মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ১১:২৪ অপরাহ্ন

ঢাকা ইপিজেডে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ: মে মাসের শুরুতেই চালু না হলে অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা

  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৫, ৩.১৬ পিএম

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সারাংশ

  • তিতাস গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় ইউনাইটেড গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়
  • সরকারের পক্ষ থেকে রপ্তানিমুখী শিল্প ও ইপিজেডকে গ্যাস সংযোগে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে
  • গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় ঢাকা ইপিজেডের মার্কিন, চীনা, জাপানি ও দক্ষিণ কোরীয় বিনিয়োগকারীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন
  • শিল্প মালিকরা উৎপাদন বন্ধ থাকায় পণ্য প্রেরণে বিলম্ব এবং ক্রেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন

রফতানিমুখী শিল্পে তীব্র প্রভাব

সাভারের ঢাকা এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনে (ডিইপিজেড) গতকাল দুপুরে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের নির্দেশে গ্যাস সরবরাহ স্থগিত হওয়ার ফলে ইউনাইটেড গ্রুপের গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে গত রাত পর্যন্ত রফতানিমুখী ৯০টি সক্রিয় কারখানার মধ্যে অধিকাংশই উৎপাদন বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়। প্রায় এক লাখ কর্মী জরুরি ছুটিতে পাঠানো হয়েছেফলে শ্রমিকদের জীবন বাস্তবতা এবং রফতানির গতি বিপুলভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

বকেয়া গ্যাস বিল সংক্রান্ত সংঘাত

ঢাকা ইপিজেড কর্তৃপক্ষ জানায়ইউনাইটেড গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছে তিতাসের গ্যাস বিল বকেয়া প্রায় ৪৭৮ কোটি টাকা ছুঁইছুঁই। তিতাস দাবি করছেদীর্ঘদিন ধরে বিল পরিশোধ না হওয়ায় কোনো বিকল্প ছাড়া গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে বাধ্য হয়েছে। অন্যদিকে ইউনাইটেড গ্রুপ বলছে, “চুক্তি অনুযায়ী কোনো বিল বকেয়া নেইসব বিল তারা পরিশোধ করেছে।” এই দ্বন্দ্বের জেরেই গ্যাস সরবরাহে এমন অঘটন ঘটে এবং শিল্প উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।

সরকারের অগ্রাধিকার: ইপিজেডকে প্রাথমিক গ্যাস সংযোগ

এনার্জি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের পরামর্শক ফৌজুল কবির খান বলেন, “রফতানিমুখী শিল্প ও ইপিজেডে অবস্থিত কারখানাগুলোকে গ্যাস সংযোগে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।” ইতিমধ্যে আন্তঃসরকারি নির্দেশনায় গ্যাসের নতুন শিল্প সংযোগ স্থগিত থাকার পরিপ্রেক্ষিতে ইপিজেড শিল্পকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে তিতাসপেট্রোবাংলা ও বিআরইবি (বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড)-কে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

বিকল্প শক্তি ও বিদ্যুৎ যোগান

জ্বালানি সচিব মো. সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেনরফতানিমুখী শিল্পের বিদ্যুৎ সরবরাহ যাতে ব্যাহত না হয়সেজন্য বিআরইবি-কে অতিরিক্ত ৭৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগান বাড়াতে বলা হয়েছে। এছাড়া কিছু কারখানা নিজস্ব জেনারেটর ও ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট ব্যবহার করে অস্থায়ী লোডশেডিং এড়ানোর চেষ্টা করছে।

সংকটে শিল্প উৎপাদন ও রপ্তানি

৬ এপ্রিলের পর থেকে জ্বালানি সংকটের কারণে দেশের কটন ও বস্ত্র খাত শাটারডাউন হয়েছেএর ফলে উৎপাদন ২০৩০ শতাংশ কমে গেছে। এই অবস্থায় ঢাকা ইপিজেডের উৎপাদন ক্ষমতা স্থগিত হলে সামগ্রিক রপ্তানি পরিসংখ্যানে প্রভাব পড়বে— কারণ ইপিজেড থেকে গত অর্থবছরে দেশের মোট রফতানির ৩.৮২ শতাংশ মূল্যমানের পণ্য রপ্তানি হয়েছে।

