সারাক্ষণ রিপোর্ট
আসন্ন জাতিগত জনশুমারিতে পশমন্দ মুসলিমদের ‘অন্যান্য পশ্চাৎপদ শ্রেণি’ (OBC) হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে বলে জানিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চা ও ওবিসি মোর্চার নেতারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিজেপির ওবিসি মোর্চার জাতীয় সভাপতি কে লক্ষ্মণ বলেছেন, “মুসলিমদের মধ্যে যেসব গোষ্ঠী মণ্ডল কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী কেন্দ্র ও রাজ্যের ওবিসি তালিকায় আছে, তাদের জাতিগত জনশুমারিতে ওবিসি হিসেবে গণ্য করা হবে।” সংখ্যালঘু মোর্চার সভাপতি জামাল সিদ্দিকিও বলেন, “পশমন্দা মুসলিমরা এই দেশের নাগরিক, তাদের পশ্চাৎপদতার ভিত্তিতে তাদের গণনাও সেভাবেই হবে।”
পশমন্দা শব্দ ও তাদের জনসংখ্যাগত প্রেক্ষাপট
‘পশমন্দ’ শব্দটি ফারসি থেকে আগত, যার অর্থ “পিছিয়ে পড়া”। এটি মূলত ভারতের মুসলিম সমাজের মধ্যে পিছিয়ে থাকা শ্রেণিগুলোর বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, যেমন আজল (দলিত মুসলিম) ও আজলাফ (অন্যান্য পশ্চাৎপদ মুসলিম)। ২০০৪-০৫ সালের সচার কমিটির প্রতিবেদনে দেখা যায়, ভারতের মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রায় ৪০ শতাংশ ওবিসি ও তফসিলি শ্রেণিভুক্ত। তবে পশমন্দ কর্মী ও গবেষকদের মতে, এই সংখ্যা প্রকৃতপক্ষে ৮০-৮৫ শতাংশ।
১৮৭১ সালের জনশুমারির তথ্য অনুযায়ী, কেবল ১৯ শতাংশ মুসলিম ছিল উচ্চবর্ণভুক্ত, বাকি ৮১ শতাংশ ছিল নিম্নবর্ণীয়।

বিহার ও তেলেঙ্গানার উদাহরণ ও বিতর্ক
বিহার ও তেলেঙ্গানায় রাজ্য সরকার কর্তৃক পরিচালিত জাতিগত জরিপে পশমন্দ মুসলিমদের ওবিসি হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। তবে বিজেপির লক্ষ্মণ বলেন, “তেলেঙ্গানার জরিপ ছিল বিশৃঙ্খল, যা জাতীয় জরিপের ক্ষেত্রে অনুসরণযোগ্য নয়।” সেখানে ৮১ শতাংশ মুসলিমকে পশমন্দ হিসেবে গণ্য করা হয়। লক্ষ্মণের মতে, “হায়দরাবাদের এককালে মুসলিম শাসক ছিল, তারা কিভাবে ওবিসি হতে পারে?”
অন্যদিকে বিহারে পরিচালিত জরিপে পশমন্দ মুসলিমদের হার ধরা হয় ৭৩ শতাংশ, যা লক্ষ্মণের মতে “অনুকরণযোগ্য উদাহরণ”। উল্লেখ্য, তখন বিহারে মহাগঠবন্ধন সরকার ছিল, যার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নীতীশ কুমার, যিনি বর্তমানে বিজেপির মিত্র।
কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া ও অভ্যন্তরীণ বিতর্ক
বিজেপির এই উদ্যোগকে কেন্দ্র করে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী তেলেঙ্গানার মডেল অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে, IUML-এর সাংসদ হারিস বীরন বলেছেন, “পশমন্দ মুসলিমদের ওবিসি হিসেবে অন্তর্ভুক্তি আসলে সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজনের একটি নতুন কৌশল।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যখন সুপ্রিম কোর্ট নিজেই বলেছে মুসলিমরা একটি পশ্চাৎপদ সম্প্রদায়, তখন নতুন করে বিভাজন করে লাভ কী?”

পশমন্দ কর্মীদের বক্তব্য
পশমন্দা এক কর্মী বলেন, “আশরাফ (উচ্চবর্ণ) ও পশমন্দ মুসলিমদের একসাথে গণ্য করা ঠিক নয়। এই জাতিগত জরিপ এই ভেদরেখা তুলে ধরবে।” তাঁর মতে, পশমন্দ শব্দটি মূলত সেই মুসলিম শ্রেণিকে বোঝায় যারা সমাজে সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে বঞ্চিত।
তবে পশমন্দ আন্দোলনের প্রখ্যাত নেতা আলি আনোয়ার আনসারির মতে, “শুধু পশমন্দ মুসলিমদের আলাদা করে গণনা করলেই চলবে না। তাদের বাস্তব উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে, যেমন—দলিত মুসলিমদের তফসিলি জাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা।”
রাজনৈতিক পটভূমি ও বিজেপির কৌশল
বিজেপির পশমন্দ মুসলিমদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন শুরু হয় ২০২২ সালে হায়দরাবাদে দলের জাতীয় এক নির্বাহী সভায়, যেখানে প্রধানমন্ত্রী মোদি নেতাদের পশমন্দ মুসলিমদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর নির্দেশ দেন।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারেও মোদি পশমন্দ মুসলিমদের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন এবং কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টিকে তাদের উপেক্ষার জন্য অভিযুক্ত করেন। তিনি বলেন, “পশমন্দ মুসলিমদের সুযোগ দেওয়া উচিত।”
Sarakhon Report 


















