সারাক্ষণ রিপোর্ট
ভারত ও চীনের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫ বছর পূর্তিতে দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের বার্তা আদান-প্রদান হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর চীনা সমকক্ষ লি কিয়াংকে জানিয়েছেন, দুই দেশের সম্পর্কের অগ্রগতি বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা এবং বহুধ্রুববিশ্ব (multipolar world) গঠনে সহায়ক হবে।
চীন এককভাবে এসব বার্তার বিস্তারিত প্রকাশ করেছে। এতে গত বছরের ২১ অক্টোবর লাদাখ সীমান্ত থেকে সামনের সারির সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে হওয়া সমঝোতার পর সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ধারাবাহিকতা স্পষ্ট হয়েছে।
শি জিনপিংয়ের বার্তায় পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে পাঠানো বার্তায় বলেছেন, ভারত-চীন একে অপরের ‘অর্জনের অংশীদার’ হিসেবে কাজ করতে পারে। তিনি ‘ড্রাগন-হাতি নৃত্য’-এর কথা উল্লেখ করে বলেন, এ ধরনের অংশীদারিত্ব উভয় দেশের জনগণের মৌলিক স্বার্থ রক্ষা করবে।
লি কিয়াংয়ের বার্তায় আস্থা ও সহযোগিতার আহ্বান
প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং মোদিকে জানান, চীন ভারতকে সঙ্গে নিয়ে কৌশলগত আস্থা বাড়াতে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও বিনিময় জোরদার করতে, সীমান্ত ইস্যুতে সমঝোতায় পৌঁছাতে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে স্থিতিশীল পথে এগিয়ে নিতে প্রস্তুত।
ভারতের প্রতিক্রিয়া চীনের মাধ্যমে প্রকাশ
যদিও ভারতের পক্ষ থেকে বার্তার আনুষ্ঠানিক প্রকাশ হয়নি, তবে চীনের রাষ্ট্রদূত শু ফেইহং সোশ্যাল মিডিয়ায় মোদির বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন। তাতে মোদি বলেন, ভারত ও চীন মানবজাতির ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এবং বর্তমানেও বিশ্ব শান্তি ও উন্নয়নে বড় দায়িত্ব রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “আমাদের দ্বিপাক্ষিক অগ্রগতি কেবল বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধিতে নয়, বরং বহুধ্রুববিশ্ব গঠনে অবদান রাখবে। এই ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আমাদের সম্পর্ক আরও সুস্থ ও স্থিতিশীল হতে পারে।”
রাষ্ট্রপতি মুর্মুর বার্তায় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের আহ্বান
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রপতি মুর্মুর উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, স্থিতিশীল, পূর্বানুমেয় এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক শুধু ভারত-চীনের নয়, গোটা বিশ্বের উপকারে আসবে। তিনি বলেন, এই ৭৫ বছরপূর্তি দুই দেশের সম্পর্ককে সুস্থ ও স্থিতিশীল পথে এগিয়ে নেওয়ার একটি সুযোগ।
শি জিনপিংয়ের দৃষ্টিভঙ্গি: শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং বৈশ্বিক ভূমিকা
শি বলেন, ভারত ও চীন দু’টি দেশই গ্লোবাল সাউথ-এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং আধুনিকায়নের সন্ধিক্ষণে রয়েছে। তিনি কৌশলগত উচ্চতা থেকে সম্পর্ক পরিচালনা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, পারস্পরিক আস্থা ও লাভ, এবং যৌথ উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, এই বার্ষিকী উপলক্ষে দুই দেশ কৌশলগত আস্থা বৃদ্ধি, বড় আন্তর্জাতিক বিষয়ে সমন্বয়, সীমান্ত শান্তি রক্ষা এবং বৈশ্বিক শান্তি ও সমৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য ও বাস্তবতা
চীনের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন জানান, এই ধরনের বার্তা আদান-প্রদান রুটিন কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ। তবে দুই দেশের মধ্যে চার বছরের সামরিক অচলাবস্থার পুরোপুরি সমাধান এখনো হয়নি।
লাদাখ সংঘাত এবং বর্তমান অগ্রগতি
২০২০ সালের জুনে গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা এবং কমপক্ষে চারজন চীনা সেনা নিহত হয়—যা গত ৪৫ বছরে প্রথম প্রাণঘাতী সীমান্ত সংঘর্ষ। গত পাঁচ মাসে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সীমান্ত ইস্যুতে বিশেষ প্রতিনিধিদের মধ্যে একাধিক বৈঠক হলেও কিছু বিষয়ে এখনো অগ্রগতি হয়নি।
কৈলাস -মানস-সরোবর যাত্রা পুনরায় চালুর আলোচনা
২০২০ সালের পর থেকে কৈলাস -মানসাসরোবর যাত্রা বন্ধ রয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্রি জানিয়েছেন, এই তীর্থযাত্রা পুনরায় শুরু করাটা দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে।
বিমান চলাচল ও অন্যান্য সহযোগিতা
উভয় দেশ সরাসরি বিমান চলাচল পুনরায় চালুর বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। তাছাড়া সীমান্ত নদী বিষয়ে তথ্য বিনিময়, সীমান্ত বাণিজ্য এবং জন-জন সংযোগের দিকেও নজর দিচ্ছে তারা।
মোদি’র সম্ভাব্য চীন সফর
চলতি বছরের শরতে চীনের তিয়ানজিন শহরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO) সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী মোদির অংশগ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে। তার আগে উভয় দেশ কিছু বাস্তব ফলাফল চূড়ান্ত করতে চায়।
Leave a Reply