০২:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫

ভারতের সুইজারল্যান্ডখ্যাত পহালগামের টেরোরিস্ট হামলা, রক্তের বন্যা

  • Sarakhon Report
  • ০২:০৯:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫
  • 95

সারাক্ষণ রিপোর্ট

স্থান ও সময়

মঙ্গলবার (তারিখ ২২ এপ্রিল ২০২৫) দুপুরে জম্মু–কাশ্মীরের অ্যানান্টনাগ জেলার পহালগাম শহর থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত বাইসারান তৃণভূমিতে সন্ত্রাসীরা পর্যটকদের ওপর গুলি বর্ষণ করে। প্রধান পর্যটন মরসুম শুরু হওয়ার আগের এই মুহূর্তে, যখন উষ্ণভাবে ভ্রমণচর্চা রেকর্ড মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে, এমন নির্মম হামলা ঘটে দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ পর সন্ত্রাসী হামলার সবচেয়ে নৃশংস অধ্যায় হিসেবে।

হতাহতের সংখ্যা ও আহতের খবর

পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রে ছড়িয়ে পড়া প্রাথমিক তথ্যে অন্তত ২৬ জন নিহত হওয়ার বিষয়ে আশঙ্কা করা হচ্ছে, পাশাপাশি আরও ১৫ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বিভিন্ন राज्यों থেকে আগত পর্যটক ছাড়াও নৌবাহিনী, কেন্দ্রীয় সংস্থা ও পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তারা রয়েছেন। দুই জন বিদেশি নাগরিকের পরিচয় স্থির করা প্রক্রিয়াধীন।

প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা

আশাব্যঞ্জক দৃশ্যের মধ্যে হঠাৎ চারজন ভারি অস্ত্রশস্ত্র গ্রহণকারী সন্ত্রাসী গাছঝাড়িত অঞ্চল থেকে বেরিয়ে এসে প্রায় পাঁচশো পর্যটকের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। বহুমাত্রিক বিস্তৃত তৃণভূমিতে কোথাও আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ না পেয়ে পর্যটকরা পেন্ডেমিক-সদৃশ হতাশায় ছুটে বেড়াতে থাকেন। একজন পর্যটক বলেন, “মালিকের মতো বারুদময় ঝড় বয়ে গেল হঠাৎ — একবার এক গুলি, আবার সিরিয়াল ফায়ার…”

দায় স্বীকার ও উদ্দেশ্য

পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈবার জঙ্গি সংগঠন ‘দি রেসিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) হামলার দায় স্বীকার করে বুলেটিনে দিয়েছে, ‘৮৫,০০০ বাইরের মানুষ’ অনুপ্রবেশ করে এখানকার জনসংখ্যার গঠন পরিবর্তন ঘটাচ্ছে—তাদের আটকাতে এভাবে আক্রমণ করা হবে। গোয়েন্দারা বলছেন, ‘টিআরএফ’ নাম ছদ্মনাম মাত্র; প্রকৃতপক্ষে হামলাটি লস্কর-ই-তৈবার প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসীদের দ্বারা চালানো হয়েছে।

সরকারের প্রতিক্রিয়া

এই বীভৎস ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সৌদি আরব সফর ভাঙিয়ে দ্রুত দেশে প্রত্যাগমন করছেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “এই নৃশংস কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত যারা তাদের এড়ানো হবে না, ন্যায়বিচার হবে।”

মধ্যরাতে কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রীর রোগ ফেরার ফ্লাইট সরাসরি শ্রীনগরে ওঠে এবং লেফট্যানেন্ট গভর্নর ও রাজ্য সরকার প্রধানকে সঙ্গে নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা বৈঠক ডাকা হয়।

তদন্ত ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা জানাচ্ছে, হামলাকারী চার জনের মধ্যে তিনজন পাকিস্তানি প্রেরিত বিদেশি জঙ্গি ও একজন লোকাল ব্যক্তি । পুরো এলাকা ঘিরে পুলিশ ও যৌথ বাহিনী তল্লাশি চালাচ্ছে। ঘটনা জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)-কে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে; তারা ইতোমধ্যে প্রাথমিক তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলে পৌঁছিয়েছে।

পর্যটন খাতে প্রভাব

এই হামলা উপত্যকার পর্যটন অর্থনীতিকে বিরূপভাবে আঘাত করবে—অনেক পর্যটক তাঁদের বুকিং বাতিল করেছেন, হোটেলগুলো শূন্য হয়ে যাচ্ছে, স্থানীয় মানুষের জীবিকাও বিপন্ন হচ্ছে। গত বছর আর্টিকেল ৩৭০ বাতিলের পর ভ্যালিতে পর্যটক সংখ্যা ছিল ৩.৫ মিলিয়ন, ২০২৩-এ ৩.১ মিলিয়ন, ২০২২-এ ২.৬ মিলিয়ন। এপ্রিলে ইতিমধ্যেই ছয় লাখ ছাড়িয়েছে।

রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

সেনা–পুলিশের প্রতি অবিচার হিসেবে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী বলেন, “সহিংসতা কদাপি গ্রহণযোগ্য নয়।”ভারতীয় সাবেক পুলিশ প্রধান এসপি বৈদ মন্তব্য করেন, “এখনকার হামলা কৌশলে পরিবর্তন লক্ষণীয়; এর প্রভাব ট্যুরিজমে গভীর। পাকিস্তানেরই স্বার্থ এই ভয়ভীতি ছড়ানো।”

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইটে লিখেছেন, “কাশ্মীরের ভয়ানক খবর কঠিন—আমরা ভারতের পাশে আছি।”রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সমবেদনা জ্ঞাপন করে বলেন, “এই নৃশংস অপরাধের কোনো বৈধতা নেই; পরিকল্পনাকারী ও দুষ্কৃতীরা দণ্ড পাবেন।”

