০৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

উৎপাদন খরচ বাড়ায় ধানের সরকারি দামে লাভ পাবে না কৃষক

  • Sarakhon Report
  • ০৫:০০:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
  • 47

সারাক্ষণ রিপোর্ট

উৎপাদন খরচ বেড়েছেদাম বাড়লেও লাভ নয়

বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের মতে , এবার সেচ, সার, বীজ, কীটনাশক এবং ধান কাটার খরচ অন্তত ৩০ শতাংশ বেড়েছে। বর্গাচাষে প্রতি কেজি ধানের উৎপাদন খরচ দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৩৫ টাকা, অথচ সরকার ৩৬ টাকা দরে ধান কিনবে। এই সামান্য ব্যবধানে কৃষকের লাভ হচ্ছে না, বরং লোকসানের শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

সংগ্রহ কমশর্ত বেশিকৃষক বঞ্চিত

সরকার ৩৬ টাকা কেজি দরে ধান ও ৪৯ টাকা কেজি দরে সেদ্ধ চাল সংগ্রহ করছে। তবে নানা প্রশাসনিক শর্ত, যেমন আর্দ্রতা পরীক্ষা, ব্যাংক হিসাব, গুদামে ধান সরবরাহের জটিলতা—এসব কারণে কৃষক সরকারি গুদামে ধান দিতে পারছেন না। বাধ্য হয়েই মহাজনদের কাছে কম দামে ধান বিক্রি করছেন তারা।

আগের তুলনায় সংগ্রহ লক্ষ্য কম

চলতি বোরো মৌসুমে সরকারের ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৩ লাখ টন, যেখানে গত বছর ছিল ৫ লাখ টন। আমন মৌসুমেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি—সরকার ধান সংগ্রহ করতে পেরেছে মাত্র ২৬ হাজার ৭১৪ টন। ফলে অভ্যন্তরীণ ঘাটতি মেটাতে সরকার ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৮ লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার মধ্যে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত ৫.১৮ লাখ টনের আমদানি প্রক্রিয়া শেষ।

ব্রির গবেষণায় উদ্বৃত্ততবুও আমদানি

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে বছরে ৪২ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকে। কিন্তু সরকারের সুরক্ষা কর্মসূচি, সংগ্রহে ব্যর্থতা এবং বাজার নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনে চাল আমদানি করতে হচ্ছে। গত সাত বছরে শুধু ২০১৮ সালেই সরকার শতভাগ ধান-চাল সংগ্রহ করতে পেরেছে।

চাষিদের হিসাবখরচ বাড়ছেদাম বাড়ছে না

চাষিরা বলছেন, সেচের ডিজেল-বিদ্যুৎ, সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি সবই বেড়েছে। সাধারণত এক বিঘা জমিতে খরচ বেড়েছে প্রায় ৬ হাজার টাকা বলে বিভিন্ন এলাকার চাষীরা জানাচ্ছে। জমি নিজস্ব না হলে খরচ আরও বাড়ে।

সরকারি গুদামে বিক্রি করতে বিড়ম্বনা

গুদামে ধান দিতে গেলে কৃষককে নানা নিয়ম-শর্ত মেনে চলতে হয়। আর্দ্রতা বেশি হলে ধান ফেরত, ওজনে কম হলে বাড়তি ধান আনতে হয়, পরিবহন খরচ কৃষকের নিজের পকেট থেকে দিতে হয়। ।

মৌসুমের শুরুতে কম দামে বিক্রিপরে বাড়ে দাম

ধানের সরকারি দামে কৃষকের শঙ্কার মেঘ কাটছে না

মৌসুমের শুরুতে টাকার অভাবে প্রান্তিক কৃষক কম দামে ধান বিক্রি করেন। সেই ধান পরে ফড়িয়া ও মিল মালিকদের হাতে যায়, যখন কৃষকের ঘরে ধান থাকে না তখন বাজারে দাম বাড়ে।

বিশিষ্টজনদের উদ্বেগ: কৃষক নয়সুবিধা পাচ্ছে মিলার

সাবেক খাদ্য সচিব আবদুল লতিফ মণ্ডল বলেন, বোরো মৌসুমেই সবচেয়ে বেশি চাল উৎপাদন হয়, অথচ এবার সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা কম। এতে কৃষক খোলাবাজারে বেশি দামে ধান বিক্রি করতে আগ্রহী হবেন। ১২ এপ্রিল ৪৩ জন বিশিষ্ট নাগরিক অভিযোগ করেছেন, মিলারদের সুবিধা দিতে সংগ্রহ কমানো হয়েছে। ১৩ এপ্রিল ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্ট বলেছে, বর্তমান সরকারও আগের সরকারের মতোই কৃষকের প্রতি উদাসীন।

সরকারের অবস্থান: দাম বাড়ানো হয়েছেচিন্তা চলছে

খাদ্য সচিব মাসুদুল হাসান বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত উৎপাদন খরচের ভিত্তিতেই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকার ধান-চাল সংগ্রহে সক্ষমতা ও মজুত ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা মানছে। তবে ধানের দাম ৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে এবং ভবিষ্যতে লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর কথা ভাবা হচ্ছে।

