সারাক্ষণ রিপোর্ট
সয়াবিন তেলের দামে বড় উল্লম্ফন
সরকার সয়াবিন তেলে দেওয়া করছাড় তুলে নেওয়ার পর বোতলজাত তেলের দাম হঠাৎ করে লিটারে ১৪ টাকা বেড়ে গেছে।
- এখন ১ লিটারের বোতল ১৮৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ১৭৫ টাকা।
- ৫ লিটারের বোতলের দাম ৮৫২ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯২২ টাকায়।
- খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম লিটারে ১২ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৬৯ টাকা।
এই মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া। সরকার যদিও ভোক্তার স্বার্থে ১ লিটার বোতলের দাম ১৮৯ টাকা নির্ধারণ করেছে, প্রকৃত মূল্যে এই দাম হওয়া উচিত ছিল ১৯৮ টাকা।
সরকারের করছাড়ের সীমাবদ্ধতা
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের মতে:
- সরকার প্রতি মাসে সয়াবিন তেলে করছাড় দিয়ে ৫৫০ কোটি টাকা ছাড় দিচ্ছিল।
- রমজানে এই ছাড় গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ২০০০ কোটি টাকায়।
- এখন এই ব্যয় চালিয়ে যাওয়া সম্ভব না হওয়ায় করছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে।
গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন ব্যয় বাড়ার আশঙ্কা
শিল্প খাতে গ্যাস ব্যবহারে ৩৩ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে:
- কারখানার অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহার ও ক্যাপটিভ পাওয়ার ব্যবস্থায় এই বৃদ্ধি কার্যকর।
- এর ফলে শিল্প উৎপাদনের ব্যয় আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামেও ঊর্ধ্বগতি
- পেঁয়াজ: দেশি পেঁয়াজ এখন ৪৫–৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, রমজানে যা কম ছিল।
- ডিম: এক ডজন ডিমের দাম এখন ১২০–১৩০ টাকা, এক সপ্তাহে বেড়েছে ১০ টাকা।
- আটা ও চাল: চালের দাম খোলা আটার দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ২ থেকে ৩ টাকা বেড়েছে।
- সবজি: শীতকালীন সবজি কমে যাওয়ায় গ্রীষ্মকালীন সবজির দাম ১৪% থেকে ৫৬% পর্যন্ত বেড়েছে। যেমন—কাঁচা পেঁপে, মিষ্টিকুমড়া, দেশি গাজর ইত্যাদি।
- চিনি ও ডাল: চিনি ও ডালের দাম সব বাজারে বাড়েনি, তবে অনলাইন বাজারে মুসরি ডালের দাম ২০ টাকা অবধি কেজিতে বেড়ে গেছে
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাজারে অনেক সবজি যৌক্তিক দামের তুলনায় অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, পেঁপের যৌক্তিক দাম ২৩ টাকা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৪০–৬০ টাকায়।
রাজস্ব আহরণে সরকারের চাপ
সরকার সাধারণত আমদানিনির্ভর পণ্যে শুল্ক ছাড় দেয়, যেমন:
- গম, ডাল, পেঁয়াজে তুলনামূলক কম শুল্ক।
- তবে চিনি, দুধ, মসলা, ফলের মতো পণ্যে উচ্চ শুল্ক বজায় রাখা হয়।
২০২৪ সালে সরকার শুধু সয়াবিন ও পাম তেল থেকেই রাজস্ব পেয়েছে ২৯১২ কোটি টাকা।
চিনি থেকে এসেছে বছরে প্রায় ৪–৫ হাজার কোটি টাকা।
আইএমএফ ঋণ ও ভর্তুকি কমানোর শর্ত
একজন সাবেক সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন:
- সরকারের কাছে এখন প্রধান লক্ষ্য হলো রাজস্ব আদায় বাড়ানো ও ভর্তুকি কমানো।
- কারণ, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে পরবর্তী দুই কিস্তির ঋণ পেতে হলে এই দুটি শর্ত মানতেই হবে।
- অন্যথায় আইএমএফ-এর ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
সারাংশ: মূল্যবৃদ্ধি ও চাপ বাড়ছে
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে করছাড় প্রত্যাহার এবং উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার এই যুগপৎ চাপ সাধারণ মানুষের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে। সরকারের রাজস্ব আহরণের চাপে এবং মুদ্রাস্ফীতির ধারায় বাজারে অস্থিরতা আরও বাড়ছে।