০২:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

বেসরকারি ব্যবসাখাত বাঁচানো ছাড়া বাংলাদেশের গণতন্ত্র শক্তিশালী করা সম্ভব কি?

  • Sarakhon Report
  • ০৬:০৫:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • 15

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সারাংশ

  • কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকারত্ব বেড়েছে
  • ব্যাংক খাতে উচ্চ সুদের হার ও ডলারের স্বল্পতা আমদানি-রপ্তানি কাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে
  • বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রবাসী আয়ের ওপরই বেশি নির্ভরশীল, যা দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী সমাধান নয়
  • বাংলাদেশের অর্থনীতির মূলভিত্তি বেসরকারি খাত। এই খাত ধ্বংস হলে গণতন্ত্রও টেকসই হবে না, রাষ্ট্রিক স্থিতিশীলতাও ঝুঁকিতে পড়বে

গণতন্ত্র ও অর্থনীতি পারস্পরিক নির্ভরশীল, অনেকটা রেললাইনের মতো—যে দু’টি সমান্তরালভাবে না চললে রাষ্ট্রযন্ত্র সঠিকভাবে অগ্রসর হতে পারে না। রাজনৈতিক অস্থিরতা অর্থনীতিকে দুর্বল করে দেয়, আবার অর্থনীতি কমজোরি হয়ে গেলে গণতান্ত্রিক পরিবেশও হুমকির মুখে পড়ে। সুশাসন, জবাবদিহি ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাস ও আস্থা বাড়ায়, যার ফলাফল হিসেবে অর্থনীতিও গতিশীল হয়। অন্যদিকে অর্থনীতি শক্তপোক্ত না থাকলে গণতান্ত্রিক অনুশীলনও টেকে না।বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল খাত বেসরকারি খাত। এই খাত দুর্বল বা ধ্বংস হলে কখনই গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে না।

ইতিহাসের অভিজ্ঞতা

  • বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর দেখা গেছে, গণতন্ত্র যখনই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, অর্থনীতি তখনই বিপর্যয় ডেকে এনেছে।
  • আবার অর্থনৈতিক ভিত্তি দুর্বল হলে গণতন্ত্রও দীর্ঘদিন টেকসই হতে পারেনি।
  • এই চিত্র শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বব্যাপী নানা উদাহরণে স্পষ্ট যে গণতন্ত্র ও অর্থনীতির উন্নয়ন পরস্পরের পরিপূরক।

বর্তমান প্রেক্ষাপট

  • গত পনেরো বছর ধরে দেশে কার্যকর রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার অভাব ও কর্তৃত্ববাদী ধারা প্রতিষ্ঠার অভিযোগ রয়েছে।
  • এতে ব্যবসা ও শিল্পখাত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষমতাসীনদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
  • বর্তমানে বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন যথাযথভাবে এগোতে না পারায় ব্যবসায়ীরা অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন, ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা ছাড়া টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে বলে মনে করছে অনেক শিল্পপতি।

জুলাইয়ের আন্দোলন ও পরিবর্তনের আহ্বান

  • গত বছরের জুলাই মাসে ছাত্র ও সাধারণ মানুষের অস্বাভাবিক মাত্রার আন্দোলনকে অনেকে ‘জুলাই বিপ্লব’ বলে উল্লেখ করেছেন।
  • এই আন্দোলন নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নকে সামনে নিয়ে এসেছিল।
  • কিন্তু নতুন বাংলাদেশ গড়ার ভাবনায় অর্থনৈতিক বিষয়টি অনেকাংশে উপেক্ষিত বা সঠিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না বলে অনেকে মনে করছেন।

সরকারি উদ্যোগ ও জাতীয় ঐকমত্য পরিষদ

  • নতুন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর কিছু সংস্কার কমিশন গঠন করেছে।
  • এসব কমিশনের সুপারিশ পরীক্ষার জন্য গঠিত হয় জাতীয় ঐকমত্য পরিষদ।
  • পরিষদের সাম্প্রতিক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা সরকারের দ্বিতীয় ধাপের কাজ শুরু ও শিগগির নির্বাচনের আভাস দেন।
  • তবে অর্থনীতিকে সচল বা চাঙ্গা করার স্পষ্ট কোনো রোডম্যাপ এখনও দৃশ্যমান নয়।

