দক্ষিণ কোরিয়ার তরুণ নারীরা আগামী ৩ জুনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রধান রক্ষণশীল দলের বিরুদ্ধে ব্যাপক রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার নেতৃত্ব দেওয়ার সম্ভাবনা রাখে। মাসের পর মাস ধরে চলা বিশৃঙ্খলার কারণে তারা দলটিকে শাস্তি দিতে চাইছে।
তবে, বিপরীতে তরুণ পুরুষরা তাদের সঙ্গে যোগ দেবে না বলেই মনে হচ্ছে।
বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মধ্যে জেনারেশন জেড ভোটারদের মধ্যে লিঙ্গভিত্তিক রাজনৈতিক বিভাজন ক্রমশ বাড়ছে। তরুণ পুরুষরা ডানপন্থী দলগুলোর দিকে ঝুঁকছেন, আর তরুণ নারীরা বামঘেঁষা দলগুলোর পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন। এই প্রবণতা কোভিড-পূর্ব সময়ের থেকে ভিন্ন, যখন উভয় লিঙ্গই সাধারণত প্রগতিশীল দলের পক্ষে ভোট দিত।
উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ এবং এশিয়ায় সম্প্রতি হওয়া নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেছে, এই প্রবণতা হয় সুসংহত হচ্ছে, নয়তো আরও জোরালো হচ্ছে। অনেক রাগান্বিত, হতাশ তরুণ পুরুষ এখন ডান দিকে ঝুঁকছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথমবারের মতো ভোট দিতে যাওয়া লি জিয়ং-মিন তাদের একজন।
তিনি বলেন, তিনি ৩ জুন রিফর্ম পার্টির প্রার্থী লি জুন-সকের পক্ষে ভোট দেবেন। ওই প্রার্থী লিঙ্গ সমতা মন্ত্রণালয় বন্ধ করে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন, যা এমন তরুণদের মনোভাবের প্রতিফলন যারা মনে করেন কেবল পুরুষদের বাধ্যতামূলক সামরিক সেবা করতে হয়—এটি একটি গভীর অন্যায়।
লি বলেন, “একজন তরুণ পুরুষ হিসেবে, আমি এটিকে কোরিয়ায় সবচেয়ে অন্যায্য বাস্তবতার একটি মনে করি। জীবনের সবচেয়ে প্রগতিশীল সময়ে—২১ বা ২২ বছর বয়সে—পুরুষরা নারীদের মতো সমাজের বিভিন্ন কাজে পূর্ণভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে না, কারণ তাদের ১৮ মাসের জন্য সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে হয়।”
গ্যালাপ কোরিয়ার এক জরিপে দেখা গেছে, ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী পুরুষদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ রিফর্ম পার্টিকে সমর্থন করছেন, যেখানে নারীদের মধ্যে এই হার মাত্র ৩ শতাংশ।
মোটামুটিভাবে, তরুণ পুরুষদের অর্ধেকের বেশি ডানপন্থী দলগুলোর পক্ষে এবং প্রায় অর্ধেক তরুণী বামঘেঁষা ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থীকে সমর্থন করছেন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই বিভাজন কিছুটা কমে আসে।
কিংস কলেজ লন্ডনের রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ সুহিউন লি বলেন, অনেক তরুণ দক্ষিণ কোরীয় পুরুষ মনে করেন, তারা সমাজের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছেন না—ভালো চাকরি পাওয়া, বিয়ে করা, বাড়ি কেনা এবং পরিবার গঠন করা।
তিনি বলেন, “দক্ষিণ কোরিয়ায় অভিবাসন খুব কম হওয়ায় নারীরাই একপ্রকার সহজ টার্গেট হয়ে দাঁড়িয়েছে—তাদের উপর দোষ চাপানো সহজ।”
রাগান্বিত তরুণ পুরুষ
দক্ষিণ কোরিয়া ও অন্যান্য গণতন্ত্রে, কোভিড-পরবর্তী সময়ে জেনারেশন জেড পুরুষদের আপেক্ষিক সুবিধা কমতে শুরু করেছে। এমনকি কিছু দেশে, ২০-এর দশকের নারী-পুরুষদের বেতন ব্যবধান নারীদের অনুকূলে চলে গেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের তথ্য অনুযায়ী, এর একটি উদাহরণ ফ্রান্স। সেখানে গত বছর জাতীয় নির্বাচনে ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী পুরুষরা নারীদের তুলনায় বড় পরিসরে কট্টর ডানপন্থী নেতা মেরিন লে পেনের দলকে ভোট দিয়েছেন।
জার্মানির কোলন শহরের রোজ মানডে কার্নিভালে একটি ভাসমান প্রতীক তৈরি হয়েছিল, যেখানে জেনারেশন জেড এবং বেবি বুমারদের মধ্যে একটি কথোপকথন ফুটিয়ে তোলা হয়।
যুক্তরাজ্যে তরুণ পুরুষদের মধ্যে কনজারভেটিভ পার্টির প্রতি সমর্থন বেশি দেখা গেছে। সরকারী তথ্যে দেখা গেছে, ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সী পুরুষদের নারীদের তুলনায় বেশি সংখ্যায় চাকরি নেই বা তারা শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত নন।
পশ্চিমা বিশ্বে তরুণ পুরুষরা অভিবাসন এবং বৈচিত্র্য উন্নয়ন কর্মসূচিকে চাকরির প্রতিযোগিতার জন্য দায়ী করছেন।
