সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
- আইএমএফ দাবি করেছে, শর্ত পূরণ না করার কারণে এই বিলম্ব হয়েছে
- বাংলাদেশ সরকার বলছে যে কিছু শর্ত তাৎক্ষণিকভাবে মানা সম্ভব নয়
- আইএমএফের কিস্তি না পেলে বিশ্বব্যাংকের বাজেট সহায়তাও স্থগিত হতে পারে
- ঋণ কর্মসূচির প্রয়োজনীয়তা এবং তা অব্যাহত রাখার যৌক্তিকতা বাস্তবসম্মতভাবে মূল্যায়ন করতে হবে
ভূমিকা
বাংলাদেশ ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রাভাণ্ডারের (আইএমএফ) সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচি শুরু করে, যা সাত কিস্তিতে প্রদান করা হবে। এখন পর্যন্ত তিন কিস্তিতে ২৩১ কোটি ডলার পাওয়া গেলেও, চতুর্থ কিস্তির ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার এখনও পাওয়া যায়নি, যা ডিসেম্বর ২০২৪ এ আসার কথা ছিল।
কেন বিলম্ব?
আইএমএফ দাবি করেছে, শর্ত পূরণ না করার কারণে এই বিলম্ব হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশ সরকার বলছে যে কিছু শর্ত তাৎক্ষণিকভাবে মানা সম্ভব নয়।
আইএমএফের শর্তসমূহ
১. রাজস্বনীতি ও প্রশাসনের পৃথকীকরণ: এতে এখনও সন্তোষজনক অগ্রগতি হয়নি।
২.ব্যক্তিগত আয়কর বৃদ্ধি ও করছাড় কমানো: এ ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যায়নি।
৩.বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার: এটিকে বাজারের উপর ছেড়ে দেওয়ার শর্ত ছিল।
৪. খেলাপি ঋণ কমানো: সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে নামাতে হবে।
আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা ও ইতিহাস
আশির দশকে এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলো আইএমএফ থেকে কঠিন শর্তের ঋণ নিয়েছিল, যার ফলে প্রবৃদ্ধি বিঘ্নিত, দারিদ্র্য বৃদ্ধি এবং সামাজিক খাত সংকুচিত হয়েছিল। বাংলাদেশও সে সময় একই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিল।
বর্তমান অর্থনীতির প্রভাব
১. অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার: সাময়িক স্বস্তি থাকলেও, বাংলাদেশ এখনো পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়ায়নি।
২. বিশ্বব্যাংকের বাজেট সহায়তা: আইএমএফের কিস্তি না পেলে বিশ্বব্যাংকের বাজেট সহায়তাও স্থগিত হতে পারে।
৩. ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: বাংলাদেশ সরকার চাইছে আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদের জুন বৈঠকে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির প্রস্তাব একসাথে তোলা হোক।
করণীয় এবং পরামর্শ
১. জাতীয় স্বার্থ রক্ষা: ঋণ শর্তগুলো নিয়ে পরিষ্কার ও দৃঢ় অবস্থান নেওয়া প্রয়োজন, তবে বক্তব্যে সংবেদনশীলতা বজায় রাখতে হবে।
২. প্রয়োজনের মূল্যায়ন: ঋণ কর্মসূচির প্রয়োজনীয়তা এবং তা অব্যাহত রাখার যৌক্তিকতা বাস্তবসম্মতভাবে মূল্যায়ন করতে হবে।
৩. আলোচনার প্রয়োজনীয়তা: শর্তগুলো কেন পূরণ করা যাচ্ছে না তা বিশ্লেষণ করে আইএমএফের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।
৪. সংস্কারের গুরুত্ব: কোন কোন শর্ত বাংলাদেশের স্বার্থেই পূরণ করা দরকার, তা বিবেচনায় রাখা উচিত।
উপসংহার
বাংলাদেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে আইএমএফের ঋণের শর্তগুলো সঠিকভাবে মূল্যায়ন ও বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। তবে এটি শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক চাপে নয়, বরং জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করে করতে হবে।