০৯:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

এশিয়ার চাল বাজারে উচ্চমূল্য  ও বাংলাদেশের বাস্তবতা

  • Sarakhon Report
  • ০৪:৫৭:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫
  • 62

সারাক্ষণ রিপোর্ট

২০২৫ সালের এপ্রিল–মে সময়ে এশিয়ার প্রধান চাল রপ্তানিকারক ও আমদানিকারক দেশগুলোর বাজারে মূল্যচাপ অব্যাহত রয়েছে। জাপানে খুচরা দর ইতিহাসের সর্বোচ্চে, আর থাইল্যান্ড‑ভারতে রপ্তানি মূল্য বহু‑বছরের তলানিতে নামলেও বাংলাদেশের খুচরা বাজার ‘উচ্চ‑স্বাভাবিক’ স্তরে আটকে আছে।

আঞ্চলিক রপ্তানি‑দর (FOB, % ভাঙ্গা)

দেশ  মে ২০২৫ দর (প্রতি টন) এক মাসে পরিবর্তন
ভারত $379‑383 –৪ %
থাইল্যান্ড $405 –২ %
ভিয়েতনাম $399 –১ %
পাকিস্তান $640 অপরিবর্তিত

বিশ্বজুড়ে বিপুল উৎপাদনের পূর্বাভাস (৫৩৫.৮ মিলিয়ন টন, USDA) বাজারে দীর্ঘমেয়াদে মৃদু মন্দার ইঙ্গিত দিলেও স্বল্প‑মেয়াদে সরকারি নীতি—বিশেষ করে ভারতের নতুন ২০ % রপ্তানি শুল্ক—দামে ওঠানামা ঘটাতে পারে।

বাংলাদেশের বাজার — উচ্চ দাম সহনীয়’ নাকি অসহনীয়’?

খুচরা দরের হাল

  • ঢাকা ও আশপাশে (সপ্তাহ শেষ ২ মে)
    • মোটা চাল: কেজি ৫৫‑৬৫ টাকা
    • মিনিকেট (ফাইন): কেজি ৭৫‑৯০ টাকা
    • প্রিমিয়াম নজিরশাইল: কেজি ৯০‑১০০ টাকা
  • সাম্প্রতিক বোরা চাল আসায় মিনিকেটের দর ৩‑৮ টাকা কমেছে, কিন্তু মোটা‑চাল প্রায় অপরিবর্তিত।

সরকারি ভাষ্য বনাম মাঠের তথ্য

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে coarse rice ৪৮‑৫৪ টাকা বলে দাবি করা হলেও বাজার‑সার্ভে তাতে মিল নেই; ভোক্তারা ‘উচ্চ‑স্বাভাবিক’ দামের চাপ অনুভব করছেন।

মজুত ও সংগ্রহ

  • নভেম্বর ২০২৪‑এ সরকারি খাদ্যভান্ডারে চাল ছিল মাত্র ৯.০১ লাখ টন—নিরাপদ স্তরের নিচে।
  • চলতি বোরোতে ১৭.৫ লাখ টন ধান‑চাল (পaddy ৩৬ টাকা, চাল ৪৯ টাকা) সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করা হয়েছে।
  • মার্চ‑এপ্রিল ‘খাদ্যবান্ধব’, OMS, TCB কর্মসূচিতে ৭ লাখ টনের বেশি চাল ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

মূল্যচাপের কারণ

চালকল‑নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ বিলম্ব — মিলমালিকেরা গুদামে ধরে রাখায় পাইকারি বাজারে সরবরাহ কম।

   পরিবহন ব্যয় ও ডলারের দাম — জ্বালানি ও আমদানি‑ব্যয় বেড়ে পাইকারি দরে প্রভাব।

নিম্ন সরকারি মজুত — মিলে ও পাইকারি ভাণ্ডারে দরের ‘তল’ তৈরির সুযোগ।

সামনে কি?

