১০:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৮০) চীন–ভারত সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হওয়ায় উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা নীতি বিকৃত করার অভিযোগ বেইজিংয়ের ভারতের পানি সংকটের ছায়ায় পানীয় শিল্প: রাজস্থানে জল নিয়ে বাড়ছে ঝুঁকি ও অসন্তোষ প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৪৭) আমির খসরুর আসন পরিবর্তন, তার আসনে মনোনয়ন পেলেন সাঈদ নোমান এনসিপি ছাড়লেন তাসনিম জারা থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি চুক্তি সিলেটে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় নিষিদ্ধ বিড়িসহ যুবক গ্রেপ্তার একীভূত পাঁচ ব্যাংকের আমানত উত্তোলনে বিলম্ব, এ বছর অর্থ ছাড়ের সুযোগ নেই নিউ ইয়র্ক টাইমস প্রতিবেদন: ধর্ম অবমাননার অভিযোগে হিন্দু শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা, বাংলাদেশে সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ

রণক্ষেত্রে (পর্ব-৩৭)

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
  • 163

আর্কাদি গাইদার

পঞ্চম পরিচ্ছেদ

কী হল? ছোড় শিগগিরি!’ চুবুক চেচিয়ে উঠলেন। তারপর উচু-করে-ধরা আমার হাত থেকে বোমাটা ছিনিয়ে নিয়ে সেফটি ক্যাচ খুলে দিলেন। তারপর খাদের নিচে ছুড়ে দিলেন বোমাটা।

‘হতভাগা গাধা!’ খে’কিয়ে উঠলেন উনি। বোমার বিস্ফোরণের শব্দে আর পরপর অতগুলো অপ্রত্যাশিত বিপদের মুখোমুখি পড়ে আমার বুদ্ধিসুদ্ধি তখন একেবারে গুলিয়ে গিয়েছিল। উনি বললেন, ‘আঙুটাটা খুলে ফেলিছিলে, এদিকে সেফটি ক্যাচ তেমনি নাগানো ছিল। বলিহারি বুদ্ধি!’

অতঃপর সদ্য-লাঙল-দেয়া কাদা-প্যাচপেচে একটা সজ্জিখেত মাড়িয়ে প্রাণপণে ছুটলুম আমরা। অতসব ঝোপঝাড় থাকায় শ্বেতরক্ষীর দলটা ঘোড়ার পিঠে চড়াই বেয়ে তাড়াতাড়ি ওঠায় মোটেই সুবিধে করতে পারছিল না। তাই শেষপর্যন্ত তারা হে’টে চড়াই ভাঙছিল। কাজেই আমরা সময় পেয়ে গেলুম আরেকটা খাদে পৌঁছতে। তারপর খাদ পেরিয়ে আরেকটা মাঠও পার হয়ে পৌঁছে গেলুম জঙ্গলে। পেছনে, অনেক দূরে, তখন বন্দুকের গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল।

‘ও-ওরা বো-বোধহয় ভাস্কাকে ধ-ধরেই ফেলেছে!! নিজেরই অপরিচিত অদ্ভুত একটা গলায় তুলে-তুলে বললুম।

গুলির আওয়াজ ভালো করে শুনে নিয়ে কিন্তু চুবুক বললেন, ‘না। ওরা আপন মনে গায়ের ঝাল মেটাচ্চে আর কি। চলে এস, বাচ্চা, কোমর বোধে কষে পা চালাও দিকি। ওরা যেন আমাদের যাওয়ার পথের গন্ধটি না পায়, বুইলে।’

নিঃশব্দে চলতে লাগলুম আমরা। আমার মনে হতে লাগল, চুবুক নিশ্চয় আমার ওপর মর্মান্তিক খেপে গেছেন আর আমাকে ঘেন্না করছেন। যেরকম ভয় পেয়ে আমার হাত থেকে রাইফেল পড়ে গিয়েছিল, হাস্যকর ইশকুলের ছেলের কায়দায় যেভাবে আমি শ্বেতরক্ষীটার আঙুল কামড়ে দিয়েছিলুম, ঘোড়ার পিঠে আমাদের বন্দীকে তোলার সময় যেরকম আমি হাতের কাঁপুনি বাগে আনতে পারছিলুম না, আর সবচেয়ে বেশি, মনের জোর এতখানি হারিয়ে ফেলেছিলুম আমি যে সামান্য একটা বোমা পর্যন্ত ছড়তে পারি নি, এতসব কেলেঙ্কারি কাণ্ড দেখে উনি আমার সম্বন্ধে কী-না-কী মনে করেছেন কে জানে!

