সারাক্ষণ রিপোর্ট
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন পাল্টা শুল্ক আরোপের ফলে বৈশ্বিক বাণিজ্যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্যও হুমকির কারণ হতে পারে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতের (আরএমজি)প্রায় এক হাজারের কাছাকাছি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান—যাদের অধিকাংশ পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যায়—বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়বে। এতে রপ্তানি অর্ডার কমে যেতে পারে বা অন্য দেশে স্থানান্তরিত হতে পারে। ফলে সরকার ও ব্যবসায়ীদের দ্রুততার সঙ্গে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ও বাজার-বৈচিত্রকরণের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
সাম্প্রতিক রপ্তানি চিত্র
- জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ৭,৫৬১টি প্রতিষ্ঠান বিশ্বের ২১২টি দেশে মোট ৪,২৬৯ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে।
- যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি হয়েছে ৭৬৬ কোটি ডলারের পণ্য, যা সরবরাহ করেছে ২,৩২৬টি প্রতিষ্ঠান।
- এর মধ্যে প্রায় এক হাজারের কাছাকাছি প্রতিষ্ঠান তাদের মোট রপ্তানির এক–চতুর্থাংশের বেশি যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায়। যুক্তরাষ্ট্রের ক্রয়াদেশ হ্রাস পেলে এদের ওপর উল্লেখযোগ্য চাপ তৈরি হতে পারে।
ঝুঁকিতে থাকা প্রায় এক হাজারের কাছাকাছি রপ্তানিকারকের অবস্থা
উচ্চ ঝুঁকি (২৮০টি প্রতিষ্ঠান)
-
- তাদের প্রায় সম্পূর্ণ পণ্যই যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়।
- সম্মিলিত রপ্তানির পরিমাণ ৩৫ কোটি ডলার।
উচ্চ-মধ্যম ঝুঁকি (২৩৬টি প্রতিষ্ঠান)
-
- মোট রপ্তানির ৭৬-৯৯ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল।
- গত অর্থবছরে তাদের সম্মিলিত রপ্তানি ২২৭ কোটি ডলার।
মধ্যম ঝুঁকি (১৮১টি প্রতিষ্ঠান)
-
- রপ্তানির ৫১-৭৫ শতাংশ যায় যুক্তরাষ্ট্রে।
- সম্মিলিত রপ্তানি ১৭১ কোটি ডলার।
নিম্ন-মধ্যম ঝুঁকি (২৬০টি প্রতিষ্ঠান)
-
- রপ্তানির ২৬-৫০ শতাংশ মার্কিন বাজারে যায়।
- সম্মিলিত রপ্তানি ১৫১ কোটি ডলার।
তুলনামূলক কম ঝুঁকি (১,৩৬৯টি প্রতিষ্ঠান)
-
- তাদের ১-২৫ শতাংশ পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়।
- সম্মিলিত রপ্তানি ১৮২ কোটি ডলার।
তৈরি পোশাক খাতের শঙ্কা
- ২০২৩–২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে মোট রপ্তানির ৮৭ শতাংশ (৬৬৯ কোটি ডলার) এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে।
- এই খাতে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য সরবরাহ করেছে ১,৮১০টি প্রতিষ্ঠান।
- প্রতিযোগিতামূলক অন্যসব খাতের তুলনায় পোশাকশিল্পই বেশি ঝুঁকির মুখে পড়বে, কারণ পাল্টা শুল্কের প্রভাব সরাসরি এই খাতে পড়তে পারে।
পোশাকের পরে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে:
ক্যাপ
-
- মোট রপ্তানি ৩৩ কোটি ডলার, যার মধ্যে ২২ কোটি ৫২ লাখ (প্রায় ৬৮ শতাংশ) যুক্তরাষ্ট্রে গেছে।
চামড়ার জুতা
-
- মোট রপ্তানি ৫৫ কোটি ডলার, যার মধ্যে ১৮ কোটি ডলার যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে।
অতিরিক্তভাবে, হোমটেক্সটাইল, পরচুলা এবং চামড়াজাত অন্যান্য পণ্যও উল্লেখযোগ্য হারে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়।
- রুবানা হকের মতামত (বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি)
o যেসব প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগ পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে যায়, তারা বড় ধরনের ঝুঁকিতে আছে।
o যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক পরিস্থিতি ইউরোপীয় ইউনিয়নেও প্রভাব ফেলতে পারে, কারণ মার্কিন ক্রয়াদেশ কমলে অনেক ব্যবসায়ী ইইউর বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়াবে।
o শুল্ক বহাল থাকলে বড় ধাক্কা আসতে পারে।
সারাংশ
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত, বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। যেসব প্রতিষ্ঠান ৭৫ শতাংশের বেশি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে, তারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। সরকারের কূটনৈতিক উদ্যোগ ও বাজার-বৈচিত্রকরণের মাধ্যমে সম্ভাব্য ধাক্কা সামাল দিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।