০৬:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫
চ্যাটজিপিটি যুগে অনলাইন খুচরা ব্যবসার চ্যালেঞ্জ—সহজ কেনাকাটার সুবিধার আড়ালে বিপণনকারীদের নিয়ন্ত্রণ হারানোর আশঙ্কা লুভ্র মিউজিয়ামে চাঞ্চল্যকর চুরি—মূল লক্ষ্য ছিল না শিল্পকর্ম, বরং মূল্যবান রত্ন ও ধাতু তালেবান শাসনে আফগান গায়িকা নাগমার দৃঢ় কণ্ঠে স্বাধীনতার আহ্বান আমেরিকান তেল কোম্পানি শেভরনের হাত ধরে টিকে আছে ভেনিজুয়েলার অর্থনীতি বকেয়া বেতন না পেয়ে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ—গাজীপুরে ঘণ্টাব্যাপী যানজট বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় পার্টি ও আইআরআই’র বৈঠকঃ জিএম কাদেরের স্পষ্ট বার্তা—‘বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয়’ চাকরি, ঋণ ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় জেনারেশন জেডের আর্থিক লড়াই বিজ্ঞানীদের সামনে অ্যালঝেইমার প্রতিরোধের নতুন দিগন্ত লেরমো দেল তোরোর নতুন ‘ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন’—অস্তিত্ব, ঈশ্বর ও সৃষ্টির দ্বন্দ্বে এক মানবিক চলচ্চিত্র রাজনীতির কিংবদন্তী ও ইতিহাসের কণ্ঠস্বর তোফায়েল আহমেদের শুভ জন্মদিনে সংগ্রামী শুভেচ্ছা

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের দ্রুত সংশোধনের দাবি তরুণ চিকিৎসকদের

তরুণ চিকিৎসকরা বলেছেন, বর্তমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ‘তামাক নিয়ন্ত্রণে কাঠামোগত চুক্তি’ (এফসিটিসি)-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। দ্রুত সংশোধন না হলে হৃদরোগ, ক্যানসার ও ফুসফুসজনিত অসুখসহ অসংক্রামক রোগ বেড়ে যাবে, যা শিশু ও তরুণ প্রজন্মের জন্য ভয়াবহ হুমকি তৈরি করবে।


তামাকবিরোধী সেমিনারে তরুণ চিকিৎসকদের আহ্বান

জাতীয় হৃদরোগ ফাউন্ডেশন আয়োজিত “অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও তরুণদের সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা” শীর্ষক সেমিনারে চিকিৎসকরা এ দাবি জানান। অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার সিআইআরডিএপি মিলনায়তনে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডা. ফারজানা রহমান মুনমুন, প্ল্যাটফর্ম ডক্টরস ফাউন্ডেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। সেশনটি পরিচালনা করেন সংগঠনের সহ-সভাপতি ডা. রামিসা ফারিহা।


তরুণদের তামাক ব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি

গ্লোবাল ইয়ুথ টোব্যাকো সার্ভে দুই হাজার তেরো অনুযায়ী, তেরো থেকে পনেরো বছর বয়সী বাংলাদেশের ছেলেদের নয় দশমিক দুই শতাংশ এবং মেয়েদের দুই দশমিক আট শতাংশ ধূমপান করে। একই বয়সে ছেলেদের ছয় দশমিক দুই শতাংশ ও মেয়েদের দুই দশমিক নয় শতাংশ ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করে।
এছাড়া, ঊনষাট শতাংশ শিক্ষার্থী জনসমাগমস্থলে এবং একত্রিশ দশমিক এক শতাংশ ঘরে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়।
প্রবন্ধে আরও বলা হয়, বিশ্বব্যাপী কিশোরদের মধ্যে তামাক ও ই-সিগারেট ব্যবহারের প্রবণতা বেড়ে চলেছে, মূলত তামাক কোম্পানিগুলোর ডিজিটাল বিপণন কৌশলের কারণে। এজন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত আইনি সংশোধনটি দ্রুত পাস করা জরুরি।


বিশেষ অতিথিদের বক্তব্য

প্রধান অতিথি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, “তামাক একটি নীরব ঘাতক, যা শুধু ফুসফুস নয়, হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্ককেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। প্রতিদিন শত শত মানুষ তামাকজনিত রোগে অকালমৃত্যুর শিকার হচ্ছে, যা মানবসম্পদ উন্নয়ন ও অর্থনীতির পথে বড় বাধা। আইনটি এখনই হালনাগাদ করা না হলে বিপর্যয় ঘটবে।”