বিশেষ করে যখন মনে হচ্ছিল চুবুক ফিরে গিয়ে বাহিনীর লোকেদের কাছে আমার সম্বন্ধে সব কথা বলে দেবেন, তখন একটা বিশ্রী তিক্ততায় আর মর্মান্তিক লজ্জায় যেন মরে যাচ্ছিলুম আমি। ভাবলুম, সব শোনার পর সুখারেভ নিশ্চয়ই বলবেন: ‘কয়েছিলাম না, ওরে সঙ্গে না লিতে। সিমকারে নেয়া উচিত ছিল তোমার।’ অসহ্য অপমানে আর নিজের ভীরুতায়, নিজেরই ওপর আক্রোশে চোখে জল এসে গেল আমার।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৮০)

রণক্ষেত্রে (পর্ব-৩৭)

০৮:০০:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

আর্কাদি গাইদার

পঞ্চম পরিচ্ছেদ

কী হল? ছোড় শিগগিরি!’ চুবুক চেচিয়ে উঠলেন। তারপর উচু-করে-ধরা আমার হাত থেকে বোমাটা ছিনিয়ে নিয়ে সেফটি ক্যাচ খুলে দিলেন। তারপর খাদের নিচে ছুড়ে দিলেন বোমাটা।

‘হতভাগা গাধা!’ খে’কিয়ে উঠলেন উনি। বোমার বিস্ফোরণের শব্দে আর পরপর অতগুলো অপ্রত্যাশিত বিপদের মুখোমুখি পড়ে আমার বুদ্ধিসুদ্ধি তখন একেবারে গুলিয়ে গিয়েছিল। উনি বললেন, ‘আঙুটাটা খুলে ফেলিছিলে, এদিকে সেফটি ক্যাচ তেমনি নাগানো ছিল। বলিহারি বুদ্ধি!’

অতঃপর সদ্য-লাঙল-দেয়া কাদা-প্যাচপেচে একটা সজ্জিখেত মাড়িয়ে প্রাণপণে ছুটলুম আমরা। অতসব ঝোপঝাড় থাকায় শ্বেতরক্ষীর দলটা ঘোড়ার পিঠে চড়াই বেয়ে তাড়াতাড়ি ওঠায় মোটেই সুবিধে করতে পারছিল না। তাই শেষপর্যন্ত তারা হে’টে চড়াই ভাঙছিল। কাজেই আমরা সময় পেয়ে গেলুম আরেকটা খাদে পৌঁছতে। তারপর খাদ পেরিয়ে আরেকটা মাঠও পার হয়ে পৌঁছে গেলুম জঙ্গলে। পেছনে, অনেক দূরে, তখন বন্দুকের গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল।

‘ও-ওরা বো-বোধহয় ভাস্কাকে ধ-ধরেই ফেলেছে!! নিজেরই অপরিচিত অদ্ভুত একটা গলায় তুলে-তুলে বললুম।

গুলির আওয়াজ ভালো করে শুনে নিয়ে কিন্তু চুবুক বললেন, ‘না। ওরা আপন মনে গায়ের ঝাল মেটাচ্চে আর কি। চলে এস, বাচ্চা, কোমর বোধে কষে পা চালাও দিকি। ওরা যেন আমাদের যাওয়ার পথের গন্ধটি না পায়, বুইলে।’

নিঃশব্দে চলতে লাগলুম আমরা। আমার মনে হতে লাগল, চুবুক নিশ্চয় আমার ওপর মর্মান্তিক খেপে গেছেন আর আমাকে ঘেন্না করছেন। যেরকম ভয় পেয়ে আমার হাত থেকে রাইফেল পড়ে গিয়েছিল, হাস্যকর ইশকুলের ছেলের কায়দায় যেভাবে আমি শ্বেতরক্ষীটার আঙুল কামড়ে দিয়েছিলুম, ঘোড়ার পিঠে আমাদের বন্দীকে তোলার সময় যেরকম আমি হাতের কাঁপুনি বাগে আনতে পারছিলুম না, আর সবচেয়ে বেশি, মনের জোর এতখানি হারিয়ে ফেলেছিলুম আমি যে সামান্য একটা বোমা পর্যন্ত ছড়তে পারি নি, এতসব কেলেঙ্কারি কাণ্ড দেখে উনি আমার সম্বন্ধে কী-না-কী মনে করেছেন কে জানে!

বিশেষ করে যখন মনে হচ্ছিল চুবুক ফিরে গিয়ে বাহিনীর লোকেদের কাছে আমার সম্বন্ধে সব কথা বলে দেবেন, তখন একটা বিশ্রী তিক্ততায় আর মর্মান্তিক লজ্জায় যেন মরে যাচ্ছিলুম আমি। ভাবলুম, সব শোনার পর সুখারেভ নিশ্চয়ই বলবেন: ‘কয়েছিলাম না, ওরে সঙ্গে না লিতে। সিমকারে নেয়া উচিত ছিল তোমার।’ অসহ্য অপমানে আর নিজের ভীরুতায়, নিজেরই ওপর আক্রোশে চোখে জল এসে গেল আমার।