সময়সীমা সম্ভাব্য দৃশ্যপট মূল্যগতি* প্রধান ঝুঁকি
মে‑জুন (বোরো চূড়া) নতুন চাল বাজারে, সরকারি ক্রয় ত্বরান্বিত ↓ ২‑৪ Tk বৃষ্টি বিলম্ব, সংগ্রহ বিলম্ব
জুলাই‑আগস্ট (লীন মৌসুম) মজুত ফুরোলে আমদানি নির্ভরতা ↑ ৩‑৬ Tk ভারতীয় রপ্তানি‑শুল্ক, জ্বালানি‑ব্যয়
সেপ্টেম্বর‑ডিসেম্বর আমন ফলন স্বাভাবিক হলে স্থিতি — / ↓ দুর্যোগ (বন্যা/খরা), আন্তর্জাতিক মূল্য‑উর্ধ্বগতি

কেজি প্রতি আনুমানিক পরিবর্তন ।

নীতিনির্দেশনা ও সুপারিশ

  • দ্রুত সংগ্রহ ও দ্রুত বাজারে সরবরাহ — সরকারি গুদামে চাল তুলতেই হবে, নইলে লীন‑মৌসুমে পুনরায় দামের ঝাঁকুনি আসবে।
  • OMS  TCB‑কার্ড পুনর্বিন্যাস — কম‑আয়ের পরিবারে ভর্তুকি চাল প্রবাহ নিশ্চিত করতে হালনাগাদ তালিকা জরুরি।
  • আবহাওয়া ঝুঁকি‑ব্যবস্থাপনা — খরা‑ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সেচ ও বীমা সহায়তা বাড়ানো দরকার।
  • স্বচ্ছ বাজারতথ্য — ধান‑চাল মজুত ও পাইকারি দর দৈনিক প্রকাশ করলে বাজার‑সামাজিক মনস্তত্ত্ব ও মজুতদারি কমবে।

আঞ্চলিক দরে সাময়িক মন্দা থাকলেও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে চাল এখনো ৫৫‑৯০ টাকা কেজির উচ্চ‑সীমায় ঘুরপাক খাচ্ছে। বোরো মৌসুমের পর্যাপ্ত যোগান ও কার্যকর সরকারি সংগ্রহ‑নীতি বাংলাদেশের জন্য মূল্য‑স্বস্তির প্রধান চাবিকাঠি। তবে জলবায়ু‑ঝুঁকি ও আন্তর্জাতিক বাজারে নীতি‑বদলের ফলে মূল্য‑উৎকণ্ঠা পুরোপুরি কাটেনি।

এশিয়ার চাল বাজারে উচ্চমূল্য  ও বাংলাদেশের বাস্তবতা

০৪:৫৭:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

২০২৫ সালের এপ্রিল–মে সময়ে এশিয়ার প্রধান চাল রপ্তানিকারক ও আমদানিকারক দেশগুলোর বাজারে মূল্যচাপ অব্যাহত রয়েছে। জাপানে খুচরা দর ইতিহাসের সর্বোচ্চে, আর থাইল্যান্ড‑ভারতে রপ্তানি মূল্য বহু‑বছরের তলানিতে নামলেও বাংলাদেশের খুচরা বাজার ‘উচ্চ‑স্বাভাবিক’ স্তরে আটকে আছে।

আঞ্চলিক রপ্তানি‑দর (FOB, % ভাঙ্গা)

দেশ  মে ২০২৫ দর (প্রতি টন) এক মাসে পরিবর্তন
ভারত $379‑383 –৪ %
থাইল্যান্ড $405 –২ %
ভিয়েতনাম $399 –১ %
পাকিস্তান $640 অপরিবর্তিত

বিশ্বজুড়ে বিপুল উৎপাদনের পূর্বাভাস (৫৩৫.৮ মিলিয়ন টন, USDA) বাজারে দীর্ঘমেয়াদে মৃদু মন্দার ইঙ্গিত দিলেও স্বল্প‑মেয়াদে সরকারি নীতি—বিশেষ করে ভারতের নতুন ২০ % রপ্তানি শুল্ক—দামে ওঠানামা ঘটাতে পারে।

বাংলাদেশের বাজার — উচ্চ দাম সহনীয়’ নাকি অসহনীয়’?