ভারতের সুইজারল্যান্ডখ্যাত পহালগামের টেরোরিস্ট হামলা, রক্তের বন্যা

০২:০৯:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

স্থান ও সময়

মঙ্গলবার (তারিখ ২২ এপ্রিল ২০২৫) দুপুরে জম্মু–কাশ্মীরের অ্যানান্টনাগ জেলার পহালগাম শহর থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত বাইসারান তৃণভূমিতে সন্ত্রাসীরা পর্যটকদের ওপর গুলি বর্ষণ করে। প্রধান পর্যটন মরসুম শুরু হওয়ার আগের এই মুহূর্তে, যখন উষ্ণভাবে ভ্রমণচর্চা রেকর্ড মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে, এমন নির্মম হামলা ঘটে দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ পর সন্ত্রাসী হামলার সবচেয়ে নৃশংস অধ্যায় হিসেবে।

হতাহতের সংখ্যা ও আহতের খবর

পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রে ছড়িয়ে পড়া প্রাথমিক তথ্যে অন্তত ২৬ জন নিহত হওয়ার বিষয়ে আশঙ্কা করা হচ্ছে, পাশাপাশি আরও ১৫ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বিভিন্ন राज्यों থেকে আগত পর্যটক ছাড়াও নৌবাহিনী, কেন্দ্রীয় সংস্থা ও পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তারা রয়েছেন। দুই জন বিদেশি নাগরিকের পরিচয় স্থির করা প্রক্রিয়াধীন।

প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা

আশাব্যঞ্জক দৃশ্যের মধ্যে হঠাৎ চারজন ভারি অস্ত্রশস্ত্র গ্রহণকারী সন্ত্রাসী গাছঝাড়িত অঞ্চল থেকে বেরিয়ে এসে প্রায় পাঁচশো পর্যটকের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। বহুমাত্রিক বিস্তৃত তৃণভূমিতে কোথাও আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ না পেয়ে পর্যটকরা পেন্ডেমিক-সদৃশ হতাশায় ছুটে বেড়াতে থাকেন। একজন পর্যটক বলেন, “মালিকের মতো বারুদময় ঝড় বয়ে গেল হঠাৎ — একবার এক গুলি, আবার সিরিয়াল ফায়ার…”

দায় স্বীকার ও উদ্দেশ্য

পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈবার জঙ্গি সংগঠন ‘দি রেসিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) হামলার দায় স্বীকার করে বুলেটিনে দিয়েছে, ‘৮৫,০০০ বাইরের মানুষ’ অনুপ্রবেশ করে এখানকার জনসংখ্যার গঠন পরিবর্তন ঘটাচ্ছে—তাদের আটকাতে এভাবে আক্রমণ করা হবে। গোয়েন্দারা বলছেন, ‘টিআরএফ’ নাম ছদ্মনাম মাত্র; প্রকৃতপক্ষে হামলাটি লস্কর-ই-তৈবার প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসীদের দ্বারা চালানো হয়েছে।

সরকারের প্রতিক্রিয়া

এই বীভৎস ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সৌদি আরব সফর ভাঙিয়ে দ্রুত দেশে প্রত্যাগমন করছেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “এই নৃশংস কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত যারা তাদের এড়ানো হবে না, ন্যায়বিচার হবে।”

মধ্যরাতে কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রীর রোগ ফেরার ফ্লাইট সরাসরি শ্রীনগরে ওঠে এবং লেফট্যানেন্ট গভর্নর ও রাজ্য সরকার প্রধানকে সঙ্গে নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা বৈঠক ডাকা হয়।

তদন্ত ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা জানাচ্ছে, হামলাকারী চার জনের মধ্যে তিনজন পাকিস্তানি প্রেরিত বিদেশি জঙ্গি ও একজন লোকাল ব্যক্তি । পুরো এলাকা ঘিরে পুলিশ ও যৌথ বাহিনী তল্লাশি চালাচ্ছে। ঘটনা জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)-কে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে; তারা ইতোমধ্যে প্রাথমিক তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলে পৌঁছিয়েছে।

পর্যটন খাতে প্রভাব

এই হামলা উপত্যকার পর্যটন অর্থনীতিকে বিরূপভাবে আঘাত করবে—অনেক পর্যটক তাঁদের বুকিং বাতিল করেছেন, হোটেলগুলো শূন্য হয়ে যাচ্ছে, স্থানীয় মানুষের জীবিকাও বিপন্ন হচ্ছে। গত বছর আর্টিকেল ৩৭০ বাতিলের পর ভ্যালিতে পর্যটক সংখ্যা ছিল ৩.৫ মিলিয়ন, ২০২৩-এ ৩.১ মিলিয়ন, ২০২২-এ ২.৬ মিলিয়ন। এপ্রিলে ইতিমধ্যেই ছয় লাখ ছাড়িয়েছে।

রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

সেনা–পুলিশের প্রতি অবিচার হিসেবে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী বলেন, “সহিংসতা কদাপি গ্রহণযোগ্য নয়।”ভারতীয় সাবেক পুলিশ প্রধান এসপি বৈদ মন্তব্য করেন, “এখনকার হামলা কৌশলে পরিবর্তন লক্ষণীয়; এর প্রভাব ট্যুরিজমে গভীর। পাকিস্তানেরই স্বার্থ এই ভয়ভীতি ছড়ানো।”

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইটে লিখেছেন, “কাশ্মীরের ভয়ানক খবর কঠিন—আমরা ভারতের পাশে আছি।”রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সমবেদনা জ্ঞাপন করে বলেন, “এই নৃশংস অপরাধের কোনো বৈধতা নেই; পরিকল্পনাকারী ও দুষ্কৃতীরা দণ্ড পাবেন।”