সারাক্ষণ রিপোর্ট
গত বছর মালয়েশিয়ায় গার্হস্থ্য সহিংসতা নিয়ে পুলিশে ৭,১১৬টি অভিযোগ জমা পড়েছে, যা ২০২৩ সালের ৪,২৯৪টির তুলনায় ৬৫% (২,৮২২টি) বেশি। এ ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৯ জন আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারও দ্বারা। পুলিশ মনে করে, বিবাহিত দম্পতি এবং অবিবাহিত প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে ঘটে যাওয়া অনেক সহিংসতা রিপোর্ট না হলে এই সংখ্যা আরও অনেক বড় হতে পারে।
লুকিয়ে থাকা বহু ঘটনা
সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার সিতি কামসিয়াহ হাসান (ফেডারেল ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট, সেক্সুয়াল, উইমেন অ্যান্ড চাইল্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন D11-এর প্রধান সহকারী পরিচালক) জানিয়েছেন, “২০২২ সালে ৪,৭৬২টি মামলা রেকর্ড হয়েছিল, ২০২৩ সালে তা কিছুটা কমে ৪,২৯৪টিতে নেমে আসে, কিন্তু ২০২৪ সালে তা একপ্রকার বিস্ফোরণের মতো বেড়ে ৭,১১৬টিতে পৌঁছেছে। অনেক ভুক্তভোগী একই অপরাধী নিয়ে একাধিকবার অভিযোগ করেছেন; কেউ কেউ আশ্রয় সুরক্ষা আদেশ নিয়েছেন।”
বহুমুখী সমাধান জরুরি
পুলিশ বলছে, বিষয়টি শিকড় থেকেই মুছে ফেলতে হলে শুধু মামলা নিবন্ধন করেই চলবে না; সমাধান হতে হবে একাধিক স্তরের। এর জন্য প্রয়োজন:
- দুর্বলদের প্রতিরক্ষা স্তর: আতঙ্ক মোকাবিলায় নিরাপত্তা পরিকল্পনা, জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র এবং কাউন্সেলিং সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
- হস্তক্ষেপ কর্মসূচি: হিংস্র আচরণ দেখানো ব্যক্তিদের জন্য ক্ষিপ্রতা নিয়ন্ত্রণ, আচরণ শিক্ষা ও নিজের পদক্ষেপের প্রভাব বোঝার ওপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ চালু করা।
- প্রযুক্তি ব্যবহার: আশ্রয় সুরক্ষা আদেশে ইলেকট্রনিক মনিটরিং এবং জরুরি এলার্ট সিস্টেমের মতো প্রযুক্তি প্রয়োগ করে দ্রুত সাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
- প্রশিক্ষিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী: হিংসার ছড়ানো সংকেত চিহ্নিত করতে ও সহানুভূতিশীলভাবে সাড়া দিতে পুলিশ অফিসারদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
- সচেতনতার প্রচার: গার্হস্থ্য সহিংসতা নিয়ে স্টিগমা কমাতে, জনগণকে রিপোর্ট করতে উৎসাহিত করতে ও হিংসার প্রকৃতি বোঝাতে ব্যাপক শিক্ষা ও জনমত গঠনমূলক ক্যাম্পেইন চালানো।
স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি
পুলিশের আবেদন, প্রতিটি গার্হস্থ্য সহিংসতার রিপোর্ট যত্ন নিয়ে ও সংবেদনশীলতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। মূল ধাপগুলো হলো:
ঝুঁকি যাচাই: ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অবস্থা পর্যালোচনা করে অবিলম্বে কোনো প্রাণহানি বা গুরুতর আঘাতের আশঙ্কা আছে কিনা ঠিক করা।
নিরাপদ স্থান নিশ্চিতকরণ: ভুক্তভোগীকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া, প্রয়ােজনে চিকিৎসা সেবা করানো ও যদি অপরাধী উপস্থিত থাকে তাহলে তাকে আলাদা রাখা।
ঘটনার দলিলন: হিংসার ধরন, যেকোন দৃশ্যমান আঘাত ও ভুক্তভোগী এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান নথিবদ্ধ করা।
জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি: তদন্ত কার্যক্রমে সাক্ষাৎকার, প্রমাণ সংগ্রহ ও অপরাধীর চিহ্নিতকরণ ও গ্রেফতার নিশ্চিত করা।
ফলো-আপ: অফিসাররা নিয়মিত যোগাযোগ রাখে যাতে ভুক্তভোগী প্রয়োজনীয় সেবা পায় এবং মামলা যথাযথভাবে এগোয়।
সহায়তা ও বিচারপ্রক্রিয়া
- সেবা সংস্থান: ভুক্তভোগীদের আশ্রয়কেন্দ্র, কাউন্সেলিং ও আইনগত সহায়তা সম্পর্কে অবহিত করা।
- বিশেষজ্ঞদের হস্তক্ষেপ: যেখানে শিশু জড়িত বা উচ্চঝুঁকিপূর্ণ ঘটনা, সেগুলো বিশেষায়িত ইউনিট—যেমন গার্হস্থ্য সহিংসতা ইউনিট বা সামাজিক কল্যাণ বিভাগে হস্তান্তর করা।
- সুরক্ষা আদেশ: ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স অ্যাক্ট ১৯৯৪ এর অধীনে আদেশ গ্রহণে সহায়তা করা এবং মামলার অবস্থা পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাওয়া।
- বিচার প্রক্রিয়া: যথেষ্ট প্রমাণ মিললে অভিযুক্তকে বিচারকক্ষে তোলা ও ভুক্তভোগীকে আইনগত পরামর্শের মাধ্যমে সহযোগিতা করা।
গার্হস্থ্য সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াই একক কোনো উপায়ে সফল হবে না। প্রাথমিক হস্তক্ষেপ থেকে শুরু করে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, প্রশিক্ষিত কর্মকর্তা ও সচেতনতামূলক প্রচার—এসবকে সমন্বিত করে মোকাবিলা করতে পারলে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের জীবন রক্ষা করা সম্ভব।