জার্মানির ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে অভিবাসনবিরোধী ‘অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (AfD)’ দল রেকর্ড ২০.৮ শতাংশ ভোট পায়—যার একটি বড় অংশ তরুণ পুরুষদের কাছ থেকে এসেছে, যদিও দলের নেতৃত্বে রয়েছেন একজন নারী।
১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী পুরুষদের মধ্যে ২৭ শতাংশ AfD-কে ভোট দেন, আর সমবয়সী নারীদের ৩৫ শতাংশ ভোট পড়েছে বামপন্থী লিঙ্কে পার্টির পক্ষে—সরকারী ভোট তথ্য থেকে জানা গেছে।
বার্লিনের ১৮ বছর বয়সী মলি লিঞ্চ, যিনি জলবায়ু পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের ইস্যুতে লিঙ্কেকে ভোট দিয়েছেন, বলেন, “অনেক তরুণ পুরুষ ডানপন্থী প্রচারণার ফাঁদে পড়ছে কারণ তারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে যে তারা ক্ষমতা হারাচ্ছে।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, তারা সেই ক্ষমতা হারাচ্ছে যা তারা আগে কখনো সমানভাবে পাওয়ার অধিকার রাখত না।”
শুধু জেনারেশন জেড নয়
এই বিভাজন শুধু জেনারেশন জেডেই সীমাবদ্ধ নয়। মিলেনিয়াল প্রজন্মের মধ্যেও, যারা বর্তমানে ৩০-এর ঘরে, এই পরিবর্তনের ঢেউ অনুভূত হচ্ছে।
গত মাসে কানাডায়, ৩৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সী পুরুষদের অর্ধেক বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টিকে ভোট দিয়েছেন—যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্ক নীতির ফলে নির্বাচনটি নাটকীয়ভাবে পাল্টে যায়। নারীদের সমর্থন নিয়ে লিবারেল পার্টি পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসে।
আইপসোস পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের প্রধান নির্বাহী ড্যারেল ব্রিকার বলেন, “এই ধরনের ভোটাররা সাধারণত জীবনে একটু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন এবং এখন মনে করছেন, ‘এই পদ্ধতি কাজ করছে না, আমি পরিবর্তন চাই।’”
কানাডার জরিপ প্রতিষ্ঠান ন্যানোস রিসার্চের প্রতিষ্ঠাতা নিক ন্যানোস বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গণতন্ত্রে ‘রাগান্বিত তরুণ পুরুষ’ সমস্যাকে ত্বরান্বিত করছে—বিশেষত যেখানে ব্লু-কলার চাকরি হ্রাস পেয়েছে।
শেষ কোথায় এই লিঙ্গ যুদ্ধ?
ট্রাম্পের ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারাভিযানে শিল্পপণ্য উৎপাদন পুনরুজ্জীবন এবং বৈচিত্র্য কর্মসূচির বিরোধিতা তরুণ শ্বেতাঙ্গ এবং হিস্পানিক পুরুষদের মধ্যে সাড়া ফেলেছিল, কিন্তু এতে তরুণ নারীরা বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন—ফলে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক লিঙ্গ বিভাজন আরও বেড়ে যায়।
১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী পুরুষদের প্রায় অর্ধেক ট্রাম্পকে ভোট দেন, যেখানে ৬১ শতাংশ তরুণী তার প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিসকে সমর্থন করেন। কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ-তরুণীদের মধ্যে হ্যারিসের প্রতি সমর্থন বিশাল।
অস্ট্রেলিয়ায়, যেখানে এই মাসে নির্বাচন হয়েছে, জেনারেশন জেড-এর এই যুদ্ধ ভোটের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়নি। স্পষ্ট কোনো বিভাজন দেখা যায়নি—সম্ভবত বাধ্যতামূলক ভোটদান ব্যবস্থা উগ্র লিঙ্গ রাজনীতিকে ঠেকিয়ে রেখেছে।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রাজনৈতিক বিজ্ঞানী ইনটিফার চৌধুরী বলেন, “এই ব্যবস্থা চরমপন্থী মতাদর্শগুলোকে স্তিমিত করে।”
তাহলে, এই জেনারেশন জেড যুদ্ধের শেষ কোথায়?
জরিপকারীরা বলেন, যদি সরকারগুলো বাড়ি কেনার অযোগ্যতা এবং অনিরাপদ চাকরির মতো মূল সমস্যা সমাধান না করে, তাহলে এই বিভাজন দীর্ঘস্থায়ী হবে। কেউ কেউ তরুণ পুরুষদের স্বাস্থ্য—বিশেষত আত্মহত্যার উচ্চ হার—কেও একটি নীতিগত চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন।
কিংস কলেজের লি বলেন, এই বিভাজন কর এবং কল্যাণনীতি সংস্কারের মতো বড় সামাজিক ঐক্যমতের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
তিনি বলেন, “যদি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম লিঙ্গভিত্তিক বিভাজনের কারণে পারস্পরিক যোগাযোগ করতে না চায় এবং সামাজিক ঐকমত্য গঠনে অনীহা দেখায়, তাহলে আমরা কখনোই বড় সমস্যাগুলোর সমাধানে সফল হতে পারব না।”