যামানাশি প্রিফেকচারের ওসুকি স্টেশন থেকে পাঁচ কিলোমিটার দক্ষিণে, জাতীয় সড়ক ১৩৯ ধরে এগোতেই লাল ইটের বিরাট একটি দেওয়াল চোখে পড়ে—ওচিয়াই অ্যাকুডাক্ট। ১৯০৬ সালে নির্মিত ৫৬ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৮.৫ মিটার প্রস্থের এ সেতুটি কাতসুরা নদীর জল ৬.৭ কিলোমিটার দূরের কমাবাশি জলবিদ্যুৎকেন্দ্রে পৌঁছে দেয়। আজ এই কেন্দ্রের মালিক টেপকো রিনিউএবল পাওয়ার।
ওচিয়াই অ্যাকুডাক্ট: নির্মাণ ও নকশা
ইটের তৈরি সমান্তরাল খিলানে ভর করে দাঁড়িয়ে থাকা এ জলপথ এখনো সক্রিয়। সরু একটি বনপথ দিয়ে কাছে গিয়ে দেখলে গগনচুম্বী লাল প্রাচীরের মতো এর জাঁকজমক স্পষ্ট বোঝা যায়; খিলানের তল দিয়েও হেঁটে যাওয়া যায়।
জাপানের প্রথম দীর্ঘ-পথ বিদ্যুৎ সংযোগ
টোচিও ডেন্টো কাবুশিকি কাইশা (আধুনিক টেপকো হোল্ডিংসের পূর্বসূরি) ২০ ডিসেম্বর ১৯০৭-এ কমাবাশি কেন্দ্র চালু করে। ওই দিন বিকেল ৪টায় ফুজি পাহাড় ঘেঁষে নেমে আসা স্রোত বদলে যায় বিদ্যুতের স্রোতে—৭৬ কিলোমিটার দূরের ওয়াসেদা উপকেন্দ্র পেরিয়ে আজাবু ও কোজিমাচি এলাকায় আলো জ্বলে ওঠে। ১৯০৮ সালেই কানদা, নিহোনবাশি, আসাকুসা, ফুকাগাও, কিওবাসি, শিতায়া ও হোঁজোতেও বিদ্যুৎ পৌঁছে যায়। গ্রামাঞ্চলে উৎপাদিত শক্তি শহুরে জীবনে ছড়িয়ে দেওয়ার এটাই ছিল জাপানের প্রথম পদক্ষেপ।
কমাবাশি জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্তমানচিত্র
প্রায় ১২০ বছর পরও কেন্দ্রটি চলমান, যদিও বর্তমানে সংস্কার চলছে। একটি খাড়া ঢাল বেয়ে নেমে আসা দুটি মোটা হাইড্রোলিক পাইপ প্রায় ১০০ মিটার নিচে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে। বাদামি চূড়ার মূল ভবনটিতে এখনও অরিজিনাল ইটের প্রাচীর আছে, তবে দূর থেকে ইটের কাঠামো আর দেখা যায় না; পেছনে কেবল মাটির রঙা ইটের বুনিয়াদ সামান্য উঁকি দেয়।
ইতিহাস জানার বিস্ময়
এ ছোট্ট পাহাড়ি শহরের স্কুলশিক্ষার্থীরা মাঝেমধ্যেই কেন্দ্রটি দেখতে আসে। প্রায়ই তারা অবাক হয়ে বলে—এমন একটা স্থাপনা যে তাদের এলাকায় আছে, আগে কল্পনাই করেনি। কেন্দ্রের জেনারেল গ্রুপ ম্যানেজারের ভাষায়, ‘আমাদের ইতিহাসটা সামনে আনতে পারলে এলাকাবাসী গর্ববোধ করবে।’
তথ্যসূত্র ও ভবিষ্যৎ
বর্তমানে চলমান পুনর্গঠন শেষ হলে ওচিয়াই অ্যাকুডাক্ট ও কমাবাশি কেন্দ্র জাপানের শিল্প-ঐতিহ্যের জীবন্ত উদাহরণ হিসেবে আরও শক্ত ভিত্তি পাবে। গ্রামীণ জলধারা থেকে নগরবিদ্যুৎ—এক শতাব্দী আগের সেই দিগন্তপাল্টানো ধারণা আজও প্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় পথ দেখাচ্ছে।