সারাক্ষণ ডেস্ক
প্রথম আলোর একটি শিরোনাম “একটি নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার পথরেখা”
১৯৯১ সালে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পরে ২০০৯ সাল পর্যন্ত অবাধ, নিরপেক্ষ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ দুবার এবং বিএনপি দুবার সরকার গঠন করে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ দুই দল তাদের ক্ষমতার মেয়াদে গণতান্ত্রিক চর্চার উন্নয়নে লক্ষণীয়ভাবে কোনো কাজ করেনি;বরং তারা নিজেদের ক্ষমতাকে সংহত করা এবং বিজয়ীর জন্যই সব—এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি চিরস্থায়ী করার জন্য ব্যস্ত ছিল।
দ্বিদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে জুলাই গণ–অভু৵ত্থানের পরে আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে বিএনপি দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপির সরকার গঠন করার মতো সম্ভাবনাও অনেকে দেখছেন। সাধারণভাবে জনগণের মনোযোগ এদিকে নিবদ্ধ যে তারা উন্নততর গণতন্ত্রের চর্চাকারী হিসেবে ফিরে আসবে কি না। গণ–অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র, সরকার ও গণতন্ত্রচর্চা নিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অনেক বক্তব্য মানুষের মধ্যে সমাদৃত হয়েছিল। মাঠপর্যায়ে আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতির ফলে ক্ষমতার যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, সে জায়গা দখল করেছেন বিএনপির কর্মীরা। এই শূন্যতার সুযোগ নিয়ে বিএনপির কর্মীদের অনেকে দখলদারি ও চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েছেন। যার ফলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে যে পুরোনো অভ্যাসের মৃত্যু সহজে হয় না। এ ধরনের অভিযোগে অনেককে বহিষ্কার করা সত্ত্বেও এর দৌরাত্ম্য কমানো যায়নি। স্থানীয় পর্যায়ের মানুষদের মধ্যে এ নিয়ে অসন্তোষ আছে। সাধারণ মানুষের এই অসন্তোষ বিএনপিকে আমলে নিতে হবে।
পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে যেসব শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, তারা একটি নিজস্ব রাজনৈতিক ধারণা সামনে এনেছে। সেখানে তরুণ প্রজন্ম নিজেদের অবস্থান দৃঢ়ভাবে তুলে ধরতে শুরু করেছে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে নিজেদের অগ্রণী ভূমিকার জন্য ছাত্ররা শ্রদ্ধা ও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছেন, বিশেষ করে তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে। পুরোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থা যাতে স্থায়ীভাবে গেড়ে বসতে না পারে, সে জন্য তাঁরা যৌক্তিকভাবেই সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। একটি নতুন, আরও ন্যায্য ও সমতাভিত্তিক শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা নিশ্চিত করতে তাঁরা সত্যিকারের সংস্কার বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছেন।
অধ্যাপক ইউনূস যে সংস্কারপ্রক্রিয়া শুরু করেছেন, ছাত্ররা সেটিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে আরও সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে এই সংস্কারপ্রক্রিয়াকে তাঁরা এগিয়ে নিতে চান। এ লক্ষ্যে ছাত্রদের একটি অংশ জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।
দৈনিক ইত্তেফাকের একটি শিরোনাম “বাংলাদেশের নিকট সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা চায় যুক্তরাষ্ট্র”
দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য–ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশ কী কী পদক্ষেপ নেবে এবং কীভাবে কাজগুলো করবে, তা জানতে চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের কাছ থেকে এ বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা চায় ওয়াশিংটন, যেখানে শ্রম পরিস্থিতি, শ্রম আইন ও মেধাস্বত্ব আইনের পরিবর্তনের স্বার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের উল্লেখ থাকা জরুরি।
ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় বুধবার সকালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চের আলোচনায় এসব বিষয় উঠে এসেছে। দুই পক্ষের আলোচনায় লুৎফে সিদ্দিকী বাংলাদেশের এবং ব্রেন্ডন লিঞ্চ যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব দেন।
ওয়াশিংটন থেকে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তোজা প্রথম আলোকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ৭ এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্টকে চিঠি দিয়েছিলেন। ওই দিনই বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) জেমিসন গ্রিয়ারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রকে পাল্টা শুল্ক তিন মাস স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়ে ওই চিঠি দেওয়া হয়েছিল। পরে ডোনাল্ড ট্রাম্প পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেন।
চিঠি পাঠানোর অল্প দিনের মধ্যে ওয়াশিংটনে প্রতিনিধি পাঠিয়ে বাংলাদেশ বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে নিজেদের উদ্যোগের প্রতিফলন ঘটিয়েছে।
বণিকবার্তার একটি শিরোনাম “২৬৭ একর সংরক্ষিত বন চায় চট্টগ্রাম বন্দর, বন বিভাগের আপত্তি”
