০৯:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫
ব্রিকসে শি এবং পুতিন না গেলেও যাচ্ছেন মোদি, নতুন মেম্বর ইরানও যোগ দেবে রণক্ষেত্রে (পর্ব-৮০) শিশুদের অ-সংক্রামক রোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের নতুন সেবা মডেল নিত্যপণ্যের দামবৃদ্ধি থামছেই না: গরিবের হাঁড়িতে সঙ্কট আবু সাঈদকে নিয়ে ফেসবুক কটুক্তির জেরে স্কুল ছাত্র গ্রেফতার, তিনদিন পর জামিন বরগুনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ ঢাকায় ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা, সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর  সংকেত জুলাই হলি আর্টিজান হামলা: বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্মে মৌলবাদী মানসিকতার বীজ আন্তর্জাতিক বই আমদানিতে শুল্কারোপ: জ্ঞানের দরজায় দেয়াল, খুলছে কি? গার্মেন্টস শিল্পে নারী শ্রমিক কমে যাচ্ছে

আনুগত্যপ্রীতির চক্রে বন্দী দুর্বল দেশগুলোর নেতৃত্ব

নেতৃত্বের ব্যর্থতার নেপথ্যে আনুগত্যপ্রীতি

অনুন্নত বা রাজনৈতিকভাবে দুর্বল দেশগুলোতে প্রায়ই দেখা যায়, ক্ষমতায় থাকা সরকারপ্রধানরা দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে আত্মীয়স্বজন কিংবা ঘনিষ্ঠ অনুগতদেরই রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে বসান। এতে প্রশাসন দুর্বল হয়, উন্নয়ন থমকে যায় এবং জনসাধারণের আস্থা হ্রাস পায়। এই ধারা যেন এক অভিশাপ হয়ে দেশগুলোর অগ্রগতিকে প্রতিনিয়ত পিছিয়ে দিচ্ছে।

স্বজনপ্রীতির রাজনৈতিক কারণ

এই ধরনের সরকারপ্রধানদের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো—তাঁরা ক্ষমতা হারানোর ভয় পান। তাই যোগ্য ও স্বাধীনচেতা কর্মকর্তার চেয়ে আনুগত্যশীল, স্বজন বা ঘনিষ্ঠদের বেছে নেন যাতে নিজের সিদ্ধান্তে চ্যালেঞ্জ না আসে। এটি একপ্রকার রাজনৈতিক আত্মরক্ষার কৌশল হলেও, রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণে তা ভয়াবহ দুর্বলতা তৈরি করে।

যোগ্যতার চেয়ে ‘ভরসাযোগ্য’ মুখের মূল্য বেশি

অনেক সময় দেখা যায়, যোগ্য ও অভিজ্ঞ ব্যক্তি নীতিগত প্রশ্ন তোলে বা স্বচ্ছতার দাবি করে, যা সরকারপ্রধানের একচ্ছত্র ক্ষমতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। তাই এসব ‘ঝামেলাপূর্ণ’ লোকদের দূরে রেখে, নিজের আত্মীয়, ছাত্রজীবনের বন্ধু কিংবা ঘরের লোকদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়, যাঁরা নীতিগতভাবে নয়, ব্যক্তিগত আনুগত্যে বিশ্বস্ত।

আর্থিক স্বার্থ দুর্নীতির সুবিধা

এই ধরনের পদবণ্টনে আরেকটি বড় উদ্দেশ্য হলো—দুর্নীতির সুযোগ তৈরি করা। আত্মীয় বা ঘনিষ্ঠ কেউ দায়িত্বে থাকলে অর্থনৈতিক লেনদেনে স্বচ্ছতা থাকে না, ফলে ঘুষ ও কমিশনের অংশ সহজেই ভাগাভাগি করা যায়। এতে রাষ্ট্রের অর্থনীতির ক্ষতি হলেও ব্যক্তিগত গোষ্ঠীর সমৃদ্ধি নিশ্চিত হয়।

উদাহরণে উদ্ভাসিত চিত্র

বিশ্বজুড়ে বহু দুর্বল রাষ্ট্রে এ ধরনের নিদর্শন রয়েছে। আফ্রিকার কিছু দেশ, ল্যাটিন আমেরিকার একাধিক রাষ্ট্র, এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার কিছু দেশে দেখা গেছে—সরকারপ্রধানের ছেলে, ভাই, স্ত্রী কিংবা ভাগ্নে, ভাইপো বিদেশ নীতি, অর্থনীতি কিংবা আইনশৃঙ্খলার মতো স্পর্শকাতর দায়িত্বে রয়েছেন, অথচ তাঁদের সে বিষয়ে তেমন দক্ষতা নেই।

জনগণের আস্থাহীনতা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি

এই অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে সরকারে যোগ্য মানুষ আসতে চায় না, প্রশাসন কাগুজে হয়ে পড়ে, এবং জনসাধারণ ভোট, আইন কিংবা বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারায়। ফলে সমাজে নৈরাজ্য বাড়ে, বৈদেশিক বিনিয়োগ কমে এবং আন্তর্জাতিক মহলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

