২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষিখাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় সামান্য বেশি। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের ভাষায়, “দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষকদের আয় সুরক্ষা নিশ্চিত করাই আমাদের অগ্রাধিকার।” বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় কৃষি গবেষণা ও প্রযুক্তিনির্ভর কৃষিকাজে জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে বাজেটে।
কী পাচ্ছেন কৃষক?
ভর্তুকি ও প্রণোদনা:
বাজেটে ১৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা কৃষি ভর্তুকি বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যার মধ্যে সারের ভর্তুকির অংশই সবচেয়ে বেশি। তবে কৃষকদের একাংশের মতে, মাঠপর্যায়ে এসব ভর্তুকির পুরোটা পৌঁছে না।
কৃষি ঋণ:
কৃষকদের জন্য স্বল্পসুদে কৃষিঋণের পরিমাণ আরও বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরে কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ৩৫ হাজার কোটি টাকা, যা আগামীতে আরও বাড়তে পারে।
ডিজিটাল কৃষি ও আধুনিকীকরণ:
বাজেটে ‘স্মার্ট কৃষি’ বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে, যার আওতায় কৃষকদের জন্য অনলাইন প্রশিক্ষণ, ফসলের পূর্বাভাস, ও কৃষিপণ্য বিপণনের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালু করা হবে।
ফসল বীমা:
ঘূর্ণিঝড়, খরা ও বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সুরক্ষার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে ফসল বীমা প্রকল্প সম্প্রসারণের। তবে এটি এখনও পাইলট পর্যায়েই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
কৃষক সংগঠনের মতামত
বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, “বাজেটে আশার কিছু দিক আছে, কিন্তু বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। প্রান্তিক কৃষকরা এখনো চাহিদামতো ভর্তুকি পান না, সারের দাম বাড়ে, পণ্যের ন্যায্য দাম পান না।”
তিনি আরও বলেন, “স্মার্ট কৃষির কথা ভালো, কিন্তু যার ঘরে ইন্টারনেট নেই, তার কাছে এই স্মার্ট ধারণা শুধু কাগুজে থাকে।”
অন্যদিকে বাংলাদেশ ধানচাষি ফোরামের সাধারণ সম্পাদক কাশেম আলী বলেন, “ফসলের গ্যারান্টিযুক্ত দাম নির্ধারণ না করলে কৃষকের আয় বাড়বে না। ভর্তুকি দিলেও সেটা যদি দালাল বা মধ্যসত্বভোগীরা পায়, কৃষক লাভবান হবে না।”
কিছু বাস্তব চ্যালেঞ্জ
- ফসলের ন্যায্য দাম না পাওয়া: প্রতি বছর মৌসুমে ধান, পাট বা সবজির দাম পড়ে যায়। বাজেটে সরাসরি বাজার হস্তক্ষেপ বা সরকারি ক্রয় নীতির বাস্তব রূপায়ন নিয়ে বিস্তারিত বলা হয়নি।
- বীজের সংকট ও অনিয়ম: মানহীন বীজ ও বীজের সংকটে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন, কিন্তু এ সমস্যা সমাধানে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা উঠে আসেনি।
- সেচের খরচ: ডিজেল ও বিদ্যুতের দামের প্রভাব সেচে পড়ে। বাজেটে কৃষি সেচে বিদ্যুৎ খাতে সরাসরি ভর্তুকি বা ছাড়ের দিকটি স্পষ্ট নয়।
বাজেটে কৃষকের জন্য কিছু ইতিবাচক উদ্যোগ আছে, তবে বাস্তব চিত্র পরিবর্তনে এসবের কার্যকর বাস্তবায়ন অপরিহার্য। শুধু বরাদ্দ বাড়ালেই হবে না, তা যেন মাঠপর্যায়ে পৌঁছে, কৃষক যেন সরাসরি উপকৃত হন—তা নিশ্চিত করতে হবে। কৃষিকে শুধু উৎপাদন নয়, কৃষকের জীবিকা ও মর্যাদার প্রশ্ন হিসেবে বিবেচনা না করলে, ‘স্মার্ট কৃষি’র স্বপ্ন কেবলই বাজেট বক্তৃতায় সীমাবদ্ধ থেকে যাবে।