১১:৪৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

স্থাপনায় হামলা দেশকে অরাজকতার দিকে নিয়ে যেতে পরে – পাকিস্তান সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি

  • Sarakhon Report
  • ০৩:১৮:৫৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • 21

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সারাংশ

  • ৯ মে’র ঘটনার পর সামরিক আদালতে বেসামরিক ব্যক্তিদের বিচার নিয়ে আইনি বিতর্ক চলছে
  • ইমরান খানের আইনজীবী ও বিচারপতিদের মধ্যে সাংবিধানিক বিষয়ে নানা প্রশ্ন ও যুক্তিতর্ক চলতে থাকে

পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সৈয়দ হাসান আজহার রিজভী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, রাজনৈতিক অসন্তোষের ফলে সামরিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর প্রবণতা দেশকে অরাজকতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। এই ধরনের আক্রমণ অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে তিনি সতর্ক করেন।

বিচারপতি নঈম আখতার আফগানের মতামত

বিচারপতি নঈম আখতার আফগান উল্লেখ করেন, বেলুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখোয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এর প্রভাব অন্যান্য প্রদেশগুলোর উপরও পড়ছে। তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাসী হামলার শিকার ব্যক্তিদের অধিকারের বিষয়টি উপেক্ষিত হচ্ছে, যখন সন্ত্রাসীদের মৌলিক অধিকার নিয়ে আদালতে বেশি আলোচনা হয়।

বিচারপতি আমিনউদ্দিনের ব্যাখ্যা

বিচারপতি আমিনউদ্দিন ব্যাখ্যা করেন যে, সামরিক আদালতগুলো সংসদীয় অনুমোদনের আওতায় কাজ করছে। তবে এটি নিয়ে ভুল ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে সামরিক বাহিনী নিজেরাই বিচারিক ক্ষমতা গ্রহণ করেছে।

৯ মে’র ঘটনা ও আইনি বিতর্ক

৯ মে’র ঘটনার পর সামরিক স্থাপনাগুলোতে আক্রমণের অভিযোগে বেসামরিক ব্যক্তিদের সামরিক আদালতে বিচার করা হয়, যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। সুপ্রিম কোর্টের সাত সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ ২৩ অক্টোবর ২০২৩ তারিখের এক আদেশের বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিলগুলো শুনছে, যেখানে সামরিক আদালতে বেসামরিক ব্যক্তিদের বিচার অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল।

আইনজীবীদের যুক্তি ও পাল্টা যুক্তি

  • ইমরান খানের আইনজীবী উজাইর করামাত ভান্ডারী:
    তিনি যুক্তি দেন, কোনো দেশে একই সাথে সাধারণ আদালত ও সামরিক আদালত নাগরিকদের বিচার করতে পারে না।
  • বিচারপতি জামাল খান মন্দোখাইলের প্রশ্ন:
    তিনি প্রশ্ন করেন, “সব ভুল কি তাহলে এই যুক্তির ভিত্তিতে স্বীকৃতি পেয়ে যাবে?”
  • মৃত্যুদণ্ড ও সন্ত্রাস দমন:
    বিচারপতি মন্দোখাইল প্রশ্ন করেন, “মৃত্যুদণ্ড দিলেই কি হত্যাকাণ্ড বন্ধ হয়ে যায়? কেন আমরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের আগেই তা প্রতিরোধের চেষ্টা করছি না?”

সাংবিধানিক সংশোধনী ও সামরিক আদালতের বৈধতা

আইনজীবী যুক্তি দেন যে, ২১তম সংশোধনীর মাধ্যমে সাংবিধানিক সুরক্ষা দেওয়া হয়েছিল, যা সামরিক আদালতে বেসামরিক ব্যক্তিদের বিচার করার বৈধতা প্রদান করে। তবে এফ.বি. আলী মামলায় কেউ তখন এর বিরোধিতা করেনি।

