১০:১৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫
পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি- ৪৭) প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-২৪৭) চীনকে কেন্দ্র করে কোয়াডের আঞ্চলিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের উদ্যোগ কোয়াড সম্প্রসারণে বাংলাদেশের সম্ভাব্য যোগদানের অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতিতে প্রভাব যুদ্ধবিরতির আহ্বান সত্ত্বেও থাই-ক্যাম্বোডিয়ান সীমান্তে সংঘর্ষ অব্যাহত হিউএনচাঙ (পর্ব-১৫৭) রণক্ষেত্রে (পর্ব-৮৫) শিক্ষার বাতিঘর প্রয়াত প্রিন্সিপাল ইকবাল সিদ্দিকীর ৫৮তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন ‘জেন জি’ তরুণরা অধিকাংশ ডানপন্থী রাজনীতি করে: সমস্যা প্রেমে ও ডেটে যুক্তরাষ্ট্র-হামাস আলোচনায় অচলাবস্থা, গাজা ও ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে কূটনৈতিক ব্যস্ততা

অপারেশন সিন্দুর: পাকিস্তানে ভারতের হামলায় টার্গেট ছিল সন্ত্রাসে সহায়তাকারী নয়টি ঘাঁটি

  • Sarakhon Report
  • ০৫:৪৭:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ মে ২০২৫
  • 114

সারাক্ষণ রিপোর্ট

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে হামলা

ভারত সম্প্রতি ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামে একটি সামরিক অভিযানে পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে নয়টি স্থানে হামলা চালিয়েছে। সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকর্তাদের মতে, এসব স্থানে সক্রিয়ভাবে ভারতে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সহায়তা দেওয়া হচ্ছিল।

এই অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল লস্কর-ই-তৈয়বা (LeT), জইশ-ই-মোহাম্মদ (JeM), ও হিজবুল মুজাহিদিনের (HM) মতো সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর ঘাঁটি, যারা পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও আইএসআই-এর সরাসরি সহযোগিতায় পরিচালিত হচ্ছে।

সরকারি আচ্ছাদনে সন্ত্রাসী কাঠামো

কর্মকর্তারা জানান, এসব সংগঠনকে প্রশিক্ষণ ও সমন্বয়ের জন্য সেনা ঘাঁটির আশেপাশে স্থাপিত স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও সরকারি স্থাপনায় লুকিয়ে রাখা অবকাঠামোর মাধ্যমে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। অভিযানে যেসব ক্যাম্প টার্গেট করা হয়েছে, তাদের অনেকগুলোই এমন ছদ্মবেশী প্রতিষ্ঠানে চালানো হচ্ছিল।

সামরিক যোগাযোগপ্রচার ও নিয়োগ

তথ্য অনুযায়ী, টার্গেটগুলোর মধ্যে ছিল হাই-ফ্রিকোয়েন্সি যোগাযোগ ব্যবস্থা, যা অনুপ্রবেশকারী জঙ্গিদের সঙ্গে সমন্বয়ের কাজে ব্যবহৃত হতো। এছাড়া ধর্মীয় উগ্রবাদ প্রচার, অর্থায়ন, ও সন্ত্রাসী নিয়োগের মতো কর্মকাণ্ডও বিভিন্ন ‘মারকাজে’ করা হতো, যেমন— বাহাওয়ালপুরের ‘মারকাজ সুবহান আল্লাহ’ ও মুরিদকির ‘মারকাজ তাইবা’।

পাকিস্তানি সেনার সরাসরি অংশগ্রহণ

কিছু ক্যাম্পে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ (SSG) জঙ্গিদের জঙ্গলে লড়াই ও গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বলে তথ্য রয়েছে।

অপারেশন সিন্দুরে টার্গেট করা নয়টি ঘাঁটির বিবরণ

১. মারকাজ সুবহান আল্লাহবাহাওয়ালপুর
জইশ-ই-মোহাম্মদের এই কেন্দ্রটি NH-5 মহাসড়কের পাশে করাচি মোড় এলাকায়। এখানে ২০১৫ সাল থেকে ধর্মীয় ও অস্ত্র প্রশিক্ষণ চলছে। পুলওয়ামা হামলার পরিকল্পনাও এখানেই করা হয়েছিল। এই কেন্দ্রে মাসুদ আজহার ও তার পরিবার বসবাস করে।

২. মারকাজ তাইবামুরিদকি
লস্কর-ই-তৈয়বার প্রধান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত। ২৬/১১ মুম্বাই হামলার জঙ্গিরা এখানেই প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। ওসামা বিন লাদেন এখানে মসজিদ ও অতিথিশালা নির্মাণে অর্থায়ন করেছিলেন।

