০২:৪৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

পিএলআইডি -কোমর ব্যথা কারণ, জটিলতা ও প্রতিরোধের উপায়

বর্তমান সময়ে কোমড় ব্যথা হয়নি এমন মানুষ নাই বললেই চলে । তবে সৌভাগ্য ক্রমে কোমড় ব্যথার অনেক উন্নত চিকিৎসা আছে এবং এটি সম্পূর্ণ রূপে ভাল হয়। যাই হোক, কিছু ক্ষেত্রে, কোমড় ব্যথা ডিস্ক প্রোল্যাপ্স বা ডিস্কের হার্নিয়েশন এর কারণে হতে পারে। আর ইন্টারভার্টেব্রাল ডিস্ক একটি সাধারণ কিন্তু অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক রোগ, যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেরুদণ্ডের কোমরের অংশে ঘটে থাকে। এই অবস্থায় মেরুদণ্ডের ডিস্কের নরম জেলির মতো উপাদান তার স্বাভাবিক স্থান থেকে বেরিয়ে আসে এবং স্নায়ুর উপর চাপ সৃষ্টি করে। মানুষের মেরুদণ্ড ছোট ছোট ৩৩টি অস্থিখণ্ড বা কশেরুকা দ্বারা গঠিত। যাকে ইংরেজিতে বলা হয় ভার্টিব্রা। এরা একে অপরের সঙ্গে ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্কের সাহায্যে সংযুক্ত থাকে। যখন এই ডিস্ক কোনো কারণে নিজের স্বাভাবিক জায়গা থেকে সরে যায়, তখনই ঘটে সব বিপত্তি। তখন ডিস্ক প্রলাপ্স থাকে সাধারণত ঘাড়ের অংশে তথা সারভাইক্যাল ডিস্কে বা কোমরের অংশে তথা লাম্বার ডিস্কে। মেডিক্যালের পরিভাষায় একে বলে প্রলাপ্স লাম্বার ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্ক (পিএলআইডি)।
> ডিস্ক প্রলেপস – কোথায় হয়?
সাধরণত ডিস্ক প্রলেপস আমাদের ঘাড় বা সারভাইক্যাল স্পাইন ও কোমর বা লাম্বার স্পাইনে বেশি হয়। সারভাইক্যাল স্পাইনের সি ৫-৬ ও সি ৬-৭ লেভেলে ও লাম্বার স্পাইনে এল ৪-৫ ও এল ৫ – এস ১ লেভেলে বেশি হয়।এটি নারী-পুরুষ উভয়েরই হয়ে থাকে। তবে পুরুষের তুলনায় নারীরা এই রোগে বেশি ভুগে থাকেন।
> পিএলআইডি বলতে যা বোঝায় : প্রলাপসড লাম্বার ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্ক বা পিএলআইডি রোগ হলে দুটি কশেরুকার মধ্যে থাকা কোমরের নরম অংশ (ডিস্ক) বের হয়ে বাইরের দিকে চলে আসে। ডিস্কের বাইরের দিকে অ্যানুলাস ফাইব্রোসাস নামে শক্ত আবরণ থাকে, যা আঘাতে বা ক্ষয় হয়ে ছিঁড়ে গিয়ে ভেতরের নরম জেলির মতো অংশ বের হয়ে আসে। সেই বের হওয়া অংশ নার্ভের রুটে চাপ দিতে থাকে। আর এ কারণে কোমরে প্রচণ্ড ব্যথা হয় এবং সেই ব্যথা ক্রমশ পায়ের দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এ অবস্থার নাম সায়াটিক পেইন। সাধারণত লাম্বার ৪ ও ৫ নম্বর কশেরুকায় এটি ঘটে থাকে।
>  ডিস্ক প্রলেপসের লক্ষণ :-
লক্ষণ ও উপসর্গ একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম হয়ে থাকে।
* কারো ক্ষেত্রে ব্যথা ঘাড় থেকে হাতের দিকে ছড়ায় ও হাতে তীব্র ব্যথা হয়।
* হাত ঝুলিয়ে রাখলে ও বিছানায় শুলে বেশি ব্যথা করে।
* হাত ঝিনঝিন করে বা অবশ অবশ মনে হয়।
হাতের শক্তি কমে যায় বা হাত দুর্বল হয়ে আসে
অনেকক্ষেত্রে হাতের মাংসপেশি শুকিয়ে আসে ইত্যাদি।
