০৮:২৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন, কুয়াশায় ব্যাহত চলাচল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৮১) প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৪৮) সপ্তাহের প্রথম দিনে পুঁজিবাজারে মিশ্র চিত্র, ডিএসইতে সূচক কমেছে, সিএসইতে বেড়েছে সোমবার মনোনয়ন জমার শেষ দিন, জমা দিয়েছে মাত্র ১ শতাংশ প্রার্থী  ঢাকা-১৭ ও বগুড়া-৬ আসনে মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর করলেন তারেক রহমান বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে জামায়াতের নেতৃত্বাধীন জোটে এনসিপি: নাহিদ ইসলাম ভারতে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতায় গভীর উদ্বেগ ঢাকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য থেকে সরে গেলেও এনসিপি ছাড়ছি না: সামান্থা শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ভয়াবহ ঊর্ধ্বগতি, ৬৩ শতাংশ সংবাদ নেতিবাচক: গবেষণা

কম্প্রেসড সংগীত শ্রবণক্ষমতার ক্ষতি করতে পারে

  • Sarakhon Report
  • ১০:০০:০১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫
  • 152

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সংগীতের শব্দ বাড়ানোর গোপন কৌশল

মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে শব্দের উচ্চতা বাড়ানোর একটি পরিচিত উপায় হলো “কম্প্রেশন” বা সংকোচন প্রযুক্তি। এই কৌশলে গানের সবচেয়ে উচ্চ শব্দগুলো কমিয়ে এবং নিচু শব্দগুলো বাড়িয়ে একটি “পূর্ণ” শব্দ তৈরি করা হয়। ১৯৩০-এর দশক থেকে ব্যবহৃত এই পদ্ধতি আজকের দিনে রেডিও, টেলিভিশন ও স্ট্রিমিং সার্ভিসে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে।

কম্প্রেসড সংগীত কি ক্ষতিকর?

এতদিন এই সংকুচিত সংগীতের কারণে শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে সন্দেহ থাকলেও, প্রমাণ খুব কমই পাওয়া গেছে। তবে নতুন এক গবেষণায় গিনিপিগদের (এক ধরনের প্রাণী) উপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, কম্প্রেসড সংগীত কানকে এমনভাবে ক্ষতি করে, যা সাধারণ সংগীত করে না।

সংগীতের মাঝে “শান্তির ফাঁক” কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

বিশ্ববিখ্যাত সুরকার ক্লদ ডেবুসি বলেছিলেন, সংগীত হলো—নোটের মধ্যকার ফাঁক। এই ক্ষণিকের বিরতি আমাদের শ্রবণ নিউরোনগুলোকে বিশ্রাম নিতে সাহায্য করে। কিন্তু সংকুচিত সংগীতে, যখন নিচু শব্দগুলোও জোরে শোনায়, তখন এই বিরতিগুলো চলে যায়। এতে শ্রোতার মস্তিষ্ক অতিরিক্ত চাপের মুখে পড়ে, এবং অনেকের কাছে এই ধরনের সংগীত শোনা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়।

গবেষণার পদ্ধতি ও ফলাফল

গবেষণাটি পরিচালনা করেন ফ্রান্সের পাস্তুর ইনস্টিটিউটের অডিওলজিস্ট পল আভান। তিনি ২০১৫ সালে প্রকাশিত অ্যাডেলের “আই মিস ইউ” গানটি বেছে নেন, যার সংকুচিত সংস্করণে সব ধরণের বিরতি মুছে যায়।

গিনিপিগদের দুটি দলে ভাগ করা হয়:

  • একটি দলকে শোনানো হয় গানটির সাধারণ সংস্করণ
  • অপর দলকে শোনানো হয় সংকুচিত সংস্করণ

Compression is killing your music - CNET

দুই দলকেই গান শোনানো হয় ১০২ ডেসিবেল গড় শব্দমাত্রায়—যা ব্রিটেনের হেলথ অ্যান্ড সেফটি এক্সিকিউটিভের সর্বোচ্চ অনুমোদিত সীমার নিচে, কিন্তু তবুও অস্বস্তিকরভাবে উচ্চ।

ক্ষতির ধরন ও তার গভীরতা

কানের কক্লিয়ায় অল্প কিছু সাময়িক ক্ষতি উভয় দলের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, যা স্বাভাবিক। তবে সংকুচিত সংগীত বিশেষভাবে ক্ষতি করেছে মধ্যকর্ণের “স্টেপেডিয়াস” নামক পেশিতে। মাত্র ১ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের এই পেশি উচ্চ শব্দ থেকে কানের ভেতর রক্ষা করে।

দেখা গেছে, উভয় দলের পেশির প্রতিক্রিয়া শক্তি ৪০ শতাংশে নেমে যায়। তবে যারা সাধারণ সংগীত শুনেছিল, তাদের পেশি একদিনের মধ্যে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠে। অন্যদিকে, যারা সংকুচিত সংগীত শুনেছিল, তাদের পেশি এক সপ্তাহ পরেও আগের অবস্থার অর্ধেকেও ফিরে আসেনি।

সংকেত বিশ্লেষণের প্রভাব

গবেষকদের মতে, সংকুচিত সংগীতের একটানা শব্দ সংকেত শ্রবণতন্ত্রের নার্ভ কোষগুলোকে এতটাই চাপের মুখে ফেলে যে, তারা স্টেপেডিয়াস পেশি ঠিকভাবে চালাতে পারে না।