৩. সরজাল/তেহরা কালাননারোয়াল
শাকরগড় তেহসিলের এই জইশ ক্যাম্প একটি প্রাইমারি হেলথ সেন্টারের আড়ালে চলছে। আন্তর্জাতিক সীমান্তের ৬ কিলোমিটারের মধ্যে। এখানে সুড়ঙ্গ নির্মাণ, ড্রোন ও অস্ত্র পাচার কার্যক্রম চালানো হয়।

৪. মেহমুনা জোয়া ফ্যাসিলিটিশিয়ালকোট
হিজবুল মুজাহিদিনের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। ২০–২৫ জন জঙ্গিকে এখানে অস্ত্র চালনা ও অনুপ্রবেশ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। নেতৃত্বে রয়েছে মোহাম্মদ ইরফান খান।

৫. মারকাজ আহলে হাদিসবারনালাভিম্বর
লস্করের গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি। পুঞ্চ–রাজৌরি–রেয়াসি এলাকায় অনুপ্রবেশের জন্য ব্যবহৃত হয়। ১০০–১৫০ জন জঙ্গি অবস্থান করতে পারে। সিনিয়র লস্কর নেতারা এখান থেকে পরিচালনা করেন।

৬. মারকাজ আব্বাসকোটলি
জইশ পরিচালিত ক্যাম্প। ১০০–১২৫ জন জঙ্গির আবাসযোগ্য। অনুপ্রবেশ মিশনের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন কেন্দ্র। পরিচালনায় ক্বারী জাররার, ভারতের এনআইএ-র ওয়ান্টেড তালিকাভুক্ত।

৭. মাসকার রাহিল শহীদকোটলি
হিজবুলের পুরোনো কেন্দ্র। পাহাড়ি এলাকায় অস্ত্র, স্নাইপিং ও গেরিলা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ১৫০–২০০ জঙ্গির জন্য সক্ষম।

৮. শাওয়াই নাল্লা ক্যাম্পমুজাফফরাবাদ
লস্করের বাইট-উল-মুজাহিদিন নামে পরিচিত এই ক্যাম্প ২০০০ সাল থেকে সক্রিয়। ধর্মীয় উগ্রবাদ, অস্ত্র প্রশিক্ষণ, জিপিএস ব্যবহার শেখানো হয়। ২৬/১১ হামলাকারীরা এখানে প্রশিক্ষিত হয়েছিল।

৯. মারকাজ সৈয়দনা বিলালমুজাফফরাবাদ
জইশের মূল ঘাঁটি। সীমান্তে অনুপ্রবেশের আগে জঙ্গিরা এখানে অবস্থান করে। পাকিস্তান সেনার SSG কমান্ডোরা এখানে প্রশিক্ষণ দেয়। পরিচালনায় রয়েছে মুফতি আসগর খান কাশ্মীরি।

এই অভিযান ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থানকে আরো জোরদার করেছে এবং পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদকে রুখতে এক কৌশলগত বার্তা দিয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি হিন্দুস্থান টাইমসের প্রতিবেদনের বাংলা অনুবাদ, এবং সারাক্ষণ এর নিউজ ফরমাটে উপস্থাপিত)

পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি- ৪৭)

অপারেশন সিন্দুর: পাকিস্তানে ভারতের হামলায় টার্গেট ছিল সন্ত্রাসে সহায়তাকারী নয়টি ঘাঁটি

০৫:৪৭:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ মে ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে হামলা

ভারত সম্প্রতি ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামে একটি সামরিক অভিযানে পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে নয়টি স্থানে হামলা চালিয়েছে। সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকর্তাদের মতে, এসব স্থানে সক্রিয়ভাবে ভারতে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সহায়তা দেওয়া হচ্ছিল।

এই অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল লস্কর-ই-তৈয়বা (LeT), জইশ-ই-মোহাম্মদ (JeM), ও হিজবুল মুজাহিদিনের (HM) মতো সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর ঘাঁটি, যারা পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও আইএসআই-এর সরাসরি সহযোগিতায় পরিচালিত হচ্ছে।

সরকারি আচ্ছাদনে সন্ত্রাসী কাঠামো

কর্মকর্তারা জানান, এসব সংগঠনকে প্রশিক্ষণ ও সমন্বয়ের জন্য সেনা ঘাঁটির আশেপাশে স্থাপিত স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও সরকারি স্থাপনায় লুকিয়ে রাখা অবকাঠামোর মাধ্যমে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। অভিযানে যেসব ক্যাম্প টার্গেট করা হয়েছে, তাদের অনেকগুলোই এমন ছদ্মবেশী প্রতিষ্ঠানে চালানো হচ্ছিল।

