সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
- ট্রাম্প প্রশাসন মানবিকতা ও উন্নয়নমূলক সহায়তার চেয়ে কৌশলগত স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছে
- পাকিস্তানের নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প (৫০০ মিলিয়ন ডলার) বাতিল হয়েছে
- যুক্তরাজ্য ২০২৭ সালের মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় কমিয়ে ১৯৯৯ সালের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে (জিএনআই-এর ০.৭% → ০.৩%)
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নেতৃত্বাধীন প্রশাসন বহুপাক্ষিক সহযোগিতা ভিত্তিক উদার বিশ্বব্যবস্থার (যেমন: ন্যাটো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রেটন উডস প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো) উপর আঘাত হেনেছে। এসব পরিবর্তনের প্রভাব পাকিস্তানের জন্যও বেশ গুরুতর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জলবায়ু অর্থায়ন ও উন্নয়ন সহায়তায় বড় ধস
ট্রাম্পের আমলে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বের হয়ে যাওয়া বৈশ্বিক জলবায়ু অর্থায়নে বড় ফাঁক তৈরি করেছে।
- গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডে অতিরিক্ত ২ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে।
- ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড’-এর কার্যকারিতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পাকিস্তানকে জলবায়ু অভিযোজনের জন্য বছরে ৯ বিলিয়ন ডলার এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তরের জন্য ৫-৮ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন।
যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন সাহায্য বন্ধ, সংকটে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা
ট্রাম্প প্রশাসন মানবিকতা ও উন্নয়নমূলক সহায়তার চেয়ে কৌশলগত স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।
- ইউএসএইড বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ৩৯টি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বন্ধ হয়েছে।
- ক্ষতি: প্রায় ৮৪৫ মিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি বাতিল (স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, জ্বালানি, প্রশাসনসহ)।
- ইমিউনাইজেশন প্রোগ্রাম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পোলিওসহ নানা রোগে স্বাস্থ্য সংকটের আশঙ্কা।
- সহস্রাধিক স্বাস্থ্যকর্মী ও শিক্ষক কর্মহীন হয়েছেন।
আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঠামোগত রূপান্তর
‘Project 2025’ নামে পরিচিত রিপাবলিকান পরিকল্পনা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাংক থেকে বের হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে, অথচ তারা নিজেদের ভেটো ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়।
বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ-এর মধ্যে নীতিগত বিরোধ স্পষ্ট:
- বিশ্বব্যাংক চায় জলবায়ুবান্ধব অর্থায়ন।
- ট্রাম্প প্রশাসন চাইছে জ্বালানিখাতে (ফসিল ফুয়েল) বিনিয়োগ।
- পাকিস্তানের নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প (৫০০ মিলিয়ন ডলার) বাতিল হয়েছে।
- পাকিস্তানের ১০ বছর মেয়াদি ‘কান্ট্রি পার্টনারশিপ ফ্রেমওয়ার্ক’ (২০২৫-৩৫) বর্তমানে ঝুঁকির মধ্যে।
আইএমএফের হিসাবে, পাকিস্তানের বৈদেশিক অর্থায়নের ঘাটতি ২.৫ বিলিয়ন ডলার।
ন্যাটোর সামরিক ব্যয় বনাম উন্নয়ন সহায়তা: ইউরোপের নীতি দ্বিধা
২০১৪ সাল থেকে ন্যাটো সদস্য দেশগুলোকে জিডিপির ২ শতাংশ সামরিক খাতে ব্যয় বাড়াতে বলা হয়। এতে:
- উন্নয়ন সহায়তা থমকে গেছে।
- জার্মানি ১০৮ বিলিয়ন ডলার সামরিক বাজেট বাড়ালেও উন্নয়ন সহায়তা ৪.৮ শতাংশ কমিয়েছে।
- যুক্তরাজ্য ২০২৭ সালের মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় কমিয়ে ১৯৯৯ সালের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে (জিএনআই-এর ০.৭% → ০.৩%)।
ফলে পাকিস্তানের মতো দেশগুলোতে সহায়তা কমছে, বিশেষ করে:
- শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও অবকাঠামো খাতে
- পানি খাতে ৪০% বাজেট কমানো হয়েছে
- ইউরোপ থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পে ১২০ মিলিয়ন ইউরো কমানো হয়েছে
‘গান বনাম রুটি’ নীতির ধাক্কা
একদিকে ইউরোপীয় দেশগুলো সামরিক ব্যয় বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে:
- সহায়তা প্রদান করছে কেবল কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোকে
- পাকিস্তানের মতো দেশগুলো প্রান্তচ্যুত হচ্ছে
- কৃষি খাত ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে
ভবিষ্যতের করণীয়: আত্মনির্ভরতা ও কৌশলগত সংস্কার
বহিঃনির্ভরতার সময় শেষ। পাকিস্তানের সামনে এখন একমাত্র পথ:
- উৎপাদনশীলতা বাড়ানো
- স্থানীয়ভাবে সবুজ কর্মসংস্থান সৃষ্টি
- জলবায়ু অভিযোজন প্রকল্পে বিনিয়োগ
- অল্প বাজেটে বেশি সুফল আদায়
উপসংহার
যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকায় পরিবর্তনের ফলে পাকিস্তানের উন্নয়ন ও জলবায়ু স্থিতিশীলতা বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এখন প্রয়োজন বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা, স্বনির্ভরতা এবং কার্যকর সংস্কার।
লেখক পরিচিতি: আলী তাওকীর শেখ , লেখক একজন জলবায়ু পরিবর্তন ও টেকসই উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ।
সূত্র: ডন নিউজ
অনুবাদ ও উপস্থাপন: সারাক্ষণ রিপোর্ট