০৪:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

রিয়েল এস্টেট খাতে মন্দা ও করভারে মহাসংকটে পেইন্ট শিল্প

  • Sarakhon Report
  • ০৩:৪৫:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • 15

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সারাংশ 

  • পেইন্ট শিল্পের ওপর মোট ৮৯% কর আরোপ করা হয়েছে, যা এই খাতের বিকাশের প্রধান অন্তরায়
  • দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং রিয়েল এস্টেট খাত পুনরায় চাঙ্গা হলে পেইন্টের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে
  • বাংলাদেশে প্রতি ব্যক্তি ১.৪ কেজি পেইন্ট ব্যবহার করেন, যা অন্যান্য এশিয়ান দেশের তুলনায় অনেক কম
  • রিয়েল এস্টেট খাত, যা পেইন্টের প্রধান ক্রেতা, বর্তমানে মন্দার মধ্যে রয়েছে, ফলে চাহিদার সংকট দেখা দিয়েছে

শিল্পের বর্তমান অবস্থা

বাংলাদেশের পেইন্ট শিল্প বর্তমানে উচ্চ কর, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, এবং অর্থনৈতিক মন্দার কারণে চরম সংকটে পড়েছে। দেশের বাজারের আকার প্রায় ৬২৫০ কোটি টাকা হলেও, করের চাপ এবং আমদানির কঠোর নীতিমালার কারণে শিল্পটির প্রবৃদ্ধি থমকে গেছে।

মূল চ্যালেঞ্জগুলো

১. উচ্চ কর ও আমদানি সীমাবদ্ধতা

  • পেইন্ট শিল্পের ওপর মোট ৮৯% কর আরোপ করা হয়েছে, যা এই খাতের বিকাশের প্রধান অন্তরায়।
  • পেইন্টকে বিলাসবহুল পণ্য হিসেবে বিবেচনা করায় কাঁচামাল আমদানিতে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
  • জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) কাঁচামালের উপর সম্পূরক শুল্ক ২০% থেকে ৩০% এবং পণ্যের উপর ৫% থেকে ১০% বাড়িয়েছে, যা উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি এবং বিক্রি কমার অন্যতম কারণ।

২. অর্থনৈতিক মন্দা ও চাহিদার সংকট

  • রিয়েল এস্টেট খাত, যা পেইন্টের প্রধান ক্রেতা, বর্তমানে মন্দার মধ্যে রয়েছে।
  • উচ্চ মূল্যের কারণে ক্রেতারা পেইন্ট কিনতে আগ্রহ হারাচ্ছেন, ফলে চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
  • ক্রেতারা নতুন বাড়ি নির্মাণ এবং পুরানো বাড়ির রঙ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত স্থগিত করছেন।

শিল্পের প্রবৃদ্ধি ও বাজার বিশ্লেষণ

  • দেশে ৩৩টি স্থানীয় ব্র্যান্ড পেইন্ট উৎপাদন করছে, যা অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণে সক্ষম।
  • বাজারের শেয়ার:
    • বার্জার পেইন্টস: ৫৪% (শীর্ষস্থান)
    • এশিয়ান পেইন্টস: ১৬%
    • নিপ্পন পেইন্ট: ৮%

  • পেইন্ট ব্যবহার:
    • বাংলাদেশে প্রতি ব্যক্তি ১.৪ কেজি পেইন্ট ব্যবহার করেন, যেখানে ভারতে ৩ কেজি এবং অন্যান্য এশিয়ান দেশে ৭-১০ কেজি ব্যবহার হয়।
    • এই ব্যবধান ইঙ্গিত দেয় যে, নতুন উদ্ভাবন এবং সাশ্রয়ী মূল্যের পণ্য দিয়ে চাহিদা বৃদ্ধি করা সম্ভব।

সম্ভাব্য সমাধান ও পুনরুদ্ধারের কৌশল

১. উদ্ভাবন ও পরিবেশবান্ধব পণ্য

  • নতুন উদ্ভাবন এবং পরিবেশবান্ধব পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে গ্রাহকদের আকর্ষণ করা সম্ভব।
  • ক্রেতাদের নিরাপদ এবং পরিবেশ-বান্ধব পণ্য প্রয়োজন, যা এই শিল্পের টিকে থাকার সম্ভাবনা বাড়াতে পারে।

২. কর হ্রাস ও নীতিগত পরিবর্তন

  • শিল্প প্রতিনিধিরা কর হ্রাস এবং পেইন্টকে বিলাসবহুল পণ্য হিসেবে বিবেচনা না করার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করেছেন।

  • সরকারের সহায়তা পেলে শিল্পটি পুনরুজ্জীবিত হতে পারে এবং নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।

৩. অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও চাহিদা বৃদ্ধি

  • দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং রিয়েল এস্টেট খাত পুনরায় চাঙ্গা হলে পেইন্টের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে।
  • নির্মাণ খাতের প্রসার এবং সংস্কারকাজ বাড়লে পেইন্টের বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

উপসংহার

বাংলাদেশের পেইন্ট শিল্প বর্তমানে কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হলেও, উদ্ভাবন, কর হ্রাস, এবং নীতিগত পরিবর্তনের মাধ্যমে এই শিল্পের পুনরুদ্ধার সম্ভব।
পরিবেশবান্ধব পণ্য এবং নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করা গেলে শিল্পটির সম্ভাবনা উজ্জ্বল হতে পারে।