সামরিক যোগাযোগপ্রচার ও নিয়োগ

তথ্য অনুযায়ী, টার্গেটগুলোর মধ্যে ছিল হাই-ফ্রিকোয়েন্সি যোগাযোগ ব্যবস্থা, যা অনুপ্রবেশকারী জঙ্গিদের সঙ্গে সমন্বয়ের কাজে ব্যবহৃত হতো। এছাড়া ধর্মীয় উগ্রবাদ প্রচার, অর্থায়ন, ও সন্ত্রাসী নিয়োগের মতো কর্মকাণ্ডও বিভিন্ন ‘মারকাজে’ করা হতো, যেমন— বাহাওয়ালপুরের ‘মারকাজ সুবহান আল্লাহ’ ও মুরিদকির ‘মারকাজ তাইবা’।

পাকিস্তানি সেনার সরাসরি অংশগ্রহণ

কিছু ক্যাম্পে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ (SSG) জঙ্গিদের জঙ্গলে লড়াই ও গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বলে তথ্য রয়েছে।

অপারেশন সিন্দুরে টার্গেট করা নয়টি ঘাঁটির বিবরণ

১. মারকাজ সুবহান আল্লাহবাহাওয়ালপুর
জইশ-ই-মোহাম্মদের এই কেন্দ্রটি NH-5 মহাসড়কের পাশে করাচি মোড় এলাকায়। এখানে ২০১৫ সাল থেকে ধর্মীয় ও অস্ত্র প্রশিক্ষণ চলছে। পুলওয়ামা হামলার পরিকল্পনাও এখানেই করা হয়েছিল। এই কেন্দ্রে মাসুদ আজহার ও তার পরিবার বসবাস করে।

২. মারকাজ তাইবামুরিদকি
লস্কর-ই-তৈয়বার প্রধান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত। ২৬/১১ মুম্বাই হামলার জঙ্গিরা এখানেই প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। ওসামা বিন লাদেন এখানে মসজিদ ও অতিথিশালা নির্মাণে অর্থায়ন করেছিলেন।

৩. সরজাল/তেহরা কালাননারোয়াল
শাকরগড় তেহসিলের এই জইশ ক্যাম্প একটি প্রাইমারি হেলথ সেন্টারের আড়ালে চলছে। আন্তর্জাতিক সীমান্তের ৬ কিলোমিটারের মধ্যে। এখানে সুড়ঙ্গ নির্মাণ, ড্রোন ও অস্ত্র পাচার কার্যক্রম চালানো হয়।

৪. মেহমুনা জোয়া ফ্যাসিলিটিশিয়ালকোট
হিজবুল মুজাহিদিনের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। ২০–২৫ জন জঙ্গিকে এখানে অস্ত্র চালনা ও অনুপ্রবেশ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। নেতৃত্বে রয়েছে মোহাম্মদ ইরফান খান।

৫. মারকাজ আহলে হাদিসবারনালাভিম্বর
লস্করের গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি। পুঞ্চ–রাজৌরি–রেয়াসি এলাকায় অনুপ্রবেশের জন্য ব্যবহৃত হয়। ১০০–১৫০ জন জঙ্গি অবস্থান করতে পারে। সিনিয়র লস্কর নেতারা এখান থেকে পরিচালনা করেন।

৬. মারকাজ আব্বাসকোটলি
জইশ পরিচালিত ক্যাম্প। ১০০–১২৫ জন জঙ্গির আবাসযোগ্য। অনুপ্রবেশ মিশনের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন কেন্দ্র। পরিচালনায় ক্বারী জাররার, ভারতের এনআইএ-র ওয়ান্টেড তালিকাভুক্ত।

৭. মাসকার রাহিল শহীদকোটলি
হিজবুলের পুরোনো কেন্দ্র। পাহাড়ি এলাকায় অস্ত্র, স্নাইপিং ও গেরিলা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ১৫০–২০০ জঙ্গির জন্য সক্ষম।

৮. শাওয়াই নাল্লা ক্যাম্পমুজাফফরাবাদ
লস্করের বাইট-উল-মুজাহিদিন নামে পরিচিত এই ক্যাম্প ২০০০ সাল থেকে সক্রিয়। ধর্মীয় উগ্রবাদ, অস্ত্র প্রশিক্ষণ, জিপিএস ব্যবহার শেখানো হয়। ২৬/১১ হামলাকারীরা এখানে প্রশিক্ষিত হয়েছিল।

৯. মারকাজ সৈয়দনা বিলালমুজাফফরাবাদ
জইশের মূল ঘাঁটি। সীমান্তে অনুপ্রবেশের আগে জঙ্গিরা এখানে অবস্থান করে। পাকিস্তান সেনার SSG কমান্ডোরা এখানে প্রশিক্ষণ দেয়। পরিচালনায় রয়েছে মুফতি আসগর খান কাশ্মীরি।

এই অভিযান ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থানকে আরো জোরদার করেছে এবং পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদকে রুখতে এক কৌশলগত বার্তা দিয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি হিন্দুস্থান টাইমসের প্রতিবেদনের বাংলা অনুবাদ, এবং সারাক্ষণ এর নিউজ ফরমাটে উপস্থাপিত)