সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
সহায়তা তহবিলে প্রতারণার অভিযোগ
এমন একটি মানবিক উদ্যোগেও কিছু অসাধু ব্যক্তি ভুয়া তথ্য দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। সূত্র অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত অন্তত ৫০ জনের বিরুদ্ধে ভুয়া তথ্য দিয়ে ফাউন্ডেশন থেকে অর্থ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে কয়েকজনকে অর্থ ফেরত দিতে বলা হয়েছে এবং তিনজনকে গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
প্রতারণার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ
দুঘর্টনায় আহত একজনের প্রতারণা
- অভিযোগ: ৭ই আগস্ট সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।
- প্রতারণার ধরন: তিনি দাবি করেন, পাবনায় ৪ঠা আগস্ট আন্দোলনে গিয়ে আহত হয়েছেন। সেই তথ্য দেখিয়ে ফাউন্ডেশন থেকে অর্থ নিয়েছেন।
- উন্মোচন: দ্বিতীয় ধাপে আরও অর্থ চাইতে গেলে ফাউন্ডেশন তার মেডিকেল রিপোর্টে সড়ক দুর্ঘটনার (‘আরটিএ’) বিষয়টি দেখে সন্দেহ করে।
- ফলাফল: জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন যে তিনি কোনো আন্দোলনে আহত হননি। টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আপাতত মামলা থেকে অব্যাহতি পান।
এজন প্রতারকের ঘটনা
- অভিযোগ: তিনি পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, তবে মূলত আন্দোলনে আহত হননি।
- প্রতারণার ধরন: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে (এমআইএস) নিজের নাম যুক্ত করে বরাদ্দের টাকা নেন।
- উন্মোচন: তদন্তে বেরিয়ে আসে যে, ৩০শে ডিসেম্বর অটোরিকশা ছিনতাইয়ের সময় গুলিবিদ্ধ ও ছুরিকাঘাতের কারণে তিনি পা হারান।
- ফলাফল: মানবিক কারণে মামলা না করলেও টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে মুচলেকা নেওয়া হয়।
অর্ধেক আমাকে দিতে হবে
- অভিযোগ: আহত ব্যক্তিদের প্রলুব্ধ করে বলতেন যে, “এমআইএসে নাম তুলতে পারলে ফাউন্ডেশন থেকে পাওয়া অর্থের অর্ধেক আমাকে দিতে হবে।”
- প্রতারণার ধরন: ভুল তথ্য দিয়ে আহতদের বুঝিয়ে ঘুষ নিতেন।
- ফলাফল: একজন আহতের বাবার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নেওয়ার পর ফাউন্ডেশন অফিসে ডেকে স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। বর্তমানে তিনি জেলহাজতে আছেন।
ভেরিফিকেশন সেলের ভূমিকা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
জুলাই ফাউন্ডেশনের ভেরিফিকেশন সেল থেকে বলা হয়েছে, আসল ভুক্তভোগীদের সহায়তা নিশ্চিত করতে তারা প্রতিটি তথ্য অত্যন্ত সতর্কতার সাথে যাচাই করেন। মেডিকেল সার্টিফিকেটের তারিখ, আহত হওয়ার ধরন, ভর্তি হওয়ার বিবরণসহ সবকিছু মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে পঙ্গু হাসপাতালে অনেক মানুষ একসঙ্গে ভর্তি থাকায় কিছু ভুয়া লোকও তালিকায় ঢুকে গেছে, তবে তাদের চিহ্নিত করতে কাজ চলছে।
ফাউন্ডেশনের লিগ্যাল অফিসার অ্যাডভোকেট পায়েল জানান, ইতোমধ্যে বেশ কিছু ভুয়া আহতকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে মামলা দায়ের, শোকজ নোটিশ, কিংবা অর্থ ফেরতের মুচলেকা নেওয়া—এমন তিন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
ফাউন্ডেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. জাহিদ হোসেন সতর্ক করে বলেন, কেউ ভুল তথ্য দিয়ে অর্থ নিয়ে গেলে কিংবা নেওয়ার চেষ্টা করলে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে ফাউন্ডেশন পিছপা হবে না।
আইনি পদক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
- রাজধানীর রমনা থানায় দায়ের করা ২টি মামলায় ইতোমধ্যে ৩ জন জেলহাজতে আছেন।
- প্রায় ৫০ জনের বেশি প্রতারক অর্থ ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মুচলেকা দিয়েছেন। সময়মতো টাকা ফেরত না দিলে তাদের বিরুদ্ধেও মামলা হবে।
- যেসব শহীদ পরিবারের সদস্য এককভাবে বরাদ্দকৃত টাকা তুলে অন্যদের বঞ্চিত করেছেন, তাদের আইনি নোটিশের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রয়োজনে ভবিষ্যতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সংক্ষিপ্তসার
জুলাই শহীদ ফাউন্ডেশন শহীদ ও আহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে আসছে। তবে কিছু অসাধু ব্যক্তির মিথ্যা তথ্য ও প্রতারণার মাধ্যমে তহবিল আত্মসাতের চেষ্টা ফাউন্ডেশনকে সতর্ক হতে বাধ্য করেছে। যথাযথ যাচাই-বাছাই শেষে ফাউন্ডেশন এখন মামলা, অর্থ ফেরত ও মুচলেকা গ্রহণের মতো কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। উদ্দেশ্য একটাই—প্রকৃত ভুক্তভোগীদের যেন সঠিক সহায়তা পৌঁছাতে পারে এবং প্রতারণা রোধ নিশ্চিত করা যায়।