০৫:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

নারী তুমি চুপ করো না—নজরুলের চিরন্তন আহ্বান

  • Sarakhon Report
  • ০৫:২৫:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫
  • 39

সারাক্ষণ রিপোর্ট

“বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।”

বাংলাদেশে নারীর সমানাধিকারের পক্ষে এমন সাহসী উচ্চারণ নজরুল ইসলামের আগেও কেউ করেননি। বিশ শতকের গোড়ার দিকে যখন নারী ছিল সমাজের এক নিস্পৃহ, মৌন সত্তা, তখন নজরুল তাঁকে তুলে ধরেন এক সচল, সংগ্রামী, আত্মমর্যাদাশীল মানুষ হিসেবে। তাঁর কবিতা, প্রবন্ধ ও গানে নারী যেন নিজেই নিজের অধিকার দাবি করে।

নজরুলের কবিতায় নারী শুধুই প্রেমিকা বা মা নন—তিনি একজন যোদ্ধা, একজন চিন্তাশীল সত্তা, তিনি জাতি গঠনের সমান অংশীদার।

এক বিপ্লবের উচ্চারণ

নজরুলের ‘নারী’ কবিতা, যার পাণ্ডুলিপি চিত্র হিসেবে সংরক্ষিত আছে, তাঁর নারীনির্ভর দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীকী ভিত্তি। এই কবিতায় তিনি নারীর ব্যক্তিত্ব, শক্তি, সৌন্দর্য ও দ্রোহ—সবকিছুর এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটিয়েছেন।

তিনি লিখেছেন—

“আমি চির দুর্বল নারী বলি—না, আমি হই ক্ষমতা।
আমি মা, আমি বোন, আমি প্রেমিকা, আবার আমি যুদ্ধে প্রেরণা।”

এই ঘোষণায় নারীকে কেবল ঘরের নিরাপদ কোণে নয়, বরং বিপ্লবের অগ্রভাগে দেখা যায়। নজরুল নারীকে কল্পনার নয়, বাস্তবতার মাটিতে দাঁড়ানো এক সংগ্রামী সত্তা হিসেবে দেখেছেন।

প্রেম ও সাম্যের যুগলবন্দি

নজরুলের প্রেমের কবিতাগুলিতেও নারী কোনো দূরবর্তী দেবী নন, তিনি সহচরী—সম্মানিত ও সমান। ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় যেমন তিনি নিজেকে বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড কাঁপানো এক দ্রোহী রূপে প্রকাশ করেন, তেমনি নারীকেও সেই দ্রোহের সঙ্গী হিসেবে দেখান:

“আমি চির উন্নত শির!
নারী আমার সহচরী, তারে আমি কদমের পায়ে বাঁধি নাই,
তার চোখে চোখ রেখে চলেছি।”

এই চোখে চোখ রেখে চলার ভাবনাটি নারীর মর্যাদা ও সমতার এক নিপুণ কবিত্ব।

নারীর শক্তি

কুলী-মজুর’ কবিতায়:

“আমি গিরিবালার শিরে
লুটাইয়া পড়ি রক্তে রঞ্জিত চরণে।”

এখানে নারী শ্রমজীবী, প্রতিবাদী। নজরুল নারীকে দুর্বল ভাবেননি, বরং জীবনসংগ্রামের সক্রিয় অংশ হিসেবে দেখেছেন।

নারীর অধিকার

“নারী-পুরুষ উভয়েই মানুষ, এরা একে অপরের পরিপূরক। অথচ নারীকে পশুর মতো বন্দিনী করে রাখা হচ্ছে।”

এই বক্তব্যে নজরুল ধর্মীয় গোঁড়ামি ও পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন।

দৃপ্ত ঘোষণা:

“নারীর মুক্তি ছাড়া জাতির মুক্তি অসম্ভব।”

এটি কেবল একটি মত নয়, বরং একটি আদর্শিক ঘোষণা, যা পরবর্তীকালে নারীবাদী দর্শনের ভিত্তি গড়ে তোলে।

সময়ের প্রেক্ষাপটে নজরুলের প্রাসঙ্গিকতা

আজও বাংলাদেশের নারীরা বহুক্ষেত্রে বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার। শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র বা রাজনীতিতে নারীর অগ্রগতি সত্ত্বেও এখনো তাদের অধিকার ও মর্যাদা প্রশ্নবিদ্ধ। এমন বাস্তবতায় নজরুলের কবিতা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—নারীর জন্য সমানাধিকার কেবল একটি ‘নীতিবাক্য’ নয়, এটি একটি সংগ্রাম।

তাঁর ভাষায়:

“ক্লান্তি যেথা, শক্তি আমি, আমি দুর্বার, দুর্জয় বল।
তোমার শত যত্নে গড়া স্বর্গে আমি ঝড় তুলব চল।”

এখানে নারী কেবল সহনশীলতা নয়—প্রতিরোধেরও প্রতীক।

নজরুলের কণ্ঠে নারী এক চেতনার নাম

কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন কেবল প্রেম ও বিদ্রোহের কবি নন—তিনি ছিলেন নারীর আত্মমর্যাদার কবিও। তাঁর লেখনীতে নারী শুধু ভালোবাসার প্রতীক নয়, তিনি সাম্যের দাবিদার। কবিতা, গান ও গদ্যে নজরুল নারীর স্বাধীনতাকে যা দিয়েছেন, তা আজও অনুপ্রেরণা হয়ে আছে।

এই সময়েও যদি আমরা একটি সমানতাল সমাজ গড়তে চাই, তবে নজরুলের “নারী” কবিতার মতো উচ্চারণ আমাদের পথ দেখাতে পারে।

