রেজাই রাব্বী
বছরজুড়ে সিনেমা মুক্তি পেলেও ঈদকে কেন্দ্র করে নড়েচড়ে বসে সিনেমাপ্রেমীরা। প্রতিবারের ন্যায় এবার ঈদুল ফিতরেও মুক্তি পেয়েছে ‘দাগি’, ‘বরবাদ’, ‘জংলি’, ‘চক্কর ৩০২’, ‘জ্বিন ৩’ ও ‘অন্তরাত্মা’ চলচ্চিত্রগুলো। ঈদের দ্বিতীয় সপ্তাহ চললেও এখনও হাউসফুল চলছে শাকিব খানের বরবাদ আফরান নিশোর ‘দাগি’ ও সিয়াম আহমেদের ‘জংলি’ সিনেমা।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী প্রশংসা কুড়াচ্ছে রিয়েল এনার্জি প্রডাকশনের ব্যানারে শাহরীন আক্তার ও আজিম হারুনের প্রযোজনায় পরিচালক মেহেদী হাসান হৃদয়ের ‘বরবাদ’ সিনেমা।এ চলচ্চিত্রে মোট গানের সংখ্যা ছয়টি। আরিয়ান মির্জার চরিত্রে শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয় করেছেন নিতু চরিত্রে ওপার বাংলার অভিনেত্রী ইধিকা পাল।
নিতু আর আরিয়ানের প্রেম, বিরহ ও মাঝে পলিটিক্সের সামান্য মিশ্রণ ঘটিয়ে তৈরি করা হয়েছে ‘বরবাদ’ সিনেমা। গল্পে দেখানো হয়, নিতুর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আরিয়ান মির্জা নিজের ভয়াবহ নেশাসক্ত জীবন ছেড়ে দেওয়ার জন্য তার নিজের সঙ্গেই করে লড়াই! নিতুর ভালোবাসার জন্য সে সবকিছু বরবাদ করে দিতে পারে! আরিয়ান মির্জা চরিত্রে শাকিব খানের স্ক্রিন প্রেজেন্স ও পারফরম্যান্স দুর্দান্ত।
সিনেমার শুরুটা হয় আরিয়ান মির্জা বা শাকিব খানের ছোটবেলার দৃশ্যপট দিয়ে। ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ হিসেবে মিশা সওদাগরের দেখা মেলে আদিব মির্জার চরিত্রে। মিশা সওদাগরও চমকে দিয়েছে আরিয়ান মির্জার বাবার চরিত্রে গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অনবদ্য অভিনয় করে। পর্দায় পুরোটা সময় তিনি দর্শকদের ধরে রাখতে পেরেছেন।
গল্পে নিতু ও আরিয়ান মির্জার দেখা হয় একটি চ্যারিটি ফাউন্ডেশনের অনুদানের সূত্র ধরে। আরিয়ান মির্জা নেশায় আসক্ত হওয়ায় নেশা ছাড়ার জন্য রিহ্যাব সেন্টারে ভর্তি হন। এরপর রিহ্যাব সেন্টার থেকে শুরু হয় দুজনের প্রেম কাহিনী।
সিনেমার শেষার্ধের শুরুতে স্ক্রিনে ভেসে ওঠে সেরা অভিনেতাদের মধ্যে একজন ফজলুর রহমান বাবুর চরিত্র। যিনি প্রতিবারের মতই এবারও তার চরিত্রে সুনিপুণভাবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। যদিও এ চরিত্রের পর্দায় উপস্থিতির সময় ছিল খুবই স্বল্প । তবে যেটুকু সময় তিনি স্ক্রিনে পেয়েছেন সেটুকু সময়ই অনবদ্য অভিনয় করেছেন। যেখানে বাবা ও মেয়েদের সম্পর্ক সুন্দর ও সাবলীলভাবে তুলে ধরা হয়েছে দর্শকের মাঝে। এরপরই গল্পে টার্ন অ্যান্ড টুইস্ট ঘটতে থাকে! সিনেমার শক্তিশালী অভিনেতা ছিলেন যিশু সেনগুপ্ত। কিন্তু যিশু সেনগুপ্ত’র স্ক্রিন টাইমও খুবই কম ছিল।
আর জিল্লু তো ভাইরাল! ওপার বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা শ্যাম ভট্টাচার্য যাকে জিল্লু নামে দেখা মেলে আরিয়ান মির্জার সহচর রূপে। মূল নায়ক না হয়েও দর্শকের হৃদয়ে বিশেষ জায়গা করে নেয় জিল্লু। “স্যার! আপনার কষ্ট আমি সহ্য করতে পারি না” তার আবেগঘন এই সংলাপ পরিবেশনায় দর্শক চরিত্রটির প্রেমে পড়ে গেছে।
সজীব নামে এক সিনেমা প্রেমী বলেন, প্রেমের কারণে একজন পুরুষ কতটা প্রেম দিওয়ানা বরবাদ বা ক্ষিপ্ত হতে পারে তা দেখানো হয়েছে এই সিনেমায়। সেই সাথে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছেলের প্রতি বাবার ভালোবাসা দেখানো হয়েছে।
