০৬:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

সারাদেশে ডেঙ্গুর বিস্তার উদ্বেগজনকঃ দেশব্যাপী মশা নিধনে কতটা প্রস্তুত বাংলাদেশ?

সারাংশ

  • •জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতায় এডিস মশার প্রজনন বেড়েছে
  • •অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং নির্বিচারে রাসায়নিক ব্যবহারে ইকোসিস্টেমে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে
  • •সরকার ঢাকাসহ কিছু বড় শহরে মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করলেও, সারাদেশে এখনো সমন্বিত প্রস্তুতির অভাব রয়েছে

প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, দেশের প্রায় প্রতিটি বিভাগীয় ও জেলা শহরেও ডেঙ্গু ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার কারণে এডিস মশার প্রজনন বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে প্রতিবেশ ব্যবস্থার (ইকোসিস্টেম) সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই মশা নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি হয়ে উঠেছে।

ডেঙ্গুর বিস্তার ও পরিবেশ

এ বছর ডেঙ্গু মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকেই রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর ভিড়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহেই দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৫০টির বেশি জেলায় ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত নগরায়ণ, জলাবদ্ধতা, অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হওয়ায় এডিস মশার উপদ্রব বাড়ছে।

Why Are Mosquitoes Important? For Ecosystem

ইকোসিস্টেমের ভারসাম্য ও মশা নিয়ন্ত্রণ

পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকৃতির ইকোসিস্টেমের ভারসাম্য বজায় রেখে মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় ও নির্বিচারে রাসায়নিক প্রয়োগ করলে পরিবেশের ভারসাম্য আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা এবং জনস্বাস্থ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি অনুসরণ জরুরি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, “রাসায়নিকের অত্যাধিক ব্যবহারে পরিবেশের আরও ক্ষতি হবে। পরিবেশবান্ধব উপায়ে সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে মশা নিয়ন্ত্রণ জরুরি।”

দেশব্যাপী প্রস্তুতি কতটা?

সরকার ইতোমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনসহ বড় শহরগুলোতে নিয়মিত মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব কার্যক্রম মূলত রাজধানীকেন্দ্রিক হওয়ায় সারাদেশে এখনও সমন্বিতভাবে মশা নিধনে উল্লেখযোগ্য প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে না। গ্রামাঞ্চল বা জেলা শহরগুলোতে স্থানীয় সরকার ও পৌরসভাগুলোর পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ও সচেতনতার অভাব রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অভিযান, রাজধানীর ৬ স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরিচালক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, “সরকার ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশব্যাপী কার্যক্রম জোরদার করার চেষ্টা করছে। তবে জনসচেতনতা বৃদ্ধি না পেলে কেবল সরকারি কার্যক্রমে সফলতা আসবে না।”

করণীয় কী?

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এখনই দেশের প্রতিটি এলাকায় স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে মশক নিধন কার্যক্রম চালানো দরকার। এছাড়া ডেঙ্গুর ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে পরিবেশবান্ধব কীটনাশক ব্যবহার, পরিচ্ছন্নতা অভিযান এবং জনসচেতনতামূলক প্রচারণা জোরদার করতে হবে। একইসঙ্গে মশা নিয়ন্ত্রণে পরিবেশের ভারসাম্য যাতে নষ্ট না হয়, সেদিকেও বিশেষ মনোযোগ দেওয়া দরকার।

এ বিষয়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান বলেন, “শুধু ঢাকা নয়, পুরো দেশে ব্যাপকভাবে মশা নিধন কর্মসূচি গ্রহণ ও কার্যকর করার বিকল্প নেই। তবে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখেই এটি করতে হবে।”

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সময় থাকতে দেশব্যাপী সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ না করলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বৃক্ষরোপণ অভিযান-২০২৫ এর উদ্বোধন করলেন সেনাবাহিনী প্রধান

সারাদেশে ডেঙ্গুর বিস্তার উদ্বেগজনকঃ দেশব্যাপী মশা নিধনে কতটা প্রস্তুত বাংলাদেশ?

০৪:২৭:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫

সারাংশ

  • •জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতায় এডিস মশার প্রজনন বেড়েছে
  • •অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং নির্বিচারে রাসায়নিক ব্যবহারে ইকোসিস্টেমে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে
  • •সরকার ঢাকাসহ কিছু বড় শহরে মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করলেও, সারাদেশে এখনো সমন্বিত প্রস্তুতির অভাব রয়েছে

প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, দেশের প্রায় প্রতিটি বিভাগীয় ও জেলা শহরেও ডেঙ্গু ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার কারণে এডিস মশার প্রজনন বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে প্রতিবেশ ব্যবস্থার (ইকোসিস্টেম) সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই মশা নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি হয়ে উঠেছে।

ডেঙ্গুর বিস্তার ও পরিবেশ

এ বছর ডেঙ্গু মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকেই রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর ভিড়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহেই দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৫০টির বেশি জেলায় ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত নগরায়ণ, জলাবদ্ধতা, অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হওয়ায় এডিস মশার উপদ্রব বাড়ছে।

Why Are Mosquitoes Important? For Ecosystem

ইকোসিস্টেমের ভারসাম্য ও মশা নিয়ন্ত্রণ

পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকৃতির ইকোসিস্টেমের ভারসাম্য বজায় রেখে মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় ও নির্বিচারে রাসায়নিক প্রয়োগ করলে পরিবেশের ভারসাম্য আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা এবং জনস্বাস্থ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি অনুসরণ জরুরি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, “রাসায়নিকের অত্যাধিক ব্যবহারে পরিবেশের আরও ক্ষতি হবে। পরিবেশবান্ধব উপায়ে সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে মশা নিয়ন্ত্রণ জরুরি।”

দেশব্যাপী প্রস্তুতি কতটা?

সরকার ইতোমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনসহ বড় শহরগুলোতে নিয়মিত মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব কার্যক্রম মূলত রাজধানীকেন্দ্রিক হওয়ায় সারাদেশে এখনও সমন্বিতভাবে মশা নিধনে উল্লেখযোগ্য প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে না। গ্রামাঞ্চল বা জেলা শহরগুলোতে স্থানীয় সরকার ও পৌরসভাগুলোর পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ও সচেতনতার অভাব রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অভিযান, রাজধানীর ৬ স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরিচালক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, “সরকার ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশব্যাপী কার্যক্রম জোরদার করার চেষ্টা করছে। তবে জনসচেতনতা বৃদ্ধি না পেলে কেবল সরকারি কার্যক্রমে সফলতা আসবে না।”

করণীয় কী?

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এখনই দেশের প্রতিটি এলাকায় স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে মশক নিধন কার্যক্রম চালানো দরকার। এছাড়া ডেঙ্গুর ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে পরিবেশবান্ধব কীটনাশক ব্যবহার, পরিচ্ছন্নতা অভিযান এবং জনসচেতনতামূলক প্রচারণা জোরদার করতে হবে। একইসঙ্গে মশা নিয়ন্ত্রণে পরিবেশের ভারসাম্য যাতে নষ্ট না হয়, সেদিকেও বিশেষ মনোযোগ দেওয়া দরকার।

এ বিষয়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান বলেন, “শুধু ঢাকা নয়, পুরো দেশে ব্যাপকভাবে মশা নিধন কর্মসূচি গ্রহণ ও কার্যকর করার বিকল্প নেই। তবে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখেই এটি করতে হবে।”

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সময় থাকতে দেশব্যাপী সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ না করলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।