০৪:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

রণক্ষেত্রে (পর্ব-০৮)

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫
  • 28

আর্কাদি গাইদার

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

আবার সূর্য উঠল, আবার গরম হয়ে উঠল চারিদিক। শুরু হয়ে গেল পাখপাখালির ডাক। একঝাঁক সারস সার বেধে আকাশে উড়তে-উড়তে খুশিতে ডাকাডাকি শুরু করল। আমার মুখেও হাসি ফুটল আবার। রাত ভোর হয়ে গেছে, মন-খারাপ করার মতো আর কোনো দুঃখের চিন্তা মাথায় নেই। তখন কেবল একটিমাত্র চিন্তা- অল্প কিছু খাবার পাওয়া যায় কোথায়।

দুশো পাও এগোই নি, এমন সময় হাঁসের ডাক আর শুয়োরের ঘোঁত-ঘোঁত শব্দ কানে এল। গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে দেখলুম, একটা বিচ্ছিন্ন খামারবাড়ির সবুজ রঙ-করা ছাদটা দেখা যাচ্ছে।

ঠিক করলুম, ‘ওইখানেই যাই। যদি সন্দেহ করার মতো কিছু না পাই, তাহলে পথের সন্ধান নেব আর কিছু খেতে চাইব।’

একটা এ্যার-ঝোপের আড়ালে এসে দাঁড়ালুম। চারিদিক নিস্তব্ধ। কোথাও জনমানবের কোনো চিহ্ন ছিল না। বাড়িটার চিমনি দিয়ে হাল্কা ধোঁয়া উঠছিল। ছোট্ট এক পাল হাঁস দুলে-দুলে আমার দিকে আসছিল। হঠাৎ পাশেই মটু করে একটা ডাল ভাঙার অস্পষ্ট শব্দ হল। সঙ্গে সঙ্গে পা দুটোকে তৈরি রেখে মাথাটা ঘোরালুম। কিন্তু ভয় পাওয়ার জায়গায় এবার আমার অবাক হবার পালা।

দেখলুম, আমার কাছ থেকে দশ পায়ের মধ্যে একটা ঝোপের আড়াল থেকে মানুষের একজোড়া চোখ একদৃষ্টে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখজোড়া যার সে ওই খামারবাড়িটার মালিক নয়, কারণ সে-ও ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে খামারের উঠোনটা লক্ষ্য করছিল। কিছুক্ষণ সতর্কভাবে পরস্পরের দিকে তাকিয়ে রইলুম আমরা, যেন একই শিকার ধরতে উদ্যত দুই বুনো জন্তুর মধ্যে মুখোমুখি দেখা হয়ে গেছে। তারপর আমাদের মধ্যে যেন একটা নীরব বোঝাপড়া হয়ে গেল। আমরা আবার ঝোপের মধ্যে ফিরে গিয়ে পরস্পরের কাছে গেলুম।

ছেলেটা ছিল আমারই সমান লম্বা। বয়েস প্রায় সতেরো হবে বলে ধারণা হল। ওর শক্তসমর্থ, পেশীবহুল দেহে চড়ানো ছিল কালো পশমী কাপড়ের ডবল-রেস্ট একটা কোট, কিন্তু কোটে একটিও বোতাম ছিল না। দেখে মনে হচ্ছিল, বোতামগুলো যেন ইচ্ছে করেই সব কেটে নেয়া হয়েছে। ওর ট্রাউজার্সের পা-দুটো ছিল কাদামাখা উচু বুটজুতোর কানার মধ্যে গোঁজা আর তাতে কয়েকটা শুকনো চোরকাঁটা লেগে ছিল।

 

রণক্ষেত্রে (পর্ব-০৮)

০৮:০০:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫

আর্কাদি গাইদার

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

আবার সূর্য উঠল, আবার গরম হয়ে উঠল চারিদিক। শুরু হয়ে গেল পাখপাখালির ডাক। একঝাঁক সারস সার বেধে আকাশে উড়তে-উড়তে খুশিতে ডাকাডাকি শুরু করল। আমার মুখেও হাসি ফুটল আবার। রাত ভোর হয়ে গেছে, মন-খারাপ করার মতো আর কোনো দুঃখের চিন্তা মাথায় নেই। তখন কেবল একটিমাত্র চিন্তা- অল্প কিছু খাবার পাওয়া যায় কোথায়।

দুশো পাও এগোই নি, এমন সময় হাঁসের ডাক আর শুয়োরের ঘোঁত-ঘোঁত শব্দ কানে এল। গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে দেখলুম, একটা বিচ্ছিন্ন খামারবাড়ির সবুজ রঙ-করা ছাদটা দেখা যাচ্ছে।

ঠিক করলুম, ‘ওইখানেই যাই। যদি সন্দেহ করার মতো কিছু না পাই, তাহলে পথের সন্ধান নেব আর কিছু খেতে চাইব।’

একটা এ্যার-ঝোপের আড়ালে এসে দাঁড়ালুম। চারিদিক নিস্তব্ধ। কোথাও জনমানবের কোনো চিহ্ন ছিল না। বাড়িটার চিমনি দিয়ে হাল্কা ধোঁয়া উঠছিল। ছোট্ট এক পাল হাঁস দুলে-দুলে আমার দিকে আসছিল। হঠাৎ পাশেই মটু করে একটা ডাল ভাঙার অস্পষ্ট শব্দ হল। সঙ্গে সঙ্গে পা দুটোকে তৈরি রেখে মাথাটা ঘোরালুম। কিন্তু ভয় পাওয়ার জায়গায় এবার আমার অবাক হবার পালা।

দেখলুম, আমার কাছ থেকে দশ পায়ের মধ্যে একটা ঝোপের আড়াল থেকে মানুষের একজোড়া চোখ একদৃষ্টে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখজোড়া যার সে ওই খামারবাড়িটার মালিক নয়, কারণ সে-ও ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে খামারের উঠোনটা লক্ষ্য করছিল। কিছুক্ষণ সতর্কভাবে পরস্পরের দিকে তাকিয়ে রইলুম আমরা, যেন একই শিকার ধরতে উদ্যত দুই বুনো জন্তুর মধ্যে মুখোমুখি দেখা হয়ে গেছে। তারপর আমাদের মধ্যে যেন একটা নীরব বোঝাপড়া হয়ে গেল। আমরা আবার ঝোপের মধ্যে ফিরে গিয়ে পরস্পরের কাছে গেলুম।

ছেলেটা ছিল আমারই সমান লম্বা। বয়েস প্রায় সতেরো হবে বলে ধারণা হল। ওর শক্তসমর্থ, পেশীবহুল দেহে চড়ানো ছিল কালো পশমী কাপড়ের ডবল-রেস্ট একটা কোট, কিন্তু কোটে একটিও বোতাম ছিল না। দেখে মনে হচ্ছিল, বোতামগুলো যেন ইচ্ছে করেই সব কেটে নেয়া হয়েছে। ওর ট্রাউজার্সের পা-দুটো ছিল কাদামাখা উচু বুটজুতোর কানার মধ্যে গোঁজা আর তাতে কয়েকটা শুকনো চোরকাঁটা লেগে ছিল।