সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
গতকাল ছয় জেলায় বজ্রপাতে কমপক্ষে ১৮ জন নিহত হয়েছেন।কুমিল্লায় চারজন, কিশোরগঞ্জে তিনজন এবং নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলায় একজন করে প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই কৃষি শ্রমিক।
বজ্রপাত বৃদ্ধির কারণ
বাংলাদেশের ভূগোলগত অবস্থানের কারণে প্রাক-মৌসুমে বঙ্গোপসাগর থেকে প্রবাহিত আর্দ্র বায়ু শিলং প্ল্যাটোর এবং চট্টগ্রাম পাহাড়ি অঞ্চলের টপোগ্রাফিক বাধায় দ্রুত উত্থিত হয়ে প্রবল বজ্রঝড় (কালবৈশাখী) সৃষ্টি করে ।
এ ছাড়া প্রাক-মৌসুমে (মার্চ–মে) সূর্যালোক তীব্রতায় বায়ুমণ্ডলে তাপমাত্রার অস্বাভাবিক ওঠানামা ও অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়। সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বাড়ায় মৌসুমী দক্ষিণ-পশ্চিম লো-লেভেল জেট বে-অফ-বেঙ্গল ( বঙ্গোপসাগর) থেকে অধিক আর্দ্রতা পরিবহন করে, যা কনভেকটিভ সিস্টেমকে ত্বরান্বিত করে। গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের মোট বজ্রপাতের প্রায় ৬৯% ঘটনা মধ্য-এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত প্রাক-মৌসুমে ঘটে, বিশেষ করে সকালের দিকে।
সাম্প্রতিক উল্লেখযোগ্য বজ্রপাতের ঘটনা
২০১৯–২০২৩: স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম” (SSTAF) এর তথ্যানুযায়ী, এই সময়ে বজ্রপাতের ফলে ১,৩২২ জন প্রাণ হারিয়েছেন, গড়ে বছরে প্রায় ২৬৪ জন মৃত্যু হয়।
এপ্রিল ২০২২ – মে ২০২৩: বজ্রপাতের কারণে ৩৪০ জন নিহত হয়; এর মধ্যে ২৭৪ জন (২৩৯ পুরুষ, ৩৫ নারী) মারা যায় ২০২৩ এর এপ্রিল থেকে ডিসেম্বরের মধ্যেই ঘটেছে ।
ফেব্রুয়ারি–সেপ্টেম্বর ২০২৪: SSTF জানায়, মোট ২৯৭ জন (২৪২ পুরুষ, ৫৫ নারী) বজ্রপাতের আঘাতে প্রাণ হারিয়েছে; অধিকাংশই কৃষিজমিতে কাজ করার সময় দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভুক্তভোগী হয়েছিলেন ।
৭ এপ্রিল ২০২৪: ঝালকাঠি, নেত্রকোণা ও যশোর জেলায় পৃথক বজ্রপাতের ঘটনায় ৫ জন (এক শিশুসহ) নিহত হয়।
প্রতি বছরের গড়: জাতিসংঘের তথ্যমতে বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৩০০ জন বজ্রপাতের আঘাতে মারা যান; বাংলাদেশ সরকার ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করে।
এই তথ্যগুলোই প্রমাণ করে, প্রাক-মৌসুমের “কালবৈশাখী” সহ অন্যান্য বজ্রঝড়ের তীব্রতা ও প্রভাব দিনদিন বাড়ছে। নিরাপত্তা সচেতনতা ও ঝড় প্রতিরোধ কেন্দ্রগুলোতে আরও সক্রিয় উদ্যোগ নেওয়া না গেলে এ ধরণের প্রাণহানির এই ধারা প্রতিবছর অব্যাহত থাকবে।
Leave a Reply