শম্ভুচন্দ্রের মুখে – তদীয় পিতা ও কর্মচারিগণ কর্তৃক স্বীয় নিন্দাবাদশ্রবণে সিংহ ক্রুদ্ধ সিংহের ন্যায় কৃষ্ণচন্দ্রের সমস্ত প্রার্থনা নিষ্ফল করিয়া, শম্ভুচন্দ্রকে নদীয়ার জমিদারী দিবার জন্য গবর্ণর জেনারেলকে পরামর্শ প্রদান করেন। কথিত আছে, রাজার সর্ব্বনাশ উপস্থিত দেখিয়া তদীয় দেওয়ান কালী প্রসাদ, বণিবেশে হেষ্টিংসপত্নীকে একছড়া মুক্তা মালা প্রদান করিয়া সে যাত্রা রাজাকে অপমান হইতে রক্ষা করিয়াছিলেন। এইরূপে বাঙ্গলার সমস্ত রাজা ও জমিদার আপনাদিগের-পিতৃপুরুষদিগের মান ও সম্পত্তি রক্ষা করিবার জন্য দেওয়ানজীর মনস্তষ্টি সাধনে বিশেষরূপ চেষ্টা করিতে লাগিলেন।
গঙ্গাগোবিন্দ নিজ পুত্রকে নায়েব দেওয়ানের পদ প্রদান করিয়া,. কার্য্যের আরও সুবিধা করিয়া তুলিলেন। প্রথমতঃ পুত্রের দ্বারা সমস্ত কার্য্য চালাইতে থাকেন এবং নিজের আবশ্যকমত ক্ষমতা প্রকাশ করিয়া, আপনার ও স্বীয় প্রভু হেষ্টিংসের আশালতাকে পরি-বর্দ্ধিত করিবার জন্য জমিদার ও প্রজাদিগের রক্ত শোষণ করিয়া,. তাহাদের মূলে সেচন করিতে লাগিলেন। তাঁহারই ইঙ্গিতমাত্রে সমস্ত রাজস্ববিভাগ পরিচালিত হইত। কাহারও প্রতিবাদ করিবার ক্ষমতা ছিল না। দেশীয় কর্মচারিগণ দূরে থাকুকু, অনেক ইউরোপীয় কর্মচারীও প্রতিবাদে সাহসী হইতেন না।
তাঁহারা জানিতেন যে, হেষ্টিংস সাহেবের প্রিয়পাত্রের প্রতিবাদ করিতে গেলে, তাঁহাদিগকেই অবসর গ্রহণ করিতে হইবে। ইংরেজরাজত্বে কোন বাঙ্গালী এরূপ অসীম ক্ষমতা প্রাপ্ত হইয়া, দেশের দণ্ডমণ্ডের কর্তা হইতে পারেন নাই। ধন্ত গঙ্গাগোবিন্দ সিংহের সৌভাগ্য যে, আজ সমস্ত বাঙ্গলা, বিহার, উড়িষ্যা একমাত্র তাঁহারই পদানত!
সমস্ত জমিদারদিগের উপর প্রভুত্ব স্থাপন করিয়া, গঙ্গাগোবিন্দ নিজের ও হেষ্টিংস সাহেবের জন্য সকলের নিকট হইতে অর্থ-সংগ্রহের চেষ্টায় ফিরিতে লাগিলেন। সর্ব্বাপেক্ষা দিনাজপুরেই তাঁহাদের অত্যন্ত সুযোগ ঘটিয়া উঠে। বাঙ্গলা ১১৮৪ সালের বর্ষাকালে দিনাজপুরের তদানীন্তন রাজা বৈদ্যনাথ চিররোগী অবস্থায় প্রাণত্যাগ করিলে, তাঁহার দত্তকপুত্র রাধানাথ ও বৈমাত্রেয় ভ্রাতা কান্তনাথের মধ্যে উত্তরাধিকারিত্ব লইরা বিবাদ উপস্থিত হয়। বৈদ্যনাথ কান্তনাথের প্রতি তাদৃশ সন্তুষ্ট ছিলেন না; এইজন্য রাধানাথকে দত্তকপুত্র গ্রহণ করেন।