সমুদ্র উপকূলবর্তী সংরক্ষিত বনের ওই জমিটি বন্দর কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে সেখানে ম্যানগ্রোভ বনায়ন করতে চাইছে তারা। এ নিয়ে সরকারের দুই সংস্থার মধ্যে চলছে চিঠি চালাচালি।
জানা গেছে, বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের নকশায় মধ্যম হালিশহর মৌজায় ৫১ দশমিক শূন্য ৮৫ একর এবং দক্ষিণ কাট্টলী মৌজায় দুটি দাগে ৬৬ ও ১৫০ একরসহ মোট ২৬৭ দশমিক শূন্য ৮৫ একর জমিকেও ধরেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। সংরক্ষিত বনভূমি হিসেবে গেজেটভুক্ত জমিটি নিজেদের করে নিতে তারা ২০১৯ সাল থেকেই চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে বন বিভাগ উপকূলীয় এ সংরক্ষিত বন হাতছাড়া করতে চায় না। বে-টার্মিনাল নির্মাণের জন্য বনের জমি না দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছে বন বিভাগ।
এ-সংক্রান্ত নথিপত্র থেকে জানা গেছে, বে-টার্মিনালের জন্য চাওয়া বন বিভাগের এসব জমিতে ১৯৭৮-৭৯, ২০০৫-০৬ ও ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ম্যানগ্রোভ বন সৃজন করা হয়। সেগুলো ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল, যা ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঘূর্ণিঝড়সহ বঙ্গোপসাগরের তীরে বালুচর জমে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার বন্দর কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে বালি ভরাট করায় বাগানের আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন বিভাগ ওই জমিটি নিজেদের হাতে রাখতে দ্রুত ম্যানগ্রোভ বন সৃজনের কাজ শুরু করতে চাইছে।
বনভূমির কিছু অংশে বন বিভাগের বাগান থাকলেও বালুচরের অংশে কোনো গাছপালা নেই। এ অংশে উপকূলীয় অঞ্চলের লোকজনের জানমাল রক্ষায় ম্যানগ্রোভ ও ঝাউবাগান সৃজনের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল নং-১৪৫৭ এবং ১৪৫৮ অনুযায়ীও এসব বনের শ্রেণী পরিবর্তনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
মানবজমিনের একটি শিরোনাম “দুদকে ৩ মাসে ৫৪৫১ অভিযোগ”
বেড়েই চলেছে দুর্নীতি দমন কমিশনে জমা পড়া অভিযোগের সংখ্যা। গত বছরের ৫ই আগস্টের পর থেকে এই সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। দুদক বলছে গত তিন মাসেই প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার অভিযোগ সংস্থাটিতে জমা পড়েছে। সমন্বিত জেলা কার্যালয়, প্রধান কার্যালয় এবং দুদকের হটলাইনে (১০৬) এসব অভিযোগ আসছে প্রতিনিয়ত। দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, যাচাই-বাছাই শেষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থাও নিচ্ছে কমিশন। তবে অভিযোগ আমলের ক্ষেত্রে দুদকের আইন ও বিধি মেনেই নেয়া হচ্ছে।
দুদক সূত্র বলছে, গত জানুয়ারি মাস থেকে চলতি মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত মোট ৫ হাজার ৪৫১টি অভিযোগ আবেদন আকারে জমা হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ১ হাজার ৯২৩, ফেব্রুয়ারিতে ১ হাজার ৬২৬, মার্চে ১ হাজার ৪০০ ও এপ্রিলে (১৫ তারিখ পর্যন্ত) ৫০২টি অভিযোগ জমা পড়ে। সংস্থাটির সূত্র আরও জানায়, এই সাড়ে পাঁচ হাজার অভিযোগের মধ্যে অন্তত এক হাজারটি অনুসন্ধানের জন্য আমলে নেয়া হয়েছে। সেগুলোর কার্যক্রমও চলমান।
দুদক জানায়, ২০১৮ সালের রাতের ভোট আয়োজনের সঙ্গে জড়িত শতাধিক ব্যক্তিকে অনুসন্ধানের আওতায় আনা হয়েছে। এর মধ্যে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদাসহ চার কমিশনারের বিরুদ্ধে চলছে অনুসন্ধান। অন্যদিকে অভিযোগ অনুযায়ী প্রশ্নবিদ্ধ সেই নির্বাচনটি আয়োজনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের অর্থ ক্ষতি সাধনের দায়ে আরও শতাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তি, আমলাকে আইনের আওতায় আনার প্রস্তুতি চলছে দুদকে। হাজারো রোহিঙ্গাকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার অভিযোগে সাবেক সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে সংস্থাটি। সে সঙ্গে এই সাবেক সচিবকে রাতের ভোট আয়োজনের নেপথ্যের কারিগর হিসেবেও চিহ্নিত করে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে অপর একটি অনুসন্ধান দল।
এদিকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সাবেক চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান করছে দুদক। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় ১৩(এ) ধারায় বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ব্যক্তি আমলাদের প্লট সুবিধা দেয়ার অভিযোগে একগুচ্ছ ঊর্ধ্বতন রাজউক কর্মকর্তাও আসছেন দুদকের অনুসন্ধানে। এই সব মিলিয়ে এক হাজারেরও বেশিসংখ্যক ব্যক্তি অনুসন্ধানের আওতায় এসেছেন শুধু এই সাড়ে তিন মাসে।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে সারা বছরেই মাত্র ৮৪৫ অভিযোগ আমলে নিয়েছে তৎকালীন মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ কমিশন। সে বছর মামলা হয়েছে মাত্র ৪০৪টি। তার বিপরীতে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর ড. আবদুল মোমেন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পরপর সহস্রাধিক অভিযোগ অনুসন্ধান আমলে নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে। আর সর্বশেষ দুই মাসেই শতাধিক মামলা করেছে বর্তমান কমিশন।