সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
- পর্যাপ্ত রিজার্ভ ছাড়া পেসোর নিয়ন্ত্রণ হঠাৎ করে তুলে নিলে সংকট সৃষ্টি হতে পারে
- আর্জেন্টিনার সরকারগুলো প্রায়শই আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী ব্যয় সংকোচন ও বাজার সংস্কারে ব্যর্থ হয়েছে
- বৈদেশিক ঋণের ১৫ শতাংশ আইএমএফের কাছে এবং আইএমএফের মোট ঋণের ২৮ শতাংশ আর্জেন্টিনার হাতে
- আইএমএফের সহযোগিতা পেলে আর্জেন্টিনা সংস্কার ধরে রাখতে পারবে এবং আইএমএফও ঋণ খেলাপি ও সুনামহানির ঝুঁকি এড়াতে পারবে
আর্জেন্টিনার অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এখন পর্যন্ত তারা দেশটিকে ২৩ বারের বেশি বেইলআউট দিয়েছে, যা অন্য কোনো দেশের ক্ষেত্রে ঘটেনি। তবে অভিজ্ঞতা বলছে, আইএমএফ থেকে সহায়তা পাওয়ার পরও আর্জেন্টিনার নেতারা ব্যয় কমানো ও বাজারমুখী সংস্কারের প্রতিশ্রুতি যথাযথভাবে পালন করেননি। ফলে বারবারই দেশের অর্থনীতিতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
আইএমএফ ও আর্জেন্টিনার দীর্ঘ সম্পর্ক
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আইএমএফ ও আর্জেন্টিনার চুক্তির পরিমাণ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ২০১৮ সালে আগের সরকার আইএমএফ থেকে ৫৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেয়, কিন্তু ব্যয় কমানোর শর্ত ঠিকমতো পূরণ করতে না পারায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় শূন্যে নেমে আসে। পরবর্তীতে ২০২২ সালে আগের ঋণের সুদ ও কিস্তি পরিশোধের জন্য দেশটিকে আরও ৪০ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিতে হয়। এতে মোট বৈদেশিক ঋণের ১৫ শতাংশ এখন শুধু আইএমএফ-এর কাছেই বকেয়া। ফলে আইএমএফ-ই আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বড় ঋণদাতা হয়ে উঠেছে।
অন্যদিকে, আর্জেন্টিনায় পরপর দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বিতরণ করা আইএমএফ-এর জন্যও বড় ঝুঁকি। সাধারণত স্বল্পমেয়াদি জরুরি সহায়তা দিতেই এই সংস্থার অভ্যাস। তাই আর্জেন্টিনার বেহাল অর্থনীতিতে বিপুল পরিমাণ ঋণ আটকে থাকায় আইএমএফ-এর নিজস্ব তহবিল ও মর্যাদা– দুইই হুমকির মুখে। বর্তমানে আইএমএফ-এর মোট ঋণ বিতরণের ২৮ শতাংশই আর্জেন্টিনার হাতে, যা খেলাপি হলে সংস্থাটির জন্য বিশাল বিপর্যয় বয়ে আনতে পারে।
নতুন প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মাইলে ও তার সংস্কার উদ্যোগ
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মাইলে অর্থনৈতিক সংস্কারে দৃঢ় পদক্ষেপ নিচ্ছেন। ব্যয় কমানো ও বিধিনিষেধ শিথিলের মতো পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে তিনি আগের নেতাদের চেয়ে বাস্তবসম্মত ও কঠোর পথে এগোচ্ছেন। আগে অনেক সরকার বারবার আইএমএফ-এর ঋণ নিয়ে অপচয়ী খরচ অব্যাহত রেখেছে, কিন্তু মাইলে এর ঠিক বিপরীত অবস্থান নিয়েছেন।
পেসোর অবমূল্যায়ন সত্ত্বেও মূল্যস্ফীতি আশানুরূপ কমেনি বলে মুদ্রাবাজারে চাপে রয়েছে পেসো। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখনও ঋণনির্ভর, যা যেকোনো সময় আমদানি ব্যয় বা বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকটে নতুন ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তবু মাইলে-এর ক্ষেত্রে ইতিবাচক দিক হলো, আইএমএফ-এর সঙ্গে হওয়া চুক্তির সর্বশেষ বছরে তিনি বাজেট উদ্বৃত্তের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ অর্জন করেছেন। এমনকি সময়ের আগে আর্থিক সহায়তা পেলেও ব্যয় সংকোচনের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন, যা সংস্কার উদ্যোগকে এক ধাপ এগিয়ে নিচ্ছে।
আইএমএফ-এর করণীয়
আইএমএফ সাধারণত সেই ধরনের সরকারের সাথে কাজ করে, যারা সংস্কার নিয়ে দ্বিধায় থাকে। কিন্তু মাইলে ক্ষমতায় আসার পর কংগ্রেসের দীর্ঘ প্রক্রিয়া এড়াতে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে আইএমএফ কর্মসূচি দ্রুত অনুমোদন করিয়েছেন, যা তার রাজনৈতিক ঝুঁকি বাড়ালেও সংস্কারের ব্যাপারে দৃঢ়তার প্রমাণ দেয়।
মাইলে স্থায়ীভাবে পেসোর ওপর নিয়ন্ত্রণ তুলে নিতে চান, যাতে রপ্তানি বাড়ে ও পর্যাপ্ত ডলার মজুত রাখা যায়। তবে পর্যাপ্ত রিজার্ভ ছাড়া হুট করে নিয়ন্ত্রণ তুলে নিলে মূলধন পাচার ও মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা বেড়ে যাবে। বিশেষ করে নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে এমন অস্থিতিশীলতা বড় ধরনের সংকট ডেকে আনতে পারে।
এ অবস্থায় আইএমএফ-এর জরুরি বড় অঙ্কের ঋণ বা আর্থিক গ্যারান্টি দরকার। এর বিনিময়ে বাস্তবসম্মত পেসো বিনিময় হার গ্রহণ, ধাপে ধাপে মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়া এবং বাজারচালিত বিনিময় হার চালু করার একটি স্পষ্ট সময়সূচি নির্ধারণ করা যেতে পারে। এভাবেই আইএমএফ সরাসরি আর্জেন্টিনার কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক সংস্কারে ভূমিকা রাখতে পারবে।
উপসংহার
মাইলে-এর গৃহীত সংস্কার পরিকল্পনা সফল হলে আর্জেন্টিনা, আইএমএফ এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্যও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যদিও অতীতে আর্জেন্টিনার নেতারা প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছেন, মাইলে-এর বাস্তবমুখী পদক্ষেপ এক নতুন আশার সঞ্চার করেছে। এখন আইএমএফ যথেষ্ট আর্থিক সহায়তা দিলে আর্জেন্টিনা সহজেই সংস্কার চালিয়ে যেতে পারবে। পাশাপাশি আইএমএফ-এরও ঋণ খেলাপি কিংবা সুনামহানির ঝুঁকি কমে আসবে। সাহসী পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সঠিক সময়, কারণ দীর্ঘমেয়াদে এটি সবার জন্য কল্যাণকর ফল বয়ে আনবে।