অর্থনীতির বর্তমান চিত্র

  • গত ছয় মাসে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক অগ্রগতি চোখে পড়েনি।
  • আগের দুর্নীতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে, কিন্তু নতুন বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত পরিকল্পনা বা উদ্যোগের অভাব রয়েছে।
  • বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রবাসী আয়ের ওপরই বেশি নির্ভরশীল, যা দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী সমাধান নয়।

শিল্প ও ব্যবসার দুরবস্থা

  • অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকারত্ব বেড়েছে।
  • ব্যাংক খাতে উচ্চ সুদের হার ও ডলারের স্বল্পতা আমদানি-রপ্তানি কাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
  • গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট, রাজনৈতিক অস্থিরতা, আর এক শ্রেণির মানুষের অনৈতিক দৌরাত্ম্য অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে।

ব্যবসায়ীদের প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি

  • সাধারণ ধারণা আছে যে ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক দলের দিকে ঝোঁকে।
  • বাস্তবে লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখতে গিয়ে তারা বহু চাপের মুখে থাকে।
  • সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে বেঁচে থাকা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।

সমাধানের প্রয়োজনীয়তা

  • জাতীয় ঐকমত্য পরিষদ সরাসরি শিল্পোদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের বাস্তব সমস্যাগুলো উঠে আনতে পারে।
  • আগামী দিনে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, তাদের উচিত ব্যবসায়ীদের স্বাভাবিক বিকাশের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া।
  • দলীয় স্বার্থে ব্যবসায়ীদের ব্যবহার না করে একটি টেকসই অর্থনৈতিক পরিবেশ গড়ে তোলার দায় সরকারকেই নিতে হবে।

উপসংহার

  • বাংলাদেশের অর্থনীতির মূলভিত্তি বেসরকারি খাত। এই খাত ধ্বংস হলে গণতন্ত্রও টেকসই হবে না, রাষ্ট্রিক স্থিতিশীলতাও ঝুঁকিতে পড়বে।
  • তাই অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রাখতে না পারলে গণতন্ত্রকেও বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব নয়—এটাই সর্বশেষ ও মৌলিক সত্য।

বেসরকারি ব্যবসাখাত বাঁচানো ছাড়া বাংলাদেশের গণতন্ত্র শক্তিশালী করা সম্ভব কি?

০৬:০৫:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সারাংশ

  • কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকারত্ব বেড়েছে
  • ব্যাংক খাতে উচ্চ সুদের হার ও ডলারের স্বল্পতা আমদানি-রপ্তানি কাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে
  • বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রবাসী আয়ের ওপরই বেশি নির্ভরশীল, যা দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী সমাধান নয়
  • বাংলাদেশের অর্থনীতির মূলভিত্তি বেসরকারি খাত। এই খাত ধ্বংস হলে গণতন্ত্রও টেকসই হবে না, রাষ্ট্রিক স্থিতিশীলতাও ঝুঁকিতে পড়বে

গণতন্ত্র ও অর্থনীতি পারস্পরিক নির্ভরশীল, অনেকটা রেললাইনের মতো—যে দু’টি সমান্তরালভাবে না চললে রাষ্ট্রযন্ত্র সঠিকভাবে অগ্রসর হতে পারে না। রাজনৈতিক অস্থিরতা অর্থনীতিকে দুর্বল করে দেয়, আবার অর্থনীতি কমজোরি হয়ে গেলে গণতান্ত্রিক পরিবেশও হুমকির মুখে পড়ে। সুশাসন, জবাবদিহি ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাস ও আস্থা বাড়ায়, যার ফলাফল হিসেবে অর্থনীতিও গতিশীল হয়। অন্যদিকে অর্থনীতি শক্তপোক্ত না থাকলে গণতান্ত্রিক অনুশীলনও টেকে না।বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল খাত বেসরকারি খাত। এই খাত দুর্বল বা ধ্বংস হলে কখনই গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে না।

ইতিহাসের অভিজ্ঞতা

  • বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর দেখা গেছে, গণতন্ত্র যখনই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, অর্থনীতি তখনই বিপর্যয় ডেকে এনেছে।
  • আবার অর্থনৈতিক ভিত্তি দুর্বল হলে গণতন্ত্রও দীর্ঘদিন টেকসই হতে পারেনি।
  • এই চিত্র শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বব্যাপী নানা উদাহরণে স্পষ্ট যে গণতন্ত্র ও অর্থনীতির উন্নয়ন পরস্পরের পরিপূরক।

