০৩:৪১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩২৩) দ্বিতীয় মার্কিন তেল চালানঃ ১ মিলিয়ন ব্যারেল নিয়ে পাকিস্তানে পৌঁছেছে সাগর পাবলিশার্স, পাকিস্তানী চরিত্র ও “আওয়ামী লীগ আঁচাচ্ছে” সাইকেল যোজনার দুই দশক: নারীর ক্ষমতায়ন ও শিক্ষা ক্ষেত্রে বিপ্লব বেতনা নদী: সাতক্ষীরার প্রাণ ও সংকটের প্রতিচ্ছবি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৪) মোদি দিল্লির বিধ্বংসী বিস্ফোরণকে ‘চক্রান্ত’ বলে উল্লেখ করলেন সাংবিধানিক সংশোধনী বিল নিয়ে পাকিস্তান সংসদে ভোট, বিরোধীদের ওয়াকআউট ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, এক দিনে হাসপাতালে ভর্তি ১,১৩৯ জন এলএনজি আমদানিতে ঝুঁকির সতর্কতা: বাংলাদেশের অর্থনীতি দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা

সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে ক্যাবের কঠোর সমালোচনা

  • Sarakhon Report
  • ০৭:২৯:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫
  • 137

সারাক্ষণ রিপোর্ট

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম না বাড়লেও দেশে হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধি

বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের দাম স্থিতিশীল ও নিম্নমুখী থাকলেও বাংলাদেশে ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এক লাফে লিটারে ১৪ টাকা দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের সংগঠন ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন দাবি করে, ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধার মেয়াদ শেষ হওয়া এবং আন্তর্জাতিক বাজারের অজুহাতেই এই দাম বাড়ানো প্রয়োজন। এ দাবিকে স্বীকৃতি দিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন নতুন দাম কার্যকর করে।

ক্যাবের অভিযোগ: সরকারকে ভুল তথ্য দিয়ে মূল্যবৃদ্ধি আদায়

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)–এর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন এই মূল্যবৃদ্ধিকে “শুভংকরের ফাঁকি” হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা সরকারকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে নিজেদের স্বার্থে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় এবং আগেই তেল বাজার থেকে তুলে রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। ক্যাবের দাবি, সরকার এ বিষয়ে কার্যকর কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ায় ব্যবসায়ীরা বারবার এমন কাজ করতে সাহস পায়।

কর অব্যাহতি গিয়েছে মিলারদের পকেটেভোক্তারা বঞ্চিত

এস এম নাজের হোসাইন বলেন, আমদানি পর্যায়ে কর কমানোর কারণে সরকার প্রায় ২০০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারালেও সাধারণ ভোক্তা তার কোনও সুবিধা পাননি। বরং মিলাররা সেই সুবিধা নিজেরা ভোগ করে তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এ বিষয়ে সরকার কোনও জবাবদিহিতা না করায় জনগণের স্বার্থ চরমভাবে উপেক্ষিত হয়েছে।

সরকার ব্যবসায়ীদের কাছে নতজানু: ক্যাব

তিনি অভিযোগ করেন, ব্যবসায়ীরা সরবরাহ বন্ধ রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে এবং দাম বাড়ানোর আগে থেকেই তা ঘোষণা দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। সরকার তখন কেবল সেই সিদ্ধান্তকে অনুমোদন করে বৈধতা দেয়। এতে স্পষ্ট হয়, সরকার ব্যবসায়ীদের দাবির কাছে নতজানু হয়ে পড়েছে।

বাণিজ্য উপদেষ্টার বক্তব্য অযৌক্তিক

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেছিলেন, সয়াবিন তেলের দাম বাড়লেও তা পরিবারের ওপর বড় প্রভাব ফেলবে না। ক্যাব নেতা এ মন্তব্যকে অযৌক্তিক বলে দাবি করে বলেন, তেলের দাম বাড়লে তা চাল, ডিম, পেঁয়াজ, সবজিসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়ার চেইন রিঅ্যাকশন ঘটায়, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে আরও ব্যয়বহুল করে তোলে।

একতরফাভাবে ট্যারিফ কমিশনের দাম নির্ধারণ

ক্যাবের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ভোজ্য তেলের দাম নির্ধারণ প্রক্রিয়াটি ছিল একতরফা। মিলমালিক, আমদানিকারক, ভোক্তা ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে যৌথভাবে মূল্য নির্ধারণ হলে জনস্বার্থ সুরক্ষিত থাকতো। কিন্তু অতীতের মতো এবারও সরকারের পক্ষপাতমূলক আচরণে সাধারণ ভোক্তা উপেক্ষিত রয়ে গেছে।

বাজার সংস্কারে অনীহা স্পষ্ট

ক্যাব সহ-সভাপতির মতে, সরকারের বাজার ব্যবস্থায় সংস্কার না করার মানে হলো—সিন্ডিকেট ভাঙার কোনও আগ্রহ সরকারের নেই। ব্যবসায়ীদের লাগামহীন ক্ষমতা ও কৃত্রিম সংকট তৈরি করার সুযোগ এর মাধ্যমে বহাল থাকছে।

ট্যাক্স পলিসিতে পরিবর্তন চায় ক্যাব

তিনি আরও বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের ওপর কর আরোপ না করে করহীন রাখা উচিত। মূল্যস্ফীতির প্রভাবে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা যখন দুর্বল, তখন এমন করনীতি দরিদ্রদের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করছে। সরকারকে পরোক্ষ কর না বাড়িয়ে, বরং প্রত্যক্ষ করের ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