উৎপাদন খরচ বাড়ায় ধানের সরকারি দামে লাভ পাবে না কৃষক

০৫:০০:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

উৎপাদন খরচ বেড়েছেদাম বাড়লেও লাভ নয়

বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের মতে , এবার সেচ, সার, বীজ, কীটনাশক এবং ধান কাটার খরচ অন্তত ৩০ শতাংশ বেড়েছে। বর্গাচাষে প্রতি কেজি ধানের উৎপাদন খরচ দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৩৫ টাকা, অথচ সরকার ৩৬ টাকা দরে ধান কিনবে। এই সামান্য ব্যবধানে কৃষকের লাভ হচ্ছে না, বরং লোকসানের শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

সংগ্রহ কমশর্ত বেশিকৃষক বঞ্চিত

সরকার ৩৬ টাকা কেজি দরে ধান ও ৪৯ টাকা কেজি দরে সেদ্ধ চাল সংগ্রহ করছে। তবে নানা প্রশাসনিক শর্ত, যেমন আর্দ্রতা পরীক্ষা, ব্যাংক হিসাব, গুদামে ধান সরবরাহের জটিলতা—এসব কারণে কৃষক সরকারি গুদামে ধান দিতে পারছেন না। বাধ্য হয়েই মহাজনদের কাছে কম দামে ধান বিক্রি করছেন তারা।

আগের তুলনায় সংগ্রহ লক্ষ্য কম

চলতি বোরো মৌসুমে সরকারের ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৩ লাখ টন, যেখানে গত বছর ছিল ৫ লাখ টন। আমন মৌসুমেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি—সরকার ধান সংগ্রহ করতে পেরেছে মাত্র ২৬ হাজার ৭১৪ টন। ফলে অভ্যন্তরীণ ঘাটতি মেটাতে সরকার ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৮ লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার মধ্যে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত ৫.১৮ লাখ টনের আমদানি প্রক্রিয়া শেষ।

ব্রির গবেষণায় উদ্বৃত্ততবুও আমদানি

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে বছরে ৪২ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকে। কিন্তু সরকারের সুরক্ষা কর্মসূচি, সংগ্রহে ব্যর্থতা এবং বাজার নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনে চাল আমদানি করতে হচ্ছে। গত সাত বছরে শুধু ২০১৮ সালেই সরকার শতভাগ ধান-চাল সংগ্রহ করতে পেরেছে।

চাষিদের হিসাবখরচ বাড়ছেদাম বাড়ছে না

চাষিরা বলছেন, সেচের ডিজেল-বিদ্যুৎ, সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি সবই বেড়েছে। সাধারণত এক বিঘা জমিতে খরচ বেড়েছে প্রায় ৬ হাজার টাকা বলে বিভিন্ন এলাকার চাষীরা জানাচ্ছে। জমি নিজস্ব না হলে খরচ আরও বাড়ে।

সরকারি গুদামে বিক্রি করতে বিড়ম্বনা

গুদামে ধান দিতে গেলে কৃষককে নানা নিয়ম-শর্ত মেনে চলতে হয়। আর্দ্রতা বেশি হলে ধান ফেরত, ওজনে কম হলে বাড়তি ধান আনতে হয়, পরিবহন খরচ কৃষকের নিজের পকেট থেকে দিতে হয়। ।

মৌসুমের শুরুতে কম দামে বিক্রিপরে বাড়ে দাম

ধানের সরকারি দামে কৃষকের শঙ্কার মেঘ কাটছে না

মৌসুমের শুরুতে টাকার অভাবে প্রান্তিক কৃষক কম দামে ধান বিক্রি করেন। সেই ধান পরে ফড়িয়া ও মিল মালিকদের হাতে যায়, যখন কৃষকের ঘরে ধান থাকে না তখন বাজারে দাম বাড়ে।

বিশিষ্টজনদের উদ্বেগ: কৃষক নয়সুবিধা পাচ্ছে মিলার

সাবেক খাদ্য সচিব আবদুল লতিফ মণ্ডল বলেন, বোরো মৌসুমেই সবচেয়ে বেশি চাল উৎপাদন হয়, অথচ এবার সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা কম। এতে কৃষক খোলাবাজারে বেশি দামে ধান বিক্রি করতে আগ্রহী হবেন। ১২ এপ্রিল ৪৩ জন বিশিষ্ট নাগরিক অভিযোগ করেছেন, মিলারদের সুবিধা দিতে সংগ্রহ কমানো হয়েছে। ১৩ এপ্রিল ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্ট বলেছে, বর্তমান সরকারও আগের সরকারের মতোই কৃষকের প্রতি উদাসীন।

সরকারের অবস্থান: দাম বাড়ানো হয়েছেচিন্তা চলছে

খাদ্য সচিব মাসুদুল হাসান বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত উৎপাদন খরচের ভিত্তিতেই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকার ধান-চাল সংগ্রহে সক্ষমতা ও মজুত ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা মানছে। তবে ধানের দাম ৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে এবং ভবিষ্যতে লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর কথা ভাবা হচ্ছে।