সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
- চার-তারকা জেনারেলদের অবসর গ্রহণের বয়সসীমা ৬০ থেকে ৬৩ বছর করা হয়েছে
- এই পরিবর্তন সামরিক বাহিনীর অতীতের “দ্বৈত কার্যকারিতা” ফিরিয়ে আনতে পারে, যা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি
- আইনটি যথাযথ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পাস হয়েছে, যদিও আলোচনা সংক্ষিপ্ত করে দ্রুত সম্পন্ন করা হয়
ইন্দোনেশিয়ার প্রতিনিধি পরিষদ (ডিপিআর) সম্প্রতি সামরিক বাহিনী (টিএনআই) সম্পর্কিত আইনের সংশোধনী অনুমোদন করেছে। নতুন আইনের ফলে সক্রিয় সামরিক সদস্যরা আরও বেশি বেসামরিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ পাবেন।
সংশোধনীর মূল বিষয়বস্তু
আগে টিএনআই সদস্যরা শুধুমাত্র প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এবং জাতীয় স্থিতিস্থাপকতা ইনস্টিটিউটসহ ১০টি সংস্থায় কাজ করতে পারতেন। নতুন সংশোধনীর ফলে আরও পাঁচটি সংস্থা যোগ হয়েছে:
- জাতীয় সীমানা নিয়ন্ত্রণ সংস্থা
- জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা
- জাতীয় সন্ত্রাসবিরোধী সংস্থা
- সামুদ্রিক নিরাপত্তা সংস্থা
- অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস
এছাড়াও, চার-তারকা জেনারেলদের অবসর গ্রহণের বয়সসীমা ৬০ থেকে বাড়িয়ে ৬৩ বছর করা হয়েছে।
সমালোচনার ঝড়
সমালোচকরা মনে করেন, এই পরিবর্তন সামরিক বাহিনীর অতীতের “দ্বৈত কার্যকারিতা” ফিরিয়ে আনছে, যা ১৯৯৮ সালে সুহার্তোর পতনের পর বন্ধ করা হয়েছিল। আইন বিশেষজ্ঞ ও ইন্দোনেশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুলিস্তিয়োয়াতি ইরিয়ান্তো বলেন, “এই আইনের প্রয়োজনীয়তা নেই, বরং এটি সামরিকতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারে।”
গণতন্ত্রের জন্য হুমকি?
সুশীল সমাজের কর্মীরা আইন সংশোধনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। শনিবার, সিভিল সোসাইটি কোয়ালিশন ফর সিকিউরিটি সেক্টর রিফর্মের তিনজন কর্মী জাকার্তায় আইন প্রণেতাদের এক বৈঠকে প্রতিবাদ জানালে, তাদের বলপ্রয়োগ করে বের করে দেওয়া হয়। এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
সরকারের প্রতিক্রিয়া
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী স্যাফরি স্যামসুদ্দিন বলেন, “এই সংশোধনী সামরিক বাহিনীর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করবে এবং ইন্দোনেশিয়ার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সহায়তা করবে।” সংসদের ডেপুটি স্পিকার সুফমি দাসকো আহমদ জানান, আইনটি যথাযথ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পাস হয়েছে, যদিও আলোচনা সংক্ষিপ্ত করে দ্রুত সম্পন্ন করা হয়।
রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সামরিক প্রভাব
প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তোর প্রশাসনে সামরিক প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তিনি ইতিমধ্যে ১২ জন প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তাকে মন্ত্রী বা উপমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেছেন। এছাড়া, মন্ত্রী ও আঞ্চলিক নেতাদের সামরিক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
সামরিক কর্মকর্তাদের বেসামরিক পদে নিয়োগ
- লেফটেন্যান্ট কর্নেল টেডি ইন্দ্রা উইজায়া – ক্যাবিনেট সেক্রেটারি
- মেজর জেনারেল নোভি হেলমি প্রাসেতিয়া – স্টেট লজিস্টিকস এজেন্সির প্রধান
এই নিয়োগগুলো সামরিক বাহিনীর বেসামরিক প্রশাসনে প্রভাব বিস্তারের একটি বড় পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।
গণতান্ত্রিক সংস্কারের উদ্বেগ
আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নতুন সংশোধনী সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা বাড়িয়ে বেসামরিক প্রশাসনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। অধ্যাপক ইরিয়ান্তো বলেন, “১৯৯৮ সালের গণতান্ত্রিক সংস্কারের ফলে সাংবিধানিক আদালত, বিচার কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। নতুন আইন সেই সংস্কারের ভিত্তি দুর্বল করতে পারে।”
সংসদের প্রতিক্রিয়া ও রাজনৈতিক দলের অবস্থান
প্রথমে ইন্দোনেশিয়ার ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অব স্ট্রাগল (পিডিআইপি) এই সংশোধনের বিরোধিতা করলেও পরে তারা সমর্থন জানায়। তারা মনে করে, সামরিক বাহিনী ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বৃহত্তর সহযোগিতা প্রশাসনের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি করতে পারে।
সংসদের ডেপুটি স্পিকার জানান, “এই সংশোধনী বেসামরিক প্রশাসনের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখার লক্ষ্যে প্রণীত হয়েছে।”
উপসংহার
ইন্দোনেশিয়ায় সামরিক বাহিনীর ভূমিকা সম্প্রসারণ নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। একদিকে সরকার এটিকে সামরিক কার্যকারিতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে, অন্যদিকে সমালোচকরা এটিকে গণতান্ত্রিক সংস্কারের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছেন। নতুন সংশোধনী সামরিক বাহিনীর শক্তি ও প্রভাব বাড়াবে, যা ইন্দোনেশিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যতের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।