগিত করা হয় এবং কমিউনিস্ট ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা বাড়িয়ে তোলা হয়। কয়েকদিন পর নাজি দল জাতীয় সংসদে তাদের আসন নিশ্চিত করে।
ক্ষমতার সংহতকরণ ও পরিণতি
এনেবলিং আইনের পাশের সাথে সাথে, নবাগত নাজি শাসনব্যবস্থা দ্রুত জার্মান ফেডারেল কাঠামোকে দুর্বল করে দেয় এবং মধ্য এপ্রিলের মধ্যে সংবাদ মাধ্যম ও বামপন্থী জনবলকে গণসেবা থেকে সরিয়ে ফেলে। এই আইন পরবর্তীতে পুনর্নবীকরণ হয়ে স্থায়ী শাসনের রূপরেখা নির্ধারণ করে, যা হিটলারের নির্জন শাসনের মাধ্যমে জার্মানির ভাগ্য স্থির করে দেয়।
উপসংহার
হিটলারকে একনায়ক শাসনের ক্ষমতা প্রদানকারী এনেবলিং আইন জার্মান গণতন্ত্রের পতনের সূত্রপাত করে এবং সর্বনায়কীয় শাসনের পথ প্রশস্ত করে। এই ঘটনা ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য মোড় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যা ভবিষ্যতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য এক গুরুতর সতর্কবার্তা হিসেবে বিবেচিত হবে।