আর্কাদি গাইদার
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
ধোঁয়ার গন্ধওয়ালা ঝলসানো হাঁসটাকে ছি’ড়ে টুকরো-টুকরো করে পরম তৃপ্তিতে ভোজ লাগালুম আমরা। আর বন্ধুর মতো দু-জনে গল্পগুজব শুরু করলুম।
সঙ্গী জুটে যাওয়ায় ভারি খুশি হয়েছিলুম সেদিন। আমার মনে ফের নতুন করে সাহস ফিরে এল। ভাবলুম, যে-বিপদে জড়িয়ে পড়েছি দু-জনে মিলে নিশ্চয় আমরা তা থেকে উদ্ধারের একটা উপায় খুজে বের করতে পারব।
‘সূর্য’ আকাশে থাকতে-থাকতে এস খানিক ঘুমিয়ে নিই,’ আমার নতুন সঙ্গী পরামর্শ দিল। ‘অন্তত এখন ঘুমটা তো ভালো হবে। রাত্রে যা ঠান্ডা, ঘুমনো যাবে ना।’
একটা ফাঁকা জায়গা বেছে নিয়ে শুলুম আমরা। সঙ্গে সঙ্গে ঢুলুনি এসে গেল। খুব সম্ভব ঘুমিয়েই পড়েছিলুম, কিন্তু একটা হতচ্ছাড়া পি’পড়ে আমার নাকের মধ্যে ঢুকে পড়ায় ঘুমটা গেল ভেঙে। তাড়াতাড়ি উঠে বসে নাক ঝাড়লুম। আমার সঙ্গীটি দেখলুম গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ওর টিউনিকের গলার বোতামটা খোলা আর কলারের ভেতরদিকে ক্যাম্বিসের আন্তরটা দেখা যাচ্ছে। দেখি, সেই আন্তরের গায়ে কালো কালিতে ছাপমারা কটা অক্ষর ‘সি-টি. এ. সি. সি.।’
ভাবলুম, ‘ওটা আবার কোন্ ইশকুল? আমার বেল্টের বসে তো ‘এ. টি. এচ. এস’ এই চারটে অক্ষর খোদাই-করা। তার মানে, ‘আরুজ্জামাস টেকনিক্যাল হাই স্কুল’। কিন্তু ওর দেখছি লেখা আছে প্রথমে ‘সি-টি.’, তারপর ‘এ.সি.সি.’।’ অক্ষর কটার মানে নানাভাবে বের করার চেষ্টা করলুম, কিন্তু পারলুম না। ভাবলুম, ‘ও জেগে উঠলে পর জানতে চাইব।’
গুরুপাক খাবার খেয়ে তেষ্টা পেয়ে গিয়েছিল। কাছাকাছি কোথাও জল ছিল না। তাই ঠিক করলুম খাদের একেবারে তলায় নামব। ধারণা ছিল ওখানে নিশ্চয়ই নদীর সন্ধান পাওয়া যাবে। সত্যিই ছোট নদীর সন্ধান পাওয়া গেল, কিন্তু তার পাড়ের কাছটা পাঁকে এত পেছল যে নদীতে নামা সম্ভব হল না। একটা শুকনো জায়গার সন্ধানে তাই আরও খানিকটা এগিয়ে গেলুম। খাদের ভিতরে দেখলুম নদীর পাশে পাশে একটা ঘোড়া গাড়ি চলার সরু রাস্তা চলে গেছে। সেখানে ভিজে মাটির ওপর ঘোড়ার খুরের দাগ আর ঘোড়ার টাটকা নাদ নজরে পড়ল। দেখে মনে হল যেন সেই দিন সকালেই একপাল ঘোড়াকে ওই মেঠো পথ ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
Leave a Reply