১১:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫
ট্রাম্প বনাম সুপ্রিম কোর্ট: শুল্ক সংকটে নতুন আইনি লড়াই সম্ভাব্য বাজার ধসের পূর্বাভাস: ওয়াল স্ট্রিটও জানে না কখন আসবে পতন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫২) শেয়ারবাজারে ধস অব্যাহত: ডিএসই-তে লেনদেন ৩০০ কোটি টাকার নিচে সিটি ব্যাংক ও ইউনিসেফের চুক্তি: প্রান্তিক যুবকদের সবুজ দক্ষতায় সক্ষম করে তুলতে উদ্যোগ বিবিসি চেয়ারম্যানের ক্ষমাপ্রার্থনা: ট্রাম্পের বক্তৃতা সম্পাদনায় ‘বিচারের ভুল’ স্বীকার দিল্লির লালকেল্লার কাছে গাড়ি বিস্ফোরণ, আহত বহু বৃষ্টি থামাল চতুর্থ টি-টোয়েন্টি, ২–১ ব্যবধানে এগিয়ে নিউজিল্যান্ড এনসিপি বুলেট নিয়েও প্রস্তুত- নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারি ৫টি ব্যাংক একীভূতকরণে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণ দিতে পারে সরকার: বাংলাদেশ ব্যাংক

চীনে চিপ উৎপাদন যন্ত্রপাতি আমদানি বেড়েছে, লাভবান জাপান ও নেদারল্যান্ডস

  • Sarakhon Report
  • ০৫:০৩:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫
  • 194

সারাক্ষণ রিপোর্ট

চীনের রেকর্ড চিপ সরঞ্জাম আমদানি

২০২৪ সালে চীন রেকর্ড পরিমাণে বিদেশি চিপ উৎপাদন যন্ত্রপাতি আমদানি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে চীন একদিকে স্থানীয় উৎপাদন বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামের মজুত গড়ছে।

চীনের মোট ৩০.৯ বিলিয়ন ডলারের যন্ত্রপাতি আমদানির মধ্যে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার এসেছে জাপান ও নেদারল্যান্ডস থেকে। এছাড়া মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর থেকেও আমদানি বেড়েছে।

প্রধান সরবরাহকারী দেশগুলো

চীনের কাস্টমস ডেটা অনুযায়ী, ২০২৪ সালে জাপান ছিল চীনের শীর্ষ সরবরাহকারী দেশ, তার পরেই ছিল নেদারল্যান্ডস। এরপরের অবস্থানে ছিল সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাষ্ট্র।

  • জাপান থেকে আমদানি: ৯.৬৩ বিলিয়ন ডলার (২৮.২৩% বৃদ্ধি)
  • নেদারল্যান্ডস: ৯.৫৩ বিলিয়ন ডলার (৩১.৬% বৃদ্ধি)
  • সিঙ্গাপুর: ৪.৮৬ বিলিয়ন ডলার (২০১৮ সালের তুলনায় ৩৪৫% বৃদ্ধি)
  • যুক্তরাষ্ট্র: ৩.১৮ বিলিয়ন ডলার (মাত্র ১১.৫% বৃদ্ধি)

রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের আশঙ্কা ও সরবরাহ বৈচিত্র্য

যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে জাপান ও নেদারল্যান্ডস যদি রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ কড়াকড়ি করে, সেই আশঙ্কায় চীন সরঞ্জাম মজুতের হার বাড়িয়েছে। এ কারণেই এসব দেশ থেকে আমদানিতে এমন তীব্র বৃদ্ধি দেখা গেছে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উত্থান

মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকেও আমদানি বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানিগুলো যেমন Applied Materials ও Lam Research দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় উৎপাদন বাড়ানোর ফলে এসব দেশ সরঞ্জাম রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

  • দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ২০২৪ সালে আমদানি হয়েছে ১.৬১ বিলিয়ন ডলার, যা ২০১৮ সালের তুলনায় ৩১০% বেশি।

স্থানীয় উৎপাদনের সাফল্য

চীনের স্থানীয় যন্ত্রপাতি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও দ্রুত উন্নতি করছে। ২০২৪ সালে শীর্ষ পাঁচটি প্রতিষ্ঠানই রেকর্ড রাজস্ব অর্জন করেছে। এর মধ্যে চারটি প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ মুনাফাও করেছে।

ডি-আমেরিকানাইজেশন’ নীতি

 যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চীন ‘ডি-আমেরিকানাইজেশন’ চালু করেছে। এখন চীনা চিপ নির্মাতারা চেষ্টা করছে যতটা সম্ভব মার্কিন যন্ত্রপাতির পরিবর্তে স্থানীয় বা অন্য দেশীয় সরঞ্জাম ব্যবহারের।

কোন যন্ত্রের চাহিদা বেশি?

জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তি এখন চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। বিশেষ করে:

  • জাপানের লিথোগ্রাফি ও ক্লিনিং মেশিন
  • দক্ষিণ কোরিয়ার হাইব্রিড বন্ডিং টুল (যা SK Hynix ব্যবহার করে এআই চিপ তৈরির জন্য)

দক্ষিণ কোরিয়ার দ্রুত উত্থান

২০২৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে চীনে যন্ত্রপাতি রপ্তানি ৪২.৪% বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.৪ বিলিয়ন ডলারে। এর বড় অংশই গেছে ChangXin Memory Technologies-সহ চীনের চিপ প্রস্তুতকারকদের কাছে।

শীর্ষ যন্ত্রপাতি নির্মাতারা

  • জাপান: Tokyo Electron, Advantest
  • নেদারল্যান্ডস: ASML
  • দক্ষিণ কোরিয়া: Hanmi Semiconductor, Semes
  • যুক্তরাষ্ট্র: Applied Materials, Lam Research, KLA

ASML জানায়, ২০২৫ সালে চীনে তাদের বিক্রি কিছুটা কমে আসবে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের কারণে।

প্রতিযোগিতার চাপে মার্কিন কোম্পানিগুলো

চীনের বাজারে মার্কিন কোম্পানিগুলোর অবস্থান এখন হুমকির মুখে। এচিং, ডিপোজিশন ও ক্লিনিং প্রযুক্তিতে চীনা কোম্পানিগুলো ধীরে ধীরে মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বীদের স্থান নিচ্ছে।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা ও চাপ

জাপান ও নেদারল্যান্ডস এখন দুই দিক থেকেই চাপের মধ্যে রয়েছে—একদিকে চীনের বাজার ধরে রাখা, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার চাপে থাকা। তবে তাদের লাভজনক অবস্থান এখনো অব্যাহত।

চীনের চিপ উৎপাদনে ব্যয় বৃদ্ধির এই ধারা যদি অব্যাহত থাকে, ২০২৭ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী চিপ উৎপাদনে চীনের অংশ ২৮% থেকে বেড়ে ৩৯% হয়ে যেতে পারে।

চীনের রেকর্ড বিনিয়োগ

Bernstein Research-এর বিশ্লেষক ডেভিড ডাই বলেন, ২০১৯ সালে যেখানে চীন মোট ১২ বিলিয়ন ডলারের সরঞ্জাম কিনেছিল, ২০২৪ সালে তা বেড়ে ৪৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এর মধ্যে বড় অংশই স্থানীয় কোম্পানিগুলোর পকেটে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় চীনা যন্ত্রপাতি নির্মাতারা এখন অনেক বেশি বাজার দখল করছে, বিশেষত এচিং, ডিপোজিশন ও ক্লিনিং খাতে। জাপান, নেদারল্যান্ডস ও দক্ষিণ কোরিয়ার নির্মাতারা এই সময়টাতে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে।”

জনপ্রিয় সংবাদ

ট্রাম্প বনাম সুপ্রিম কোর্ট: শুল্ক সংকটে নতুন আইনি লড়াই

চীনে চিপ উৎপাদন যন্ত্রপাতি আমদানি বেড়েছে, লাভবান জাপান ও নেদারল্যান্ডস

০৫:০৩:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

চীনের রেকর্ড চিপ সরঞ্জাম আমদানি

২০২৪ সালে চীন রেকর্ড পরিমাণে বিদেশি চিপ উৎপাদন যন্ত্রপাতি আমদানি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে চীন একদিকে স্থানীয় উৎপাদন বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামের মজুত গড়ছে।

চীনের মোট ৩০.৯ বিলিয়ন ডলারের যন্ত্রপাতি আমদানির মধ্যে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার এসেছে জাপান ও নেদারল্যান্ডস থেকে। এছাড়া মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর থেকেও আমদানি বেড়েছে।

প্রধান সরবরাহকারী দেশগুলো

চীনের কাস্টমস ডেটা অনুযায়ী, ২০২৪ সালে জাপান ছিল চীনের শীর্ষ সরবরাহকারী দেশ, তার পরেই ছিল নেদারল্যান্ডস। এরপরের অবস্থানে ছিল সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাষ্ট্র।

  • জাপান থেকে আমদানি: ৯.৬৩ বিলিয়ন ডলার (২৮.২৩% বৃদ্ধি)
  • নেদারল্যান্ডস: ৯.৫৩ বিলিয়ন ডলার (৩১.৬% বৃদ্ধি)
  • সিঙ্গাপুর: ৪.৮৬ বিলিয়ন ডলার (২০১৮ সালের তুলনায় ৩৪৫% বৃদ্ধি)
  • যুক্তরাষ্ট্র: ৩.১৮ বিলিয়ন ডলার (মাত্র ১১.৫% বৃদ্ধি)

রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের আশঙ্কা ও সরবরাহ বৈচিত্র্য

যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে জাপান ও নেদারল্যান্ডস যদি রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ কড়াকড়ি করে, সেই আশঙ্কায় চীন সরঞ্জাম মজুতের হার বাড়িয়েছে। এ কারণেই এসব দেশ থেকে আমদানিতে এমন তীব্র বৃদ্ধি দেখা গেছে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উত্থান

মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকেও আমদানি বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানিগুলো যেমন Applied Materials ও Lam Research দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় উৎপাদন বাড়ানোর ফলে এসব দেশ সরঞ্জাম রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

  • দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ২০২৪ সালে আমদানি হয়েছে ১.৬১ বিলিয়ন ডলার, যা ২০১৮ সালের তুলনায় ৩১০% বেশি।

স্থানীয় উৎপাদনের সাফল্য

চীনের স্থানীয় যন্ত্রপাতি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও দ্রুত উন্নতি করছে। ২০২৪ সালে শীর্ষ পাঁচটি প্রতিষ্ঠানই রেকর্ড রাজস্ব অর্জন করেছে। এর মধ্যে চারটি প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ মুনাফাও করেছে।

ডি-আমেরিকানাইজেশন’ নীতি

 যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চীন ‘ডি-আমেরিকানাইজেশন’ চালু করেছে। এখন চীনা চিপ নির্মাতারা চেষ্টা করছে যতটা সম্ভব মার্কিন যন্ত্রপাতির পরিবর্তে স্থানীয় বা অন্য দেশীয় সরঞ্জাম ব্যবহারের।

কোন যন্ত্রের চাহিদা বেশি?

জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তি এখন চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। বিশেষ করে:

  • জাপানের লিথোগ্রাফি ও ক্লিনিং মেশিন
  • দক্ষিণ কোরিয়ার হাইব্রিড বন্ডিং টুল (যা SK Hynix ব্যবহার করে এআই চিপ তৈরির জন্য)

দক্ষিণ কোরিয়ার দ্রুত উত্থান

২০২৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে চীনে যন্ত্রপাতি রপ্তানি ৪২.৪% বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.৪ বিলিয়ন ডলারে। এর বড় অংশই গেছে ChangXin Memory Technologies-সহ চীনের চিপ প্রস্তুতকারকদের কাছে।

শীর্ষ যন্ত্রপাতি নির্মাতারা

  • জাপান: Tokyo Electron, Advantest
  • নেদারল্যান্ডস: ASML
  • দক্ষিণ কোরিয়া: Hanmi Semiconductor, Semes
  • যুক্তরাষ্ট্র: Applied Materials, Lam Research, KLA

ASML জানায়, ২০২৫ সালে চীনে তাদের বিক্রি কিছুটা কমে আসবে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের কারণে।

প্রতিযোগিতার চাপে মার্কিন কোম্পানিগুলো

চীনের বাজারে মার্কিন কোম্পানিগুলোর অবস্থান এখন হুমকির মুখে। এচিং, ডিপোজিশন ও ক্লিনিং প্রযুক্তিতে চীনা কোম্পানিগুলো ধীরে ধীরে মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বীদের স্থান নিচ্ছে।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা ও চাপ

জাপান ও নেদারল্যান্ডস এখন দুই দিক থেকেই চাপের মধ্যে রয়েছে—একদিকে চীনের বাজার ধরে রাখা, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার চাপে থাকা। তবে তাদের লাভজনক অবস্থান এখনো অব্যাহত।

চীনের চিপ উৎপাদনে ব্যয় বৃদ্ধির এই ধারা যদি অব্যাহত থাকে, ২০২৭ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী চিপ উৎপাদনে চীনের অংশ ২৮% থেকে বেড়ে ৩৯% হয়ে যেতে পারে।

চীনের রেকর্ড বিনিয়োগ

Bernstein Research-এর বিশ্লেষক ডেভিড ডাই বলেন, ২০১৯ সালে যেখানে চীন মোট ১২ বিলিয়ন ডলারের সরঞ্জাম কিনেছিল, ২০২৪ সালে তা বেড়ে ৪৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এর মধ্যে বড় অংশই স্থানীয় কোম্পানিগুলোর পকেটে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় চীনা যন্ত্রপাতি নির্মাতারা এখন অনেক বেশি বাজার দখল করছে, বিশেষত এচিং, ডিপোজিশন ও ক্লিনিং খাতে। জাপান, নেদারল্যান্ডস ও দক্ষিণ কোরিয়ার নির্মাতারা এই সময়টাতে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে।”