রাধানাথের পক্ষীয়েরা যখন অবগত হইল যে, গঙ্গাগোবিন্দের নিকট গবর্ণর জেনারেল, পরামর্শ জিজ্ঞাসা করিয়াছেন এবং তাঁহার ও তাঁহার পুত্র প্রাণকৃষ্ণের হস্তে জমিদারী-সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র এবং প্রত্যেক বংশের বংশ-তালিকা রহিয়াছে, তখন তাঁহার শরণাগত না হইলে, আর কোন উপায় নাই। তাহারা মনে করিয়াছিল যে, যদিও রাধানাথ দত্তক পুত্র বলিয়া বিষয়ের প্রকৃত উত্তরাধিকারী, তথাপি গঙ্গাগোবিন্দ যদি কোনরূপে বুঝাইয়া দেন যে, দিনাজপুরের জমিদারী তাহাদিগের পূর্ব্বপুরুষ হইতে চলিয়া আসায়, উভয়েই সমানভাবে উত্তরাধিকারী হইতে পারে, তাহা হইলে, রাধানাথকে বিশেষরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হইতে হইবে।
অগত্যা তাহারা দেওয়ানজীর আশ্রয় লইতে বাধ্য হইল। দেওয়ানজীও সুযোগ অন্বেষণ করিতেছিলেন। তিনি রাধানাথকে সম্পত্তি দিবার পূর্ব্বে হেষ্টিংস সাহেবের নাম করিয়া সেই নাবালগের পক্ষীয়গণের নিকট ৪ লক্ষ টাকা দাবী করিয়া বসিলেন এবং ৪ লক্ষ টাকা দিতে প্রতিশ্রুত না হইলে, রাধানাথের জমিদারী প্রাপ্তি লইয়া বিষম গোলযোগ উপস্থিত হইবে, এ কথাও বিশেষরূপে বুঝাইয়া দিলেন।
অন্ততঃ রাধানাথের সমস্ত বিষয়ের উত্তরাধিকারী হওয়া সুকঠিন হইবে, এ কথাও প্রকাশ করিতে ছাড়েন নাই। তাহারা যখন দেখিল, বাস্তবিক দেওয়ানজী যাহা মনে করেন, ভাহাই করিতে পারেন, গবর্ণর জেনারেল কদাচ তাঁহার পরামর্শ ব্যতীত কোন কার্য্যই করিতে চাহেন না, তখন তাহারা দেওয়ানজীর কথা শুনিতে বাধ্য হইল, এবং তাঁহার প্রস্তাবমতে ৪ লক্ষ টাকা দিবার অঙ্গীকার করিয়া বালক রাধানাথের দিনাজপুর জমিদারী প্রাপ্তির উপায় করিয়া লইল।
নাবালগ রাধানাথের নিকট হইতে এই ৪ লক্ষ টাকা গ্রহণ করা, হেষ্টিংসসাহেবের এক ভীষণ কলঙ্ক এবং তজ্জন্য গবর্ণর জেনারেল সম্পূর্ণ দোষী। যে নাবালগ প্রকৃত উত্তরাধিকারী হইয়া তাহাদের নিকট বিচারের আশায় উপস্থিত হইয়াছে এবং প্রকৃত প্রস্তাবে যে গবর্ণমেন্টের পালনীয়, তাহার নিকট এরূপ বিচারবিক্রয় যে অতীব লজ্জার ও ঘৃণার কথা, তাহাতে সন্দেহ নাই।