মূল্যস্ফীতির মূল কারণ: ব্যবসায়ীদের কৃত্রিম সংকট’ সৃষ্টি

শেষে এস এম নাজের হোসাইন বলেন, আয়-রোজগার না বাড়ার এই পরিস্থিতিতে বাজারে অস্থিতিশীলতা তৈরি করে ব্যবসায়ীরা বারবার সাধারণ মানুষের পকেট কাটছে। মজুতদাররা বাড়তি মুনাফা করছে এবং সরকার এই অন্যায় চক্র ভাঙতে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩২৩)

সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে ক্যাবের কঠোর সমালোচনা

০৭:২৯:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম না বাড়লেও দেশে হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধি

বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের দাম স্থিতিশীল ও নিম্নমুখী থাকলেও বাংলাদেশে ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এক লাফে লিটারে ১৪ টাকা দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের সংগঠন ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন দাবি করে, ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধার মেয়াদ শেষ হওয়া এবং আন্তর্জাতিক বাজারের অজুহাতেই এই দাম বাড়ানো প্রয়োজন। এ দাবিকে স্বীকৃতি দিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন নতুন দাম কার্যকর করে।

ক্যাবের অভিযোগ: সরকারকে ভুল তথ্য দিয়ে মূল্যবৃদ্ধি আদায়

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)–এর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন এই মূল্যবৃদ্ধিকে “শুভংকরের ফাঁকি” হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা সরকারকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে নিজেদের স্বার্থে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় এবং আগেই তেল বাজার থেকে তুলে রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। ক্যাবের দাবি, সরকার এ বিষয়ে কার্যকর কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ায় ব্যবসায়ীরা বারবার এমন কাজ করতে সাহস পায়।

কর অব্যাহতি গিয়েছে মিলারদের পকেটেভোক্তারা বঞ্চিত

এস এম নাজের হোসাইন বলেন, আমদানি পর্যায়ে কর কমানোর কারণে সরকার প্রায় ২০০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারালেও সাধারণ ভোক্তা তার কোনও সুবিধা পাননি। বরং মিলাররা সেই সুবিধা নিজেরা ভোগ করে তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এ বিষয়ে সরকার কোনও জবাবদিহিতা না করায় জনগণের স্বার্থ চরমভাবে উপেক্ষিত হয়েছে।

সরকার ব্যবসায়ীদের কাছে নতজানু: ক্যাব

তিনি অভিযোগ করেন, ব্যবসায়ীরা সরবরাহ বন্ধ রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে এবং দাম বাড়ানোর আগে থেকেই তা ঘোষণা দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। সরকার তখন কেবল সেই সিদ্ধান্তকে অনুমোদন করে বৈধতা দেয়। এতে স্পষ্ট হয়, সরকার ব্যবসায়ীদের দাবির কাছে নতজানু হয়ে পড়েছে।

বাণিজ্য উপদেষ্টার বক্তব্য অযৌক্তিক

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেছিলেন, সয়াবিন তেলের দাম বাড়লেও তা পরিবারের ওপর বড় প্রভাব ফেলবে না। ক্যাব নেতা এ মন্তব্যকে অযৌক্তিক বলে দাবি করে বলেন, তেলের দাম বাড়লে তা চাল, ডিম, পেঁয়াজ, সবজিসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়ার চেইন রিঅ্যাকশন ঘটায়, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে আরও ব্যয়বহুল করে তোলে।

একতরফাভাবে ট্যারিফ কমিশনের দাম নির্ধারণ

ক্যাবের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ভোজ্য তেলের দাম নির্ধারণ প্রক্রিয়াটি ছিল একতরফা। মিলমালিক, আমদানিকারক, ভোক্তা ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে যৌথভাবে মূল্য নির্ধারণ হলে জনস্বার্থ সুরক্ষিত থাকতো। কিন্তু অতীতের মতো এবারও সরকারের পক্ষপাতমূলক আচরণে সাধারণ ভোক্তা উপেক্ষিত রয়ে গেছে।

বাজার সংস্কারে অনীহা স্পষ্ট

ক্যাব সহ-সভাপতির মতে, সরকারের বাজার ব্যবস্থায় সংস্কার না করার মানে হলো—সিন্ডিকেট ভাঙার কোনও আগ্রহ সরকারের নেই। ব্যবসায়ীদের লাগামহীন ক্ষমতা ও কৃত্রিম সংকট তৈরি করার সুযোগ এর মাধ্যমে বহাল থাকছে।

ট্যাক্স পলিসিতে পরিবর্তন চায় ক্যাব

তিনি আরও বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের ওপর কর আরোপ না করে করহীন রাখা উচিত। মূল্যস্ফীতির প্রভাবে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা যখন দুর্বল, তখন এমন করনীতি দরিদ্রদের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করছে। সরকারকে পরোক্ষ কর না বাড়িয়ে, বরং প্রত্যক্ষ করের ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

মূল্যস্ফীতির মূল কারণ: ব্যবসায়ীদের কৃত্রিম সংকট’ সৃষ্টি

শেষে এস এম নাজের হোসাইন বলেন, আয়-রোজগার না বাড়ার এই পরিস্থিতিতে বাজারে অস্থিতিশীলতা তৈরি করে ব্যবসায়ীরা বারবার সাধারণ মানুষের পকেট কাটছে। মজুতদাররা বাড়তি মুনাফা করছে এবং সরকার এই অন্যায় চক্র ভাঙতে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।