জাতীয় হৃদরোগ ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের বাংলাদেশ হাইপারটেনশন কন্ট্রোল ইনিশিয়েটিভের অতিরিক্ত পরিচালক ডা. মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, “ধূমপান শুধু ধূমপায়ী নয়, আশপাশের মানুষকেও মারাত্মকভাবে ক্ষতি করে। শিশু, নারী ও বৃদ্ধরা পরোক্ষ ধূমপানের ভয়াবহ প্রভাবে আক্রান্ত হন। দেশে পনেরো বছরের নিচে একষট্টি হাজারেরও বেশি শিশু পরোক্ষ ধূমপানের কারণে বিভিন্ন রোগে ভুগছে।”
তিনি আরও বলেন, তামাক কোম্পানিগুলোর করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি (সিএসআর) কার্যক্রম বন্ধ করা জরুরি, কারণ এসব কর্মসূচি তরুণদের আকৃষ্ট করে তামাক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করছে।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. খন্দকার আবদুল আউয়াল রিজভী বলেন, “হৃদরোগ, স্ট্রোক ও দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসরোগসহ অসংক্রামক রোগের প্রধান কারণ তামাক। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় তিন কোটি আটাত্তর লাখ মানুষ তামাক ব্যবহার করে, আর দশে চারজন মানুষ পরোক্ষভাবে ধূমপানের শিকার।”


নীতিগত সুপারিশ

সেমিনারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এফসিটিসি-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ছয় দফা নীতিগত প্রস্তাবনা দেওয়া হয়—
এক. সব পাবলিক স্থান ও গণপরিবহনে নির্ধারিত ধূমপান এলাকা (ডিএসএ) বিলুপ্ত করা।
দুই. বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকপণ্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা।
তিন. তামাক শিল্পের সিএসআর কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা।
চার. তরুণদের সুরক্ষায় ই-সিগারেট নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ।
পাঁচ. একক স্টিক বা খোলা তামাক বিক্রি বন্ধ করা।
ছয়. তামাক প্যাকেটে ছবিযুক্ত স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার পঞ্চাশ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে নব্বই শতাংশ করা।


উপস্থিতি ও অংশগ্রহণ

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ব স্বাস্থ্য বিভাগ) শেখ মোমেনা মনি, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের মহাপরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. আখতারুজ্জামান, অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, জাতীয় হৃদরোগ ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক মো. নঈমুল আজম খান, প্রোগ্রাম সমন্বয়ক ডা. আরুণা সরকার ও সিনিয়র কমিউনিকেশন অফিসার আবু জাফরসহ বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংস্থার প্রতিনিধি।


#
বাংলাদেশ, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন, অসংক্রামক রোগ, তরুণ চিকিৎসক, জাতীয় হৃদরোগ ফাউন্ডেশন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সারাক্ষণ রিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

চ্যাটজিপিটি যুগে অনলাইন খুচরা ব্যবসার চ্যালেঞ্জ—সহজ কেনাকাটার সুবিধার আড়ালে বিপণনকারীদের নিয়ন্ত্রণ হারানোর আশঙ্কা

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের দ্রুত সংশোধনের দাবি তরুণ চিকিৎসকদের

১২:২৯:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

তরুণ চিকিৎসকরা বলেছেন, বর্তমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ‘তামাক নিয়ন্ত্রণে কাঠামোগত চুক্তি’ (এফসিটিসি)-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। দ্রুত সংশোধন না হলে হৃদরোগ, ক্যানসার ও ফুসফুসজনিত অসুখসহ অসংক্রামক রোগ বেড়ে যাবে, যা শিশু ও তরুণ প্রজন্মের জন্য ভয়াবহ হুমকি তৈরি করবে।


তামাকবিরোধী সেমিনারে তরুণ চিকিৎসকদের আহ্বান

জাতীয় হৃদরোগ ফাউন্ডেশন আয়োজিত “অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও তরুণদের সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা” শীর্ষক সেমিনারে চিকিৎসকরা এ দাবি জানান। অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার সিআইআরডিএপি মিলনায়তনে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডা. ফারজানা রহমান মুনমুন, প্ল্যাটফর্ম ডক্টরস ফাউন্ডেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। সেশনটি পরিচালনা করেন সংগঠনের সহ-সভাপতি ডা. রামিসা ফারিহা।


