০১:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫
বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও লাভে এগিয়ে টয়োটা, ট্রাম্পের শুল্কের মাঝেও বিক্রিতে রেকর্ড মার্থা ওয়াশিংটন থেকে মেলানিয়া ট্রাম্প: যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডিদের পোশাকে ইতিহাস, রাজনীতি ও শক্তির প্রতিচ্ছবি চট্টগ্রামে বিএনপি প্রার্থীর গণসংযোগে গুলির ঘটনায় কী জানা যাচ্ছে; দলগুলো কেন ক্যাডার রাখে? ট্রাম্প যখন যুদ্ধ শেষের দম্ভ দেখাচ্ছেন, চীন তখন নীরবে শান্তির পথে কাজ করছে অটিজম চিকিৎসার অপ্রতিষ্ঠিত পথে প্রতিটি পরিবার সাত দশক পর ব্রিটিশ মিউজিক্যালে নতুন জীবন পেল প্রিয় ভালুক সম্পর্কের উষ্ণতা ধরে রাখা উচিৎ, পারিবারিক সীমারেখা রক্ষা করে উৎসব উদযাপনের জ্ঞান শৈশবের গভীর ক্ষত থেকে লেখা এক রন্ধনশিল্পীর আত্মস্বীকারোক্তি মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৬৪) ক্ষমতার নৃত্য: ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস বলরুম প্রকল্পে দানের আড়ালে ব্যবসায়িক স্বার্থের খেলা

যুক্তরাষ্ট্রের হারিকেন নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প ‘স্টর্মফিউরি’ থেকে আমরা কী শিখেছি

গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট হিসেবে ১৯৬০-এর দশকে জো গোল্ডেন প্রায় একটি ডজনের মতো হারিকেনের “আইওয়াল”-এর মধ্য দিয়ে বিমানে প্রবেশ করেছিলেন, যেখানে গতি ছিল ঘণ্টায় প্রায় ১৬০ মাইল (২৬০ কিমি)। “এটা এমন একটা বৃত্তাকার ঝড়ের মত, যা প্রায় ৪০ হাজার ফুট [১২,২০০ মি] উচ্চতায় পৌঁছে,” বলতেন গোল্ডেন। “এতে প্রায়শই বজ্রপাতও থাকে, যা আরেকটি বিপদ।”

আসলে, “হারিকেন হান্টিং” দলের বিমানগুলো কেবিন প্যাড দিয়ে প্রটেকশন দেয়া থাকতো আর যাত্রীদের সব সময় সিট বেল্ট বেঁধে রাখার আদেশ দেওয়া হতো। যদিও আবহাওয়াবিদ হিউ উইলৌবি সেই ভয়ঙ্কর “সাদা-নখ” টানানোর মতো যাত্রাকে জীবনের সেরা অভিজ্ঞতা হিসেবে বর্ণনা করেন। একবার ভয়াবহ ঝড়ের মধ্যেই বিমান প্রায় ২০০ ফুট [৬০ মি] নিচে লাঙ্গল, ইঞ্জিনও কার্যহীন হয়ে যায় এবং জীবনরক্ষা যন্ত্র উল্টে যায়।

What a US mission to control hurricanes taught us about deadly storms

১৯৪০–এর দশকে উইলৌবি, গোল্ডেন ও তাদের সঙ্গীরা যেসব তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন তা হারিকেনের গঠন ও প্রকৃতির উপর অটুট বৈজ্ঞানিক জ্ঞান বাড়িয়েছিল। কিন্তু ১৯৬২ থেকে ১৯৮৩–এর মধ্যে আমেরিকার সেনাবাহিনী ও আবহাওয়া দপ্তর “স্টর্মফিউরি” নামে একটি প্রকল্পে আরও এদিক-সেদিক এগিয়েছিল। শুধু পর্যবেক্ষণ নয়, তারা হরিকেনকে সরিয়ে বা দুর্বল করতে চেয়েছিল। প্রকল্প অনুসারে, তারা “আইওয়াল”-এর বাইরের অংশে চিলো দ্য silver iodide—রূপকৌশল ছড়িয়েছিল; ধারণা ছিল, এইভাবে ঝড়ের অন্তর্নিহিত কাঠামো ব্যাহত হয়ে এর তীব্রতা কমে যাবে।

শুরুর দিকে “হারিকেন এসথার”–এ ১০% বাতাসের গতি হ্রাস বা ১৯৬৯ সালের “ডাবি”–তে ৩১% ও ১৫% হ্রাস পাওয়ার মতো ফলাফল আসে, ফলে আশাব্যঞ্জক মনোভাব তৈরি হয়। তবে পরবর্তী গবেষণায় নিশ্চিত হয়, প্রকৃতপক্ষে অনেক সময় ব্যবহারের পরিপূরক প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার কারণেই এ ধরনের পরিবর্তন ঘটতো ।