এখনো উত্তর বাকি

এই গবেষণা ঠিক কতটুকু সংকোচন থেকে ক্ষতি শুরু হয়, কিংবা এর প্রভাব কতদিন স্থায়ী হয়, বা মানুষও কি গিনিপিগদের মতোই প্রতিক্রিয়া জানায়—এসব প্রশ্নের উত্তর দেয়নি। তবে এটি স্পষ্ট যে, শুধু শব্দের উচ্চতাই নয়, সংগীতের কাঠামোও শ্রবণস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

জনপ্রিয় সংবাদ

শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন, কুয়াশায় ব্যাহত চলাচল

কম্প্রেসড সংগীত শ্রবণক্ষমতার ক্ষতি করতে পারে

১০:০০:০১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সংগীতের শব্দ বাড়ানোর গোপন কৌশল

মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে শব্দের উচ্চতা বাড়ানোর একটি পরিচিত উপায় হলো “কম্প্রেশন” বা সংকোচন প্রযুক্তি। এই কৌশলে গানের সবচেয়ে উচ্চ শব্দগুলো কমিয়ে এবং নিচু শব্দগুলো বাড়িয়ে একটি “পূর্ণ” শব্দ তৈরি করা হয়। ১৯৩০-এর দশক থেকে ব্যবহৃত এই পদ্ধতি আজকের দিনে রেডিও, টেলিভিশন ও স্ট্রিমিং সার্ভিসে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে।

কম্প্রেসড সংগীত কি ক্ষতিকর?

এতদিন এই সংকুচিত সংগীতের কারণে শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে সন্দেহ থাকলেও, প্রমাণ খুব কমই পাওয়া গেছে। তবে নতুন এক গবেষণায় গিনিপিগদের (এক ধরনের প্রাণী) উপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, কম্প্রেসড সংগীত কানকে এমনভাবে ক্ষতি করে, যা সাধারণ সংগীত করে না।

সংগীতের মাঝে “শান্তির ফাঁক” কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

বিশ্ববিখ্যাত সুরকার ক্লদ ডেবুসি বলেছিলেন, সংগীত হলো—নোটের মধ্যকার ফাঁক। এই ক্ষণিকের বিরতি আমাদের শ্রবণ নিউরোনগুলোকে বিশ্রাম নিতে সাহায্য করে। কিন্তু সংকুচিত সংগীতে, যখন নিচু শব্দগুলোও জোরে শোনায়, তখন এই বিরতিগুলো চলে যায়। এতে শ্রোতার মস্তিষ্ক অতিরিক্ত চাপের মুখে পড়ে, এবং অনেকের কাছে এই ধরনের সংগীত শোনা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়।

গবেষণার পদ্ধতি ও ফলাফল

গবেষণাটি পরিচালনা করেন ফ্রান্সের পাস্তুর ইনস্টিটিউটের অডিওলজিস্ট পল আভান। তিনি ২০১৫ সালে প্রকাশিত অ্যাডেলের “আই মিস ইউ” গানটি বেছে নেন, যার সংকুচিত সংস্করণে সব ধরণের বিরতি মুছে যায়।

গিনিপিগদের দুটি দলে ভাগ করা হয়:

  • একটি দলকে শোনানো হয় গানটির সাধারণ সংস্করণ
  • অপর দলকে শোনানো হয় সংকুচিত সংস্করণ

Compression is killing your music - CNET

দুই দলকেই গান শোনানো হয় ১০২ ডেসিবেল গড় শব্দমাত্রায়—যা ব্রিটেনের হেলথ অ্যান্ড সেফটি এক্সিকিউটিভের সর্বোচ্চ অনুমোদিত সীমার নিচে, কিন্তু তবুও অস্বস্তিকরভাবে উচ্চ।

ক্ষতির ধরন ও তার গভীরতা

কানের কক্লিয়ায় অল্প কিছু সাময়িক ক্ষতি উভয় দলের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, যা স্বাভাবিক। তবে সংকুচিত সংগীত বিশেষভাবে ক্ষতি করেছে মধ্যকর্ণের “স্টেপেডিয়াস” নামক পেশিতে। মাত্র ১ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের এই পেশি উচ্চ শব্দ থেকে কানের ভেতর রক্ষা করে।

দেখা গেছে, উভয় দলের পেশির প্রতিক্রিয়া শক্তি ৪০ শতাংশে নেমে যায়। তবে যারা সাধারণ সংগীত শুনেছিল, তাদের পেশি একদিনের মধ্যে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠে। অন্যদিকে, যারা সংকুচিত সংগীত শুনেছিল, তাদের পেশি এক সপ্তাহ পরেও আগের অবস্থার অর্ধেকেও ফিরে আসেনি।

সংকেত বিশ্লেষণের প্রভাব

গবেষকদের মতে, সংকুচিত সংগীতের একটানা শব্দ সংকেত শ্রবণতন্ত্রের নার্ভ কোষগুলোকে এতটাই চাপের মুখে ফেলে যে, তারা স্টেপেডিয়াস পেশি ঠিকভাবে চালাতে পারে না।

এখনো উত্তর বাকি

এই গবেষণা ঠিক কতটুকু সংকোচন থেকে ক্ষতি শুরু হয়, কিংবা এর প্রভাব কতদিন স্থায়ী হয়, বা মানুষও কি গিনিপিগদের মতোই প্রতিক্রিয়া জানায়—এসব প্রশ্নের উত্তর দেয়নি। তবে এটি স্পষ্ট যে, শুধু শব্দের উচ্চতাই নয়, সংগীতের কাঠামোও শ্রবণস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।