সারাক্ষণ রিপোর্ট
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদ শুরু হতেই মুসলিম-প্রধান দেশের নাগরিকদের যুক্তরাজ্যে প্রবেশ নিষিদ্ধের লক্ষ্যে গোপনভাবে এক নির্বাহী আদেশের খসড়া অনুমোদিত হয়। আইনগত পর্যালোচনা ও নীতি নির্ধারণের নিয়ম এড়িয়ে জোরপূর্বক পাশ হওয়া সেই খসড়া যখন কার্যকর করতে চাইলে বিমানবন্দরে বিশৃঙ্খলা, আদালতে মোকদ্দমা এবং বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্তদের মধ্যে ব্যাপক বিভ্রান্তি দেখা দেয়। দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পপন্থীরা মনে করেন এবার তার টিম ভঙ্গুরতা এড়িয়ে দক্ষ ও নিয়মানুবর্তী হবে, কিন্তু দ্রুতগতির সিদ্ধান্তগ্রহণ ও প্রতিশোধী মনোভাব কি তখনও নজরবন্দী থেকে যাবে—তাও দেখার বিষয়। সফল হতে হলে অবশ্য প্রথম মেয়াদে সংঘটিত তিনটি বড় ভুল থেকে সাবধান থাকা জরুরি।
ভুল ১: ধ্বংসে পারদর্শী, নির্মাণে দুর্বল
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে নতুন কিছু গড়ে তোলার বদলে পুরনো নীতিমালা বাতিল করাই প্রধান অগ্রাধিকার ছিল। কিউবার সঙ্গে বছরের পর বছর কূটনৈতিক সংলাপের ফলে অর্জিত সম্পর্ক এক ঝটিকেই ধ্বংস করা, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা বিধি শিথিল করা, ২০১৫ সালের ইরান পারমাণবিক চুক্তি ভেঙে ফেলা—এসবই ছিল তার বৈদেশিক নীতির মূলে। অনেক কর্মকর্তা বলেছিলেন, “এক যুগ ধরে তৈরি হওয়া আলোচনা এক ফোঁকে মুছে ফেলা হলো।” যদিও আব্রাহাম চুক্তি পুনর্বিবেচনা, আমেরিকা-মেক্সিকো-কানাডা চুক্তির সংস্করণ এবং সীমান্ত প্রাচীরের কিছু অংশ নির্মাণসহ কিছু ইতিবাচক উদ্যোগও দেখা গেছে, সেসব প্রকল্পেরও বেশির ভাগই ছিল পুরনোবিলুপ্তি, সত্যিকারের নির্মাণ না করে। এক সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা মন্তব্য করেন, “প্রয়োজনীয় সংহতি ও যোগ্য কর্মকর্তাদের অভাবে প্রথম মেয়াদে কোনো নির্মাণমূলক কাজ জমে উঠতে পারেনি। এবার সেটি ঠিক করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা।”
ভুল ২: অগোছালো নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়া ও তার পরিণতি
ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি গঠনে কোনো নির্দিষ্ট রীতি ছিল না। জন বোল্টনের কঠোর কৌশলের পরিপ্রেক্ষিতে এইচ. আর. ম্যাকমাস্টারের নীতি কিছুটা মুক্তরূপে তৈরি হলেও, উভয় ক্ষেত্রেই মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রক্রিয়ার বাইরে বোধ করেছেন। অভিবাসন-সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনা চাপাতে স্টিফেন মিলার আইনি সীমা অতিক্রম করতেন। ট্রাম্প কখনো একটি টুইট, কখনো তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সঙ্গে ফোনালাপে হঠাৎ সন্ত্রাসবিরোধী নীতির দিক পরিবর্তন করতেন—যেমন সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের নির্দেশ। এসব সিদ্ধান্তের আগে সংসদীয় বিধিনিষেধ, বিচারিক পর্যালোচনা ও জনমতের প্রভাব দরকার, কিন্তু সেসব প্রক্রিয়া মানা আর আইনগত পরামর্শ নেওয়া এখনও অসম্পূর্ণ প্রশ্ন।
ভুল ৩: অভিবাসন হ্রাসের আড়ালে অন্য নীতি ফেঁসে যায়
যদিও দ্বিতীয় মেয়াদে ইউক্রেন সংকট মোকাবেলা কিংবা ন্যাটোর ভূমিকা পুনর্মূল্যায়নের মতো বৈশ্বিক অগ্রাধিকার থাকতে পারে, অতীতে অভিবাসন কঠোর করারই তাগিদ সবসময় প্রথম সারিতে থাকল। খ্রিস্টান সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার কথা উত্থাপন করলেও, ট্রাম্প প্রশাসন ইরাক ফেরত প্রার্থীদের যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই দেশে ফিরিয়ে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটিয়েছিল। অভিবাসন হ্রাসের মনোভাব অনেক সময় অন্য গুরুত্বপূর্ণ নীতিকে ছাপিয়ে যায়; ফলে সেগুলো সাময়িক স্থগিত বা পরিত্যাগে কোনো দ্বিধা দেখা দেয়নি। দ্বিতীয় মেয়াদে দীর্ঘমেয়াদি অভিবাসন সংস্কার গড়ে তোলা সম্ভব হবে কিনা, সেটাই আসল চ্যালেঞ্জ। হয়তো অভিবাসন প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে সামান্য সাফল্যের পর বড় সংস্কার বাস্তবায়ন করা যেতে পারে—যা ভিন্নধারার হলেও জরুরি। তবে এজন্য দরকার সুসংগঠিত প্রক্রিয়া, স্পষ্ট লক্ষ্য এবং যথাযথ সমর্থন। দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প এসব সমন্বয় সাধন করতে পারবেন কি না, তা সময়ই বলে দেবে।
Leave a Reply