শ্রী নিখিলনাথ রায়
তাহা আজিও অক্ষত অবস্থায় কান্ত বাবু ও চেৎসিংহ উভয়ের নামই স্মরণ করাইয়া দিতেছে। অনেক দ্রব্য লুণ্ঠনের কথা শুনিয়াছি; কিন্তু দালানলুঠের কথা আমরা জানিতাম না। চিরকাল পুকুরচুরীর কথা শুনিয়া আসিতেছি, কিন্তু কান্ত বাবুর নিকট হইতে দালানলুঠের কথাও জানিতে পারি। এই সমস্ত ব্যতীত কান্ত বাবুর আরও একটি সাভ হয়। চিরকালই কান্তবাবুর জমিদারীলাভের পিপাসাটা অত্যন্ত প্রবল ছিল। সে পিপাসা প্রবল হওয়ায় প্রভু হেষ্টিংস তাহাও মিটাইয়াছিলেন। তিনি বারাণসীরাজ্য হইতে স্বীয় প্রিয়পাত্র। কাজকে বালিয়া নামক একটি জমিদারী জায়গীরস্বরূপ প্রদান করেন।। বালিয়া এক্ষণে গাজীপুর জেলার অন্তভূত; অদ্যাপি তাহা কাশীমবাজার রাজবংশের অধীন রহিয়াছে।
সুতরাং আমরা দেখাইলাম যে, সাক্ষাৎ-সম্বন্ধে বারাণসীসংক্রান্ত ব্যাপারে লিপ্ত না থাকিলেও কান্ত বাবুর লভ্যাংশ বড় কম হয় নাই। হেষ্টিংসের সহিত যেখানে যে কোন ব্যাপারে গমন করিতেন, সেই স্থান হইতে নিজের সুবিধা করিয়া লইতে পারিতেন। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হইলে, মনুষ্যের সুবিধা আপনা হইতেই উপস্থিত হয়। -কান্তবাবু হেষ্টিংসের কিরূপ প্রিয়পাত্র ছিলেন এবং তাঁহার দ্বারা কিরূপে ভাগ্যলক্ষ্মীর অনুগ্রহ ভাজন হইয়াছিলেন, তাহা আমরা যথাসাধ্য প্রদর্শন করিতে চেষ্টা করিয়াছি। নিজের বেনীয়ানী ব্যতীত হেষ্টিংস সাহেব কান্তবাবুকে আর একটি সরকারী কাৰ্য্য প্রদান করেন, তাহা অবৈতনিক কি না জানা যায় না।
সম্ভবতঃ বেতন থাকিতে পারে। কোম্পানীর বিচারালয়সমূহে জাতিঘটিত কোন তর্ক উপস্থিত হইলে, কান্ত বাবুর উপর তাহার বিচারভার অর্পিত হইত। কিন্তু এই বিচারা-লয়ে উচ্চতর জাতিসমূহের বিচার হইত বলিয়া বোধ হয় না। কারণ, স্বয়ং হেষ্টিংস সাহেব একস্থানে সে কথার উল্লেখ করিয়াছেন। আমরা এই বিচারালয়সম্বন্ধে যাহা কিছু অবগত হইয়াছি, তাহা নিম্নে প্রকাশ করিতেছি। জাল করা অভিযোগে মহারাজ নন্দকুমার কারাগারে নিক্ষিপ্ত হইলে, কান্তবাবু জাতিঘটিত বিচারালয়ের প্রধান পদে প্রতিষ্ঠিত বলিয়া, নন্দকুমার কারাগারে সন্ধ্যা, তর্পণ ও আহারাদি করিতে পারেন কি না, এ বিষয়ে কান্ত বাবুকে জিজ্ঞাসা করিবার জন্য কাউন্সিলের অধিবেশনে ক্লেভারিং সাহেব প্রস্তাব করেন।
গবর্ণর জেনারেল তাহাতে অমত করিয়া বলেন যে, কান্ত বাবু কেবলই ছোট লোকদিগের জাতিঘটিত গোলযোগের বিষয় মীমাংসা করিয়া থাকেন এবং, জাতিঘটিত কোন বিষয়ের সিদ্ধান্ত তাঁহার উপর নির্ভর করা যাইতে পারে না। ‘কারণ তিনি স্বীয় ধৰ্ম্মশাস্ত্রে অভ্যস্ত নহেন। গবর্ণর বলেন যে, তিনি সেই বিচারালয়ের সর্ব্বপ্রধান কর্তা এবং নিজেই স্বীকার করিতেছেন যে, হিন্দুধৰ্ম্মসম্বন্ধে তিনি স্বয়ং কিছুই অবগত নহেন। হেষ্টিংস সাহেবের উক্ত কথা হইতে দুইটি বিষয়ের বিবেচনা করা যাইতে পারে। একটি বাস্তবিকই কান্ত বাবু হিন্দুশাস্ত্রের কিছুই অবগত না থাকায়, হেষ্টিংস সত্য কথাই বলিয়াছিলেন।