তরুণদের তামাক ব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি

গ্লোবাল ইয়ুথ টোব্যাকো সার্ভে দুই হাজার তেরো অনুযায়ী, তেরো থেকে পনেরো বছর বয়সী বাংলাদেশের ছেলেদের নয় দশমিক দুই শতাংশ এবং মেয়েদের দুই দশমিক আট শতাংশ ধূমপান করে। একই বয়সে ছেলেদের ছয় দশমিক দুই শতাংশ ও মেয়েদের দুই দশমিক নয় শতাংশ ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করে।
এছাড়া, ঊনষাট শতাংশ শিক্ষার্থী জনসমাগমস্থলে এবং একত্রিশ দশমিক এক শতাংশ ঘরে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়।
প্রবন্ধে আরও বলা হয়, বিশ্বব্যাপী কিশোরদের মধ্যে তামাক ও ই-সিগারেট ব্যবহারের প্রবণতা বেড়ে চলেছে, মূলত তামাক কোম্পানিগুলোর ডিজিটাল বিপণন কৌশলের কারণে। এজন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত আইনি সংশোধনটি দ্রুত পাস করা জরুরি।


বিশেষ অতিথিদের বক্তব্য

প্রধান অতিথি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, “তামাক একটি নীরব ঘাতক, যা শুধু ফুসফুস নয়, হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্ককেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। প্রতিদিন শত শত মানুষ তামাকজনিত রোগে অকালমৃত্যুর শিকার হচ্ছে, যা মানবসম্পদ উন্নয়ন ও অর্থনীতির পথে বড় বাধা। আইনটি এখনই হালনাগাদ করা না হলে বিপর্যয় ঘটবে।”

জাতীয় হৃদরোগ ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের বাংলাদেশ হাইপারটেনশন কন্ট্রোল ইনিশিয়েটিভের অতিরিক্ত পরিচালক ডা. মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, “ধূমপান শুধু ধূমপায়ী নয়, আশপাশের মানুষকেও মারাত্মকভাবে ক্ষতি করে। শিশু, নারী ও বৃদ্ধরা পরোক্ষ ধূমপানের ভয়াবহ প্রভাবে আক্রান্ত হন। দেশে পনেরো বছরের নিচে একষট্টি হাজারেরও বেশি শিশু পরোক্ষ ধূমপানের কারণে বিভিন্ন রোগে ভুগছে।”
তিনি আরও বলেন, তামাক কোম্পানিগুলোর করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি (সিএসআর) কার্যক্রম বন্ধ করা জরুরি, কারণ এসব কর্মসূচি তরুণদের আকৃষ্ট করে তামাক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করছে।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. খন্দকার আবদুল আউয়াল রিজভী বলেন, “হৃদরোগ, স্ট্রোক ও দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসরোগসহ অসংক্রামক রোগের প্রধান কারণ তামাক। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় তিন কোটি আটাত্তর লাখ মানুষ তামাক ব্যবহার করে, আর দশে চারজন মানুষ পরোক্ষভাবে ধূমপানের শিকার।”


নীতিগত সুপারিশ

সেমিনারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এফসিটিসি-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ছয় দফা নীতিগত প্রস্তাবনা দেওয়া হয়—
এক. সব পাবলিক স্থান ও গণপরিবহনে নির্ধারিত ধূমপান এলাকা (ডিএসএ) বিলুপ্ত করা।
দুই. বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকপণ্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা।
তিন. তামাক শিল্পের সিএসআর কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা।
চার. তরুণদের সুরক্ষায় ই-সিগারেট নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ।
পাঁচ. একক স্টিক বা খোলা তামাক বিক্রি বন্ধ করা।
ছয়. তামাক প্যাকেটে ছবিযুক্ত স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার পঞ্চাশ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে নব্বই শতাংশ করা।


উপস্থিতি ও অংশগ্রহণ

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ব স্বাস্থ্য বিভাগ) শেখ মোমেনা মনি, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের মহাপরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. আখতারুজ্জামান, অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, জাতীয় হৃদরোগ ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক মো. নঈমুল আজম খান, প্রোগ্রাম সমন্বয়ক ডা. আরুণা সরকার ও সিনিয়র কমিউনিকেশন অফিসার আবু জাফরসহ বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংস্থার প্রতিনিধি।


#
বাংলাদেশ, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন, অসংক্রামক রোগ, তরুণ চিকিৎসক, জাতীয় হৃদরোগ ফাউন্ডেশন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সারাক্ষণ রিপোর্ট