০৯:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
ট্রাম্পের বিপরীতে, প্রাচীন চীন এর শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানানোর ঐতিহ্য রণক্ষেত্রে (পর্ব-৭৭) সমুদ্রের ওপার থেকে নতুন স্বপ্ন: তাইওয়ান তরুণদের ফুচিয়ানে নতুন জীবনগাঁথা ব্যর্থ কলম্বো, গলের লড়াই -এ বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার ঘরে জয় কেন ? ‘আকাশ হয়ে যাই’ মিউজিক ভিডিতে প্রশংসিত পূর্ণিমা বৃষ্টি সাউথ চায়নান মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদন: ইরান আক্রমনে লাভ ক্ষতি ইউক্রেন দাবি করেছে বাংলাদেশের কিছু সংস্থার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিক ইইউ কলকাতার কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রীকে গণধর্ষণ, গ্রেফতার তিন ‘চুরির গম’ আমদানি: বাংলাদেশের ওপর ইইউ নিষেধাজ্ঞা চায় ইউক্রেন চীনের বৃহত্তম গভীর সমুদ্র গ্যাসক্ষেত্রের দ্বিতীয় পর্যায়ের উৎপাদন শুরু

মার্কিন শুল্ক বাড়ানোর আগেই বিদেশি বিনিয়োগকারীদের চীনের

  • Sarakhon Report
  • ০৫:৪০:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫
  • 22

সারাক্ষণ রিপোর্ট

চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার অর্থনৈতিক উত্তেজনা যখন বাড়ছে, তখন চীন তার অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন শুল্ক ঘোষণার আগেই এই বার্তা দিয়েছে বেইজিং।

চীনা প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস

চীন ডেভেলপমেন্ট ফোরামে অ্যাপল, কোয়ালকম, বোয়িংসহ বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহীদের সামনে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং বলেন:

  • ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে নীতিগত সহায়তা বাড়ানো হবে।
  • বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখার চেষ্টা চলবে।
  • প্রয়োজন হলে নতুন নীতিমালা নেওয়া হবে।

লি কিয়াং আরও বলেন, চীন বহুপাক্ষিক সহযোগিতা চালিয়ে যাবে এবং রক্ষা বাণিজ্যের (প্রোটেকশনিজম) বিরোধিতা করবে।

ট্রাম্পের শুল্ক পরিকল্পনা ও উত্তেজনার ঝুঁকি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২ এপ্রিল নতুন শুল্ক নীতিমালা ঘোষণা করতে পারেন। এতে চীনা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ—চীন অবৈধ মাদক প্রবাহ ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে। এর জবাবে চীনও মার্কিন কৃষিপণ্যে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বাড়িয়েছে এবং কিছু মার্কিন কোম্পানির রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ জোরদার করেছে।

চীনের অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও ইতিবাচক বার্তা

চীন সরকার অর্থনৈতিক গতি বাড়াতে চেষ্টা করছে, কারণ:

  • রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে।
  • ভোক্তা আস্থা ও বিনিয়োগে মন্দাভাব।
  • তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব আবার বাড়ছে
  • আবাসন বাজারেও বিক্রির গতি ধীর।

তবে কিছু ইতিবাচক দিকও আছে:

  • খুচরা বিক্রিতে সামান্য উত্থান।
  • সরকারি প্রকল্পের ফলে বিনিয়োগ কিছুটা বেড়েছে।
  • চীনা এআই কোম্পানি DeepSeek এর উত্থান শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

বিশ্লেষক ড্যান ওয়াং বলেন, “চীন এখন অর্থনীতিকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দেখছে। সরকারের পক্ষ থেকে হুমকি নয়, বরং আস্থা বৃদ্ধির বার্তা দেওয়া হচ্ছে।”

গুরুত্বপূর্ণ উপস্থিতি: শীর্ষ নির্বাহীরা ফোরামে

চীন ডেভেলপমেন্ট ফোরামে ১০০ জনের বেশি প্রতিনিধি অংশ নেন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন:

  • অ্যাপলের টিম কুক
  • কোয়ালকমের ক্রিশ্চিয়ানো আমন
  • ব্ল্যাকস্টোনের স্টিফেন শোয়ার্জম্যান
  • আমেরিকান অর্থনীতিবিদ স্টিফেন রোচ
  • জাপানের সাবেক কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর মাসাআকি শিরাকাওয়া

