০৭:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫
অটিজম নিয়ে নতুন বিতর্ক—‘প্রফাউন্ড অটিজম’ কি আলাদা স্বীকৃতি পাওয়ার সময় এসেছে? চ্যাটজিপিটি যুগে অনলাইন খুচরা ব্যবসার চ্যালেঞ্জ—সহজ কেনাকাটার সুবিধার আড়ালে বিপণনকারীদের নিয়ন্ত্রণ হারানোর আশঙ্কা লুভ্র মিউজিয়ামে চাঞ্চল্যকর চুরি—মূল লক্ষ্য ছিল না শিল্পকর্ম, বরং মূল্যবান রত্ন ও ধাতু তালেবান শাসনে আফগান গায়িকা নাগমার দৃঢ় কণ্ঠে স্বাধীনতার আহ্বান আমেরিকান তেল কোম্পানি শেভরনের হাত ধরে টিকে আছে ভেনিজুয়েলার অর্থনীতি বকেয়া বেতন না পেয়ে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ—গাজীপুরে ঘণ্টাব্যাপী যানজট বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় পার্টি ও আইআরআই’র বৈঠকঃ জিএম কাদেরের স্পষ্ট বার্তা—‘বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয়’ চাকরি, ঋণ ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় জেনারেশন জেডের আর্থিক লড়াই বিজ্ঞানীদের সামনে অ্যালঝেইমার প্রতিরোধের নতুন দিগন্ত লেরমো দেল তোরোর নতুন ‘ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন’—অস্তিত্ব, ঈশ্বর ও সৃষ্টির দ্বন্দ্বে এক মানবিক চলচ্চিত্র

আলো-অন্ধকারে দীপশিখা: কলকাতার কালীপূজা, বিশেষ আকর্ষণ কালিঘাট মন্দিরে

কলকাতা যেন অন্য এক জগৎ—আলো, শব্দ, ধূপের গন্ধ আর ঢাকের তালে মুখরিত। কালীপূজার রাতে এই শহর পরিণত হয় পূর্ণিমার মতো দীপ্ত এক নগরে। আর সেই ভক্তি ও উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু হলো দক্ষিণ কলকাতার ঐতিহ্যবাহী কালিঘাট মন্দির, যেখানে দেবী কালী স্বয়ং ‘মা’ হয়ে উপস্থিত হন লাখো মানুষের হৃদয়ে।


কলকাতার কালীপূজার আবহ

দীপাবলির রাতে যখন ভারতের নানা প্রান্তে আলোয় সেজে ওঠে ঘরবাড়ি, তখন কলকাতা মোহময় হয়ে ওঠে কালীপূজার জোয়ারে। আলোর রেখায়, তোরণে ও অলিগলির প্রতিটি মোড়ে বাজে উৎসবের ঢাক। স্কুল, ক্লাব, পরিবার—সবাই মেতে ওঠে দেবী আরাধনায়।
কলকাতার কালীপূজায় একদিকে যেমন আধ্যাত্মিক ভক্তি, অন্যদিকে তেমনি রয়েছে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উচ্ছ্বাস। সৃজনশীল থিমে সাজানো প্যান্ডেল, শিল্পীদের নিপুণ মূর্তি, আর সারারাত ভক্তিমূলক সংগীত—সব মিলিয়ে যেন এক জীবন্ত শিল্পকলা মেলা।


কালিঘাট: দেবীর অমোঘ উপস্থিতি

কলকাতার হৃদয়ে অবস্থিত কালিঘাট মন্দির কেবল একটি পূজাস্থল নয়, এটি এক ঐতিহ্যের প্রতীক। বিশ্বাস করা হয়, দেবী সতীর শরীরের এক অংশ এখানে পতিত হয়েছিল, ফলে এটি ভারতের অন্যতম শাক্তপীঠ।
কালীপূজার রাতে কালিঘাট মন্দিরে মানুষের ঢল নামে। ভোর থেকে শুরু হয় আরতি ও পূজা, যা চলে গভীর রাত পর্যন্ত। মন্দির চত্বরে তখন ধূপের গন্ধে বাতাস ভারী, আর ভক্তদের মুখে একটাই প্রার্থনা—“মা, রক্ষা করো।”
দেবীর কালো আভা, লাল জিভ, আর ত্রিশূল হাতে প্রতীকী শক্তির রূপ এখানে যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে।


