০৬:১০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
পোল্যান্ডের বনে বিরল কালো নেকড়ের ক্যামেরাবন্দি দৃশ্য, সংরক্ষণ ও সহাবস্থানের বিতর্ক নতুন করে শিশিতে বন্দি সৌন্দর্যের মোহ: পরীক্ষাহীন পেপটাইড ইনজেকশনের বিপজ্জনক উত্থান তুরস্কের দাবি: আক্কুয়ু পারমাণবিক প্রকল্পে রাশিয়ার নতুন ৯ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৪৬) শাওমির ১৭ আল্ট্রা ‘লাইকা এডিশন’: স্মার্টফোনে ফিরছে ম্যানুয়াল জুম রিং একাত্তরেও উৎসবের রাজকীয় গ্ল্যামার, লাল শাড়িতে নতুন সংজ্ঞা রচনা রেখার ইউক্রেনের দাবি: রাশিয়ার ওরেনবুর্গে বড় গ্যাস প্রক্রিয়াজাত কারখানায় ড্রোন হামলা দীপু চন্দ্র দাস হত্যাসহ নির্যাতনের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে হিন্দু মহাজোটের মানববন্ধন শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে বাংলাদেশ, ঢাকাসহ সারাদেশে বেড়েছে শীতের দাপট জিয়ার কবর জিয়ারত করলেন তারেক রহমান

রণক্ষেত্রে (পর্ব-৩৭)

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
  • 159

আর্কাদি গাইদার

পঞ্চম পরিচ্ছেদ

কী হল? ছোড় শিগগিরি!’ চুবুক চেচিয়ে উঠলেন। তারপর উচু-করে-ধরা আমার হাত থেকে বোমাটা ছিনিয়ে নিয়ে সেফটি ক্যাচ খুলে দিলেন। তারপর খাদের নিচে ছুড়ে দিলেন বোমাটা।

‘হতভাগা গাধা!’ খে’কিয়ে উঠলেন উনি। বোমার বিস্ফোরণের শব্দে আর পরপর অতগুলো অপ্রত্যাশিত বিপদের মুখোমুখি পড়ে আমার বুদ্ধিসুদ্ধি তখন একেবারে গুলিয়ে গিয়েছিল। উনি বললেন, ‘আঙুটাটা খুলে ফেলিছিলে, এদিকে সেফটি ক্যাচ তেমনি নাগানো ছিল। বলিহারি বুদ্ধি!’

অতঃপর সদ্য-লাঙল-দেয়া কাদা-প্যাচপেচে একটা সজ্জিখেত মাড়িয়ে প্রাণপণে ছুটলুম আমরা। অতসব ঝোপঝাড় থাকায় শ্বেতরক্ষীর দলটা ঘোড়ার পিঠে চড়াই বেয়ে তাড়াতাড়ি ওঠায় মোটেই সুবিধে করতে পারছিল না। তাই শেষপর্যন্ত তারা হে’টে চড়াই ভাঙছিল। কাজেই আমরা সময় পেয়ে গেলুম আরেকটা খাদে পৌঁছতে। তারপর খাদ পেরিয়ে আরেকটা মাঠও পার হয়ে পৌঁছে গেলুম জঙ্গলে। পেছনে, অনেক দূরে, তখন বন্দুকের গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল।

‘ও-ওরা বো-বোধহয় ভাস্কাকে ধ-ধরেই ফেলেছে!! নিজেরই অপরিচিত অদ্ভুত একটা গলায় তুলে-তুলে বললুম।

গুলির আওয়াজ ভালো করে শুনে নিয়ে কিন্তু চুবুক বললেন, ‘না। ওরা আপন মনে গায়ের ঝাল মেটাচ্চে আর কি। চলে এস, বাচ্চা, কোমর বোধে কষে পা চালাও দিকি। ওরা যেন আমাদের যাওয়ার পথের গন্ধটি না পায়, বুইলে।’

নিঃশব্দে চলতে লাগলুম আমরা। আমার মনে হতে লাগল, চুবুক নিশ্চয় আমার ওপর মর্মান্তিক খেপে গেছেন আর আমাকে ঘেন্না করছেন। যেরকম ভয় পেয়ে আমার হাত থেকে রাইফেল পড়ে গিয়েছিল, হাস্যকর ইশকুলের ছেলের কায়দায় যেভাবে আমি শ্বেতরক্ষীটার আঙুল কামড়ে দিয়েছিলুম, ঘোড়ার পিঠে আমাদের বন্দীকে তোলার সময় যেরকম আমি হাতের কাঁপুনি বাগে আনতে পারছিলুম না, আর সবচেয়ে বেশি, মনের জোর এতখানি হারিয়ে ফেলেছিলুম আমি যে সামান্য একটা বোমা পর্যন্ত ছড়তে পারি নি, এতসব কেলেঙ্কারি কাণ্ড দেখে উনি আমার সম্বন্ধে কী-না-কী মনে করেছেন কে জানে!