নারী তুমি চুপ করো না—নজরুলের চিরন্তন আহ্বান

০৫:২৫:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

“বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।”

বাংলাদেশে নারীর সমানাধিকারের পক্ষে এমন সাহসী উচ্চারণ নজরুল ইসলামের আগেও কেউ করেননি। বিশ শতকের গোড়ার দিকে যখন নারী ছিল সমাজের এক নিস্পৃহ, মৌন সত্তা, তখন নজরুল তাঁকে তুলে ধরেন এক সচল, সংগ্রামী, আত্মমর্যাদাশীল মানুষ হিসেবে। তাঁর কবিতা, প্রবন্ধ ও গানে নারী যেন নিজেই নিজের অধিকার দাবি করে।

নজরুলের কবিতায় নারী শুধুই প্রেমিকা বা মা নন—তিনি একজন যোদ্ধা, একজন চিন্তাশীল সত্তা, তিনি জাতি গঠনের সমান অংশীদার।

এক বিপ্লবের উচ্চারণ

নজরুলের ‘নারী’ কবিতা, যার পাণ্ডুলিপি চিত্র হিসেবে সংরক্ষিত আছে, তাঁর নারীনির্ভর দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীকী ভিত্তি। এই কবিতায় তিনি নারীর ব্যক্তিত্ব, শক্তি, সৌন্দর্য ও দ্রোহ—সবকিছুর এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটিয়েছেন।

তিনি লিখেছেন—

“আমি চির দুর্বল নারী বলি—না, আমি হই ক্ষমতা।
আমি মা, আমি বোন, আমি প্রেমিকা, আবার আমি যুদ্ধে প্রেরণা।”

এই ঘোষণায় নারীকে কেবল ঘরের নিরাপদ কোণে নয়, বরং বিপ্লবের অগ্রভাগে দেখা যায়। নজরুল নারীকে কল্পনার নয়, বাস্তবতার মাটিতে দাঁড়ানো এক সংগ্রামী সত্তা হিসেবে দেখেছেন।

প্রেম ও সাম্যের যুগলবন্দি

নজরুলের প্রেমের কবিতাগুলিতেও নারী কোনো দূরবর্তী দেবী নন, তিনি সহচরী—সম্মানিত ও সমান। ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় যেমন তিনি নিজেকে বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড কাঁপানো এক দ্রোহী রূপে প্রকাশ করেন, তেমনি নারীকেও সেই দ্রোহের সঙ্গী হিসেবে দেখান:

“আমি চির উন্নত শির!
নারী আমার সহচরী, তারে আমি কদমের পায়ে বাঁধি নাই,
তার চোখে চোখ রেখে চলেছি।”

এই চোখে চোখ রেখে চলার ভাবনাটি নারীর মর্যাদা ও সমতার এক নিপুণ কবিত্ব।

নারীর শক্তি

কুলী-মজুর’ কবিতায়:

“আমি গিরিবালার শিরে
লুটাইয়া পড়ি রক্তে রঞ্জিত চরণে।”

এখানে নারী শ্রমজীবী, প্রতিবাদী। নজরুল নারীকে দুর্বল ভাবেননি, বরং জীবনসংগ্রামের সক্রিয় অংশ হিসেবে দেখেছেন।

নারীর অধিকার

“নারী-পুরুষ উভয়েই মানুষ, এরা একে অপরের পরিপূরক। অথচ নারীকে পশুর মতো বন্দিনী করে রাখা হচ্ছে।”

এই বক্তব্যে নজরুল ধর্মীয় গোঁড়ামি ও পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন।

দৃপ্ত ঘোষণা:

“নারীর মুক্তি ছাড়া জাতির মুক্তি অসম্ভব।”

এটি কেবল একটি মত নয়, বরং একটি আদর্শিক ঘোষণা, যা পরবর্তীকালে নারীবাদী দর্শনের ভিত্তি গড়ে তোলে।

সময়ের প্রেক্ষাপটে নজরুলের প্রাসঙ্গিকতা

আজও বাংলাদেশের নারীরা বহুক্ষেত্রে বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার। শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র বা রাজনীতিতে নারীর অগ্রগতি সত্ত্বেও এখনো তাদের অধিকার ও মর্যাদা প্রশ্নবিদ্ধ। এমন বাস্তবতায় নজরুলের কবিতা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—নারীর জন্য সমানাধিকার কেবল একটি ‘নীতিবাক্য’ নয়, এটি একটি সংগ্রাম।

তাঁর ভাষায়:

“ক্লান্তি যেথা, শক্তি আমি, আমি দুর্বার, দুর্জয় বল।
তোমার শত যত্নে গড়া স্বর্গে আমি ঝড় তুলব চল।”

এখানে নারী কেবল সহনশীলতা নয়—প্রতিরোধেরও প্রতীক।

নজরুলের কণ্ঠে নারী এক চেতনার নাম

কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন কেবল প্রেম ও বিদ্রোহের কবি নন—তিনি ছিলেন নারীর আত্মমর্যাদার কবিও। তাঁর লেখনীতে নারী শুধু ভালোবাসার প্রতীক নয়, তিনি সাম্যের দাবিদার। কবিতা, গান ও গদ্যে নজরুল নারীর স্বাধীনতাকে যা দিয়েছেন, তা আজও অনুপ্রেরণা হয়ে আছে।

এই সময়েও যদি আমরা একটি সমানতাল সমাজ গড়তে চাই, তবে নজরুলের “নারী” কবিতার মতো উচ্চারণ আমাদের পথ দেখাতে পারে।