খুচরা দরের হাল

  • ঢাকা ও আশপাশে (সপ্তাহ শেষ ২ মে)
    • মোটা চাল: কেজি ৫৫‑৬৫ টাকা
    • মিনিকেট (ফাইন): কেজি ৭৫‑৯০ টাকা
    • প্রিমিয়াম নজিরশাইল: কেজি ৯০‑১০০ টাকা
  • সাম্প্রতিক বোরা চাল আসায় মিনিকেটের দর ৩‑৮ টাকা কমেছে, কিন্তু মোটা‑চাল প্রায় অপরিবর্তিত।

সরকারি ভাষ্য বনাম মাঠের তথ্য

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে coarse rice ৪৮‑৫৪ টাকা বলে দাবি করা হলেও বাজার‑সার্ভে তাতে মিল নেই; ভোক্তারা ‘উচ্চ‑স্বাভাবিক’ দামের চাপ অনুভব করছেন।

মজুত ও সংগ্রহ

  • নভেম্বর ২০২৪‑এ সরকারি খাদ্যভান্ডারে চাল ছিল মাত্র ৯.০১ লাখ টন—নিরাপদ স্তরের নিচে।
  • চলতি বোরোতে ১৭.৫ লাখ টন ধান‑চাল (পaddy ৩৬ টাকা, চাল ৪৯ টাকা) সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করা হয়েছে।
  • মার্চ‑এপ্রিল ‘খাদ্যবান্ধব’, OMS, TCB কর্মসূচিতে ৭ লাখ টনের বেশি চাল ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

মূল্যচাপের কারণ

চালকল‑নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ বিলম্ব — মিলমালিকেরা গুদামে ধরে রাখায় পাইকারি বাজারে সরবরাহ কম।

   পরিবহন ব্যয় ও ডলারের দাম — জ্বালানি ও আমদানি‑ব্যয় বেড়ে পাইকারি দরে প্রভাব।

নিম্ন সরকারি মজুত — মিলে ও পাইকারি ভাণ্ডারে দরের ‘তল’ তৈরির সুযোগ।

সামনে কি?

সময়সীমা সম্ভাব্য দৃশ্যপট মূল্যগতি* প্রধান ঝুঁকি
মে‑জুন (বোরো চূড়া) নতুন চাল বাজারে, সরকারি ক্রয় ত্বরান্বিত ↓ ২‑৪ Tk বৃষ্টি বিলম্ব, সংগ্রহ বিলম্ব
জুলাই‑আগস্ট (লীন মৌসুম) মজুত ফুরোলে আমদানি নির্ভরতা ↑ ৩‑৬ Tk ভারতীয় রপ্তানি‑শুল্ক, জ্বালানি‑ব্যয়
সেপ্টেম্বর‑ডিসেম্বর আমন ফলন স্বাভাবিক হলে স্থিতি — / ↓ দুর্যোগ (বন্যা/খরা), আন্তর্জাতিক মূল্য‑উর্ধ্বগতি

কেজি প্রতি আনুমানিক পরিবর্তন ।

নীতিনির্দেশনা ও সুপারিশ

  • দ্রুত সংগ্রহ ও দ্রুত বাজারে সরবরাহ — সরকারি গুদামে চাল তুলতেই হবে, নইলে লীন‑মৌসুমে পুনরায় দামের ঝাঁকুনি আসবে।
  • OMS  TCB‑কার্ড পুনর্বিন্যাস — কম‑আয়ের পরিবারে ভর্তুকি চাল প্রবাহ নিশ্চিত করতে হালনাগাদ তালিকা জরুরি।
  • আবহাওয়া ঝুঁকি‑ব্যবস্থাপনা — খরা‑ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সেচ ও বীমা সহায়তা বাড়ানো দরকার।
  • স্বচ্ছ বাজারতথ্য — ধান‑চাল মজুত ও পাইকারি দর দৈনিক প্রকাশ করলে বাজার‑সামাজিক মনস্তত্ত্ব ও মজুতদারি কমবে।

আঞ্চলিক দরে সাময়িক মন্দা থাকলেও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে চাল এখনো ৫৫‑৯০ টাকা কেজির উচ্চ‑সীমায় ঘুরপাক খাচ্ছে। বোরো মৌসুমের পর্যাপ্ত যোগান ও কার্যকর সরকারি সংগ্রহ‑নীতি বাংলাদেশের জন্য মূল্য‑স্বস্তির প্রধান চাবিকাঠি। তবে জলবায়ু‑ঝুঁকি ও আন্তর্জাতিক বাজারে নীতি‑বদলের ফলে মূল্য‑উৎকণ্ঠা পুরোপুরি কাটেনি।