দূরদৃষ্টিতে সমাধান: নবায়নযোগ্য শক্তি ও নতুন পাইপলাইন

এনার্জি উপদেষ্টা ফজুল কবির খান উল্লেখ করেছেন, “ভোলায় নতুন আবিষ্কৃত গ্যাসটি ভূ-গ্যাস লাইনে যুক্ত করলে ঢাকা ও ইপিজেডে সরবরাহ সম্পর্কিত সমস্যার মোকাবিলা করা যাবে।” ভোলায় প্রাথমিকভাবে ৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া গেছে বলে দাবি করা হয়েছেতবে সেখান থেকে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইন না থাকায় সরাসরি সংযোগ সম্ভব হয়নি। তিনি আরও বলেননবায়নযোগ্য জ্বালানি ক্ষেত্রেও বেসামরিক ও ব্যবসায়িক সমন্বয়ে দ্রুত বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

শীর্ষ বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ

ঢাকা ইপিজেডের মার্কিনচীনাজাপানি ও দক্ষিণকোরীয় শীর্ষ বিনিয়োগকারীরা এই সংকটের সময় দ্রুত সমাধান চাচ্ছে। গ্যাস বিল পরিশোধদ্রুত পুনরায় সংযোগ ও বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা ছাড়া রফতানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখা কঠিন হবে। সরকারতিতাস ও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত পদক্ষেপে মে মাসের শুরুতেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বড় ধাক্কা আসতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন।

শিল্প মালিকদের প্রতিক্রিয়া

ঢাকা ইপিজেডের বিভিন্ন কারখানার মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে উৎপাদন বন্ধ থাকলে পণ্য প্রেরণে বিলম্ব হবে এবং ক্রেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। অনেক ইউনিটের কাছে জেনারেটর থাকলেও তা চাহিদা মেটাতে প্রায়ই যথেষ্ট নয়।

সরকার ও কোম্পানিগুলির আলোচনা

সরকার ও তিতাস কর্তৃপক্ষ বর্তমানে বিআরইবি ও ইউনাইটেড গ্রুপের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন। আলোচনায় দ্রুত বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ পুনরায় চালু করাবকেয়া বিল আদায়ে বিশেষ ছাড় প্রয়োগ এবং ভ্যাট ও অন্যান্য রেট সাময়িকভাবে কমানোর বিষয়গুলো উঠে এসেছে।

বিকল্প শক্তির গুরুত্ব

ইপিজেডের অনেক কারখানা এখন সৌরবিদ্যুৎবায়োগ্যাস বা জেনারেটর চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের দিকে নজর দিচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদে এসব পরিবর্তন উৎপাদন বন্ধের ঝুঁকি কমাবে।

রফতানির ওপর প্রভাব

 

ঢাকা ইপিজেড থেকে প্রতি মাসে বড় পরিমাণে তৈরি পোশাকইলেকট্রনিক্স ও অন্যান্য পণ্য রপ্তানি হয়। যদি এই বিঘ্ন দীর্ঘায়িত হয়তাহলে জাতীয় রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হয়ে উঠবে।

সমাধানের পথ

তিতাস ও ইউনাইটেডের মধ্যে বকেয়া বিল পরিশোধ বা কিস্তিতে পরিশোধ নিয়ে দ্রুত সমঝোতা করতে হবে।ইপিজেড কারখানাগুলো অল্পতম সময়ের জন্য হলেও ব্রিজ লজিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পেতে পারেসে ব্যবস্থা করতে হবে। নবায়নযোগ্য শক্তি মডেলের ওপর বিনিয়োগ বাড়িয়ে স্বল্প মূল্যে নিজস্ব লোড সামলাতে কারখানাগুলোকে উৎসাহিত করতে হবে।

আগামী দিনের লক্ষ্যমাত্রা

সরকার আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে অন্তত অংশিক বা পূর্ণ গ্যাস সরবরাহ চালু করার কাজ করবেন। একই সঙ্গে ইপিজেডের কারখানাগুলো যাতে উৎপাদন প্রক্রিয়া পুনরায় সচল করতে পারেতার জন্য প্রয়োজনীয় নিয়ম-নীতি সহজ করতেই হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024