০২:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

বাংলাদেশে খাদ্যসংকট আরও ঘনীভূত: দুর্যোগ ও অর্থনৈতিক চাপ দায়ী

ঢাকা২৫ মে ২০২৫ — জলবায়ুজনিত দুর্যোগ, অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং বৈদেশিক সহায়তার ঘাটতির ফলে বাংলাদেশে খাদ্যসংকট গভীরতর হচ্ছে। বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে সংকটের ভয়াবহতা তুলে ধরা হয়েছে; কোটি মানুষ এখন চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

জলবায়ু দুর্যোগে কৃষি বিপর্যস্ত

২০২৪ সালে বাংলাদেশ ভয়াবহ বন্যার মুখে পড়ে, যাতে প্রায় ১১ লাখ মেট্রিক টন ধান ধ্বংস হয়—যা দেশের প্রধান খাদ্যশস্য। ভারী বর্ষণ ও উজানের পানির ঢলে সৃষ্ট এসব বন্যায় বিশেষ করে পূর্ব ও উত্তরাঞ্চল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কৃষি খাতে এই ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা (৩৮০ মিলিয়ন ডলার)। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার ৫ লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়, যাতে বাজার স্থিতিশীল রাখা যায়।

অর্থনৈতিক দুরবস্থায় খাদ্যসংকট আরও তীব্র

অর্থনৈতিক সংকট খাদ্যসংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যার নেতৃত্বে রয়েছেন নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস, অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলায় সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা চেয়েছে।

আন্তর্জাতিক সহায়তা ও সংস্কার

সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য বৈদেশিক সহায়তা এখনো আসেনি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) ২০২৫ সালের জুনে ১.৩ বিলিয়ন ডলার ছাড় করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ ও পঞ্চম পর্যালোচনা শেষ হওয়ার পর। এই অর্থ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করা এবং অর্থনৈতিক সংস্কার বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।

এছাড়া, বিশ্বব্যাংক ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা বাংলাদেশ সরকারের সংস্কার কর্মসূচি, বন্যা মোকাবিলা এবং স্বাস্থ্যখাতে উন্নয়নে ব্যয় হবে। অতিরিক্ত ১ বিলিয়ন ডলার পুরোনো কর্মসূচি থেকে পুনঃনির্ধারণ করে ২০২৫ অর্থবছরে মোট ৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ ও অনুদান সরবরাহ করা হবে।

রোহিঙ্গাদের খাদ্যঝুঁকি

কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ২০২৫ সালের মার্চে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) অর্থাভাবের কারণে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার জন্য খাদ্য রেশন অর্ধেক কমিয়ে দেয়। মাসিক খাদ্য কুপনের পরিমাণ ১,৫১৫ টাকা থেকে কমিয়ে ৭২৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়, যা পুষ্টি ও স্বাস্থ্যে গুরুতর প্রভাব ফেলছে।

ভবিষ্যতের আশঙ্কা

আন্তর্জাতিক সহায়তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। বিশ্বব্যাংকের মে ২০২৫ ‘ফুড সিকিউরিটি আপডেট’ অনুযায়ী, টানা ছয় বছর ধরে বিশ্বজুড়ে চরম ক্ষুধা বৃদ্ধি পাচ্ছে, বর্তমানে প্রায় ২৯৫ মিলিয়ন মানুষ উচ্চমাত্রার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। বাংলাদেশেও খাদ্যদ্রব্যের উচ্চমূল্য ও অর্থনৈতিক দুর্বলতার কারণে সংকট বাড়ছে।

এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় নীতিগত সংস্কার, জলবায়ু সহনশীল কৃষিতে বিনিয়োগ এবং টেকসই আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রয়োজন। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে খাদ্যসংকট আরও ঘনীভূত হয়ে পড়বে, এবং আগামী দিনে আরও কোটি মানুষ এই বিপদে পড়বে।

বাংলাদেশে খাদ্যসংকট আরও ঘনীভূত: দুর্যোগ ও অর্থনৈতিক চাপ দায়ী

০৮:১০:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫

ঢাকা২৫ মে ২০২৫ — জলবায়ুজনিত দুর্যোগ, অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং বৈদেশিক সহায়তার ঘাটতির ফলে বাংলাদেশে খাদ্যসংকট গভীরতর হচ্ছে। বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে সংকটের ভয়াবহতা তুলে ধরা হয়েছে; কোটি মানুষ এখন চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

জলবায়ু দুর্যোগে কৃষি বিপর্যস্ত

২০২৪ সালে বাংলাদেশ ভয়াবহ বন্যার মুখে পড়ে, যাতে প্রায় ১১ লাখ মেট্রিক টন ধান ধ্বংস হয়—যা দেশের প্রধান খাদ্যশস্য। ভারী বর্ষণ ও উজানের পানির ঢলে সৃষ্ট এসব বন্যায় বিশেষ করে পূর্ব ও উত্তরাঞ্চল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কৃষি খাতে এই ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা (৩৮০ মিলিয়ন ডলার)। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার ৫ লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়, যাতে বাজার স্থিতিশীল রাখা যায়।

অর্থনৈতিক দুরবস্থায় খাদ্যসংকট আরও তীব্র

অর্থনৈতিক সংকট খাদ্যসংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যার নেতৃত্বে রয়েছেন নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস, অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলায় সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা চেয়েছে।

আন্তর্জাতিক সহায়তা ও সংস্কার

সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য বৈদেশিক সহায়তা এখনো আসেনি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) ২০২৫ সালের জুনে ১.৩ বিলিয়ন ডলার ছাড় করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ ও পঞ্চম পর্যালোচনা শেষ হওয়ার পর। এই অর্থ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করা এবং অর্থনৈতিক সংস্কার বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।

এছাড়া, বিশ্বব্যাংক ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা বাংলাদেশ সরকারের সংস্কার কর্মসূচি, বন্যা মোকাবিলা এবং স্বাস্থ্যখাতে উন্নয়নে ব্যয় হবে। অতিরিক্ত ১ বিলিয়ন ডলার পুরোনো কর্মসূচি থেকে পুনঃনির্ধারণ করে ২০২৫ অর্থবছরে মোট ৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ ও অনুদান সরবরাহ করা হবে।

রোহিঙ্গাদের খাদ্যঝুঁকি

কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ২০২৫ সালের মার্চে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) অর্থাভাবের কারণে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার জন্য খাদ্য রেশন অর্ধেক কমিয়ে দেয়। মাসিক খাদ্য কুপনের পরিমাণ ১,৫১৫ টাকা থেকে কমিয়ে ৭২৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়, যা পুষ্টি ও স্বাস্থ্যে গুরুতর প্রভাব ফেলছে।

ভবিষ্যতের আশঙ্কা

আন্তর্জাতিক সহায়তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। বিশ্বব্যাংকের মে ২০২৫ ‘ফুড সিকিউরিটি আপডেট’ অনুযায়ী, টানা ছয় বছর ধরে বিশ্বজুড়ে চরম ক্ষুধা বৃদ্ধি পাচ্ছে, বর্তমানে প্রায় ২৯৫ মিলিয়ন মানুষ উচ্চমাত্রার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। বাংলাদেশেও খাদ্যদ্রব্যের উচ্চমূল্য ও অর্থনৈতিক দুর্বলতার কারণে সংকট বাড়ছে।

এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় নীতিগত সংস্কার, জলবায়ু সহনশীল কৃষিতে বিনিয়োগ এবং টেকসই আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রয়োজন। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে খাদ্যসংকট আরও ঘনীভূত হয়ে পড়বে, এবং আগামী দিনে আরও কোটি মানুষ এই বিপদে পড়বে।