* কারো ক্ষেত্রে কোমরে ব্যথা হয়।
* ব্যথা কোমর থেকে পায়ের দিকে ছড়ায়।
* পা ঝিন ঝিন করে, অবশ অবশ মনে হয়।
* খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে কিংবা হাটলে আর হাঁটার ক্ষমতা থাকে না। তবে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলে আবার হাঁটতে পারে।
* পা ভারী বা অধিক ওজন মনে হয়।
* পায়ে জ্বালাপোড়া অনুভূত হয়।
* পায়ের শক্তি কমে যায় এবং অনেক ক্ষেত্রে মাংসপেশী শুকিয়ে যায়।
* অনেক ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রসাব ও পায়খানায় নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
* বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে না পারা।
*  সেক্সুয়াল সমস্যা।
*  তীব্র ব্যথায় স্নায়ুজনিত সমস্যা হওয়া ইত্যাদি।
> কারণ-
* যখন শরীরের ওপরের অংশের ভার পুরোটাই মেরুদণ্ডের নিচের অংশে পড়ে, তখন মেরুদণ্ডের ডিস্ক স্লিপ করে পেছনের দিকে যেতে থাকে।
কখনো হঠাৎ স্লিপ করে, কখনো বা ধীরে ধীরে। ভারী জিনিস ঝুঁকে ওঠানোর সময় এ রোগের ঝুঁকি আরো বেড়ে যায়।
* টেবিলে ঝুঁকে পিসিতে দীর্ঘ সময় কাজ করা।
*  বেশি উচ্চতা থেকে লাফ দিলেও ডিস্ক বের হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
* যাদের স্যাক্রাম কশেরুকা অনেক বড়, তাদের এ রোগের আশঙ্কা বেশি।
*  যাদের এক পা ছোট, এক পা বড় তারাও এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।
* উঁচু জুতা পরিধানও এই রোগের অন্যতম কারণ।
* কোনো অস্বাভাবিক কর্মকাণ্ড, যেমন—মারামারি বা আকস্মিক আঘাতেও ডিস্ক সরে যেতে পারে।
> পরীক্ষা-
→ রক্ত পরীক্ষা
→ কোমরের এক্স-রে
→ কোমরের এম,আর,আই
→ কোমরের সিটি স্ক্যান
→ এন,সি,এস; ই,এম,জি
→ বি,এম,ডি
→ হাড়ের স্ক্যানিং ইত্যাদি।
> কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন ?
*  সব সময় ধরে বা জমে আছে—এ ধরনের ব্যথা।
* ভারী ওজন তোলা বা অতিরিক্ত কাজের পর তীক্ষ্ণ ব্যথা।
* কোমর থেকে নিতম্ব, উরু ও পায়ের আঙুল পর্যন্ত ব্যথা বিস্তৃত হলে।
* পায়ে দুর্বলতা বা অবশ ভাব হলে।
* হাঁচি, কাশি দিলে বা সামনে ঝুঁকলে ব্যথা বেড়ে যায়।
* প্রস্রাব বা পায়খানার নিয়ন্ত্রণ না থাকলে।
* শোয়া অবস্থায় বা শোয়া থেকে ওঠার সময় ব্যথা হলে।
> প্রতিরোধে করণীয়-
*  প্রথমেই মেরুদণ্ডের গঠন সম্পর্কে জেনে সে অনুযায়ী চলতে হবে।
* প্রথম ব্যথা অনুভব হওয়ার সময় সচেতন হতে হবে।
* বেশিক্ষণ সামনে ঝুঁকে কাজ করা ঠিক নয়।
* ভারী কোনো কিছু একা একা নিচ থেকে না তোলার চেষ্টা করা উচিত।
* চলাফেরায় ও বিছানা থেকে ওঠার সময় পিঠ ও কোমরে সাপোর্ট দিতে হবে।
* সব সময় মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসতে হবে।
* নিয়মিত ব্যায়াম করা।
* ওজন নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
* এক হাতে কোনো ভারী জিনিস বহন নয়।
* কোমর সোজা রেখে বসার অভ্যাস করা উচিত।