উপসংহার: পরিবর্তনের সময় এখন

যদি দুর্বল রাষ্ট্রগুলো উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা চায়, তবে নেতৃত্বে যোগ্যতা, পেশাদারিত্ব ও স্বচ্ছতাকে প্রাধান্য দিতে হবে। ব্যক্তিগত সম্পর্কের চেয়ে রাষ্ট্রের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। না হলে, দেশ চালানোর দায়িত্ব অযোগ্য হাতে পড়লে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এর চরম মূল্য দিতে হবে।

 

ব্রিকসে শি এবং পুতিন না গেলেও যাচ্ছেন মোদি, নতুন মেম্বর ইরানও যোগ দেবে

আনুগত্যপ্রীতির চক্রে বন্দী দুর্বল দেশগুলোর নেতৃত্ব

১০:০০:২০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ মে ২০২৫

নেতৃত্বের ব্যর্থতার নেপথ্যে আনুগত্যপ্রীতি

অনুন্নত বা রাজনৈতিকভাবে দুর্বল দেশগুলোতে প্রায়ই দেখা যায়, ক্ষমতায় থাকা সরকারপ্রধানরা দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে আত্মীয়স্বজন কিংবা ঘনিষ্ঠ অনুগতদেরই রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে বসান। এতে প্রশাসন দুর্বল হয়, উন্নয়ন থমকে যায় এবং জনসাধারণের আস্থা হ্রাস পায়। এই ধারা যেন এক অভিশাপ হয়ে দেশগুলোর অগ্রগতিকে প্রতিনিয়ত পিছিয়ে দিচ্ছে।

স্বজনপ্রীতির রাজনৈতিক কারণ

এই ধরনের সরকারপ্রধানদের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো—তাঁরা ক্ষমতা হারানোর ভয় পান। তাই যোগ্য ও স্বাধীনচেতা কর্মকর্তার চেয়ে আনুগত্যশীল, স্বজন বা ঘনিষ্ঠদের বেছে নেন যাতে নিজের সিদ্ধান্তে চ্যালেঞ্জ না আসে। এটি একপ্রকার রাজনৈতিক আত্মরক্ষার কৌশল হলেও, রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণে তা ভয়াবহ দুর্বলতা তৈরি করে।

যোগ্যতার চেয়ে ‘ভরসাযোগ্য’ মুখের মূল্য বেশি

অনেক সময় দেখা যায়, যোগ্য ও অভিজ্ঞ ব্যক্তি নীতিগত প্রশ্ন তোলে বা স্বচ্ছতার দাবি করে, যা সরকারপ্রধানের একচ্ছত্র ক্ষমতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। তাই এসব ‘ঝামেলাপূর্ণ’ লোকদের দূরে রেখে, নিজের আত্মীয়, ছাত্রজীবনের বন্ধু কিংবা ঘরের লোকদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়, যাঁরা নীতিগতভাবে নয়, ব্যক্তিগত আনুগত্যে বিশ্বস্ত।

আর্থিক স্বার্থ দুর্নীতির সুবিধা

এই ধরনের পদবণ্টনে আরেকটি বড় উদ্দেশ্য হলো—দুর্নীতির সুযোগ তৈরি করা। আত্মীয় বা ঘনিষ্ঠ কেউ দায়িত্বে থাকলে অর্থনৈতিক লেনদেনে স্বচ্ছতা থাকে না, ফলে ঘুষ ও কমিশনের অংশ সহজেই ভাগাভাগি করা যায়। এতে রাষ্ট্রের অর্থনীতির ক্ষতি হলেও ব্যক্তিগত গোষ্ঠীর সমৃদ্ধি নিশ্চিত হয়।

উদাহরণে উদ্ভাসিত চিত্র

বিশ্বজুড়ে বহু দুর্বল রাষ্ট্রে এ ধরনের নিদর্শন রয়েছে। আফ্রিকার কিছু দেশ, ল্যাটিন আমেরিকার একাধিক রাষ্ট্র, এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার কিছু দেশে দেখা গেছে—সরকারপ্রধানের ছেলে, ভাই, স্ত্রী কিংবা ভাগ্নে, ভাইপো বিদেশ নীতি, অর্থনীতি কিংবা আইনশৃঙ্খলার মতো স্পর্শকাতর দায়িত্বে রয়েছেন, অথচ তাঁদের সে বিষয়ে তেমন দক্ষতা নেই।

জনগণের আস্থাহীনতা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি

এই অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে সরকারে যোগ্য মানুষ আসতে চায় না, প্রশাসন কাগুজে হয়ে পড়ে, এবং জনসাধারণ ভোট, আইন কিংবা বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারায়। ফলে সমাজে নৈরাজ্য বাড়ে, বৈদেশিক বিনিয়োগ কমে এবং আন্তর্জাতিক মহলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

উপসংহার: পরিবর্তনের সময় এখন

যদি দুর্বল রাষ্ট্রগুলো উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা চায়, তবে নেতৃত্বে যোগ্যতা, পেশাদারিত্ব ও স্বচ্ছতাকে প্রাধান্য দিতে হবে। ব্যক্তিগত সম্পর্কের চেয়ে রাষ্ট্রের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। না হলে, দেশ চালানোর দায়িত্ব অযোগ্য হাতে পড়লে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এর চরম মূল্য দিতে হবে।