সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
-
বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স একাডেমি (BIA) ব্যাংকারদের প্রশিক্ষণ প্রদান করছে, যাতে তারা ব্যাঙ্কশিওরেন্স লাইসেন্স নিয়ে দক্ষতার সঙ্গে বীমা পণ্য বিক্রি করতে পারে।
-
২০২৩ সালে সরকার ব্যাঙ্কশিওরেন্স চালু করে, যেখানে অনুমোদিত ব্যাংকগুলো জীবন ও সাধারণ বীমা পণ্য বিক্রি করতে পারছে। এটি বীমা প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর পাশাপাশি গ্রাহকদের জন্য সহজ ও সমন্বিত সেবা প্রদান করছে।
-
প্রশিক্ষিত ব্যাংকাররা বীমা পণ্যের প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও গ্রাহকসেবার অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে পেশাদারভাবে বীমা পণ্য বিক্রি করতে পারেন, যা প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
বাংলাদেশে বীমা কভারেজ ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। মূলত ঝুঁকি কভারেজ সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকা এবং বীমা কোম্পানির প্রতি গ্রাহকদের অনাস্থাই এর প্রধান কারণ।
বীমা শিক্ষায় বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স একাডেমির উদ্যোগ
গত এক বছরে বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স একাডেমি (BIA) এই সমস্যা সমাধানে কাজ করছে। তারা ব্যাংকারদের বীমা পণ্যের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, যাতে ব্যাংকগুলো ব্যাঙ্কশিওরেন্স লাইসেন্স নিয়ে বীমা পণ্য বিক্রি করতে পারে।
২০২৩ সালের মার্চ মাসে শুরু হওয়া এই উদ্যোগের আওতায় এখন পর্যন্ত ৫৮টি প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালিত হয়েছে, যেখানে ৩,০০০ এর বেশি ব্যাংকার অংশগ্রহণ করেছেন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই ব্যাংকাররা সরাসরি গ্রাহকদের কাছে বীমা পণ্য বিক্রির সঙ্গে যুক্ত।
বীমা প্রবৃদ্ধির নিম্নহার
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বীমা প্রবৃদ্ধি হার ২০১৬ সালে ০.৫০% ছিল, যা ২০২৩ সালে ০.৩৫%-এ নেমে এসেছে। প্রতিবেশী ভারতের তুলনায় এটি অত্যন্ত কম, যেখানে বীমা প্রবৃদ্ধি হার ৪.০%।
ব্যাঙ্কশিওরেন্স: নতুন সম্ভাবনার দুয়ার
২০২৩ সালে বাংলাদেশ সরকার ব্যাঙ্কশিওরেন্স চালু করে, যেখানে ব্যাংকগুলো বীমা কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারিত্ব করে তাদের পণ্য বিক্রি করতে পারে।
এই ব্যবস্থায় গ্রাহকদের আস্থা বাড়ানোর জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো জোর ব্যবস্থা নিয়েছে। ব্যাংকগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে যে, প্রশিক্ষণ শেষে BIA কর্তৃক প্রদত্ত সার্টিফিকেট IDRA-তে জমা দিতে হবে।
প্রচলিত ব্যবস্থার তুলনায় ব্যাঙ্কশিওরেন্সের সুবিধা
এটি প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় অনেক বেশি পেশাদার এবং সুসংগঠিত। সাধারণত বীমা কোম্পানির প্রতিনিধিরা যাদের বীমার প্রযুক্তিগত জ্ঞান কম, তারা পণ্য বিক্রি করে থাকেন। অন্যদিকে, ব্যাংকের প্রশিক্ষিত কর্মকর্তারা তাদের গ্রাহকসেবার অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে কার্যকরভাবে বীমা পণ্য বিক্রি করতে পারেন।
ব্যাংক খাতের চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশের ব্যাংক খাত বিভিন্ন কেলেঙ্কারির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে অনেক ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাঙ্কশিওরেন্স নীতিমালা অনুযায়ী, শুধুমাত্র সেইসব ব্যাংক ব্যাঙ্কশিওরেন্স পরিচালনা করতে পারবে যাদের অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ ৫.০%-এর নিচে রয়েছে।
অনুমোদিত ব্যাংক ও তাদের কার্যক্রম
ব্যাঙ্কশিওরেন্স পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও IDRA-এর অনুমোদন প্রয়োজন। অনুমোদন পাওয়ার পর একটি ব্যাংক সর্বোচ্চ তিনটি জীবন বীমা কোম্পানি ও তিনটি সাধারণ বীমা কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারিত্ব করতে পারবে।
সিটি ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, এবং ডাচ-বাংলা ব্যাংক ইতিমধ্যে সাধারণ বীমা পণ্য বিক্রির অনুমতি পেয়েছে। ছয়টি ব্যাংক জীবন বীমা পণ্য বিক্রির অনুমোদন পেয়েছে।
বীমা প্রশিক্ষণের গুরুত্ব
BIA-এর প্রশিক্ষণ ব্যাঙ্কশিওরেন্স কর্মকর্তাদের বীমা পণ্যের ধরন ও সম্ভাবনা সম্পর্কে গভীর জ্ঞান প্রদান করছে। একটি ব্যাংকের প্রধান ব্যাঙ্কশিওরেন্স কর্মকর্তা বলেন, এটি আর্থিক অন্তর্ভুক্তির প্রসার এবং সমন্বিত সেবার সুযোগ বাড়াতে সাহায্য করবে।
ব্যাঙ্কশিওরেন্সের সম্ভাবনা
ব্যান্কশিওরেন্স বিনিয়োগ ও সঞ্চয়ের পাশাপাশি ঝুঁকি কভারেজ প্রদান করে, যা গ্রাহকদের জন্য এটি আকর্ষণীয় করে তুলছে।
সাবেক একজন ব্যাংকার বলেন, প্রশিক্ষিত ব্যাংকাররা যদি বীমা পণ্য বিক্রি করেন, তাহলে গ্রাহকদের আর আলাদা করে বীমা কোম্পানিতে যেতে হবে না। ফলে পুরো প্রক্রিয়াটি সহজ ও কার্যকর হবে।