বর্তমান প্রেক্ষাপট

  • গত পনেরো বছর ধরে দেশে কার্যকর রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার অভাব ও কর্তৃত্ববাদী ধারা প্রতিষ্ঠার অভিযোগ রয়েছে।
  • এতে ব্যবসা ও শিল্পখাত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষমতাসীনদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
  • বর্তমানে বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন যথাযথভাবে এগোতে না পারায় ব্যবসায়ীরা অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন, ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা ছাড়া টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে বলে মনে করছে অনেক শিল্পপতি।

জুলাইয়ের আন্দোলন ও পরিবর্তনের আহ্বান

  • গত বছরের জুলাই মাসে ছাত্র ও সাধারণ মানুষের অস্বাভাবিক মাত্রার আন্দোলনকে অনেকে ‘জুলাই বিপ্লব’ বলে উল্লেখ করেছেন।
  • এই আন্দোলন নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নকে সামনে নিয়ে এসেছিল।
  • কিন্তু নতুন বাংলাদেশ গড়ার ভাবনায় অর্থনৈতিক বিষয়টি অনেকাংশে উপেক্ষিত বা সঠিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না বলে অনেকে মনে করছেন।

সরকারি উদ্যোগ ও জাতীয় ঐকমত্য পরিষদ

  • নতুন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর কিছু সংস্কার কমিশন গঠন করেছে।
  • এসব কমিশনের সুপারিশ পরীক্ষার জন্য গঠিত হয় জাতীয় ঐকমত্য পরিষদ।
  • পরিষদের সাম্প্রতিক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা সরকারের দ্বিতীয় ধাপের কাজ শুরু ও শিগগির নির্বাচনের আভাস দেন।
  • তবে অর্থনীতিকে সচল বা চাঙ্গা করার স্পষ্ট কোনো রোডম্যাপ এখনও দৃশ্যমান নয়।

অর্থনীতির বর্তমান চিত্র

  • গত ছয় মাসে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক অগ্রগতি চোখে পড়েনি।
  • আগের দুর্নীতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে, কিন্তু নতুন বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত পরিকল্পনা বা উদ্যোগের অভাব রয়েছে।
  • বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রবাসী আয়ের ওপরই বেশি নির্ভরশীল, যা দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী সমাধান নয়।

শিল্প ও ব্যবসার দুরবস্থা

  • অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকারত্ব বেড়েছে।
  • ব্যাংক খাতে উচ্চ সুদের হার ও ডলারের স্বল্পতা আমদানি-রপ্তানি কাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
  • গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট, রাজনৈতিক অস্থিরতা, আর এক শ্রেণির মানুষের অনৈতিক দৌরাত্ম্য অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে।

ব্যবসায়ীদের প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি

  • সাধারণ ধারণা আছে যে ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক দলের দিকে ঝোঁকে।
  • বাস্তবে লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখতে গিয়ে তারা বহু চাপের মুখে থাকে।
  • সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে বেঁচে থাকা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।

সমাধানের প্রয়োজনীয়তা

  • জাতীয় ঐকমত্য পরিষদ সরাসরি শিল্পোদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের বাস্তব সমস্যাগুলো উঠে আনতে পারে।
  • আগামী দিনে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, তাদের উচিত ব্যবসায়ীদের স্বাভাবিক বিকাশের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া।
  • দলীয় স্বার্থে ব্যবসায়ীদের ব্যবহার না করে একটি টেকসই অর্থনৈতিক পরিবেশ গড়ে তোলার দায় সরকারকেই নিতে হবে।

উপসংহার

  • বাংলাদেশের অর্থনীতির মূলভিত্তি বেসরকারি খাত। এই খাত ধ্বংস হলে গণতন্ত্রও টেকসই হবে না, রাষ্ট্রিক স্থিতিশীলতাও ঝুঁকিতে পড়বে।
  • তাই অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রাখতে না পারলে গণতন্ত্রকেও বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব নয়—এটাই সর্বশেষ ও মৌলিক সত্য।