সারাক্ষণ রিপোর্ট
মূল বিষয়গুলো সংক্ষেপে
- কারসাজির অভিযোগ: বড় করপোরেট কোম্পানিগুলো খাবার, বাচ্চা, ওষুধ থেকে শুরু করে ডিম‑মুরগির বাজার–দরও কৃত্রিমভাবে বাড়াচ্ছে—অভিযোগ বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ)।
- প্রাণে বাঁচতে ‘লকআউট’: এ অবস্থায় দেশের প্রায় সব প্রান্তিক খামার ১ মে থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য হাচারি ও উৎপাদন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।
- দুই মাসে অ্যালার্মিং ক্ষতি: বিগত মার্চ‑এপ্রিলে প্রান্তিক খামারিদের লোকসান প্রায় ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা, শুধু রমজান‑ঈদ মৌসুমেই প্রতিদিনের ক্ষতি ৩০ টাকা কেজি হিসাবে ৯০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
- ডিমেও রক্তক্ষরণ: দৈনিক ৪ কোটি ডিমের মধ্যে প্রান্তিক খামারিরাই সরবরাহ করেন ৩ কোটি; প্রতিটি ডিমে ২ টাকা লোকসানে আরও ৩৬০ কোটি টাকার ক্ষতি।
- দাবি: ‘কন্ট্রাক্ট ফার্মিং’ নির্ভরতা কমাতে ও সিন্ডিকেট ভাঙতে দ্রুত সরকারি ব্যবস্থা।
বিপিএ‑র বিবৃতি ও হুঁশিয়ারি
বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার ১৭ এপ্রিল প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানান, “আমরা করপোরেট দাসত্ব মানবো না। সরকার যতক্ষণ সিন্ডিকেট ভাঙতে কার্যকর পদক্ষেপ না নেবে, ততক্ষণ আমাদের কর্মসূচি চলবে।”
- ঘোষণা: ১ মে থেকে প্রান্তিক খামারগুলো হাচারি, খামার ও সরবরাহ কার্যক্রম বন্ধ রাখবে।
- উদ্দেশ্য: ক্ষতি কমানো ও বাজারে ‘করপোরেট কারসাজি’ বন্ধে চাপ সৃষ্টি করা।
ক্ষতির বিস্তারিত চিত্র
খাত | দৈনিক উৎপাদন | প্রতি এককের লোকসান | দুই মাসের আনুমানিক ক্ষতি |
ব্রয়লার মুরগি | ২০ লাখ কেজি | ৩০ টাকা (রমজান‑ঈদ) | ≈ ৯০০ কোটি টাকা |
ডিম | ৩ কোটি ডিম | ২ টাকা | ≈ ৩৬০ কোটি টাকা |
মোট ক্ষতি ≈ ১,২৬০ কোটি টাকা।
করপোরেট ‘সিন্ডিকেট’ কীভাবে কাজ করছে?
- বাচ্চা‑মুরগির দাম বাড়ানো
- ঈদের আগে ২৮–৩০ টাকায় উৎপাদিত DOC (Day‑Old Chick) বাজারে বিক্রি হয়েছে ৭০–৮০ টাকায়।
- এখন মূল্য নেমে ৩০–৩৫ টাকায়—এরও নিচে।
- খামারির বিক্রি‑দর ধস
- প্রতিকেজি ব্রয়লারের উৎপাদন খরচ ১৬০–১৭০ টাকা, অথচ বাজারদর ১২০–১২৫ টাকা।
- ১০–১০.৫০ টাকায় উৎপাদিত ডিম বিক্রি হচ্ছে ৮–৮.৫০ টাকায়।
- ‘কন্ট্রাক্ট ফার্মিং’ চাপ
- কম্পানিগুলো নিজেরা দর নির্ধারণ করে প্রান্তিক খামারকে নির্ভরশীল করছে।
- খামারিদের সামনে লোকসানে চালানো বা চুক্তিভিত্তিক চাষের শর্ত মেনে নেওয়া—দুই ভাগ্যই ক্ষতিকর।
খামারিদের দাবি ও সম্ভাব্য সমাধান
- সরকারি নজরদারি: খাদ্য, বাচ্চা ও ওষুধের দাম নির্ধারণে স্বচ্ছতা আনতে টাস্কফোর্স।
- মূল্যসীমা নির্ধারণ: ডিম ও মুরগির খুচরা‑দরে ন্যূনতম‑সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেওয়া।
- প্রণোদনা‑সহায়তা: ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক খামারিকে নগদ সহায়তা ও স্বল্প‑সুদে ঋণ।
- বিকল্প বাজারজাত কেন্দ্র: খামারিদের সরাসরি ভোক্তার কাছে পণ্য বিক্রির সুযোগ (ট্রাক সেল, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম)।
সামনে কী?
১ মে লকআউট শুরু হলে মুরগি ও ডিমের সরবরাহ হঠাৎ কমতে পারে, যার ধাক্কা পড়বে ভোক্তা‑দরে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে দ্রুত সমন্বিত ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিচ্ছেন খামারিরা ও ভোক্তা সুরক্ষা সংগঠনগুলো।