০৬:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩১৬)

উৎকোচ গ্রহণ, জমিদারীলাভ প্রভৃতিতে অগাধ সম্পত্তির অধীশ্বর হইয়া, গঙ্গাগোবিন্দ অনেক সময়ে নিজ ঐশ্বর্য্যগর্ব্বের পরিচয় দিয়াছিলেন। সেই সময়ের লোকদিগের এক চমৎকার প্রথা ছিল যে, জাল, জুয়াচুরী, প্রতারণা, প্রবঞ্চনা, বলপ্রয়োগ প্রভৃতি গহিত উপায়ে।অর্থ উপার্জন করিয়া তাঁহারা অনেক ‘সদনুষ্ঠান করিতেন। সেই সমস্ত অর্থ দেবসেবা, ব্রাহ্মণসেবা ও অতিথিসেবায় ব্যয়িত হইত। এই সকল সদনুষ্ঠান যে কেবল সংপ্রবৃত্তিজাত, তাহা বলিতে পারা যায় না; ইহাতে ঐশ্বৰ্য্যাভিমান বিমিশ্রিত থাকিত বলিয়া মনে হয়।

তাহা না হইলে, অর্থোপার্জনের উপায় ‘বদাচ। এরূপ নিকৃষ্ট হইতে পারিত না। কিন্তু তাই বলিয়া এরূপ অনুষ্ঠানের উদ্দেঙ্গ যে কিয়ৎপরিমাণে উৎকৃষ্ট, তাহাও বলিতে হইবে। সেই অর্থ নৃত্যগীতাদি আমোদপ্রমোদে নষ্ট না করিয়া, দেশের উপকারে যদি ব্যয় করা হয়, তাহা হইলে, তাহাকে মন্দের ভাল বলা যাইতে। পারে। কিন্তু যে সংকার্য্যের মূলে মূর্ত্তিমান পাপ বিরাজ করে, কদাচ তাহাকে প্রাণ খুলিয়া প্রশংসা করা যায় না।

শৌচপ্রসঙ্গে মনু বলিয়াছেন যে, সর্ব্বাপেক্ষা অর্থশৌচই শ্রেষ্ঠ অর্থাৎ অন্যায় পথ পরিত্যাগ পূর্ব্বক যে ব্যক্তি অর্থ উপার্জন করে, তাহাকেই প্রকৃত নিৰ্ম্মল বলা যায়। দুঃখের বিষয়, সে কালের অনেক ধনবান্দিগের সদনুষ্ঠানে অর্থশৌচ অতি অল্প পরিমাণে দৃষ্ট হইত। গঙ্গাগোবিন্দ যে সমস্ত সৎকার্য্য করেন, তন্মধ্যে তাঁহার মাতৃশ্রাদ্ধ সর্ব্বপ্রধান।কান্দীতেই এই সমারোহপূর্ণ কার্য্য সম্পন্ন হয়।

কাশী, মিথিলা, নবদ্বীপপ্রভৃতি স্থানের যাবতীয় পণ্ডিত শিষ্যগণসহ নিমন্ত্রিত হইয়া, শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে উপস্থিত হইয়াছিলেন। এইরূপ কথিত আছে যে, সেই সেই স্থানের প্রত্যেক চতুষ্পাঠী হইতেই পণ্ডিতগণ আগমন করেন। এতদ্ভিন্ন দেশের অন্যান্য ব্রাহ্মণগণও সমবেত হন। ভাট ভিক্ষুকের সীমা পরিসীমা ছিল না।  অবাঙ্গলীর প্রধান প্রধান জমিদার, রাজা, মহারাজগণ, উপস্থিত হইয়া শ্রাদ্ধসভার শোভাবর্দ্ধন করিয়াছিলেন। নদীয়া, নাটোর, বর্দ্ধমান, দিনাজ পুর প্রভৃতি স্থানের রাজগণ এই বিরাট ব্যাপারে আগমন করেন।

 

 

