সারাক্ষণ রিপোর্ট
বাংলাদেশ প্রায় চার দশক ধরে কম দামের পোশাক রপ্তানি করে আসছে। তবে সাম্প্রতিক দুই অর্থবছর (২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪) এ দেশের পাঁচটি প্রধান পোশাক—ট্রাউজার, টি–শার্ট, সোয়েটার, শার্ট ও ব্লাউজ এবং অন্তর্বাস—এর রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য হ্রাস দেখা গেছে।
মূল রপ্তানি পণ্য ও পরিসংখ্যান
- ট্রাউজার:
- দেশের মোট পোশাক রপ্তানির ৩৩% ট্রাউজার থেকে আসে।
- ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ট্রাউজারের রপ্তানি প্রায় ৪% কমে ১,১৯৩ কোটি ডলারে নেমে এসেছে।
- করোনা মহামারী (২০২০-২১) সময় ছিল ১১০০ কোটি ডলার, তারপর ২০২১-২২ এ ১৪৫১ কোটি এবং ২০২২-২৩ এ ১২৪১ কোটি ডলার।
- টি–শার্ট:
- দেশের মোট পোশাক রপ্তানির ২১% টি–শার্ট থেকে আসে।
- ২০২৩-২৪ অর্থবছরে টি–শার্ট রপ্তানি ছিল ৭৭৩ কোটি ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১০০ কোটি ডলার কম (২০২১-২২ এ ৯৮৬ কোটি ডলার)।
- সোয়েটার:
- ২০২১-২২ অর্থবছরে সোয়েটারের রপ্তানি ৫০০ কোটি ডলারের উপরে ছিল।
- পরবর্তী দুই বছরে কিছু হ্রাস সত্ত্বেও সর্বশেষ অর্থবছরে সোয়েটারের রপ্তানি ৪৮২ কোটি ডলারে পৌঁছেছে, যা পূর্ব বছরের তুলনায় ২.৪৩% বা ১২ কোটি ডলার বেশি।
- শার্ট ও ব্লাউজ:
- শার্ট ও ব্লাউজের রপ্তানি ৮% হ্রাস পেয়ে ২৯৩ কোটি ডলারে নেমে এসেছে (পূর্ব বছর ছিল ৩১৮ কোটি ডলার)।
রপ্তানি হ্রাসের কারণ ও প্রতিযোগিতা
- সামগ্রিক তৈরি পোশাকের রপ্তানি গত দুই বছর হ্রাস পেয়েছে।
- ট্রাউজার, টি–শার্ট ও সোয়েটারের মতো জনপ্রিয় পণ্যের ক্ষেত্রে ক্রয়াদেশ পেতে তীব্র প্রতিযোগিতা দেখা যাচ্ছে।
- শ্রমিকের বেতন বৃদ্ধি, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি এবং নগদ সহায়তার অভাবে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের প্রতিযোগিতা ক্ষমতা দুর্বল হচ্ছে।
- এই সমস্যার ফলে অনেক প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় ক্রয়াদেশ গ্রহণে ব্যর্থ হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে প্রভাব
- ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো প্রধান বাজারে জ্বালানি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও অন্যান্য পণ্যের চাহিদা হ্রাস পেয়েছে।
- এর প্রভাব হিসেবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৩,৬১৫ কোটি ডলারে নেমে এসেছে, যেখানে ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ এ ছিল যথাক্রমে ৪২৬১ ও ৩৮১৪ কোটি ডলার।
বিশ্বের টি–শার্ট রপ্তানি
- বাংলাদেশ সস্তায় টি–শার্ট রপ্তানে বিশ্বজুড়ে সুনাম অর্জন করেছে।
- ওয়ার্ল্ড টপ এক্সপোর্ট ডট কমের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী টি–শার্ট রপ্তানি ছিল ৫১ বিলিয়ন ডলার।
- চীন শীর্ষস্থানে (মোট রপ্তানির ১৭%), এবং বাংলাদেশ দ্বিতীয় (মোট রপ্তানির ১৫%) অবস্থানে, বিশেষ করে কটন টি–শার্ট রপ্তানে বাংলাদেশ নেতৃস্থানীয়।
বিশেষজ্ঞের মন্তব্য
- সাবেক BKMEA সভাপতি ফজলুল হক বলেছেন, “সামগ্রিক রপ্তানি কমলে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হওয়া পোশাকগুলোর রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পায়।”
- তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন যে, মূল্য সংবেদনশীল পণ্য যেমন ট্রাউজার, টি–শার্ট ও সোয়েটারের ক্ষেত্রে ক্রয়াদেশ পেতে তীব্র প্রতিযোগিতা হচ্ছে।
- শ্রমিকের বেতন, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি নগদ সহায়তার অভাবে অনেক রপ্তানিকারক পণ্যের ক্রয়াদেশ নিতে ব্যর্থ হচ্ছে।
- বিশেষজ্ঞটি পরামর্শ দেন যে, শীর্ষস্থানীয় পোশাকের ক্রয়াদেশ হারানো হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখা জরুরি, কারণ লক্ষ লক্ষ শ্রমিক এবং অনেক কারখানার জীবিকা এই পণ্যের উপর নির্ভরশীল।
- নীতিনির্ধারকদের উচিত রপ্তানিকারকদের অতিরিক্ত ব্যয় সামলাতে সহায়তা প্রদান করা।
উপসংহার
বাংলাদেশের পোশাক শিল্প দীর্ঘদিন ধরে কম দামের পোশাক রপ্তানি করে আসলেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রধান পণ্যের রপ্তানিতে হ্রাস দেখা যাচ্ছে। উচ্চ উৎপাদন ব্যয় ও তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে ক্রয়াদেশ পাওয়ায় অসুবিধা তৈরি হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে, রপ্তানি বজায় রাখতে নীতিনির্ধারকদের প্রয়োজনীয় সমর্থন ও সঠিক নীতিমালা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।