পুজো আয়োজন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা

কালিঘাট মন্দির কমিটি ও কলকাতা পুলিশ প্রতিবছর বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। প্যান্ডেল ঘিরে থাকে নিরাপত্তা রক্ষী, ভক্তদের জন্য আলাদা প্রবেশ ও প্রস্থান পথ থাকে। ফুল, প্রসাদ ও প্রদীপ বিক্রেতারা গলির প্রতিটি পাশে বসে, আর ভক্তরা সার বেঁধে দেবীর দর্শনে অপেক্ষা করেন।
দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে কেউ কেউ ভক্তিসংগীত গেয়ে সময় কাটান, কেউ আবার চোখ বন্ধ করে নীরবে প্রার্থনা করেন।


কালিঘাটের কালী: শহরের আত্মা

কলকাতার বহু পরিবারে কালীপূজার আগের দিন থেকেই শুরু হয় প্রস্তুতি—মিষ্টি তৈরি, আলপনা, আর প্রদীপ সাজানো। কিন্তু শহরের আসল প্রাণস্পন্দন ধরা পড়ে কালিঘাটে।
এখানে কালীপূজা শুধু ধর্মীয় আচার নয়, এটি মানুষের মনে শক্তি, সাহস ও সহানুভূতির প্রতীক। দেবী কালী যেন বলেন—অন্ধকারের মধ্যেও আলোর পথ খুঁজে নিতে হয়।


কালিঘাটের কালীপূজা শুধু কলকাতার নয়, সমগ্র বাংলার এক আত্মিক ঐতিহ্য। এটি এমন এক উৎসব, যেখানে ভক্তি, শিল্প, সংগীত ও মানবতার এক অপূর্ব সংমিশ্রণ ঘটে। কালী মা যেন প্রতি বছর এই নগরীর অন্ধকারে আলো জ্বালিয়ে দেন—ভয় নয়, শক্তি ও ভালোবাসার প্রতীক হয়ে।


#কালীপূজা #কালিঘাট #কলকাতা #দীপাবলি #সারাক্ষণরিপোর্ট #বাংলাঅনুষ্ঠান #ঐতিহ্য #ভক্তি

জনপ্রিয় সংবাদ

অটিজম নিয়ে নতুন বিতর্ক—‘প্রফাউন্ড অটিজম’ কি আলাদা স্বীকৃতি পাওয়ার সময় এসেছে?

আলো-অন্ধকারে দীপশিখা: কলকাতার কালীপূজা, বিশেষ আকর্ষণ কালিঘাট মন্দিরে

০১:২২:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

কলকাতা যেন অন্য এক জগৎ—আলো, শব্দ, ধূপের গন্ধ আর ঢাকের তালে মুখরিত। কালীপূজার রাতে এই শহর পরিণত হয় পূর্ণিমার মতো দীপ্ত এক নগরে। আর সেই ভক্তি ও উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু হলো দক্ষিণ কলকাতার ঐতিহ্যবাহী কালিঘাট মন্দির, যেখানে দেবী কালী স্বয়ং ‘মা’ হয়ে উপস্থিত হন লাখো মানুষের হৃদয়ে।