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে উদ্যোগ

২০২১ সালে ইন্টারনেট ও শিক্ষা খাতে কঠোর নিয়ন্ত্রণের পর অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী চীন থেকে সরে যেতে শুরু করেন। ২০২৪ সালে চীন ১৬৮ বিলিয়ন ডলার বিদেশি বিনিয়ন হারায়, যা রেকর্ড পরিমাণ।

এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং জানান:

  • বেসরকারি খাতের বিকাশে নতুন আইন হবে।
  • আইনের শাসন জোরদার করা হবে।
  • বিদেশি কোম্পানিগুলোকে আরও উন্মুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকার দেওয়া হবে।

তবে এসব পরিকল্পনার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি তিনি।

বিতর্কিত চুক্তি ও ব্ল্যাকরকের অনুপস্থিতি

সম্প্রতি হংকংয়ের ধনকুবের লি কা-শিংয়ের প্রতিষ্ঠান CK Hutchison প্যানামা খালসহ বিভিন্ন বন্দরের মালিকানা ২২.৮ বিলিয়ন ডলারে ব্ল্যাকরকের নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়ামের কাছে বিক্রি করে দেয়।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এ চুক্তির সমালোচনা করে।

এই বছর ব্ল্যাকরকের সিইও ল্যারি ফিঙ্ক ফোরামে উপস্থিত ছিলেন না। তবে লি কা-শিংয়ের ছোট ছেলে রিচার্ড লি উপস্থিত ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক: সহযোগিতার আহ্বান

চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং ও মার্কিন রিপাবলিকান সিনেটর স্টিভ ডেইন্স-এর সাক্ষাতে দুই দেশের সম্পর্কের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

লি বলেন:

  • “যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে রয়েছে।”
  • “বাণিজ্যযুদ্ধে কেউ জয়ী হয় না। বরং সহযোগিতার মাধ্যমে অর্থনীতির পরিসর বাড়াতে হবে।”

সিনেটর ডেইন্স ছিলেন ২০২৫ সালে চীন সফর করা প্রথম মার্কিন কংগ্রেস সদস্য। তিনি চীনের ভাইস-প্রিমিয়ার হে লিফেংয়ের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন।

সারাংশ

চীন বর্তমানে অর্থনৈতিক চাপে থাকলেও বিদেশি বিনিয়োগ ও ভোক্তা আস্থা ফিরিয়ে আনতে দৃঢ় বার্তা দিচ্ছে। ট্রাম্পের শুল্ক নীতির বিপরীতে চীন স্থিরতা, উন্মুক্ত বাজার, এবং বহুপাক্ষিক সহযোগিতার বার্তা তুলে ধরছে।

ট্রাম্পের বিপরীতে, প্রাচীন চীন এর শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানানোর ঐতিহ্য

মার্কিন শুল্ক বাড়ানোর আগেই বিদেশি বিনিয়োগকারীদের চীনের

০৫:৪০:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার অর্থনৈতিক উত্তেজনা যখন বাড়ছে, তখন চীন তার অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন শুল্ক ঘোষণার আগেই এই বার্তা দিয়েছে বেইজিং।

চীনা প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস

চীন ডেভেলপমেন্ট ফোরামে অ্যাপল, কোয়ালকম, বোয়িংসহ বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহীদের সামনে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং বলেন:

  • ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে নীতিগত সহায়তা বাড়ানো হবে।
  • বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখার চেষ্টা চলবে।
  • প্রয়োজন হলে নতুন নীতিমালা নেওয়া হবে।

লি কিয়াং আরও বলেন, চীন বহুপাক্ষিক সহযোগিতা চালিয়ে যাবে এবং রক্ষা বাণিজ্যের (প্রোটেকশনিজম) বিরোধিতা করবে।

ট্রাম্পের শুল্ক পরিকল্পনা ও উত্তেজনার ঝুঁকি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২ এপ্রিল নতুন শুল্ক নীতিমালা ঘোষণা করতে পারেন। এতে চীনা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ—চীন অবৈধ মাদক প্রবাহ ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে। এর জবাবে চীনও মার্কিন কৃষিপণ্যে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বাড়িয়েছে এবং কিছু মার্কিন কোম্পানির রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ জোরদার করেছে।