* শক্ত বিছানায় ঘুমানোর অভ্যাস করা, কোনো ফোম ব্যবহার নয়।
* দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা নয়। প্রয়োজনে কিছুক্ষণ পর পর স্থান পরিবর্তন করা।
* বিছানা থেকে ওঠার সময় এক পাশে কাত হয়ে ওঠা।
* হাইহিলের জুতা বা স্যান্ডেল ব্যবহার না করা।
* ধূমপান থেকে বিরত থাকা।
* ঘুমানোর ক্ষেত্রে খুব সুন্দর কিছু নিয়ম আছে যা মেনে আমরা খুব সহজেই শরীরের ঘাড়, মাথা ও কোমরের ব্যথা থেকে বেঁচে থাকতে পারি।
৪. আমাদের বাসায় যারা খুবই বয়োবৃদ্ধ তাদের দিনের কোনো এক সময় অন্য কেউ একজন শরীরের বিভিন্ন মাংসপেশী ম্যাসেজ ও জয়েন্ট গুলো নাড়াচাড়া করিয়ে দিতে পারি। এতে করে তাদের স্নায়ুর ওপর চাপ কম হয় এবং ব্যথা কম থাকে বা আসে না।
*  অভ্যাস না থাকলে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বহন করা থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে আমাদের মাংস পেশি, লিগামেন্ট, জয়েন্ট ও মেরুদণ্ডের ওপর অতিরিক্ত চাপের কারণে ইনজুরি থেকে ভালো থাকতে পারি।
* অস্টিওপোরোসিস রোগের জন্য যারা ঝুঁকিতে থাকেন যেমন মাঝ বয়েসী মহিলা, ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি, যাদের ওজন অতিরিক্ত তারা যথা সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে জীবনযাপন পদ্ধতি ও খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে পারেন।
* ঝুঁকে কাজ করলেও কোমরে বেল্ট পড়া ইত্যাদি।
সারা বিশ্বের বিজ্ঞানী, চিকিৎসকদের মাথাব্যথার কারণ দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যথা। আমাদের দেশে প্রচলিত ধারণাগুলো অনুসারে সবাই বলে থাকেন ডিস্ক প্রল্যাপ্স বা PLID অথবা হাড় ক্ষয় বা spondolysis-এর কারণে কোমর ব্যথা হয়। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, সারা পৃথিবী তথা উন্নত, মধ্যম আয় ও অনুন্নত দেশেও কোমর ব্যথা রোগীর সংখ্যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে গবেষণা পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশের প্রায় ৬৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ কোমর ব্যথায় ভোগেন। এ ব্যথা আবার তিন ধরনের—স্বল্পমেয়াদি, মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদি। সাধারণত স্বল্পমেয়াদি ব্যথা দ্রুত সেরে যায়, মাঝারি ব্যথা ভালো হতে সময় লাগে—এক থেকে দুই মাস। কিন্তু বিপত্তি দেখা দেয় দীর্ঘমেয়াদিতে। এটি বছরের পর বছরও চলতে থাকে।
গবেষণা দ্বারা প্রমাণ হয়েছে যে, এমন হাজার হাজার সুস্থ মানুষ রয়েছে যাদের এমআরআই করে দেখা গেছে, এরা পিএলআইডি-এ আক্রান্ত। অথচ তাদের কোমর ব্যথা নেই। অনেক কোমর ব্যথার রোগী রয়েছে যাদের এমআরআই স্বাভাবিক। তাই সঠিক তথ্য ও চিকিৎসা পেতে রোগীকেই সবার আগে সচেতন হতে হবে।
লেখক, চিকিৎসক, কলাম লেখক ও গবেষক প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি

পিএলআইডি -কোমর ব্যথা কারণ, জটিলতা ও প্রতিরোধের উপায়

১০:০০:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫
বর্তমান সময়ে কোমড় ব্যথা হয়নি এমন মানুষ নাই বললেই চলে । তবে সৌভাগ্য ক্রমে কোমড় ব্যথার অনেক উন্নত চিকিৎসা আছে এবং এটি সম্পূর্ণ রূপে ভাল হয়। যাই হোক, কিছু ক্ষেত্রে, কোমড় ব্যথা ডিস্ক প্রোল্যাপ্স বা ডিস্কের হার্নিয়েশন এর কারণে হতে পারে। আর ইন্টারভার্টেব্রাল ডিস্ক একটি সাধারণ কিন্তু অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক রোগ, যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেরুদণ্ডের কোমরের অংশে ঘটে থাকে। এই অবস্থায় মেরুদণ্ডের ডিস্কের নরম জেলির মতো উপাদান তার স্বাভাবিক স্থান থেকে বেরিয়ে আসে এবং স্নায়ুর উপর চাপ সৃষ্টি করে। মানুষের মেরুদণ্ড ছোট ছোট ৩৩টি অস্থিখণ্ড বা কশেরুকা দ্বারা গঠিত। যাকে ইংরেজিতে বলা হয় ভার্টিব্রা। এরা একে অপরের সঙ্গে ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্কের সাহায্যে সংযুক্ত থাকে। যখন এই ডিস্ক কোনো কারণে নিজের স্বাভাবিক জায়গা থেকে সরে যায়, তখনই ঘটে সব বিপত্তি। তখন ডিস্ক প্রলাপ্স থাকে সাধারণত ঘাড়ের অংশে তথা সারভাইক্যাল ডিস্কে বা কোমরের অংশে তথা লাম্বার ডিস্কে। মেডিক্যালের পরিভাষায় একে বলে প্রলাপ্স লাম্বার ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্ক (পিএলআইডি)।
> ডিস্ক প্রলেপস – কোথায় হয়?
সাধরণত ডিস্ক প্রলেপস আমাদের ঘাড় বা সারভাইক্যাল স্পাইন ও কোমর বা লাম্বার স্পাইনে বেশি হয়। সারভাইক্যাল স্পাইনের সি ৫-৬ ও সি ৬-৭ লেভেলে ও লাম্বার স্পাইনে এল ৪-৫ ও এল ৫ – এস ১ লেভেলে বেশি হয়।এটি নারী-পুরুষ উভয়েরই হয়ে থাকে। তবে পুরুষের তুলনায় নারীরা এই রোগে বেশি ভুগে থাকেন।
> পিএলআইডি বলতে যা বোঝায় : প্রলাপসড লাম্বার ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্ক বা পিএলআইডি রোগ হলে দুটি কশেরুকার মধ্যে থাকা কোমরের নরম অংশ (ডিস্ক) বের হয়ে বাইরের দিকে চলে আসে। ডিস্কের বাইরের দিকে অ্যানুলাস ফাইব্রোসাস নামে শক্ত আবরণ থাকে, যা আঘাতে বা ক্ষয় হয়ে ছিঁড়ে গিয়ে ভেতরের নরম জেলির মতো অংশ বের হয়ে আসে। সেই বের হওয়া অংশ নার্ভের রুটে চাপ দিতে থাকে। আর এ কারণে কোমরে প্রচণ্ড ব্যথা হয় এবং সেই ব্যথা ক্রমশ পায়ের দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এ অবস্থার নাম সায়াটিক পেইন। সাধারণত লাম্বার ৪ ও ৫ নম্বর কশেরুকায় এটি ঘটে থাকে।
>  ডিস্ক প্রলেপসের লক্ষণ :-
লক্ষণ ও উপসর্গ একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম হয়ে থাকে।
* কারো ক্ষেত্রে ব্যথা ঘাড় থেকে হাতের দিকে ছড়ায় ও হাতে তীব্র ব্যথা হয়।
* হাত ঝুলিয়ে রাখলে ও বিছানায় শুলে বেশি ব্যথা করে।
* হাত ঝিনঝিন করে বা অবশ অবশ মনে হয়।
হাতের শক্তি কমে যায় বা হাত দুর্বল হয়ে আসে
অনেকক্ষেত্রে হাতের মাংসপেশি শুকিয়ে আসে ইত্যাদি।
* কারো ক্ষেত্রে কোমরে ব্যথা হয়।
* ব্যথা কোমর থেকে পায়ের দিকে ছড়ায়।
* পা ঝিন ঝিন করে, অবশ অবশ মনে হয়।
* খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে কিংবা হাটলে আর হাঁটার ক্ষমতা থাকে না। তবে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলে আবার হাঁটতে পারে।
* পা ভারী বা অধিক ওজন মনে হয়।
* পায়ে জ্বালাপোড়া অনুভূত হয়।
* পায়ের শক্তি কমে যায় এবং অনেক ক্ষেত্রে মাংসপেশী শুকিয়ে যায়।
* অনেক ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রসাব ও পায়খানায় নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
* বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে না পারা।
*  সেক্সুয়াল সমস্যা।
*  তীব্র ব্যথায় স্নায়ুজনিত সমস্যা হওয়া ইত্যাদি।
> কারণ-
* যখন শরীরের ওপরের অংশের ভার পুরোটাই মেরুদণ্ডের নিচের অংশে পড়ে, তখন মেরুদণ্ডের ডিস্ক স্লিপ করে পেছনের দিকে যেতে থাকে।
কখনো হঠাৎ স্লিপ করে, কখনো বা ধীরে ধীরে। ভারী জিনিস ঝুঁকে ওঠানোর সময় এ রোগের ঝুঁকি আরো বেড়ে যায়।
* টেবিলে ঝুঁকে পিসিতে দীর্ঘ সময় কাজ করা।
*  বেশি উচ্চতা থেকে লাফ দিলেও ডিস্ক বের হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
* যাদের স্যাক্রাম কশেরুকা অনেক বড়, তাদের এ রোগের আশঙ্কা বেশি।
*  যাদের এক পা ছোট, এক পা বড় তারাও এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।
* উঁচু জুতা পরিধানও এই রোগের অন্যতম কারণ।
* কোনো অস্বাভাবিক কর্মকাণ্ড, যেমন—মারামারি বা আকস্মিক আঘাতেও ডিস্ক সরে যেতে পারে।
> পরীক্ষা-
→ রক্ত পরীক্ষা
→ কোমরের এক্স-রে
→ কোমরের এম,আর,আই
→ কোমরের সিটি স্ক্যান
→ এন,সি,এস; ই,এম,জি
→ বি,এম,ডি
→ হাড়ের স্ক্যানিং ইত্যাদি।
> কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন ?
*  সব সময় ধরে বা জমে আছে—এ ধরনের ব্যথা।
* ভারী ওজন তোলা বা অতিরিক্ত কাজের পর তীক্ষ্ণ ব্যথা।
* কোমর থেকে নিতম্ব, উরু ও পায়ের আঙুল পর্যন্ত ব্যথা বিস্তৃত হলে।
* পায়ে দুর্বলতা বা অবশ ভাব হলে।
* হাঁচি, কাশি দিলে বা সামনে ঝুঁকলে ব্যথা বেড়ে যায়।
* প্রস্রাব বা পায়খানার নিয়ন্ত্রণ না থাকলে।
* শোয়া অবস্থায় বা শোয়া থেকে ওঠার সময় ব্যথা হলে।
> প্রতিরোধে করণীয়-
*  প্রথমেই মেরুদণ্ডের গঠন সম্পর্কে জেনে সে অনুযায়ী চলতে হবে।
* প্রথম ব্যথা অনুভব হওয়ার সময় সচেতন হতে হবে।
* বেশিক্ষণ সামনে ঝুঁকে কাজ করা ঠিক নয়।
* ভারী কোনো কিছু একা একা নিচ থেকে না তোলার চেষ্টা করা উচিত।
* চলাফেরায় ও বিছানা থেকে ওঠার সময় পিঠ ও কোমরে সাপোর্ট দিতে হবে।
* সব সময় মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসতে হবে।
* নিয়মিত ব্যায়াম করা।
* ওজন নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
* এক হাতে কোনো ভারী জিনিস বহন নয়।
* কোমর সোজা রেখে বসার অভ্যাস করা উচিত।
* শক্ত বিছানায় ঘুমানোর অভ্যাস করা, কোনো ফোম ব্যবহার নয়।
* দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা নয়। প্রয়োজনে কিছুক্ষণ পর পর স্থান পরিবর্তন করা।
* বিছানা থেকে ওঠার সময় এক পাশে কাত হয়ে ওঠা।
* হাইহিলের জুতা বা স্যান্ডেল ব্যবহার না করা।
* ধূমপান থেকে বিরত থাকা।
* ঘুমানোর ক্ষেত্রে খুব সুন্দর কিছু নিয়ম আছে যা মেনে আমরা খুব সহজেই শরীরের ঘাড়, মাথা ও কোমরের ব্যথা থেকে বেঁচে থাকতে পারি।
৪. আমাদের বাসায় যারা খুবই বয়োবৃদ্ধ তাদের দিনের কোনো এক সময় অন্য কেউ একজন শরীরের বিভিন্ন মাংসপেশী ম্যাসেজ ও জয়েন্ট গুলো নাড়াচাড়া করিয়ে দিতে পারি। এতে করে তাদের স্নায়ুর ওপর চাপ কম হয় এবং ব্যথা কম থাকে বা আসে না।
*  অভ্যাস না থাকলে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বহন করা থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে আমাদের মাংস পেশি, লিগামেন্ট, জয়েন্ট ও মেরুদণ্ডের ওপর অতিরিক্ত চাপের কারণে ইনজুরি থেকে ভালো থাকতে পারি।
* অস্টিওপোরোসিস রোগের জন্য যারা ঝুঁকিতে থাকেন যেমন মাঝ বয়েসী মহিলা, ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি, যাদের ওজন অতিরিক্ত তারা যথা সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে জীবনযাপন পদ্ধতি ও খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে পারেন।
* ঝুঁকে কাজ করলেও কোমরে বেল্ট পড়া ইত্যাদি।
সারা বিশ্বের বিজ্ঞানী, চিকিৎসকদের মাথাব্যথার কারণ দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যথা। আমাদের দেশে প্রচলিত ধারণাগুলো অনুসারে সবাই বলে থাকেন ডিস্ক প্রল্যাপ্স বা PLID অথবা হাড় ক্ষয় বা spondolysis-এর কারণে কোমর ব্যথা হয়। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, সারা পৃথিবী তথা উন্নত, মধ্যম আয় ও অনুন্নত দেশেও কোমর ব্যথা রোগীর সংখ্যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে গবেষণা পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশের প্রায় ৬৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ কোমর ব্যথায় ভোগেন। এ ব্যথা আবার তিন ধরনের—স্বল্পমেয়াদি, মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদি। সাধারণত স্বল্পমেয়াদি ব্যথা দ্রুত সেরে যায়, মাঝারি ব্যথা ভালো হতে সময় লাগে—এক থেকে দুই মাস। কিন্তু বিপত্তি দেখা দেয় দীর্ঘমেয়াদিতে। এটি বছরের পর বছরও চলতে থাকে।
গবেষণা দ্বারা প্রমাণ হয়েছে যে, এমন হাজার হাজার সুস্থ মানুষ রয়েছে যাদের এমআরআই করে দেখা গেছে, এরা পিএলআইডি-এ আক্রান্ত। অথচ তাদের কোমর ব্যথা নেই। অনেক কোমর ব্যথার রোগী রয়েছে যাদের এমআরআই স্বাভাবিক। তাই সঠিক তথ্য ও চিকিৎসা পেতে রোগীকেই সবার আগে সচেতন হতে হবে।
লেখক, চিকিৎসক, কলাম লেখক ও গবেষক প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি