কিম সুন-এ
গত জানুয়ারিতে সিউলে প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের অভিশংসনের দাবিতে আয়োজিত এক সমাবেশে অংশ নিয়েছিলাম। সেই সমাবেশে দুইজন সাধারণ নাগরিকের বক্তব্য আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে। এক তরুণী, যিনি বিশের ঘরে, জনতার উদ্দেশে বলেছিলেন, “আমি এই সমাবেশে অংশ নিচ্ছি আমার ছোট বোনের জন্য, যার বয়স আমার চেয়ে ১০ বছরের বেশি কম। আমি চাই তার জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তুলতে।” তিনি তাঁর প্রিয়জনের জন্য একটি উন্নত সমাজ গড়তে কাজ করছিলেন।
এছাড়া কোরিয়ান কনফেডারেশন অব ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃস্থানীয় সদস্য কিম জিন-সুক তাঁর বক্তৃতায় একটি গণতান্ত্রিক সমাজের স্বপ্ন কল্পনা করেন, যেখানে “একজন নারীবাদী রাষ্ট্রপতি হন, একজন সংখ্যালঘু প্রধানমন্ত্রী হন, প্রতিবন্ধী অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন সংহতির একজন কর্মী কল্যাণমন্ত্রী হন, এবং কোরিয়ান কৃষক লীগের একজন কৃষক কৃষিমন্ত্রী হন।” তাঁর বক্তব্যে তিনি এমন একটি সমাজের স্বপ্ন শেয়ার করেন যেখানে সংখ্যালঘুরা সমান মর্যাদা পায়—একটি স্বপ্ন যা সেই দিনের সমাবেশে উপস্থিত অনেক নাগরিকের মধ্যেও প্রতিধ্বনিত হয়েছিল।
সামনে যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আসছে, তখন এমন একজন প্রার্থীকে ভোট দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ যিনি মানুষের নিরাপত্তা ও সুখ নিশ্চিত করতে কাজ করবেন। কারণ কোরিয়ার রাষ্ট্রপতির হাতে অতিরিক্ত ক্ষমতা থাকে এবং যিনি নির্বাচিত হন, তাঁর সিদ্ধান্ত জনগণের জীবনের ওপর বিরাট প্রভাব ফেলে।
তবে আমাদের এই ভুল আর করা উচিত নয় যে কেবল ভোট দেওয়াই যথেষ্ট দায়িত্ব পালন। বরং একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার, যেখানে সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর নীতিনির্ধারণে প্রতিফলিত হয়। যদি আমরা এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি না করি, তাহলে যত প্রেসিডেন্টকেই অভিশংসন করা হোক না কেন, প্রকৃত অর্থে গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। এটি খুব জরুরি যে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সীমিত করতে হবে এবং বর্তমান রাজনৈতিক কাঠামো সংস্কার করতে হবে, যা জনগণের শাসনকে বাধাগ্রস্ত করে।
‘নাগরিক পরিষদ’ বা সিটিজেন্স অ্যাসেম্বলি এমন একটি উপায়, যার মাধ্যমে মানুষ তাদের জীবনে প্রভাব ফেলা জননীতি বিষয়ে সরাসরি সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এই পরিষদের সদস্যরা লটারির মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়, যেখানে দেশের জনসংখ্যার বৈচিত্র্য—যেমন লিঙ্গ, বয়স, অঞ্চল ইত্যাদির ভিত্তিতে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়। এর ফলে বিভিন্ন সামাজিক পটভূমি থেকে আগত মানুষ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমানভাবে অংশ নিতে পারেন।
এই সদস্যদের হাতে নীতিনির্ধারণ সংক্রান্ত বিষয়গুলোর ব্যাপারে পর্যাপ্ত তথ্য দেওয়া হয়, এবং তাঁরা গভীর আলোচনার পর একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছান। অনেক দেশ, যেমন কানাডা, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড এবং ফ্রান্স ইতোমধ্যেই এই নাগরিক পরিষদ পদ্ধতিকে সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করছে।
আমাদের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলা গুরুত্বপূর্ণ নীতি বিষয়ে, যেমন জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় সরকার কী পদক্ষেপ নেবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আমাদের থাকা উচিত। যদি নাগরিক পরিষদে অংশগ্রহণের সুযোগ পাই, আমি সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে প্রস্তুত থাকব। এটি হবে একটি তাৎপর্যপূর্ণ অভিজ্ঞতা, যেখানে আমরা একে অপরের মতামত শ্রদ্ধা করব, অভিমত বিনিময় করব, এবং গভীর আলোচনার মাধ্যমে জনস্বার্থে সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত নেব।
আমাদের সমাজকে আরও গণতান্ত্রিক করে তোলার জন্য নাগরিক পরিষদের মতো বহুবিধ পথ দরকার। এখনই সেই সময়—একটি উন্নততর সমাজ কল্পনা করার এবং একসঙ্গে সেটি গড়ে তোলার।