সাংবিধানিক কাঠামো ও বিচারপতিদের মতামত

  • বিচারপতি মন্দোখাইলের প্রশ্ন:
    “সংসদ কি সংবিধানের ঊর্ধ্বে?”
  • বিচারপতি মুহাম্মদ আলী মাজার:
    তিনি উল্লেখ করেন, জাতীয় পরিষদ থেকে পাস হওয়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে যে সামরিক বাহিনী অভিযুক্তদের হেফাজতে নিয়েছে।

ইমরান খানের অবস্থান

  • ৯ মে’র ঘটনায় নিন্দা:
    ইমরান খানের আইনজীবী জানান যে, তিনি লিখিতভাবে ৯ মে’র ঘটনাকে নিন্দা করেছেন এবং দোষীদের শাস্তি দাবি করেছেন। বিচারপতি রিজভী এই নিন্দাকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখেন।
  • প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সংক্রান্ত প্রশ্ন:
    বিচারপতি মন্দোখাইল প্রশ্ন করেন, “কোনো প্রধানমন্ত্রী কি নির্ধারিত মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারেন?” আইনজীবী জবাবে জানান, “পাঁচ বছর মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী ছয় বছর থাকতে পারেন না।”

সামরিক স্থাপনায় আক্রমণ ও রাজনৈতিক প্রভাব

বিচারপতি রিজভী উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে, রাজনৈতিক দলগুলো সামরিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানানো বন্ধ না করলে দেশ অরাজকতার দিকে যেতে পারে।

উপসংহার

পাকিস্তানে সামরিক আদালতে বেসামরিক ব্যক্তিদের বিচারের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। সামরিক আদালতের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে ভিন্নমত দেখা গেছে। কেউ বলছেন এটি সন্ত্রাস দমনে কার্যকর, আবার কেউ আশঙ্কা করছেন নাগরিক অধিকার লঙ্ঘিত হতে পারে। বিশেষ করে, সামরিক স্থাপনাগুলোতে আক্রমণের প্রবণতা অরাজকতা ডেকে আনতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিচারপতিরা।

সামান্য কমিয়ে বাংলাদেশি পণ্যে ৩৫ শতাংশ শুল্ক রাখলেন ট্রাম্প, আগস্ট থেকে কার্যকর

স্থাপনায় হামলা দেশকে অরাজকতার দিকে নিয়ে যেতে পরে – পাকিস্তান সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি

০৩:১৮:৫৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সারাংশ

  • ৯ মে’র ঘটনার পর সামরিক আদালতে বেসামরিক ব্যক্তিদের বিচার নিয়ে আইনি বিতর্ক চলছে
  • ইমরান খানের আইনজীবী ও বিচারপতিদের মধ্যে সাংবিধানিক বিষয়ে নানা প্রশ্ন ও যুক্তিতর্ক চলতে থাকে

পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সৈয়দ হাসান আজহার রিজভী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, রাজনৈতিক অসন্তোষের ফলে সামরিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর প্রবণতা দেশকে অরাজকতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। এই ধরনের আক্রমণ অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে তিনি সতর্ক করেন।

বিচারপতি নঈম আখতার আফগানের মতামত

বিচারপতি নঈম আখতার আফগান উল্লেখ করেন, বেলুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখোয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এর প্রভাব অন্যান্য প্রদেশগুলোর উপরও পড়ছে। তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাসী হামলার শিকার ব্যক্তিদের অধিকারের বিষয়টি উপেক্ষিত হচ্ছে, যখন সন্ত্রাসীদের মৌলিক অধিকার নিয়ে আদালতে বেশি আলোচনা হয়।

বিচারপতি আমিনউদ্দিনের ব্যাখ্যা

বিচারপতি আমিনউদ্দিন ব্যাখ্যা করেন যে, সামরিক আদালতগুলো সংসদীয় অনুমোদনের আওতায় কাজ করছে। তবে এটি নিয়ে ভুল ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে সামরিক বাহিনী নিজেরাই বিচারিক ক্ষমতা গ্রহণ করেছে।