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩১৬)

১১:০০:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫

উৎকোচ গ্রহণ, জমিদারীলাভ প্রভৃতিতে অগাধ সম্পত্তির অধীশ্বর হইয়া, গঙ্গাগোবিন্দ অনেক সময়ে নিজ ঐশ্বর্য্যগর্ব্বের পরিচয় দিয়াছিলেন। সেই সময়ের লোকদিগের এক চমৎকার প্রথা ছিল যে, জাল, জুয়াচুরী, প্রতারণা, প্রবঞ্চনা, বলপ্রয়োগ প্রভৃতি গহিত উপায়ে।অর্থ উপার্জন করিয়া তাঁহারা অনেক ‘সদনুষ্ঠান করিতেন। সেই সমস্ত অর্থ দেবসেবা, ব্রাহ্মণসেবা ও অতিথিসেবায় ব্যয়িত হইত। এই সকল সদনুষ্ঠান যে কেবল সংপ্রবৃত্তিজাত, তাহা বলিতে পারা যায় না; ইহাতে ঐশ্বৰ্য্যাভিমান বিমিশ্রিত থাকিত বলিয়া মনে হয়।

তাহা না হইলে, অর্থোপার্জনের উপায় ‘বদাচ। এরূপ নিকৃষ্ট হইতে পারিত না। কিন্তু তাই বলিয়া এরূপ অনুষ্ঠানের উদ্দেঙ্গ যে কিয়ৎপরিমাণে উৎকৃষ্ট, তাহাও বলিতে হইবে। সেই অর্থ নৃত্যগীতাদি আমোদপ্রমোদে নষ্ট না করিয়া, দেশের উপকারে যদি ব্যয় করা হয়, তাহা হইলে, তাহাকে মন্দের ভাল বলা যাইতে। পারে। কিন্তু যে সংকার্য্যের মূলে মূর্ত্তিমান পাপ বিরাজ করে, কদাচ তাহাকে প্রাণ খুলিয়া প্রশংসা করা যায় না।

শৌচপ্রসঙ্গে মনু বলিয়াছেন যে, সর্ব্বাপেক্ষা অর্থশৌচই শ্রেষ্ঠ অর্থাৎ অন্যায় পথ পরিত্যাগ পূর্ব্বক যে ব্যক্তি অর্থ উপার্জন করে, তাহাকেই প্রকৃত নিৰ্ম্মল বলা যায়। দুঃখের বিষয়, সে কালের অনেক ধনবান্দিগের সদনুষ্ঠানে অর্থশৌচ অতি অল্প পরিমাণে দৃষ্ট হইত। গঙ্গাগোবিন্দ যে সমস্ত সৎকার্য্য করেন, তন্মধ্যে তাঁহার মাতৃশ্রাদ্ধ সর্ব্বপ্রধান।কান্দীতেই এই সমারোহপূর্ণ কার্য্য সম্পন্ন হয়।

কাশী, মিথিলা, নবদ্বীপপ্রভৃতি স্থানের যাবতীয় পণ্ডিত শিষ্যগণসহ নিমন্ত্রিত হইয়া, শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে উপস্থিত হইয়াছিলেন। এইরূপ কথিত আছে যে, সেই সেই স্থানের প্রত্যেক চতুষ্পাঠী হইতেই পণ্ডিতগণ আগমন করেন। এতদ্ভিন্ন দেশের অন্যান্য ব্রাহ্মণগণও সমবেত হন। ভাট ভিক্ষুকের সীমা পরিসীমা ছিল না।  অবাঙ্গলীর প্রধান প্রধান জমিদার, রাজা, মহারাজগণ, উপস্থিত হইয়া শ্রাদ্ধসভার শোভাবর্দ্ধন করিয়াছিলেন। নদীয়া, নাটোর, বর্দ্ধমান, দিনাজ পুর প্রভৃতি স্থানের রাজগণ এই বিরাট ব্যাপারে আগমন করেন।