কলকাতার কালীপূজার আবহ

দীপাবলির রাতে যখন ভারতের নানা প্রান্তে আলোয় সেজে ওঠে ঘরবাড়ি, তখন কলকাতা মোহময় হয়ে ওঠে কালীপূজার জোয়ারে। আলোর রেখায়, তোরণে ও অলিগলির প্রতিটি মোড়ে বাজে উৎসবের ঢাক। স্কুল, ক্লাব, পরিবার—সবাই মেতে ওঠে দেবী আরাধনায়।
কলকাতার কালীপূজায় একদিকে যেমন আধ্যাত্মিক ভক্তি, অন্যদিকে তেমনি রয়েছে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উচ্ছ্বাস। সৃজনশীল থিমে সাজানো প্যান্ডেল, শিল্পীদের নিপুণ মূর্তি, আর সারারাত ভক্তিমূলক সংগীত—সব মিলিয়ে যেন এক জীবন্ত শিল্পকলা মেলা।


কালিঘাট: দেবীর অমোঘ উপস্থিতি

কলকাতার হৃদয়ে অবস্থিত কালিঘাট মন্দির কেবল একটি পূজাস্থল নয়, এটি এক ঐতিহ্যের প্রতীক। বিশ্বাস করা হয়, দেবী সতীর শরীরের এক অংশ এখানে পতিত হয়েছিল, ফলে এটি ভারতের অন্যতম শাক্তপীঠ।
কালীপূজার রাতে কালিঘাট মন্দিরে মানুষের ঢল নামে। ভোর থেকে শুরু হয় আরতি ও পূজা, যা চলে গভীর রাত পর্যন্ত। মন্দির চত্বরে তখন ধূপের গন্ধে বাতাস ভারী, আর ভক্তদের মুখে একটাই প্রার্থনা—“মা, রক্ষা করো।”
দেবীর কালো আভা, লাল জিভ, আর ত্রিশূল হাতে প্রতীকী শক্তির রূপ এখানে যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে।


পুজো আয়োজন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা

কালিঘাট মন্দির কমিটি ও কলকাতা পুলিশ প্রতিবছর বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। প্যান্ডেল ঘিরে থাকে নিরাপত্তা রক্ষী, ভক্তদের জন্য আলাদা প্রবেশ ও প্রস্থান পথ থাকে। ফুল, প্রসাদ ও প্রদীপ বিক্রেতারা গলির প্রতিটি পাশে বসে, আর ভক্তরা সার বেঁধে দেবীর দর্শনে অপেক্ষা করেন।
দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে কেউ কেউ ভক্তিসংগীত গেয়ে সময় কাটান, কেউ আবার চোখ বন্ধ করে নীরবে প্রার্থনা করেন।


কালিঘাটের কালী: শহরের আত্মা

কলকাতার বহু পরিবারে কালীপূজার আগের দিন থেকেই শুরু হয় প্রস্তুতি—মিষ্টি তৈরি, আলপনা, আর প্রদীপ সাজানো। কিন্তু শহরের আসল প্রাণস্পন্দন ধরা পড়ে কালিঘাটে।
এখানে কালীপূজা শুধু ধর্মীয় আচার নয়, এটি মানুষের মনে শক্তি, সাহস ও সহানুভূতির প্রতীক। দেবী কালী যেন বলেন—অন্ধকারের মধ্যেও আলোর পথ খুঁজে নিতে হয়।


কালিঘাটের কালীপূজা শুধু কলকাতার নয়, সমগ্র বাংলার এক আত্মিক ঐতিহ্য। এটি এমন এক উৎসব, যেখানে ভক্তি, শিল্প, সংগীত ও মানবতার এক অপূর্ব সংমিশ্রণ ঘটে। কালী মা যেন প্রতি বছর এই নগরীর অন্ধকারে আলো জ্বালিয়ে দেন—ভয় নয়, শক্তি ও ভালোবাসার প্রতীক হয়ে।


#কালীপূজা #কালিঘাট #কলকাতা #দীপাবলি #সারাক্ষণরিপোর্ট #বাংলাঅনুষ্ঠান #ঐতিহ্য #ভক্তি