চীনের অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও ইতিবাচক বার্তা

চীন সরকার অর্থনৈতিক গতি বাড়াতে চেষ্টা করছে, কারণ:

  • রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে।
  • ভোক্তা আস্থা ও বিনিয়োগে মন্দাভাব।
  • তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব আবার বাড়ছে
  • আবাসন বাজারেও বিক্রির গতি ধীর।

তবে কিছু ইতিবাচক দিকও আছে:

  • খুচরা বিক্রিতে সামান্য উত্থান।
  • সরকারি প্রকল্পের ফলে বিনিয়োগ কিছুটা বেড়েছে।
  • চীনা এআই কোম্পানি DeepSeek এর উত্থান শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

বিশ্লেষক ড্যান ওয়াং বলেন, “চীন এখন অর্থনীতিকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দেখছে। সরকারের পক্ষ থেকে হুমকি নয়, বরং আস্থা বৃদ্ধির বার্তা দেওয়া হচ্ছে।”

গুরুত্বপূর্ণ উপস্থিতি: শীর্ষ নির্বাহীরা ফোরামে

চীন ডেভেলপমেন্ট ফোরামে ১০০ জনের বেশি প্রতিনিধি অংশ নেন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন:

  • অ্যাপলের টিম কুক
  • কোয়ালকমের ক্রিশ্চিয়ানো আমন
  • ব্ল্যাকস্টোনের স্টিফেন শোয়ার্জম্যান
  • আমেরিকান অর্থনীতিবিদ স্টিফেন রোচ
  • জাপানের সাবেক কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর মাসাআকি শিরাকাওয়া

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে উদ্যোগ

২০২১ সালে ইন্টারনেট ও শিক্ষা খাতে কঠোর নিয়ন্ত্রণের পর অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী চীন থেকে সরে যেতে শুরু করেন। ২০২৪ সালে চীন ১৬৮ বিলিয়ন ডলার বিদেশি বিনিয়ন হারায়, যা রেকর্ড পরিমাণ।

এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং জানান:

  • বেসরকারি খাতের বিকাশে নতুন আইন হবে।
  • আইনের শাসন জোরদার করা হবে।
  • বিদেশি কোম্পানিগুলোকে আরও উন্মুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকার দেওয়া হবে।

তবে এসব পরিকল্পনার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি তিনি।

বিতর্কিত চুক্তি ও ব্ল্যাকরকের অনুপস্থিতি

সম্প্রতি হংকংয়ের ধনকুবের লি কা-শিংয়ের প্রতিষ্ঠান CK Hutchison প্যানামা খালসহ বিভিন্ন বন্দরের মালিকানা ২২.৮ বিলিয়ন ডলারে ব্ল্যাকরকের নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়ামের কাছে বিক্রি করে দেয়।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এ চুক্তির সমালোচনা করে।

এই বছর ব্ল্যাকরকের সিইও ল্যারি ফিঙ্ক ফোরামে উপস্থিত ছিলেন না। তবে লি কা-শিংয়ের ছোট ছেলে রিচার্ড লি উপস্থিত ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক: সহযোগিতার আহ্বান

চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং ও মার্কিন রিপাবলিকান সিনেটর স্টিভ ডেইন্স-এর সাক্ষাতে দুই দেশের সম্পর্কের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

লি বলেন:

  • “যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে রয়েছে।”
  • “বাণিজ্যযুদ্ধে কেউ জয়ী হয় না। বরং সহযোগিতার মাধ্যমে অর্থনীতির পরিসর বাড়াতে হবে।”

সিনেটর ডেইন্স ছিলেন ২০২৫ সালে চীন সফর করা প্রথম মার্কিন কংগ্রেস সদস্য। তিনি চীনের ভাইস-প্রিমিয়ার হে লিফেংয়ের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন।

সারাংশ

চীন বর্তমানে অর্থনৈতিক চাপে থাকলেও বিদেশি বিনিয়োগ ও ভোক্তা আস্থা ফিরিয়ে আনতে দৃঢ় বার্তা দিচ্ছে। ট্রাম্পের শুল্ক নীতির বিপরীতে চীন স্থিরতা, উন্মুক্ত বাজার, এবং বহুপাক্ষিক সহযোগিতার বার্তা তুলে ধরছে।