রিয়েল এস্টেট খাতে মন্দা ও করভারে মহাসংকটে পেইন্ট শিল্প

০৩:৪৫:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সারাংশ 

  • পেইন্ট শিল্পের ওপর মোট ৮৯% কর আরোপ করা হয়েছে, যা এই খাতের বিকাশের প্রধান অন্তরায়
  • দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং রিয়েল এস্টেট খাত পুনরায় চাঙ্গা হলে পেইন্টের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে
  • বাংলাদেশে প্রতি ব্যক্তি ১.৪ কেজি পেইন্ট ব্যবহার করেন, যা অন্যান্য এশিয়ান দেশের তুলনায় অনেক কম
  • রিয়েল এস্টেট খাত, যা পেইন্টের প্রধান ক্রেতা, বর্তমানে মন্দার মধ্যে রয়েছে, ফলে চাহিদার সংকট দেখা দিয়েছে

শিল্পের বর্তমান অবস্থা

বাংলাদেশের পেইন্ট শিল্প বর্তমানে উচ্চ কর, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, এবং অর্থনৈতিক মন্দার কারণে চরম সংকটে পড়েছে। দেশের বাজারের আকার প্রায় ৬২৫০ কোটি টাকা হলেও, করের চাপ এবং আমদানির কঠোর নীতিমালার কারণে শিল্পটির প্রবৃদ্ধি থমকে গেছে।

মূল চ্যালেঞ্জগুলো

১. উচ্চ কর ও আমদানি সীমাবদ্ধতা

  • পেইন্ট শিল্পের ওপর মোট ৮৯% কর আরোপ করা হয়েছে, যা এই খাতের বিকাশের প্রধান অন্তরায়।
  • পেইন্টকে বিলাসবহুল পণ্য হিসেবে বিবেচনা করায় কাঁচামাল আমদানিতে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
  • জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) কাঁচামালের উপর সম্পূরক শুল্ক ২০% থেকে ৩০% এবং পণ্যের উপর ৫% থেকে ১০% বাড়িয়েছে, যা উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি এবং বিক্রি কমার অন্যতম কারণ।

২. অর্থনৈতিক মন্দা ও চাহিদার সংকট

  • রিয়েল এস্টেট খাত, যা পেইন্টের প্রধান ক্রেতা, বর্তমানে মন্দার মধ্যে রয়েছে।
  • উচ্চ মূল্যের কারণে ক্রেতারা পেইন্ট কিনতে আগ্রহ হারাচ্ছেন, ফলে চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
  • ক্রেতারা নতুন বাড়ি নির্মাণ এবং পুরানো বাড়ির রঙ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত স্থগিত করছেন।

শিল্পের প্রবৃদ্ধি ও বাজার বিশ্লেষণ

  • দেশে ৩৩টি স্থানীয় ব্র্যান্ড পেইন্ট উৎপাদন করছে, যা অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণে সক্ষম।
  • বাজারের শেয়ার:
    • বার্জার পেইন্টস: ৫৪% (শীর্ষস্থান)
    • এশিয়ান পেইন্টস: ১৬%
    • নিপ্পন পেইন্ট: ৮%

  • পেইন্ট ব্যবহার:
    • বাংলাদেশে প্রতি ব্যক্তি ১.৪ কেজি পেইন্ট ব্যবহার করেন, যেখানে ভারতে ৩ কেজি এবং অন্যান্য এশিয়ান দেশে ৭-১০ কেজি ব্যবহার হয়।
    • এই ব্যবধান ইঙ্গিত দেয় যে, নতুন উদ্ভাবন এবং সাশ্রয়ী মূল্যের পণ্য দিয়ে চাহিদা বৃদ্ধি করা সম্ভব।

সম্ভাব্য সমাধান ও পুনরুদ্ধারের কৌশল

১. উদ্ভাবন ও পরিবেশবান্ধব পণ্য

  • নতুন উদ্ভাবন এবং পরিবেশবান্ধব পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে গ্রাহকদের আকর্ষণ করা সম্ভব।
  • ক্রেতাদের নিরাপদ এবং পরিবেশ-বান্ধব পণ্য প্রয়োজন, যা এই শিল্পের টিকে থাকার সম্ভাবনা বাড়াতে পারে।

২. কর হ্রাস ও নীতিগত পরিবর্তন

  • শিল্প প্রতিনিধিরা কর হ্রাস এবং পেইন্টকে বিলাসবহুল পণ্য হিসেবে বিবেচনা না করার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করেছেন।

  • সরকারের সহায়তা পেলে শিল্পটি পুনরুজ্জীবিত হতে পারে এবং নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।

৩. অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও চাহিদা বৃদ্ধি

  • দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং রিয়েল এস্টেট খাত পুনরায় চাঙ্গা হলে পেইন্টের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে।
  • নির্মাণ খাতের প্রসার এবং সংস্কারকাজ বাড়লে পেইন্টের বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

উপসংহার

বাংলাদেশের পেইন্ট শিল্প বর্তমানে কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হলেও, উদ্ভাবন, কর হ্রাস, এবং নীতিগত পরিবর্তনের মাধ্যমে এই শিল্পের পুনরুদ্ধার সম্ভব।
পরিবেশবান্ধব পণ্য এবং নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করা গেলে শিল্পটির সম্ভাবনা উজ্জ্বল হতে পারে।