জীবন্ত উদাহরণে দেখা গেছে, “আইওয়াল রিকর্টিং” প্রাকৃতিকভাবেই ঘটে থাকে—একাধিক চক্কুর তৈরি হওয়া, যা প্রাকৃতিকভাবেই ঝড়ের শক্তি কমায়—এবং এতে কৃত্রিম ফোঁড়ানোয়ের অবদান সনাক্ত করা যায় না ।

তবে এর বৈজ্ঞানিক অবদান উপেক্ষা করা যায় না। বিমান দ্বারা সংগৃহীত বৈশিষ্ট্য–সমূহ আবহাওয়ার মডেল উন্নয়নে গুরুত্বপূ্র্ণ ভূমিকা নিয়েছে; আজকের দিন পর্যন্ত NOAA-এর উন্নত প্লেন “কার্মিট” ও “মিস পিগি” ব্যবহার হয়ে আসছে ।

১৯৮৩–তে প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায়, কারণ সিলভার আয়োডাইড–যুক্ত শীতবর্তনের পানি পাওয়া যায় না, আর “বাইমুণ্ডা” বা “আইওয়াল রিকর্টিং”–এর মতো প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াকে মানুষ তৈরি করেছে এমন প্রমাণ পাওয়া যায় না ।

একদিকে প্রয়াস ব্যর্থ হয়েছিল, অন্যদিকে এর গবেষণামূলক তথ্যসম্ভার আবহাওয়ার মডেলিং ও পূর্বাভাস প্রযুক্তিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। বিজ্ঞানের সেই অর্জনগুলো আজ আমাদের ঝড়ের গতিপথ ও তীব্রতা নিরূপণে প্রধান ভূমিকা রাখছে।

বর্তমান সময়ে “স্টর্মফিউরি–র পুনরূদ্ধার” নিয়ে কিছু কথা শোনা গেলেও, AI/উচ্চপ্রযুক্তির সাহায্যে ঝড় নিয়ন্ত্রণ বিশ্বে বাস্তবতার ভিত্তি এখনও খুঁতিপূর্ণ।

সারসংক্ষেপে,—

আমের‍িকার “স্টর্মফিউরি” প্রকল্প ছিল ঝড়ের প্রকৃত কাঠামো ও আচরণ বোঝার একটি মহৎ প্রয়াস, তবে ক্লাউড–সিডিং এর মাধ্যমে ঘুরিয়ে বা দুর্বল করা সম্ভব হয়নি।

প্রকল্প বন্ধ হওয়ার পরও এর ডেটা ও বিমান–যাত্রার মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য আবহবায়বিজ্ঞানে স্থায়ী ভূমিকা রেখেছে।

আজকের দিনে ঝড়–পূর্বাভাসে প্রযুক্তি যেমন উন্নত হয়েছে, তেমন সম্ভাব্য নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলি এখনও গবেষণামূলক পর্যায়ে।

মোট কথা:

“স্টর্মফিউরি” থেকে উঠে এসেছে মৌলিক শিক্ষার সঙ্গে আবহাওয়ার ভবিষ্যৎ গবেষণার পথচিহ্ন। প্রকল্পের মূল লক্ষ্য সফল না হলেও, এর আংশিক জ্ঞান আমাদের আজকের ঝড়–পূর্বাভাস ও ঝুঁকিতে অনেক দূর এগিয়ে দিয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও লাভে এগিয়ে টয়োটা, ট্রাম্পের শুল্কের মাঝেও বিক্রিতে রেকর্ড

যুক্তরাষ্ট্রের হারিকেন নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প ‘স্টর্মফিউরি’ থেকে আমরা কী শিখেছি

০৫:৫৩:১২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫

গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট হিসেবে ১৯৬০-এর দশকে জো গোল্ডেন প্রায় একটি ডজনের মতো হারিকেনের “আইওয়াল”-এর মধ্য দিয়ে বিমানে প্রবেশ করেছিলেন, যেখানে গতি ছিল ঘণ্টায় প্রায় ১৬০ মাইল (২৬০ কিমি)। “এটা এমন একটা বৃত্তাকার ঝড়ের মত, যা প্রায় ৪০ হাজার ফুট [১২,২০০ মি] উচ্চতায় পৌঁছে,” বলতেন গোল্ডেন। “এতে প্রায়শই বজ্রপাতও থাকে, যা আরেকটি বিপদ।”

আসলে, “হারিকেন হান্টিং” দলের বিমানগুলো কেবিন প্যাড দিয়ে প্রটেকশন দেয়া থাকতো আর যাত্রীদের সব সময় সিট বেল্ট বেঁধে রাখার আদেশ দেওয়া হতো। যদিও আবহাওয়াবিদ হিউ উইলৌবি সেই ভয়ঙ্কর “সাদা-নখ” টানানোর মতো যাত্রাকে জীবনের সেরা অভিজ্ঞতা হিসেবে বর্ণনা করেন। একবার ভয়াবহ ঝড়ের মধ্যেই বিমান প্রায় ২০০ ফুট [৬০ মি] নিচে লাঙ্গল, ইঞ্জিনও কার্যহীন হয়ে যায় এবং জীবনরক্ষা যন্ত্র উল্টে যায়।

What a US mission to control hurricanes taught us about deadly storms

১৯৪০–এর দশকে উইলৌবি, গোল্ডেন ও তাদের সঙ্গীরা যেসব তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন তা হারিকেনের গঠন ও প্রকৃতির উপর অটুট বৈজ্ঞানিক জ্ঞান বাড়িয়েছিল। কিন্তু ১৯৬২ থেকে ১৯৮৩–এর মধ্যে আমেরিকার সেনাবাহিনী ও আবহাওয়া দপ্তর “স্টর্মফিউরি” নামে একটি প্রকল্পে আরও এদিক-সেদিক এগিয়েছিল। শুধু পর্যবেক্ষণ নয়, তারা হরিকেনকে সরিয়ে বা দুর্বল করতে চেয়েছিল। প্রকল্প অনুসারে, তারা “আইওয়াল”-এর বাইরের অংশে চিলো দ্য silver iodide—রূপকৌশল ছড়িয়েছিল; ধারণা ছিল, এইভাবে ঝড়ের অন্তর্নিহিত কাঠামো ব্যাহত হয়ে এর তীব্রতা কমে যাবে।

শুরুর দিকে “হারিকেন এসথার”–এ ১০% বাতাসের গতি হ্রাস বা ১৯৬৯ সালের “ডাবি”–তে ৩১% ও ১৫% হ্রাস পাওয়ার মতো ফলাফল আসে, ফলে আশাব্যঞ্জক মনোভাব তৈরি হয়। তবে পরবর্তী গবেষণায় নিশ্চিত হয়, প্রকৃতপক্ষে অনেক সময় ব্যবহারের পরিপূরক প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার কারণেই এ ধরনের পরিবর্তন ঘটতো ।

জীবন্ত উদাহরণে দেখা গেছে, “আইওয়াল রিকর্টিং” প্রাকৃতিকভাবেই ঘটে থাকে—একাধিক চক্কুর তৈরি হওয়া, যা প্রাকৃতিকভাবেই ঝড়ের শক্তি কমায়—এবং এতে কৃত্রিম ফোঁড়ানোয়ের অবদান সনাক্ত করা যায় না ।

তবে এর বৈজ্ঞানিক অবদান উপেক্ষা করা যায় না। বিমান দ্বারা সংগৃহীত বৈশিষ্ট্য–সমূহ আবহাওয়ার মডেল উন্নয়নে গুরুত্বপূ্র্ণ ভূমিকা নিয়েছে; আজকের দিন পর্যন্ত NOAA-এর উন্নত প্লেন “কার্মিট” ও “মিস পিগি” ব্যবহার হয়ে আসছে ।

১৯৮৩–তে প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায়, কারণ সিলভার আয়োডাইড–যুক্ত শীতবর্তনের পানি পাওয়া যায় না, আর “বাইমুণ্ডা” বা “আইওয়াল রিকর্টিং”–এর মতো প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াকে মানুষ তৈরি করেছে এমন প্রমাণ পাওয়া যায় না ।

একদিকে প্রয়াস ব্যর্থ হয়েছিল, অন্যদিকে এর গবেষণামূলক তথ্যসম্ভার আবহাওয়ার মডেলিং ও পূর্বাভাস প্রযুক্তিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। বিজ্ঞানের সেই অর্জনগুলো আজ আমাদের ঝড়ের গতিপথ ও তীব্রতা নিরূপণে প্রধান ভূমিকা রাখছে।

বর্তমান সময়ে “স্টর্মফিউরি–র পুনরূদ্ধার” নিয়ে কিছু কথা শোনা গেলেও, AI/উচ্চপ্রযুক্তির সাহায্যে ঝড় নিয়ন্ত্রণ বিশ্বে বাস্তবতার ভিত্তি এখনও খুঁতিপূর্ণ।

সারসংক্ষেপে,—

আমের‍িকার “স্টর্মফিউরি” প্রকল্প ছিল ঝড়ের প্রকৃত কাঠামো ও আচরণ বোঝার একটি মহৎ প্রয়াস, তবে ক্লাউড–সিডিং এর মাধ্যমে ঘুরিয়ে বা দুর্বল করা সম্ভব হয়নি।

প্রকল্প বন্ধ হওয়ার পরও এর ডেটা ও বিমান–যাত্রার মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য আবহবায়বিজ্ঞানে স্থায়ী ভূমিকা রেখেছে।

আজকের দিনে ঝড়–পূর্বাভাসে প্রযুক্তি যেমন উন্নত হয়েছে, তেমন সম্ভাব্য নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলি এখনও গবেষণামূলক পর্যায়ে।

মোট কথা:

“স্টর্মফিউরি” থেকে উঠে এসেছে মৌলিক শিক্ষার সঙ্গে আবহাওয়ার ভবিষ্যৎ গবেষণার পথচিহ্ন। প্রকল্পের মূল লক্ষ্য সফল না হলেও, এর আংশিক জ্ঞান আমাদের আজকের ঝড়–পূর্বাভাস ও ঝুঁকিতে অনেক দূর এগিয়ে দিয়েছে।