বিশেষ করে যখন মনে হচ্ছিল চুবুক ফিরে গিয়ে বাহিনীর লোকেদের কাছে আমার সম্বন্ধে সব কথা বলে দেবেন, তখন একটা বিশ্রী তিক্ততায় আর মর্মান্তিক লজ্জায় যেন মরে যাচ্ছিলুম আমি। ভাবলুম, সব শোনার পর সুখারেভ নিশ্চয়ই বলবেন: ‘কয়েছিলাম না, ওরে সঙ্গে না লিতে। সিমকারে নেয়া উচিত ছিল তোমার।’ অসহ্য অপমানে আর নিজের ভীরুতায়, নিজেরই ওপর আক্রোশে চোখে জল এসে গেল আমার।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

পোল্যান্ডের বনে বিরল কালো নেকড়ের ক্যামেরাবন্দি দৃশ্য, সংরক্ষণ ও সহাবস্থানের বিতর্ক নতুন করে

রণক্ষেত্রে (পর্ব-৩৭)

০৮:০০:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

আর্কাদি গাইদার

পঞ্চম পরিচ্ছেদ

কী হল? ছোড় শিগগিরি!’ চুবুক চেচিয়ে উঠলেন। তারপর উচু-করে-ধরা আমার হাত থেকে বোমাটা ছিনিয়ে নিয়ে সেফটি ক্যাচ খুলে দিলেন। তারপর খাদের নিচে ছুড়ে দিলেন বোমাটা।

‘হতভাগা গাধা!’ খে’কিয়ে উঠলেন উনি। বোমার বিস্ফোরণের শব্দে আর পরপর অতগুলো অপ্রত্যাশিত বিপদের মুখোমুখি পড়ে আমার বুদ্ধিসুদ্ধি তখন একেবারে গুলিয়ে গিয়েছিল। উনি বললেন, ‘আঙুটাটা খুলে ফেলিছিলে, এদিকে সেফটি ক্যাচ তেমনি নাগানো ছিল। বলিহারি বুদ্ধি!’

অতঃপর সদ্য-লাঙল-দেয়া কাদা-প্যাচপেচে একটা সজ্জিখেত মাড়িয়ে প্রাণপণে ছুটলুম আমরা। অতসব ঝোপঝাড় থাকায় শ্বেতরক্ষীর দলটা ঘোড়ার পিঠে চড়াই বেয়ে তাড়াতাড়ি ওঠায় মোটেই সুবিধে করতে পারছিল না। তাই শেষপর্যন্ত তারা হে’টে চড়াই ভাঙছিল। কাজেই আমরা সময় পেয়ে গেলুম আরেকটা খাদে পৌঁছতে। তারপর খাদ পেরিয়ে আরেকটা মাঠও পার হয়ে পৌঁছে গেলুম জঙ্গলে। পেছনে, অনেক দূরে, তখন বন্দুকের গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল।

‘ও-ওরা বো-বোধহয় ভাস্কাকে ধ-ধরেই ফেলেছে!! নিজেরই অপরিচিত অদ্ভুত একটা গলায় তুলে-তুলে বললুম।

গুলির আওয়াজ ভালো করে শুনে নিয়ে কিন্তু চুবুক বললেন, ‘না। ওরা আপন মনে গায়ের ঝাল মেটাচ্চে আর কি। চলে এস, বাচ্চা, কোমর বোধে কষে পা চালাও দিকি। ওরা যেন আমাদের যাওয়ার পথের গন্ধটি না পায়, বুইলে।’

নিঃশব্দে চলতে লাগলুম আমরা। আমার মনে হতে লাগল, চুবুক নিশ্চয় আমার ওপর মর্মান্তিক খেপে গেছেন আর আমাকে ঘেন্না করছেন। যেরকম ভয় পেয়ে আমার হাত থেকে রাইফেল পড়ে গিয়েছিল, হাস্যকর ইশকুলের ছেলের কায়দায় যেভাবে আমি শ্বেতরক্ষীটার আঙুল কামড়ে দিয়েছিলুম, ঘোড়ার পিঠে আমাদের বন্দীকে তোলার সময় যেরকম আমি হাতের কাঁপুনি বাগে আনতে পারছিলুম না, আর সবচেয়ে বেশি, মনের জোর এতখানি হারিয়ে ফেলেছিলুম আমি যে সামান্য একটা বোমা পর্যন্ত ছড়তে পারি নি, এতসব কেলেঙ্কারি কাণ্ড দেখে উনি আমার সম্বন্ধে কী-না-কী মনে করেছেন কে জানে!

বিশেষ করে যখন মনে হচ্ছিল চুবুক ফিরে গিয়ে বাহিনীর লোকেদের কাছে আমার সম্বন্ধে সব কথা বলে দেবেন, তখন একটা বিশ্রী তিক্ততায় আর মর্মান্তিক লজ্জায় যেন মরে যাচ্ছিলুম আমি। ভাবলুম, সব শোনার পর সুখারেভ নিশ্চয়ই বলবেন: ‘কয়েছিলাম না, ওরে সঙ্গে না লিতে। সিমকারে নেয়া উচিত ছিল তোমার।’ অসহ্য অপমানে আর নিজের ভীরুতায়, নিজেরই ওপর আক্রোশে চোখে জল এসে গেল আমার।