সিনেমার কিছু ডায়লগ দর্শকদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে, “যেটা টাকায় এবং ক্ষমতায় পাওয়া যায় না সেটা ১০০ পারসেন্ট এক্সক্লুসিভ”, “তোর প্রেমে পড়তে লেগেছে এক সেকেন্ড এবং তোকে ছাড়তে লাগবে এক ন্যানো সেকেন্ড”।
হলে সিনেমাপ্রেমী দর্শকরা আক্ষেপের সুর নিয়ে বলেন, সম্পূর্ণ সিনেমায় ব্যাপক পরিমাণ ভায়োলেন্স ছিল। গল্পের সমাপ্তি আরেকটু ভালো করা যেত। নড়বড়ে লেগেছে ক্লাইমেক্সটা, যদি ভিলেন আরেকটু অ্যাকশন টাইপ হতো তাহলে খুব ভালো হতো।
গণমাধ্যম কর্মী শিবলী আহম্মেদের মতে, দেশের সিনেমাগুলো উন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। সিনেমাপ্রেমী দর্শকরা এমন সিনেমাই চেয়ে থাকেন। নব্বই দশক ছিল দেশীয় সিনেমার স্বর্ণযুগ। নতুন সিনেমা মুক্তি পাওয়া মাত্রই সিনেমাপ্রেমীরা হলগুলিতে হুমড়ি খেয়ে পড়তো সিনেমা দেখার জন্যে। নব্বই দশকের শেষের দিকে এ দেশের সিনেমা শিল্পটি বিশাল একটি শিল্পে রূপ নিয়েছিল। যা পরবর্তীতে সিনেমার সাথে সংশ্লিষ্টরা এটি ধরে রাখতে পারেনি। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এর উন্নতি ও অগ্রগতির দিকে মনোযোগ দিতে ব্যর্থ হয়েছিল।ভালো সিনেমার অভাব সিনেমা হলের উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় দর্শক সংখ্যা কমতে শুরু করে। সিনেমাপ্রেমীরা দেশীয় সিনেমা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
সিনেমার এ দুরবস্থার কারণে এ দেশের অনেক সিনেমা হল বিলুপ্ত হয়ে যা আজ ৭০টিতে এসে দাঁড়িয়েছে। একটা ভালো গল্পই হলো সিনেমার প্রাণ। যা শুরু থেকে থেকে শেষ অবধি পর্যন্ত সিনেমা হলে দর্শক ধরে রাখতে সহায়ক। পরিচালকরা ভালো গল্প ও সুনিপুণ চরিত্র দ্বারা যদি সিনেমা তৈরি করে তাহলে দেশের সিনেমা শিল্প আরও এগিয়ে যাবে। সিনেমার প্রতি দর্শকের আগ্রহ ও চাহিদা বাড়বে এবং যে সকল সিনেমাহল বিলুপ্তির পথে সেগুলো পুনরায় প্রাণ ফিরে পাবে এবং আবার সিনেমা মুখী হবে দর্শক।
উল্লেখ্য, সিনেমার আইটেম গানে পারফর্ম করেছেন টলিউড অভিনেত্রী নুসরাত জাহান। এছাড়া আরো অভিনয় করেছেন মিশা সওদাগর, ফজলুর রহমান বাবু, শহীদুজ্জামান সেলিম, যীশু সেনগুপ্ত, মামুনুর রশীদ, কাজী হায়াত, ইন্তেখাব দিনার, শ্যাম ভট্টাচার্য প্রমুখ। ইতোমধ্যে ইউটিউবের ট্রেন্ডিংয়ের শীর্ষে অবস্থান করছে ‘চাঁদ মামা’ গানটি এবং প্রযোজনা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, সিঙ্গেল স্ক্রিন ও মাল্টিপ্লেক্স মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ১২৩টি প্রেক্ষাগৃহে চলছে সিনেমাটি। আগামী ১৮ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র ও ১৯ এপ্রিল কানাডায় ‘বরবাদ’ মুক্তির মাধ্যমে শাকিব খানের নিজস্ব প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এসকে ফিল্মস (শাকিব খান ফিল্মস) আন্তর্জাতিকভাবে ফিল্ম ডিসট্রিবিউশন শুরু করছে।
সব মিলিয়ে দর্শক মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে উপভোগ্য সিনেমা ‘বরবাদ’। সিনেমা দেখতে হলে এবং গল্পের টুইস্ট জানতে হলে অবশ্যই সিনেমা হলে এসে পুরো সিনেমা উপভোগ করতে হবে।
Leave a Reply