৯ মে’র ঘটনা ও আইনি বিতর্ক

৯ মে’র ঘটনার পর সামরিক স্থাপনাগুলোতে আক্রমণের অভিযোগে বেসামরিক ব্যক্তিদের সামরিক আদালতে বিচার করা হয়, যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। সুপ্রিম কোর্টের সাত সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ ২৩ অক্টোবর ২০২৩ তারিখের এক আদেশের বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিলগুলো শুনছে, যেখানে সামরিক আদালতে বেসামরিক ব্যক্তিদের বিচার অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল।

আইনজীবীদের যুক্তি ও পাল্টা যুক্তি

  • ইমরান খানের আইনজীবী উজাইর করামাত ভান্ডারী:
    তিনি যুক্তি দেন, কোনো দেশে একই সাথে সাধারণ আদালত ও সামরিক আদালত নাগরিকদের বিচার করতে পারে না।
  • বিচারপতি জামাল খান মন্দোখাইলের প্রশ্ন:
    তিনি প্রশ্ন করেন, “সব ভুল কি তাহলে এই যুক্তির ভিত্তিতে স্বীকৃতি পেয়ে যাবে?”
  • মৃত্যুদণ্ড ও সন্ত্রাস দমন:
    বিচারপতি মন্দোখাইল প্রশ্ন করেন, “মৃত্যুদণ্ড দিলেই কি হত্যাকাণ্ড বন্ধ হয়ে যায়? কেন আমরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের আগেই তা প্রতিরোধের চেষ্টা করছি না?”

সাংবিধানিক সংশোধনী ও সামরিক আদালতের বৈধতা

আইনজীবী যুক্তি দেন যে, ২১তম সংশোধনীর মাধ্যমে সাংবিধানিক সুরক্ষা দেওয়া হয়েছিল, যা সামরিক আদালতে বেসামরিক ব্যক্তিদের বিচার করার বৈধতা প্রদান করে। তবে এফ.বি. আলী মামলায় কেউ তখন এর বিরোধিতা করেনি।

সাংবিধানিক কাঠামো ও বিচারপতিদের মতামত

  • বিচারপতি মন্দোখাইলের প্রশ্ন:
    “সংসদ কি সংবিধানের ঊর্ধ্বে?”
  • বিচারপতি মুহাম্মদ আলী মাজার:
    তিনি উল্লেখ করেন, জাতীয় পরিষদ থেকে পাস হওয়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে যে সামরিক বাহিনী অভিযুক্তদের হেফাজতে নিয়েছে।

ইমরান খানের অবস্থান

  • ৯ মে’র ঘটনায় নিন্দা:
    ইমরান খানের আইনজীবী জানান যে, তিনি লিখিতভাবে ৯ মে’র ঘটনাকে নিন্দা করেছেন এবং দোষীদের শাস্তি দাবি করেছেন। বিচারপতি রিজভী এই নিন্দাকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখেন।
  • প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সংক্রান্ত প্রশ্ন:
    বিচারপতি মন্দোখাইল প্রশ্ন করেন, “কোনো প্রধানমন্ত্রী কি নির্ধারিত মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারেন?” আইনজীবী জবাবে জানান, “পাঁচ বছর মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী ছয় বছর থাকতে পারেন না।”

সামরিক স্থাপনায় আক্রমণ ও রাজনৈতিক প্রভাব

বিচারপতি রিজভী উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে, রাজনৈতিক দলগুলো সামরিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানানো বন্ধ না করলে দেশ অরাজকতার দিকে যেতে পারে।

উপসংহার

পাকিস্তানে সামরিক আদালতে বেসামরিক ব্যক্তিদের বিচারের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। সামরিক আদালতের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে ভিন্নমত দেখা গেছে। কেউ বলছেন এটি সন্ত্রাস দমনে কার্যকর, আবার কেউ আশঙ্কা করছেন নাগরিক অধিকার লঙ্ঘিত হতে পারে। বিশেষ করে, সামরিক স্থাপনাগুলোতে আক্রমণের প্রবণতা অরাজকতা ডেকে আনতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিচারপতিরা।