০৪:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫
আলোচনার পরিবর্তে কেন শিক্ষকদের ওপর সহিংসতা — প্রশ্ন জিএম কাদেরের রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে নিউজিল্যান্ডের ৯ রানে জয়; ওয়েস্ট ইনডিজকে হারিয়ে সিরিজ নিশ্চিত করল কিউইরা নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করল তুরস্ক নাটোরে পুলিশের হাত থেকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ কর্মীকে ছিনিয়ে নিল জনতা বেতন কাঠামো উন্নয়ন ও উপদেষ্টাদের পদত্যাগ দাবিতে প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলন অব্যাহত রাজশাহীতে তাপমাত্রা নেমে ১৬.৫ ডিগ্রিতে: শীতের আগমনী বার্তা মোহাম্মদপুরে গ্যারেজে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত তিনটি যানবাহন শীতের আরাম নিশ্চিত করুন: বাংলাদেশে কোন গিজারগুলো সেরা ঢাকা-খুলনাসহ ১৫ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ ব্যাংকঅ্যাশিওরেন্স: শোকাহত পরিবারের পাশে দ্রুত সহায়তা

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৭২)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ ২০২৫
  • 59

শ্রী নিখিলনাথ রায়

এই উৎকোচ গ্রহণের জন্য যে তাঁহার নাম প্রকাশ করিয়াছে, তিনি তাহার সর্ব্ব-নাশ করিতে যথাসাধ্য চেষ্টা পাইয়াছেন। এই জন্যই মহারাজ নন্দকুমারের ফাঁসী। হেষ্টিংস সাহেবের সহিত জড়িত বলিয়া যে কান্তবাবুকেও আমরা সেই বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের ভীষণ হত্যায় লিপ্ত দেখিতে পাই, পূর্ব্বে আমরা ইহার উল্লেখ করিয়াছি। নন্দকুমারের বিচারের পর, রাজা নবকৃষ্ণপ্রমুখ কতিপয় দেশীয় লোক সুপ্রীমকোর্টের বিচারের প্রশংসা করিয়া ইম্পে সাহেবকে যে অভিনন্দনপত্র প্রদান করেন, তাহাদের মধ্যে কান্তবাবুরও নাম দেখা যায়।

হিন্দুর হিন্দুত্ব অনেক দিন ভারতবর্ষ হইতে চলিয়া গিয়াছে; নতুবা যাহারা দেশের উচ্চপদস্থ, তাহারা হিন্দু হইয়া কেমন করিয়া ব্রাহ্মণ-হত্যার সমর্থন করে, বুঝিতে পারি না। প্রথম ইংরেজরাজত্বে ব্রাহ্মণহত্যার ভিত্তিতে বাঙ্গালী জাতির উন্নতি আরম্ভ বলিয়া, দেবশাপের অগ্নিশিখায় তাহারা প্রতিনিয়ত দগ্ধ হইতেছে। এতদ্ভিন্ন বর্দ্ধমানের ও রাজশাহীর রাণীর নিকট হইতে অনেক টাকা গ্রহণেরও উল্লেখ দেখা যায়। কঠোরপ্রকৃতি ওয়ারেন হেষ্টিংস হইতে পুণ্যভূমি বারাণসী-ক্ষেত্রে যে ভীষণ অত্যাচারের স্রোতঃ প্রবাহিত হয়, তাহা কাহারও অবিদিত নাই।

চেৎ সিংহের নিকট হইতে বারংবার অর্থ শোষণ করিয়াও হেষ্টিংসের ব্রহ্মাণ্ডগ্রাসিনী লালসার নিবৃত্তি হয় নাই। ক্রমেই হতভাগ্য কাশীরাজকে কপর্দকবিহীন করিয়া, তাঁহার হস্ত হইতে বারাণসীরাজ্য বিচ্ছিন্ন করিয়া লওয়া হয়। চেৎ সিংহ এই ভয়ঙ্কর অত্যাচারে অবশেরে কাশী পরিত্যাগ করিয়া পলায়ন করিতে বাধ্য হন। কৃতান্তদূতের ভীষণ কবল হইতে নিস্তার পাইবার জন্য, রাজকুমারকে কাপুরুষতা অবলম্বন করিতে হইয়াছিল। এই সময়ে হেষ্টিংসের আদেশে চেৎ সিংহের মাতা, স্ত্রী ও অন্যান্য পরিবারগণ পশুপ্রকৃতি সৈনিকগণের হস্তে যে লাঞ্ছনা ভোগ করিয়াছিলেন, তাহা স্মরণ করিতে গেলে, শরীর রোমাঞ্চিত হইয়া উঠে।

রাজমাতা, রাজরাণী, পশুগণকর্তৃক লাঞ্ছিত, অবমানিত হইয়া ভিখারিণীবেশে দুর্গ হইতে বহিষ্কৃত হইতে বাধ্য হন। হেষ্টিংস চেৎ সিংহকে রাজ্যচ্যুত করিয়া, তাঁহাকে বারাণসীরাজ্য হইতে বিদূরিত করিয়া দেন। এই ব্যাপারে সকলে যেরূপ লাভ করিয়াছিলেন, কান্তবাবুও সেই রূপ নিজ লভ্যাংশ হইতে একবারে বঞ্চিত হন নাই। আমরা যথাস্থানে তাহার নির্দেশ করিতেছি। কান্তবাবু বারাণসীর অত্যাচার হইতে আপনার স্বার্থসাধন করিলেও, সাক্ষাৎসম্বন্ধে তিনি এ বিষয়ে লিপ্ত ছিলেন না। তবে, হেষ্টিংসের সহিত তাঁহার একরূপ ‘সমবায় সম্বন্ধ’ থাকায়, তিনি সে সময়ে কাশী-রাজ্যে উপস্থিত ছিলেন বলিয়া, লভ্যাংশ প্রাপ্ত হইয়াছিলেন।

 

 

জনপ্রিয় সংবাদ

আলোচনার পরিবর্তে কেন শিক্ষকদের ওপর সহিংসতা — প্রশ্ন জিএম কাদেরের

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৭২)

১১:০০:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ ২০২৫

শ্রী নিখিলনাথ রায়

এই উৎকোচ গ্রহণের জন্য যে তাঁহার নাম প্রকাশ করিয়াছে, তিনি তাহার সর্ব্ব-নাশ করিতে যথাসাধ্য চেষ্টা পাইয়াছেন। এই জন্যই মহারাজ নন্দকুমারের ফাঁসী। হেষ্টিংস সাহেবের সহিত জড়িত বলিয়া যে কান্তবাবুকেও আমরা সেই বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের ভীষণ হত্যায় লিপ্ত দেখিতে পাই, পূর্ব্বে আমরা ইহার উল্লেখ করিয়াছি। নন্দকুমারের বিচারের পর, রাজা নবকৃষ্ণপ্রমুখ কতিপয় দেশীয় লোক সুপ্রীমকোর্টের বিচারের প্রশংসা করিয়া ইম্পে সাহেবকে যে অভিনন্দনপত্র প্রদান করেন, তাহাদের মধ্যে কান্তবাবুরও নাম দেখা যায়।

হিন্দুর হিন্দুত্ব অনেক দিন ভারতবর্ষ হইতে চলিয়া গিয়াছে; নতুবা যাহারা দেশের উচ্চপদস্থ, তাহারা হিন্দু হইয়া কেমন করিয়া ব্রাহ্মণ-হত্যার সমর্থন করে, বুঝিতে পারি না। প্রথম ইংরেজরাজত্বে ব্রাহ্মণহত্যার ভিত্তিতে বাঙ্গালী জাতির উন্নতি আরম্ভ বলিয়া, দেবশাপের অগ্নিশিখায় তাহারা প্রতিনিয়ত দগ্ধ হইতেছে। এতদ্ভিন্ন বর্দ্ধমানের ও রাজশাহীর রাণীর নিকট হইতে অনেক টাকা গ্রহণেরও উল্লেখ দেখা যায়। কঠোরপ্রকৃতি ওয়ারেন হেষ্টিংস হইতে পুণ্যভূমি বারাণসী-ক্ষেত্রে যে ভীষণ অত্যাচারের স্রোতঃ প্রবাহিত হয়, তাহা কাহারও অবিদিত নাই।

চেৎ সিংহের নিকট হইতে বারংবার অর্থ শোষণ করিয়াও হেষ্টিংসের ব্রহ্মাণ্ডগ্রাসিনী লালসার নিবৃত্তি হয় নাই। ক্রমেই হতভাগ্য কাশীরাজকে কপর্দকবিহীন করিয়া, তাঁহার হস্ত হইতে বারাণসীরাজ্য বিচ্ছিন্ন করিয়া লওয়া হয়। চেৎ সিংহ এই ভয়ঙ্কর অত্যাচারে অবশেরে কাশী পরিত্যাগ করিয়া পলায়ন করিতে বাধ্য হন। কৃতান্তদূতের ভীষণ কবল হইতে নিস্তার পাইবার জন্য, রাজকুমারকে কাপুরুষতা অবলম্বন করিতে হইয়াছিল। এই সময়ে হেষ্টিংসের আদেশে চেৎ সিংহের মাতা, স্ত্রী ও অন্যান্য পরিবারগণ পশুপ্রকৃতি সৈনিকগণের হস্তে যে লাঞ্ছনা ভোগ করিয়াছিলেন, তাহা স্মরণ করিতে গেলে, শরীর রোমাঞ্চিত হইয়া উঠে।

রাজমাতা, রাজরাণী, পশুগণকর্তৃক লাঞ্ছিত, অবমানিত হইয়া ভিখারিণীবেশে দুর্গ হইতে বহিষ্কৃত হইতে বাধ্য হন। হেষ্টিংস চেৎ সিংহকে রাজ্যচ্যুত করিয়া, তাঁহাকে বারাণসীরাজ্য হইতে বিদূরিত করিয়া দেন। এই ব্যাপারে সকলে যেরূপ লাভ করিয়াছিলেন, কান্তবাবুও সেই রূপ নিজ লভ্যাংশ হইতে একবারে বঞ্চিত হন নাই। আমরা যথাস্থানে তাহার নির্দেশ করিতেছি। কান্তবাবু বারাণসীর অত্যাচার হইতে আপনার স্বার্থসাধন করিলেও, সাক্ষাৎসম্বন্ধে তিনি এ বিষয়ে লিপ্ত ছিলেন না। তবে, হেষ্টিংসের সহিত তাঁহার একরূপ ‘সমবায় সম্বন্ধ’ থাকায়, তিনি সে সময়ে কাশী-রাজ্যে উপস্থিত ছিলেন বলিয়া, লভ্যাংশ প্রাপ্ত হইয়াছিলেন।